নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

দেব চক্রবর্তী

অমরেশ 
*****



গতকাল অমরেশ এসেছিল -
রুক্ষ চুল , ক্ষয়াটে চেহারা , অগ্নিভ চোখ....
যেন সবকিছু ছিনিয়ে নিতে চায় ও । 
ওর মভ রঙ্গের ফাটা পাঞ্জাবীর পকেট থেকে বার করলো এক টুকরো হারানো স্বপ্ন । 
আমাকে দেখিয়ে বললো , 'খবর আছে ! '
আমি কোনও উত্তর দিই না । 
দেওয়ার মতো সাহসও আমার নেই । 
তারপর মুচকি হাসি মেখে অগ্নিগোলক চোখ ঠিকরে বেরিয়ে এলো , ' একটা বিড়ি দে তো ! ' 
আমি তাকে সিগারেটের ঠাসা প্যাকেট এগিয়ে দিই । 
' ও , আজকাল বিড়ি খাচ্ছিস না বোধহয় ! ' 
বিড়ি-পোড়া ঠোঁটে বিস্ময়কর প্রশ্ন । 
দুরন্ত ইংরেজী বলা ঠোঁট হটাৎ শুয়ে পড়ল আমার ডিভানে আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো জন কিট্স । 
আমার নিশ্চুপ থাকাটা ওকে আরও বিস্মিত করে তুলল -
' কিরে , কিছু বলছিস না যে ! ভুলে গেছিস নাকি ! ' 
' না.....মানে.....' 
সিগারেটের ধোঁয়া কুন্ডলী পাকাতে পাকাতে অবশেষে মেঝেতে শরীর দিল ছেড়ে । 
কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ঘাড় ঘুরিয়ে নিল ক্লান্তিতে । 

অমরেশ , আমার বন্ধু 
শৈশব , যৌবন পার করে আজও....
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী ট্পার । 
বুকে ছিল পাহাড় উপড়ে ফেলার শপথ 
ভূমধ্যসাগরে দুর্গমের অভিযান করার উন্মত্ত পাগলামি 
আর মননে ছিলো প্রিয় রবীন্দ্রনাথ , কীটস , কাফকা আর চে' র মতো চিন্তাবিদরা । 
গনগনে আগুনের মতো তেজ আর নেই । কিছুটা নির্লিপ্ত । 
তবু পোড়া কাঠের মতো দেহ শ্বাপদ খুঁজে বেড়ায়....
খুঁজে বেড়ায় ধারাশ্রাবণ । 
চিরকুটটি পড়ে দেখলাম , ' তুমি শিলিগুড়ি থেকে ফিরে ফোন কোরো  ' 
নীলা 
ওর 'ভার্সিটির বন্ধু 
ওদের আড্ডায় মাঝেমধ্যে থাকতাম আমিও । 
চা-গুঁড়ো মেশানো গরম জল খেতে খেতে কাফকা পড়ে শোনাতো । 
কতবার যে নীলা ওর ঠোঁট থেকে কেড়ে নিয়েছিলো বিড়ি-তা মনে নেই । 
হিমালয়ের কাঁপন ধরানো কন্ঠে হঠাৎ গেয়ে উঠতো নীলার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ অথবা মহীনের ঘোড়াগুলি । 

দীর্ঘ সতেরো বছর পর ফিরে এলো স্মৃতি....ফিরে এলো কেডি স্যারের ইন্দ্রনাথ....আমার অরাজকতার সংসারে....দশ বাই বারোর জীবনযুদ্ধে....যেখানে আলো পরে না প্রখর সূর্যের , ছোঁয় না কোনও পক্ষের চাঁদ । 
সেখানে শুধুই অন্ধকার আর ধ্বংসের গাঢ় শীত 
' আর চারিদিকে অদ্ভুত আঁধার এক ' ॥ 

সিদ্ধার্থ সিনহামহাপাত্র


      এসো হে বৈশাখ     
     *****************                          


এসো হে বৈশাখ,
বসন্তের একঘেয়ে সৌন্দর্যে
তোমায় স্মরি।
উঠুক প্রবল ঝড়,কাঁপুক মাতৃভুমি,
স্পর্ধা জাহির করুক তোমার আগমনী।

এসো হে বৈশাখ,
শীতের নৈসর্গিক বিলাসিতায়
তোমায় স্মরি।
যাদের মাথার ছাদ অতীত ও আগামী,
তাদের করেছ শিকার
শুনিয়েছ বজ্রবাণী।
যাদের বিলাসিতা কিনেছে বসন্ত,
তোমার বজ্রবাণ তারা করেছে আত্মসাৎ,
তোমার প্রবল ঝড়ে তাদের বিলাসী প্রেমালাপ।

এসো হে বৈশাখ,
শরৎ এর আগমনী কাশবনে
তোমায় স্মরি।
তোমার প্রবল ক্ষোভ শুধু বিরহ কুটীরে!
প্রাসাদ বিলাসী মনে তুমি যে আজও বসন্ত।
তোমার অগ্নিবাণে শুধু বিদ্ধ সর্বহারা,
আর্থিক সুখী গৃহকোণে
তুমি যে বৃহন্নলা।

এসো হে বৈশাখ,
বর্ষার পেখমনৃত্যে আজ
তোমায় স্মরি।
তোমার প্রবাহী প্রকোপে শুধু মুর্ছিত ঘাসফুল।
বিলাসী গোলাপে আজও
বিজীত বসন্তধ্বনি।

এসো হে বৈশাখ,আজ ভিন্নতা পাক প্রাণ।
গাও হে বৈশাখ আজ গাও হে সাম্যের গান

✍️✍️সম্পাদকীয় ...






"এরপর ঝরতে ঝরতে পাতা ,শহরে বিষন্ন মেঘ
পর্ণ মোচী ,নতুন করে বৃষ্টির ফোটায় ,মিশেছে আবেগ ।
মনখারাপি বিজ্ঞাপনে প্রেম হয়েছে জ্যান্ত ,
শিশির ভেজায়নি পা ,ভুল ,ফুলে এলো বসন্ত " ।।


শীত চলে যেতে যেতে পাতার ঝাড়ার শব্দে যেমন ভরে যায় অরণ্য ,মাঠে দূর্বা ঘাসে তখন হাসি হাসি মুখে ফুল ফোটে। আমের মুকুলের গন্ধে ঘুম ঘুম চোখে ভেসে আসে বাসন্তী মেলা ,কিংবা চরকের ঘুরপাক । রং বসন্তে অবিরে ছুঁয়ে দেওয়া প্রেমিকার গাল ,রাঙাতে রাঙাতে সংসারী হয়ে উঠে ভাঙা চোরা সম্পর্ক গুলো । আর গোল্লা ছুটের মাঠে নেমে আসে মৃদু বাতাসের উদ্বেল হওয়া । ভেসে যাওয়া রোমাঞ্চিত অতীতে ,কিংবা নতুন করে ফুলের সুবাসে ফের ভালোবাসায় ।

রক্ত পাত ,মিছিলের মুষ্টিবদ্ধ হাতেও জেগে ওঠে বাৎসরিক বাজেটের দিক নির্ণয় ,নতুন স্ট্র্যাটেজি ,তারপর নতুন বছরে রোদমুখর দিনের শুভেচ্ছা এর মাঝেই ভুল ,ফুলে বসন্ত আসে । মনখারাপি রাতের অক্সিজেনে সাজে তাজমহল ।


তাই এবারের নিকোটিনের সংখ্যা "বসন্ত " তোমার আমার ভিতরের কিছু কথা নিয়ে । সকল কবি/সাহিত্যিক ও প্রিয় সাহিত্য প্রেমী মানুষদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন । অনেক গুণী জনের লেখায় আবার ফুলে ফুলে ভরে গেছে এবারের সংখ্যাও ।
এভাই পাশে থাকুন ,ভালো থাকুন ,ভালো রাখুন প্রিয়মানুষটিকে ।


                                             ধন্যবাদান্তে ,
                                             ঈশিতা দাস
                                           (সহ-সম্পাদিকা)

সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা,

ননিকোটিন ও নিকোটিন পরিবার

রুনা দত্ত




দোল
******




বসন্ত এলে আজও মন হয় যে  চঞ্চল,
 মন জুড়ে থাকে শুধু আবির আর দোল।
শীতের বিদায়কালে ঋতুরাজ আসে দোরে,
 প্রাণ খুলে ডেকে নিই তারে আমাদের ঘরে।

 শিমুল পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার ফুলে,
 ফাগুনের রঙ কেউ ঢেলে দেয় গুলে।
 কোকিলের মধুর তানে আমাদের মনে,
  আবিরের রঙ লাগে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে।

  ঘাসে ঘাসে ফুলে ফুলে রাঙা প্রজাপতি উড়ে,
  রাঙা মুখে রাঙা হাসি, প্রাণ যে সবার ভরে।
  রঙ লাগে আকাশে বাতাসে আর বনে বনে,
  রঙ লাগে তোমার আমার হৃদয়ে আর মনে।

  কারো কাছে দোল খেলা, কারো কাছে হোলি,
 আবির আর ফাগে যেনো আজ রঙের রঙ্গোলী।
  ভেদাভেদ ভুলে সবাই আজ কাছাকাছি আসে
  দেয় রাঙিয়ে একে অপরকে শুধু ভালোবেসে।

 লাল নীল গোলাপী আবিরে হৃদয় আর প্রাণে
  বাজে সুর আনন্দে খুশীতে আর গানে গানে
 বসন্তের সুরে, রঙের বাহারে মন হয় উজ্জ্বল   রঙীন
 মনের মধ্যে ডানা মেলে যতো স্বপ্ন অন্তঃবিহীন

  মনের মণিকোঠায় দোল যেনো মধুর আবেশে,
 থেকে যায় আজীবন ভালোলাগায় ভালোবেসে।
  ফিরে আসুক দোলের এই শুভ মুহুর্ত বারেবারে,
  চঞ্চল মন আনমনা হোক বসন্তে আর আবিরে ।

   

জ্যোতির্ময় রায়



বসন্ত শেষে

************


আজ ফের বৃষ্টি হল ,রাম ধনু আঁকা সিঁদুরে মেঘে
আজ ফের কচু পাতায় জমেছে জল
দূর্বা ঘাসের গা ছুঁয়ে ,খেঁজুর পাতা বাতাসে ,
শিউরে উঠে শরীর ।
কাঁচা আম আর লবণ লঙ্কা গুড়ো ... !
তোমার মিষ্টি ঠোঁট আর রেশমী চুল ...
উষ্ণ কিছু চাওয়া ,কিছু নিরব অভিমান
বৃষ্টি ... তুমি এলে ... স্তব্ধ হয়ে যাওয়া
 শব্দে ফের দিলে প্রাণ ... ।।

বৈশাখী চ্যাটার্জী



কবিতা ছুঁয়ে বেঁচে থাকা কিছু গদ্য কথা 
***********************************




কবিতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে বেঁচে ফেরে কিছু কাকতালীয় সুখ --
বড় রাস্তার মোড় থেকে সরু গলির ঘুপচি ঘর গুলো পর্যন্ত দিব্যি কবিতা ছুঁয়ে বেঁচে থাকে । 
কবিতা ছুঁয়ে বেঁচে ফেরে বড় শহর ছোট গ্রাম । 

সন্ধ্যেবেলায় বাঁশঝাড়ের অন্ধকারের মধ্যে তৈরি হওয়া এক ক্যাচ ক্যাচ শব্দ রহস্য না খুঁজে খুঁজেছিল কবিতা । 
পরদিন সেই বাঁশগাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলেছিল কোন মালতি নামের মেয়ে । 
তারপর আরও কত রাত অতৃপ্ত আত্মারা  ঘুরে গেছে -
কবিতা ছুঁয়ে বেঁচে উঠেছে আরও কত অশরীরী কথা । 

কবিতা আছে বলে মালতি -আশা -লতা -বা সেই কোন এক কবির বনলতা আজও বেঁচে। 
কিন্তু সন্ত্রাস লোভ লালসার ইতিহাস গুলো শুধু বিদ্রোহ করে ফেরে । 

কবিতা আছে বলে ধুলো ঝড় গুলো বয়ে চলে । 
অযথা কিছু মুকুল খসে পড়ে ।    

তারপর কোন অন্ধকারের মধ্যে -কোন স্বপ্নের লাল রঙ ছুঁয়ে আসতে চায় আমেরিকা -ব্রিটেন-লন্ডন -অথবা প্যারিস। 

কাঞ্চনজঙ্ঘার সূর্য ওঠা বা কাশ্মীরের বরফের মধ্যে টুকরো টুকরো অভিমান বঞ্চনার কথা গুলো আলো আঁধারি কবিতা হয়ে বেঁচে ফেরে । 

বড় বড় উঁচু ফ্লাটের ওপর থেকে নিচে তলায় জমা কান্না আর অট্টহাসিরা ফোয়ারা ছোটায় বোতলের । 

সাধারনের পাঁচমিশালী পাঁচফোড়নের কাহিনীতে তেমন কোন কবিতা নেই । 

ঘাম ছোটা জীবনে -আঁচড় কাটা জীবনে -পাশবালিসে লেপ্টিয়ে ঘুমানো জীবনে তেমন কোন কবিতা নেই । 
তবু কবিতার মধ্যে এই ছোট ছোট অনুভূতিরা আটপৌরে হয়ে বেঁচে আছে - বেঁচে থাকে ।

আধঘুম চোখেও প্রতিটা কলমে সজীব হয়ে বাঁচে কবিতা আর কবিতা ছুঁয়ে বাঁচে কিছু গদ্য কথা ॥