নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

বিকি দাস






কবির পরিচয়
~~~~~~~~
১৯৯৪ - সালের ২১ মার্চ, বিশ্ব কবিতা দিবসের দিন, নদিয়া জেলার রানাঘাট শহরে জন্মগ্রহণ করেন কবি বিক্রম দাস ( বিকি )  বাবার নাম বিশ্বজিৎ দাস, মায়ের নাম কল্পনা দাস, ও একমাত্র বোন উষা দাস কে নিয়ে তাদের ছোট্ট সুখি সংসার।

দরিদ্রতার মধ্যে লেখাপড়া করেছেন কবি। ছোট্টবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কিন্তু অর্থাভাব তাকে উচ্চশিক্ষায় পৈছাঁতে দেয়নি। খুব ছোট্টবেলা থেকেই কর্মসুত্রে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতবর্ষের বিভিন্ন যায়গা ঘুরেছেন। এখন তিনি দেশ পারি দিয়ে বিদেশে চাকুরী করছেন। U.A.E - দুবাইতে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত কম্পানিতে চাকুরী করছেন। তবে উনি বিদেশে থাকলেও দেশ ও বাংলা ভাষা কে প্রচন্ড ভালোবাসেন।

জীবনে এক প্রতিকুল অবস্থায় দাঁড়িয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন। একের পর এক কাব্যগ্রন্থ উপাহার দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা ২০১৬ তে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কবিদের সাথে যৌথ কাব্যগ্রন্থ " আবৃত্তির নতুন কবিতা " উপহার দিয়েছেন।
এবছর প্রকাশিত হয়েছে, মিলন তিথি ও ইচ্ছে আলোর ডানা কাব্যগ্রন্থ।

একুশে বইমেলা বাংলাদেশ থেকে যৌথ কাব্যগ্রন্থ " কবিতার মোহনায়, প্রেম পিরিতের সাতকাহন, বিষাদের কালো মেঘ, জীবনের যত কাব্য, গল্প জীবনে প্রতিচ্ছবি, " প্রকাশ করেছেন।
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখে সুনাম অর্জন করেছেন।
গুরুজনদের আশীর্বাদ ও পাঠক বন্ধুদের ভালোবাসায়, আধুনিক কবিতা নিয়ে এই যৌথ প্রয়াস ।।


কিছু আলাপ কিছু কথা 
****************

১) আপনার কাছে কবিতা কি ? 
উত্তর: আমার কাছে কবিতা মানে জীবন। মানুষের জীবনের ভাষা, কল্পনা, চিন্তা, চেতনার নাম কবিতা।
২)আপনার প্রিয় কবি কে ?আপনার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা কে বা কি ? 
উত্তর:  আমার প্রিয় কবি বাংলাদেশের হেলাল হাফিজ। আমার অনুপ্রেরণা শ্রদ্ধেয় জয় গোস্বামী, কারন আমার খুব বাড়ির কাছেই তার বাড়ি ছিলো। তার কথা এবং সাহিত্য অনুপ্রেরণা দেয়।
৩) আপনি কবিতা লেখেন কেন ? 
উত্তর: আমি যে খুব ছোট্টবেলা থেকে লেখালেখি করি ঠিক তাই না। কিন্তু আমার জীবনে একটা কঠিন সময় আসে যখন বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসাবে আমি কবিতা বুকে জড়িয়ে নিয়।
তবে আমি কবিতা পড়তে সব সময় খুব ভালোবাসতাম।
৪)আপনার লেখা প্রথম কবিতা  ও কাব্যগ্রন্থের নাম কি ?
উত্তর:  যদি প্রথম কবিতা বলি তাহলে মজার ছড়া লিখেছিলাম " সিঙ্গারা  " ২০০৭ সালে উদয়ন নামে স্কুল ম্যাগাজিন রানাঘাট, নদিয়া থেকে প্রকাশিত হয়।
কিন্তু আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ২১ শে বইমেলা ২০১৬ বাংলাদেশ থেকে " দুই পাখির কথা " প্রকাশিত হয়। এবং এই বইটির জন্য আমি একটি পুরুষ্কারও পাই।
৫)কবি/কবিতার সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ? 
উত্তর:  বই প্রেমী বা সাহিত্য প্রেমী বন্ধুদের ঠিক আমি পাঠক বলি না। কবি শুধু কবিতা সৃষ্টি করে কিন্তু, কবিতা ঠোঁটে নিয়ে যে পাখি পড়ছে সে বন্ধু, শব্দ বন্ধু, ভাবনা বন্ধু।
আমার মনে হয় ফেসবুকে কবি ও পাঠকদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা উচিত। কারন সেখানে কবি ও পাঠকদের সরাসরি কথা বলার জায়গা থাকে।



                   কবিতা গুচ্ছ
                 *********


আমার শহর খুব অন্ধকার
*******************

শীতের কাছে ক্লান্ত আমার রাত,
লেপমুড়ি দিয়েছে ফুটপাত।
ইট বালিশে ঘুমিয়ে পাগলী,
ব্লাউজের উপর যুবক পশুর হাত।
ঘণ্টাখানেক রক্তাক্ত চিৎকার,
মৃত দেহ, দুইবার বলৎকার।
ভয় পেয়েছে রাতের জোনাকি, 
আমার শহর খুব অন্ধকার.......
বেওয়ারিশ দেহ জ্বলে না ভাই,
নদীর পাশে চিল, শকুনি খায়।
আজব দেশের সস্তা এই নীতি,
বিচার আছে, যার টাকার গন্ধ গায়।
আজ শহরে খুব অন্ধকার,
মানুষ হয়ে বাচাঁর কি দরকার ____




এই ঘর এই সংসার 
 **************

আমার পাশের বাড়ির বৃদ্ধা, মৃত্যুর কিছুদিন আগে রোজ বারান্দায় এসে বসতেন।
তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতেন........
"আমার সব কাজ শেষ, ও বিধাতা আমার হিসেব বুঝিয়ে দাও। আমি ফিরে যাবো "।

সেই দৃশ্য দেখে আমি ছুটে আসতাম আমার ঘরে। হ্যা যেই ঘর টা আমার বলেই জানি। দেখি চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অভিমান, রাগ, হিংসা, আর কিছু অহংকার।
আমি চিৎকার করে আয়না দিকে তাকিয়ে বললাম......
"মানুষের কি আদৌ কোনো ঘর হয়"______






  রক্ত লেখা 
********



একটা মানুষের কত মৃত্যু হবে,
আর কতবার পিষে দেবে আমায়।
বুকের কষ্টগুলি এবার হাসছে,
তোমার ষ্পর্শগুলি এবার হাসছে।
হৃদয়ে লুকানো লাল তরোয়াল
এখন চিৎকার করে বলছে _

"একটা স্বপ্ন নিয়ে আসো,
একটু প্রেম নিয়ে আসো,
একটা সকাল নিয়ে আসো "

বোবা ঠোঁট দুটি বারবার বলছে,
লাথি মেরো না মুখে।
এই মুখে ভালোবাসি বলেছি তোমায়।
এই মুখ কিভাবে রক্তাক্ত করলে তুমি।

তাকিয়ে দ্যাখো,
তোমার জুতোর নিচে লেগে আছে যে রক্ত।
সেখানেও আমার ভালোবাসা আছে।
সেখানেও আমার ভালোবাসা আছে।




প্রেমিক 
******


তুমি কখনো সমুদ্রে গেছো প্রেমিক?
ঝিনুক কি দেখেছো,
নোনা জলে হৃদপিন্ডের কাছাকাছি,
কি বিচ্ছিরী ভাবে মুক্ত লুকিয়ে রাখে।

অথচ একটা মেয়েকে দ্যাখো,
কত যত্নে সেই মুক্ত,
নিজের গলায় সাজিয়ে রাখে।





ইস্তেহার 
******



ভালবাসা এক নিত্যনতুন শোক
     প্রেম তবু আজ সবার বুকে হোক।
বৃষ্টি জলে সবাই সাদা কালো
     শক্ত ঠোঁটে কাকাতুয়া ভালো।

ভালো বুঝি ঐ রঙিন ঘরের মাছ
     কবিতা লিখছে জানলা বন্ধ কাঁচ।
পিয়ানো বাজায় অব্যক্ত সারগাম
     ক্যালকুলেটরে ভালবাসার দাম।

দাম দিয়েই তো কিনেছি বদনাম
    তাই প্রেমের কাছে মৃত্যু রাখলাম।


লীনা দাস










 দ.কলকাতা,বাঁশদ্রোণী থানার অন্তর্গত ব্রহ্মপুর,
কলকাতা-96



কিছু আলাপ কিছু কথা 
*********************


১) আপনার কাছে কবিতা কি ?
উ: আমার কাছে কবিতা---
শুধু ভাল বিষয় ভাবতে পারলেই হয় না।সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর ভাবে মনের ভাব ব্যক্ত করা বা পরিবেশনের কায়দাটাও জানা জরুরী।
কবিতা জন্মের সাথে সব সময় জড়িয়ে থাকে একক সত্ত্বার অধিকারী সৃষ্টিশীল মানুষের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন।
কোন মানুষের মনের ভিতর যদি কিছু সৃষ্টির বা প্রকাশের যন্ত্রনা থাকে তবে সে শব্দের পর শব্দ বসিয়ে পংক্তির পর পংক্তি বসিয়ে শব্দের কথামালায় 
সৃষ্টি করে কবিতা।

তবে সবার আগে কবিকে
জীবনের গভীর বিশ্লেষক হতে হবে তবেই সৃষ্টি সার্থক।

২) আপনার প্রিয় কবি কে? আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ? 
উঃ আমার প্রিয় কবি----
আমি সীমাবদ্ধ রবীন্দ্র নজরুলে।
25 শে বৈশাখ আর বৃষ্টির দিনে রবি ঠাকুর পড়ি।
অন্য কোনো কবির ভাল লেখা সামনে পেলে পড়ি।


কোনো দিনই আমি কবিতা পড়তে ভালবাসতাম না।কিন্তু ছোট থেকেই মনে হত কি 
যেন করতে মন চাই, বুঝতে পারতাম না মন কি চাইছে।সর্বক্ষণ মনটা কিছু করার জন্য অস্থির 
থাকত।
ফেসবুকে এসে আমি কবিতার প্রেমে পড়লাম।বলা চলে ফেসবুক আমার অনুপ্রেরণা আর আমার মনের তাগিদ।

শুরু হল আমার কবিজীবন।কবিজীবন আমার এক বছর চার মাস।


৩) আপনি কবিতা লেখেন কেন ? 
উঃ- 

কিছু সৃষ্টির যন্ত্রনা কুরে কুরে খায়।সেই সৃষ্টির হাতিয়ার আমার কবিতা।
তাই কবিতা লিখি।
৪.আপনার লেখা প্রথম কবিতা ও কাব্য গ্রন্থের নাম কি ? 
উঃ- 
আমার প্রথম কবিতার নাম 'নষ্টসেরা'(3/8/16)।
অবশ্য প্রথমদিন আমি ৭টি কবিতা লিখেছিলাম।

আমার প্রথম একক কাব্যগ্ৰন্থের নাম"নষ্ট মনের মৌন কথা।"


৫) কবি/কবিতার সাথে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ? 

উঃ: কবি লেখেন কবিতা,তার সৃষ্টির নেশায়।
তার সাথে এটাও কাজ করে, লিখছি তো,পাঠক কেমন ভাবে নেবেন বা নিচ্ছেন।
পাঠক যদি বুঝতে না পারেন তার দায় কিছুটা বর্তায় কবির উপর।পাঠক আর কবি যদি নাগালের মধ্যে থাকেন কবির উচিত পাঠককে বুঝিয়ে দেওয়া, 
যদি পাঠক জানতে চান।


  


                          কবিতা গুছ 
                        ************



মনোরোগী 

     

অঝোর রাতে অন্ধকারে একাকি-
ত্বের যন্ত্রণা অনুভব করছি!
বুকের কাছে চাপ ধরা ব্যথা,
মনখারাপের ঘূণপোকারা মাথায়,
ঘন্টায় ঘন্টায় বংশ বৃদ্ধি ঘটছে,

মরা মাছের মতো ফ্যাকাসে চোখে
ফ্যালফ্যালে তাকান!
যন্ত্রণার মূহুর্তে মনে পড়ে 
অবহেলা,নি:শব্দে অপমান,
হেরে যেতে যেতে কুঁকড়ে গেছি!!

যন্ত্রণার মূহুর্তে ও মনে পড়ে ভাল-
বাসাকে!
ভেসে বেড়াই হাওয়ায় ওর সংস্পর্শে,মনে মনে!
আজ আমি বাতিলের খাতায়!!

হেরে যেতে যেতে কমেছে স্নায়ুর 
জোর,
ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে হয়ে পড়েছি দূর্বল;
ভবিষ্যত----হয়ত -----

শীতল শূন্যস্থান 


অন্তরে শীতল শূন্যস্থান
সুনিবিড় ডালপালায় সজ্জিত।
লুকোনো সমস্যা দেওয়াল হয়ে 
খাঁড়া,
দেওয়াল মালুম হচ্ছে না,আগেই 
ধাক্কা।

সাদামাটা শান্ত চেহারা,চাপা গাল,
হালকা দাড়ি,কোঁকড়ানো,
অনেকটা জমাট বাঁধা,শান্ত গভীর
চোখ,স্নিগ্ধ পার্সোনালিটি।

সব মানুষকে ছুঁয়ে বুঝতে হয় না-
হৃদয় দিয়ে স্পর্শ করতে হয়;
সে ছিল হৃদয়ের স্পর্শ,
আত্মার সম্পর্ক পাতিয়ে হয়েছিল 
পরমাত্মীয়.আত্মার আত্মীয়।

আজ আমার অন্তরে শীতল একটা শূন্যতা!
মনের মাধুরী দিয়ে সাজায়,স্মরণ করি,বরণ করি!!


বিরহ 




সে এক বৃষ্টি বিকেল,
আকাশময় নোংরা প্লাস্টিকের মত মেঘ।
বৈকালিক, দিগন্তের আকাশ-
ছড়ান হলুদ-কমলা আলোটা আজ আর নেই।

মন কেমন করা হলুদ-কমলা আলো!
দূ--রে উপনগরীর দানবীয় স্কাই-
লাইন।
জলদ মেঘে ভরে আছে মনের 
আনাচ-কানাচ!

বালিশ নাকে  চেপে,চেনাগন্ধটাকে
অনুভব,হারানোর বেদনা,
দীর্ঘ চুম্বন,খুনসুটি,অভিমান!
সব শেষ করে জীবন্মৃত রেখে 
চলে গেলে?

তোমার বিরহে আমার,অতল
বিরহ রাগিনী গেছে থেমে!!!


কর্কট রোগ 




রাজিতা বিড়বিড় করে,স্মল সেল 
কার্সিনোভা(ক্যান্সার)।
ভাবতে পারেনা,রজতাভ মৃত!
চিকিত্সায় সর্বস্বান্ত।
মেডিক্লেম,বলছে রোগটা প্রি-এগজিস্ট;প্রমাণ নতুবা নাটাকা।

বকেয়া বাড়ী ভাড়া,তুলে দেয় যদি!
মগজটা এখন সবুজ সর-পড়া নর্দমা যেন!
ভাবে নিজেকে রাজিতা,মন্দিরের
সিঁড়িতে মেয়েকে নিয়ে চট পেতে
ভিক্ষার ছবি!!
গাড়ির জানালায় সস্তার ধূপকাঠি
বিক্রি!!!

বুজকুড়ি কাটছে পচা নর্দমার 
থকথকে তরল।
মশার শূককীট নড়েচড়ে উঠছে,
মন-মাকুটার দড়ি টানাটানি,

বিধস্ত মনটা,আগ্নেয়গিরির গলিত-
লাভা,জমাট বাঁধতে থাকে,
ধী-রে ধী-রে----


ভালোবাসা ২



বাঁশবন,সবুজের হাতছানি,ঝিঁ ঝিঁ
জোনাকির মেলা।
বৈশাখের উত্তর আকাশের অনেকটা জুড়ে সপ্তর্ষিমন্ডল।
মরীচি,বশিষ্ঠ,অঙ্গিরা,অত্রি দক্ষিণে
পুলস্ত্য পশ্চিমে পুলহ,পুলহের 
উত্তরে ক্রতু।

গভীর রাত,লক্ষ্মীপেঁচা আমগাছের
ডালে বসে ডাকছে।
দূরের ছায়া ছায়া পাহাড়ের পাদ-
দেশ থেকে পাখি ডাকছে।
কপারস্মিথ---নদীর ওপারে দোসর
সাড়া দিচ্ছে টাক্যু টাক্যু।

আমার বুকেও অনেক কামনা-
বাসনা কপারস্মিথের মতো।
আমার ভালবাসার ঠোঁটের কোণে
দেখেছি,জলফড়িং এর ডানার মতো,
একটা তিরতির করে কাঁপতে থাকা হাসি।

ওভাবে হেসোনা,বুকের মধ্যে সব
কিছু গলে যায়।
চোখের পাতার উপর একটা কালো তিল,ঘাড়ের কাছে একটা,
বুকের ভাঁজে আরও তিনটি,
আমায় চুরি করে দেখতে হয়!

আমার ভিতরের পাগলটাকে 
অনেক কষ্টে চাপা রেখেছি!
আমাকে সুস্হ থাকতে দাও!
আমাকে পবিত্র থাকতে দাও!
আমার বড় কষ্ট,তুমি বুঝবে না!
ফুলের গন্ধ,ধূপের গন্ধ,চান করে
ওঠা শরীরের বিবশ করা গন্ধ!

ভাবতে চাইনা,সারা শরীর কাঁপছে
জ্বর এলো?
ডাক্তাররা কি জানেন কত রকমের জ্বর আসে মানুষের শরীরে?


অসীম মালিক








হুগলি জেলার আরামবাগের এক প্রত্যন্ত গ্রাম শীতলপুর l এই গ্রামেই 14 ই জানুয়ারী , 1983 সালে এক দারিদ্র পরিবারে আমার জন্ম l জেদ এবং অধ্যবসায়ে ইংরেজিতে স্নাতক l বর্তমানে পেশায় একজন শিক্ষক l ছোটবেলা থেকেই লেখার প্রতি অসীম আগ্রহ ও হাতেখড়ি l আজ পর্যন্ত যা সচল l প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'পেন্ডুলামটা দুলছে'l যা 2008 সালে প্রকাশ পায় l সৃজন , মানভুম সংবাদপত্র , আর্থিক লিপি , ঈশ্বরকণা , কলেজস্ট্রীট , সময় সংকেত , উদ্ভাস প্রভৃতি পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে l ভালোবাসি ছবি আঁকতে এবং ভ্রমণে যেতে l




কিছু আলাপ কিছু কথা 
**********************


) কবিতা কি ? :আমার কাছে কবিতা চোখের আলোয় জারিত হওযা এক সুন্দর অনুভূতি l যা হৃদয় পেলে কবিতার দেহ নির্মাণ করে l 

2) প্রিয় কবি ও আমার অনুপ্রেরণা :--শক্তি চট্টোপাধ্যায় l আমার অনুপ্রেরণা আমার মা l যার জন্যই আমার এই কবিতা প্রেম l 

3) কেন লিখি কবিতা :- আনন্দ পাই তাই লিখি l 

4) প্রথম কবিতা ও কাব্যগ্রন্থ :-- সেভাবে প্রথম কবিতার নাম মনে নেই l ছাত্র অবস্থায় অনেক কবিতা লিখেছি l হারিয়ে গেছে l তবে প্রথম প্রকাশিত কবিতা 'অপেক্ষা' l যা কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত l প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'পেন্ডুলামটা দুলছে 'l 

5) কবিতা /কবির সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক :--বৃষ্টি ও মাটির মত হওয়া উচিত l 


  

                               কবিতা গুচ্ছ 
                            **************



                     বাসস্ট্যান্ড 


                          

আগমন ও প্রস্থানের কোলাহল গায়ে মেখে
রাস্তাগুলি ছড়িয়ে গ্যাছে চাদ্দিকে ...

যারা এসেছিল ,
কাজ সেরে ফিরে গ্যাছে ঘরে l
বাস ড্রাইভার ,কন্ডাক্টর ,প্যাসেঞ্জার ও ফেরিওয়ালার ডাকে ,বাসস্ট্যান্ডের অলিতে-গলিতে
থেকে গ্যাছে কিছু নমুনা .....

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাস্তাগুলিকে
এক ছাতার তলায় এনে
আদর্শ হিন্দু হোটেলের গলিতে হারিয়ে যায়নি বাসস্ট্যান্ড !

সম্প্রীতির ঈপ্সিত ইচ্ছেগুলি
বাসের সিটে সিটে ছড়িয়ে দিয়ে
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে
একাকী ,নীরব বাসস্ট্যান্ড .....

প্যাসেঞ্জার ঘরে নিয়ে আসেনি বাসস্ট্যান্ডের মুখ !





               পাখির ভূগোল 


                 

একটি সারস ,কদম গাছের ডালে বসে ,
রোজ ভূগোল পড়ায় l

আমাদের ভূগোল দিদিমণি ,ঘরের দাওয়ায় বসে
ছেলেকে ভূগোল পড়াতে পড়াতে ,
নিবিষ্ট মনে পড়ে পাখির ভূগোল l

যে ভূগোল থেকে চোখ সরালেই
ঘর ,কিছুতেই পাড়া হয়ে ওঠেনা l
পাশের বাড়ির প্রাচীরে ,ভূগোল দিদিমনির
দৃষ্টি এসে থমকে দাঁড়ায় l

সারস ভূগোল পড়াতে পড়াতে ,
তিতলিদের রান্নাঘরের চালে এসে বসে l
উড়তে উড়তে কানাইদের বেড়া অতিক্রম করে যায় l

আমাদের ভূগোল দিদিমনি ,উড়তে না পেরে
ধূসর মানচিত্র হয়ে যায় ....




তুমি কাঁদবে না কলকাতা 


               

যে মেয়েটি আমার ঘরের ভিতর
শত শত আলোকবর্ষ দূরের
উজ্জ্বল নক্ষত্র জ্বালিয়ে রেখেছে l
যে মেয়েটি আমার ঘরের ভিতর
অফপিরিয়ডের গল্প সাজিয়ে
আমার পথ চেয়ে বসে
                 ছাতিম গাছের তলায় ,
যে মেয়েটি আমায়
                 সুনীলের নীরাকে চিনতে শিখিয়েছে l
গীতবিতানের আকাশে উন্মুক্ত করেছে
আমার ঘরের জানালা ...
তোমাকে ঠিক সেই মেয়েটির মত দেখতে l
যে সুনীলের নীরাকে ধর্ষিতা হতে দেখে ,
চালের বাতায় গুঁজে রেখেছে ---
                      তরুণ কবির কলম l
তোমাকে ঠিক সেই মেয়েটির মত দেখতে l
যে মেয়েটির ঘোমটায় আত্মগোপন করেছে ,
তৈল চিত্রে আঁকা ভারত ...
যে মেয়েটির চোখে রানাঘাট ,
                         একটি পোড়া রুটির মত চাঁদ l
সেই মেয়েটি আমার ঘরের ভিতর ,
মৌন মোমবাতি মিছিল দেখে ---
                        মোমের মত পুড়তে পুড়তে বলেছে ,
আমিই তোমাদের নীরা ,
আমার ভীষণ জ্বর হয়েছে

তুমি কাঁদবে না কলকাতা ?








এবছর কেমন গোলাপ ফুটেছে 

                 



জানতে ইচ্ছে করে ,
খুব জানতে ইচ্ছে করে l
যদিও জানলে কষ্ট হয় ,
আবার না-জানলেও বুকে ব্যথা হয় l

পথে-ঘাটে রাস্তায় প্রিয়জনদের সাথে দেখা হলে ,
জিজ্ঞেস করি ,কেমন আছ ? সবাই ভাল আছে তো ?
চোখের জমিতে এবছর ফসল কেমন ফলল ,
হাসি ,দুঃখকে স্পর্শ করতে পারল কিনা !
নদীপ্রেম ,পুনরায় কি লাশ হয়ে ভেসে গেল ?

পুব জানালার রোদ ,বৃষ্টি ,ঝড় ...
ওরা কেমন আছে ? সবাই ভাল আছে তো ?
বুড়িবসন্ত ,চুকিতকিত,ড্যাংগুলি ,রুমালচুরি ....
ওরা সবাই কেমন আছে ?

তালপুকুরের পাড়ে বুড়ো বটগাছটায় ,
আজও শৈশব দোল খায় তো ?
ডোবার জলে রেখে আসা ,
আমার শ্যাওলা ধরা শৈশবের চোখ
কেউ কি খুঁজে পেয়েছে ?
কেষ্টবাবুর বাগানে ,তাল তাল কমলালেবুতে লেপ্টে থাকা
দুরন্ত কৈশোর কি দুরন্ত দুপুর ছুঁয়েছে ?

জানতে ইচ্ছে করে ,
খুব জানতে ইচ্ছে করে l
তোমার মধ্যে যে নদী দেখেছি ----
এখন তার সঙ্গে মেঘের সম্পর্ক কেমন ?

ভালবাসা ,তোমার চোখের বাগানে ---
এবছর কেমন গোলাপ ফুটেছে ?

মেঘের উদরে ,তুমি উত্তরটা রেখে গিয়ো কিন্তু l





একগুচ্ছ গোলাপের জন্য




এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য ,
হাজার হাজার সম্ভাবনার জন্য
সমুদ্রের নিকট সুপারিশ করল রোদ l

জলীয় বাষ্পের নিকট সুপারিশ করল মেঘ ,
মেঘের নিকট সুপারিশ করল বাতাস l

মেঘ দেখাল ,
তার শরীরে অফুরন্ত সবুজ l

সবুজের জন্য ,
গোলাপী ঠোঁটের জন্য
একটি গাছের নিকট সুপারিশ করল বৃষ্টি l

একগুচ্ছ গোলাপের জন্য ,
একটি মনোরম বাগানের জন্য ,মানুষের নিকট
সুপারিশ করতে পারলনা বৃষ্টি ....।

রণজিৎ কুমার মুখার্জী







কিছু আলাপ কিছু কথা 
**************
 ১.আপনার কাছে কবিতা কি ?
উত্তর: আমার সন্তানতুল্য
২.আপনার প্রিয় কবি কে? আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ?
উত্তর: নজরুল ও সুকান্ত
৩.আপনি কবিতা লেখেন কেন ?
উত্তর: সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে কবিতা লিখি ।
৪.আপনার লেখা প্রথম কবিতা ও কাব্যগ্রন্থের নাম কি ?
উত্তর:   আমার প্রথম কবিতা " আমাকে তুমি চেয়ো নাকো " 1967এ প্রকাশিত ।
কবি/কবিতার সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত ?
উত্তর: কবিতা/কবির সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক মধুর হওয়া উচিত ।

                          কবিতা গুচ্ছ
                         ***********

                   দু দিনের জন্য 



তোমার কেশের গন্ধ নিয়ে
কত রাত্রি কাটিয়ে দিলাম ।
কত রাত্রি শুকতারা দেখে ঘুমোলাম ,
কত রাত্রি শৃগালের কান্না শুনতে শুনতে
নিজের আঁখি সিক্ত করলাম ।
কিন্তু পরিশেষে দেখলাম সব শূন্য ।
কিছু নাই , একমাত্র আমি ছাড়া ।
তাও আবার দুদিনের জন্য ।


              ঘুষ বিষয়ক 



ঘুষ নেই কোনখানে , 
ঘুষ না দিলে হয় না কাজ 
অপিস আদালতে ময়দানে ।
ঘুষের টাকায় মানুষ আজ 
            হাঁকাচ্ছে গাড়ি বাড়ি ।
আয়করকে ঘুষ দিয়ে 
                কিনছে নামী দামী গাড়ি ।
ঘুষ খায় থানার বাবুরা সব 
                        একথা সকলে জানে , 
ঘুষ খায় নেতা মন্ত্রীরা 
                        দালালের মাধ্যমে ।
ডাক্তারবাবু ঘুষ খেয়ে 
                     কেস করে দেন হাল্কা ; 
ঘুষের জোরে কঠিন ধাতব 
              নিমিষে হয়ে যায় পল্ কা ।
ঘুষ খেয়ে সাব রেজিস্টার 
                     নয়কে করছে ছয় ; 
ঘুষ দিতে মানুষ করে না দ্বিধা 
             করে না কেউ কোন ভয় ।
সীমান্তে ঘুষ দিয়ে হচ্ছে 
          বাংলাদেশে গোরু পাচার , 
ঘুষের এখন সর্বত্র 
                        রমরমা কারবার ।
আবগারি বিভাগ ঘুষ নিয়ে 
            মদের ব্যবসায় দিচ্ছে ছাড় ; 
তাইতো এ দেশ মাতালে ভরেছে,
             খুন ধর্ষণ হয় আকছার ।
পাশ পোর্ট ভিসা পেতে গেলে 
                   দিতে হবে সেখানে ঘুষ ,
ঘুষ খেতে খেতে মানুষ আজ 
        হারিয়েছে মান , হারিয়েছে হুঁষ ।
ঘুষ না দিলে হবে না চাকরি 
         দেখছি আজ নিজের চোখে , 
ঘুষের এই দুরন্ত গতি,
           বলো আজ কে তাকে রোখে ?
ঘুষ প্রতিরোধে এগিয়ে এসো 
                    নব্য যুবক তরুণ দল, 
এই ঘুষের এত ক্ষমতা 
                মানবিক মন করে বিকল ।




 
                 প্রকৃষ্ট সময় 



এখন সময়টাকে ম্লেচ্ছ বলবো না ,
সকলেই চাইছে ,জগৎ জুড়ে
একটাই জাতি
তার নাম হোক মানুষ ;
শুধু কাব্য ও কবিতায় নয় ,বাস্তবের আঙিনায় ।
থাকবে না কোন সাম্প্রদায়িকতা , ভেদাভেদ ,
জাতপাতকে ছুঁড়ে ফেলে দাও সাগরের জলে ।
সব যুগে সকল সম্প্রদায়ের মহাপুরুষেরা বলে
গিয়েছেন ; জীবের মধ্যে আমার অস্তিত্ব বিদ্যমান ।
আমি সর্ব ভূতেষু ; আমাকে যে মন -প্রাণ দিয়ে ডাকে , আমার স্মরণাপন্ন হয় আমি তাকে রক্ষা করি ; দেখি না তার জাতপাত ,দেখি না সে ধনী না
নির্ধন ; আমি তাকে দিই দর্শন ।তার অনেক প্রমাণ
লুকিয়ে আছে সর্বধর্মের পাতায় ।
তাই এসো ,আমরা সবাই সমস্বরে বলি সে কবির বাণী ; "ভুলি ভেদাভেদ জ্ঞান
            হও সবে আগুয়ান
           সাথে আছে ভগবান হবে জয় । "
হ্যাঁ ভাই জয় আমাদের হবেই ।সে জয় হবে
মানবতার জয় ; সকল জাতির মনুষ্যত্ববোধের
উদয় হবে তমসার বুক চিরে জেনো একদিন ।




            মনের ঠিকানা 




মনের ঠিকানা মন জানে না ,
তুমি যদি ভাই দিতে পারো ,
তোমাকে সহস্র আশরফি দেব
হাম্মত থাকে তো আগে ধরো ।
মনটা যে এ দেহের মধ্যে
কোথায় থাকে তুমি কি জানো ?
মনটা সদা বড়ো  চঞ্চল
শোনে না কথা কার ও  কোনো ।
যদি তাকে বলি দু 'দণ্ড বস,
এ হৃদয়ের মাঝখানে ,
পলকে সে কোথা চলে যায়
এ ভুবনের কোনখানে ।
তুমি যদি জানো মনের ঠিকানা
আমাকে একবার বলে দিও ,
তোমার আমি গোলাম হবো ,
মিছে বলছিনা দেখে নিও ।
পাহাড়ে অরণ্যে অনেক ঘুরেছি
পাইনি কোথাও মনের ঠিকানা ,
আমার মনের ঠিকানা কোথায়
আমার তো ভাই নেই জানা ।




বিপরীত মেরু সঙ্গম 




আমাকে সুখে রাখবে বলে 
বেঁধেছিলে গাঁটছড়া , আর
সব হলেও পরিনি সিঁথিতে সিঁদুর ।
তুমি ও আপত্তি কর নি । কারণ 
আমিও জানতাম তুমিও পড়বেনা কলমা ।
তোমার আমার ধর্ম মুখে বলছে এক কথা , 
কিন্তু কার্যত বাধা প্রচুর ; ।আর সেই কারণে 
আমরা চাই মাতব্বরি বন্ধ হোক ।
মাতব্বররা এসমাজে নিজের মনগড়া 
কল্পিত ব্যবস্থা গড়েছে ।আর তাতে 
রঙ চাপিয়েছেমৌলবী,হিন্দু পুরোহিত সম্প্রদায় ।
অথচ নাকের ডগায় নিয়মনীতিকে বুড়ো আঙ্গুল 
দেখাচ্ছ আজকালকার সন্তান । তারাই বলছে 
আমরা অমৃতের সন্তান , পরমপুরুষ আমাদের 
পিতা ,বসুন্ধরা আমাদের মাতা ।
আমরা সেখানেই সকলে লীন হই একদিন ।

নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত







অবসরপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষক, এম.এ.বি.টি.।মুখ্যত ছোটোগল্প লেখক। প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ:পতঙ্গ বাসনা,ভেতরের মানুষ,হয়তো গল্প। প্রায় সবকবিতাই ২০১৬ সালে রোগশয্যায় রচিত।



কিছু আলাপ কিছু কথা 
*********************

১.কবিতা কি ? 
উত্তর:কবিতা আমার কাছে এক সঞ্জীবনী সুধা।
২)আপনার প্রিয়কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ?
উত্তর: আমার প্রিয় কবি(রবীন্দ্রনাথ ব্যতীত) -
জীবনানন্দ দাস
৩)কেন লেখেন আপনি কবিতা ?
উত্তর: বর্তমানে আমি কবিতা লিখি দীর্ঘ অসুস্থতাজনিত ঘরবন্দি জীবনের নিঃসঙ্গতা কাটাবার জন্য।
৪)আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্যগ্রন্থের নাম ?(প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত)
উত্তর: প্রথম কবিতা (কলেজ জীবনে):প্রভু,আমি গ্রাজুয়েট
   প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ  : স্বপ্নশ্যামাপোকা(২০১৬)!৫)নবদম্পতির সম্পর্কের মতো।




                                   কবিতা গুচ্ছ 
                                ***************



                            পথরেখা 

                      (পঞ্চদশপদী কবিতা)



ওই যে খোকা, একটি রেখা পাহাড় থেকে নামে
মাঠ ছাড়িয়ে,গ্রাম ছাড়িয়ে সাগরপারে থামে
ওই রেখাটি আবেগ দিয়ে স্বদেশ ঘিরে রাখে।
সে-রেখাতে সঠিক পথের হদিশ আঁকা থাকে।

পথের ডাকে পথ চলেছে মাতাল হয়ে একা
পথ কী,জানো?পথ মানে এমন একটি রেখা
চলতে গিয়ে ডাইনে-বাঁয়ে প্রত্যহ হয় দেখা
উভয়ে ডাকবে তোমায় উঠতে তাদের না'য়ে
বলো কোন্ পথে চলতে চাও ডাইনে, নাকি বাঁয়ে?

পথ চলেছে ডাইনে -বাঁয়ে, পথ চলেছে সোজা
পথের খোপায় কেউ দেখে ফুলের মালা গোঁজা
কেউ বা দেখে কাঁটা শুধুই, কান্নাভেজা পথ
ওই পথের শেষেই তোমার সিদ্ধ মনোরথ।

ডাইনে আছে ডাইনিরানী ফুলমালায় সেজে
বাঁয়ের পথে সুখের দাসী চোখের জলে ভেজে।




               শিল্প ও শিল্পী 




ছবি আঁকছেন চিত্রশিল্পী
তাঁর সামনে এক বিষাদ প্রতিমা
মুখে হাসি নেই
অধরোষ্ঠে নেই খুশি একতিল।
শিল্পীর ইচ্ছে
সন্তানসম্ভবা সুন্দরীর প্রশান্তির হাসিমুখ
বন্দি করে রাখবেন ছবির খাঁচায়।

অদূর অতীতে প্রথম সন্তানহারা জননীর মুখে
অকৃত্রিম হাসি ফোটাতে চেষ্টার অন্ত ছিলনা।
ভাড়াকরা ভাঁড় এলো,ভাঁড়ামির চূড়ান্ত হল
সুন্দরীর ভারাক্রান্ত মনে তার ছায়াপাত ঘটলো না।
নৃত্যশিল্পী এলো,এলো সঙ্গীতশিল্পীও
সুন্দরীর মনের জমাট  অন্ধকারের শরীরের ভাঁজে
তবু কোনো দুলুনি নেই,বিদ্যুতের ঝলকানি নেই,
এমনকি ঘাসফড়িঙের ওড়াওড়িও নেই।

অবশেষে শিল্পীর মনোবিদ এক বন্ধু
সেদিনের খবরের কাগজখানা ধরলেন তার সামনে
প্রথম পাতাতেই রাজ্যের বাক্যবাগীশ মহারানীর ছবি
তাঁকে দেয়া হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ বিদুষীর সম্মান
স্বয়ং রাজাধিরাজ তাঁকে পরিয়ে দিচ্ছেন উত্তরীয়
হাতে তুলে দিচ্ছেন শ্রেষ্ঠত্বের অভিজ্ঞান।
সেই চিত্রদর্শনে সুন্দরীর সর্বাঙ্গ 
বিচিত্র হাসির গমকে কেঁপেকেঁপে উঠলো
আর সেই উদ্ভটসুন্দর হাসির মুহূর্তটি
শিল্পী বন্দি করে ফেললেন তাঁর ছবির মুখাবয়বে।

দুষ্পাঠ্য শিলালিপির মতো শিল্পশালার এক কোণে
পড়ে রইলো বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই শিল্পকীর্তি।
অবশেষে চোখ পড়লো শিল্পরসিকদের।
অনন্ত বিভ্রমে ভরা আলো- অন্ধকারের রহস্যেঘেরা
বহুমাত্রিক সেই ছবি আলোড়ন তুললো শিল্পীমহলে।

শিল্পীকে পেছনে ফেলে শিল্প এগিয়ে গেলো
অমরত্বের নিঃশব্দ দ্রাঘিমায়।
             

            

             শব্দকথা 





প্রথমে ভেসে আসছিলো জলপথে
পরে আকাশপথেও।
ছড়িয়ে পড়ছিলো নগরে-শহরে,গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র।
ভিনজাতের সাথে শুরু হল ওঠা-বসা,মেলা-মেশা
ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা,মন দেওয়া-নেওয়া--অসবর্ণমিলন।
জাতকের চেহারায় পড়লো তার ছাপ।
ভিনদেশ থেকে উড়েআসা ভেসেআসা শব্দরাশি
নবরূপে ঠাঁই পেলো এদেশের শব্দখনিতে,
হয়ে উঠলো সহৃদয়হৃদয়সংবেদী শব্দবাণ।

কবিরা কুড়োচ্ছিলো শব্দরত্ন 
বিশ্বের বিস্তৃত অঙ্গন থেকে
তখন ক্রমশ জটিল হচ্ছিল সময়
এবং সময়ের কুম্ভীপাকে বিপর্যস্ত হচ্ছিল মানুষ।
সহৃদয় শব্দ এসে দাঁড়ালো তার পাশে,
ঢুকে পড়লো কাব্য-কথায়
গন্ধ পেয়ে ছুটে এলো বিজ্ঞান, এলো প্রযুক্তি ও দর্শন
সাহিত্যকে অভয় দিয়ে বললো: 
হ্যাশ ট্যাগ--মি টু--আমিও আছি।
মহাকাব্য এসে আশীর্বাদ করে বললো  :
সুখী হও,দীর্ঘজীবী হও,
বিশ্বময় গড়ে তোলো অখণ্ড শব্দের সংসার।

আমি তাই বনেজঙ্গলে, পাহাড়েপর্বতে,সাগরেনগরে
শব্দ কুড়োতে বসেছি--যে শব্দ সহৃদয়হৃদয়সংবেদী,
যে শব্দ ভেসে আসে ঢেউয়ে ঢেউয়ে বাতাসে বাতাসে
যে শব্দ পাক হয় বাংলার অদৃশ্য ভিয়েনে।



                    বিভ্রান্তি 



দাঁড়ালাম অবশেষে
সংসারের সমুদ্রবন্দরে
তীরে এসে ভিড়েছে জাহাজ

চলে যাব বহু দূরে
কোনো পিছুটান নেই আর
ফুরিয়েছে জগতের কাজ।

মগজে বেঁধেছে বাসা
অর্থহীন শব্দ রাশি রাশি
সেগুলোকে কোথা রেখে যাব?

কবিতা লিখবো বলে
যা কিছু দেখেছি মর-চোখে
সেগুলোকে কোথায় লুকোবো?

সূর্য অস্ত যায় ডানে
বামে জাগে পৌর্ণমাসী চাঁদ
যখন দক্ষিণমুখো হই

উত্তরমুখো হলেই
অবস্থানে বৈপরীত্য আসে
বলো,আমি কোনদিকে রই।

উত্তর-দক্ষিণ ভেদে
এতই পার্থক্য ফলাফলে
উদভ্রান্ত কোন্ দিকে যাব

সমুদ্রেই দেব ঝাঁপ
যা হওয়ার কপালে হোক
সাঁতরেই সাগর পেরোবো।





        পথপ্রান্তে ঘর 


পথের ধারে ঘর
সেই ঘরের  ভেতর
সারাদিন ছটফট করি দুরারোগ্য রোগের জ্বালায়
কুয়াশার চাদরে মুখ ঢাকে মুমূর্ষু হেমন্তের দিন
আমার অবস্থা যদিও সঙ্গিন
তথাপি বর্ষণশেষে বর্ণালি রামধনুর ন্যায় 
ক্ষণিক খুশির আবেগ আমাকে ভাসায়
যখন চতুর্থ বর্ষীয় পৌত্রী পাশে এসে বসে
বলে,দাদু, হাঁটো,আমার হাত ধরে হাঁটো।
মাঝে মাঝে স্পর্শ করি
অকল্পনীয় দুরাশার উচ্চতম চূড়া
যদি সেরে উঠি
যদি বিধাতা দেন বরাদ্দের অধিক পরমায়ু
তবে দূর করে দেব সর্ববিধ বেজন্মা হৃদয়ের খেদ
ঘুণধরা ভঙ্গুর হাড়ে লাগুক বাতাস
নাতনির হাত ধরে ঋজু হেঁটে চলে যাবো
অহর্নিশ অসন্তুষ্ট এ শহর ছেড়ে
শান্ত কোনো পল্লীর দূরতম কোণে
বেঁধে নেবো বাসযোগ্য প্রশান্ত কুটির
যার পাশে পথ নয়,থাকবে নিস্তরঙ্গ দিঘি।
পৌত্রী বলবে,দাদু, চলো ফিরে যাই
উত্তরে বলবো,তুমি ফিরে যাও দিদিভাই
বাকি কটা দিন আমি এখানে কাটাই
এখানে শহুরে মানুষের  প্রবেশ অবান্তর
এখানে পথের ধারে নয়, পথপ্রান্তে ঘর।


অভিজিৎ পাল



নাম - অভিজিৎ পাল
বসবাস - যাদবপুর, কলকাতা।
বর্তমানে - কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ ও 'কথামৃত' বিষয়ে গবেষণারত।

প্রশ্ন :১:- আপনার কাছে কবিতা কি ? 

উঃ কবিতা একটি বিমূর্ত সত্তা। তাকে লালন করতে হয়। সঠিক পরিমার্জন ও পরিশোধন কবিতাকে তন্বী করে। আমার কাছে কবিতা কি তা আমি জানি না। বলতে পারি একটা স্বতন্ত্র ও বিশেষ ভালো লাগার ক্ষেত্র। 

প্রশ্ন  ২:- আপনার প্রিয় কবি কে ? আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ? 
উঃ প্রিয় কবি অনেকেই। কোনো নির্দিষ্ট একজন নয়। মনের অবস্থা অনুযায়ী কবিতা ভালো লাগে। সেই মতো কবিকে। এক কবির সব কবিতা ভালো লাগবে, তার কোনো মানে নেই।

অনুপ্রেরণা হিসেবে চিহ্নিত করবো আমাদের স্কুলের শিক্ষক দীপক হালদারকে। তিনি সত্তরের দশকের যশস্বী কবি ও গদ্যকার। তিনিই ঠিক ভাবে কবিতাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। তাঁর লেখায় অদ্ভুত একটা অনুভূতি তৈরি হতো স্কুলজীবনে। বাংলা স্যার হিসেবে একজন কবিকে পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমাদের।

 প্রশ্ন ৩:- কেন লেখেন আপনি কবিতা ? 

উঃ এটি একটি ভয়ঙ্কর প্রশ্ন। আমি না লিখলেও বাংলা সাহিত্যের কিছু হানি হবে না। আমার লেখা বা না লেখা দিয়ে কারো কিছু যায় আসে না। সত্যি বলতে কি আমি কেন লিখি তাই জানি না। শুধু বলবো নিজে লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। ২০০৭ থেকে অনেক ছোট-বড় কাগজে লিখেছি। একটি-দুটি পাঠক হলেও আশা করি তৈরি হয়েছে। হয়তো বা নিজের জন্যই লিখি।

  প্রশ্ন  ৪:- আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের  নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত) 

উঃ প্রথম কবিতার নাম মনে নেই। বিষয় ছিল শ্রীমা সারদা দেবী। শুধু মনে আছে স্কুল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল।

২০১৬তে প্রকাশিত হয়েছে 'আমার শ্যাডোগ্রাফি'। প্রায় নিঃশেষিত হয়ে এসেছে। অনেক পাঠক কিনেছিলেন। আরেকটি বইয়ের কাজ ও কথা চলছে। আমার গবেষণার কাজটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন একটি সংস্থা। গদ্যকবিতা নিয়ে আগামী বইটি প্রকাশ হবে

  প্রশ্ন ৫:- কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ? 

উঃ আমি মনে করি সব কবিতা সবার জন্য উন্মুক্ত না। তাই সম্পর্কটি পাঠক তৈরি করেন তার রুচি, পাঠের অভ্যাস প্রভৃতির উপর নির্ভর করে।
     
(সমস্ত বক্তব্যের অনুলিখন করেছেন সুমন পাত্র, তাকে ধন্যবাদ জানাই)




কবিতা 
******
রাই-কৃষ্ণ পদাবলী 
*****************



রাধার বুক চিরে বেড়িয়ে আসে চেনা জানা একটা ব্যথা।
 বিরলে বসে একা পড়তে থাকে ভাবী জীবনের পাঠ। 
ধ্যানবৎ স্থির হয়ে আকাশের ঔদার্য দেখে। 
সেখানে লেগে রয়েছে লাম্পট্যের ঘনরঙ। 
স্থির চোখে একা দেখে মেঘের যাপনকলা। 
যোগিনীর মতো স্থিতধী হয়ে ওঠে গৈরিক আবহ। 
খাদ্য বস্ত্র পরিবারের জৈবিক চাহিদা মুছে আসছে ক্যানভাসে। ত্রস্ত বেণীর থেকে খসে পড়ে বেদনাকাতর ফুলের আলপনা। কেশের মধ্যে কেশবের রঙ খুঁজতে চেষ্টা করে একাকিনী। 
মরে শুধুই মরে। 
পোষা ময়ূরের গলায় আদরের আকাশী নীল স্বপ্ন সাজায়। 
দূর থেকে এক অননুমোদিত কৃষ্ণাতুরার ছবি আঁকে চণ্ডিদাস।


                      (২)

সখীসম্মুখে চেনা কথাগুলোর ব্যাখ্যানের 
পর সামনে এসে দাঁড়ায় প্রশ্নচিহ্ন। 
অনুভূতি বিবর্তিত হয়। 
নতুন ভাবনার মতো প্লট বদলে 
যায় ক্রমশ আকাশের ছন্দে। 
আজীবন চেয়ে দেখব আমি, 
আজীবন শুনব আদিম প্রেম জড়ানো ধ্বনিগুচ্ছ।
 শুধু অতৃপ্তি আর অতৃপ্তি বাঁধব আমার দু'হাতে।
 এখনও বাসন্তী রাত কাটে অজস্র ক্রীয়াকৌতুকে। 
                  বদলে উঠি প্রতিদিন।
 লক্ষ লক্ষ যুগ অতিক্রম করেও 
একটা অজানা অতৃপ্তি জমে থাকে বুকের ভিতর।
 সংজ্ঞা বদলে আসে প্রেমানুসঙ্গের। 
কুঞ্জবনে পাহাড়া দেয় কবিবল্লভ। 
নীচু স্বরে সহমত জানায়।


                              (৩)


ঘরের দরজা কঠিন হয়ে আসছে। 
নেমে আসছে অধরা মাধুকরী মাখানো বৃষ্টির দল।
 দুর্গম পথ হাঁটি অভিসারে। 
একা কৃষ্ণাভিমুখে।
 নীলাম্বরে আবৃত হই। 
মিশে যাই বর্ষার ক্যানভাসে।
 নির্দিষ্ট পুরুষ স্বাক্ষরিত চিহ্নায়ক দৃশ্যে
 অপেক্ষা করে হ্রদের ধারে।
 শঙ্কিত হয়ে উঠি। আকাশ কেঁপে ওঠে ভয়ে।
 ধাঁ ধাঁ লাগে আলোর। 
ধুলোর সাথে মিশিয়ে ফেলি আমার মৃত্যুমুখীচেতনা। 
কবি গোবিন্দদাস পথ চেনায়।
 ক্ষীপ্র বাণ হয়ে উঠি।

      
                        (৪)




মায়াজাল আঁকো নারীর সম্মুখে। 
সম্পর্কের ঘোষণাহীন ফাঁদ পাতো। 
বিরামহীন আভিজাত্যের সঙ্গে 
বৈপরীত্য সাজাই ঘর-বাহির, 
আপন-পর, রাত-দিনের সংজ্ঞায়। 
বদলে ফেলি সব, সব কিছু। 
চেষ্টা করি প্রেমজ আনন্দবিহারে সমাহিত হতে। 
নদীর বুকে ভেসে যায় শ্যাওলার দাম্পত্য। 
ভয় নেমে আসে , এক অজানা অতৃপ্তি ভয়। 
আমিও শ্যাওলার মতো বিচ্যূত হয়ে চলেছি গহনের পথে। কঠোরতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো সামনে। 
মৃত্যুমুখী শরীরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকো স্থবিরতা মেখে।
 দ্বিজ চণ্ডিদাসকে সাক্ষি রেখে আমি মৃত্যুবিলাসী হতে চাই।



                          (৫)



সখির সামনে মেলে বসি দুঃখীর ইমান। 
ভরা বর্ষা মাখানো ভাদ্রদিনে শূন্য হয়ে আসছে গেহ।
 চিত্রকল্পে জমে উঠছে মেঘ। 
আকাশ বাতাস ব্যাপ্ত হয়ে নেমে আসছে শরীরে। 
প্রবাসী কৃষ্ণের অপেক্ষা করি। 
খেদ জমে ক্যানভাস জুড়ে। 
বর্ষার দৃশ্য মনে উঠেই নেমে যেতে চায়। 
ময়ূরের সোহাগ দেখি। মেতে ওঠে দাদুরী।
 ডাহুকীর হাতে তুলে দিতে থাকি 
আমার দুঃখিনী বর্ণমালাদের। 
বুকে জমে ওঠে কষ্ট। 
অন্ধকার আর অন্ধকার জমে। 
দিগন্তে লেগে থাকে গোঙানীর দাগ। 
বিদ্যাপতি এসে সান্ত্বনা মাখানো 
বাক্যিক বিন্যাস সাজায়। 
...............................................................