নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

খুশবু পারভিন এর প্রতি : হাসিবুল



বয়স আমার কেবল দশ
পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি
মায়ের চোখের সোনামনি ছিলাম
বাবার চোখের পরি ।

পুজোর এক অনুষ্ঠানের
প্রতিযোগিতায় দিতে গিয়েছিলাম যোগ
হটাৎ পথে দস্যু এসে
করলো আমায় ভোগ ।

ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেছি মাগো
কেউ শোনেনি কথা
রাক্ষসের ন্যায় গিলে খেয়েছে
পেয়েছি অনেক ব্যথা ।

জানি কোন ইনসাফ নেই
এই ভারতের বুকে
তুমি মা আর কেঁদোনা ওগো
আমি আছি সুখে ।

বুক চিতিয়ে ঘুরে ওরা
এই সমাজের মাঝে
ইনসাফ নেই এই ভারতে
মাগো যেওনা রাজার কাছে ।


শরীর প্রেমী : ফিরোজ হক


ভালোবাসার জন্য বেঘর হতে চাই
আষ্ঠেপিষ্ঠে প্রতিটি মুহূর্ত আপন করতে চাই
সকল মুহূর্ত ফ্রেমে বাঁধা পড়ে না
অধিকাংশই মনের এক কোণে ঠাঁই পায়।

তৃতীয় নয়ন দিয়ে মুহূর্ত দেখে
 ম্লান হাসিতে মুখপলক ভরে ওঠে
কখনও বা চোখ দিয়ে দু-ফোটা জল...

গানের সুরে সুরে প্রিয়তমা খুঁজে পাই
দুষ্ট-মিষ্ট কথার ভাগীদার হতে
সারাদিন ওত পেতে বসে থাকি।
কখনও বা ক্ষণিকের ভাগীদার হই
কখনও বা ভাগীদারের ভ-ও জোটে না।

ভালোবাসার অঙ্গীকার হিসাবে
গাঢ় আলিঙ্গন থেকে চুমু,
তোমার পাশে আশ্রয় কিংবা
খুব কাছ থেকে তোমায় আপন করতে গেলে
শরীরপ্রেমী আখ্যা পেতে হয়।

আমি অকপটে স্বিকার করে নেই
আমি শরীরপ্রেমী...শরীরকেই ভালোবাসি।
তখনি তুমি সহ্য করতে না পেরে
নিজেকে শাস্তি দিয়ে বসে থাকো।

আর আমার মনের পিঞ্জরায় হুল ফোটে
ধর থেকে দেহ বিচ্ছিন্ন করতে চাইলেও
তোমারি মায়ায় বেঁধে পড়ি...

আর শরীরের প্রতিটি কোণে কাজ করে
গভীর যন্ত্রণা...

লক্ষ্যভ্রষ্ট : সুদীপ্ত বিশ্বাস


পথিক আমি, পথের কাছে কথা আমার দেওয়াই আছে
ঠিক যে ভাবে ছোট্ট নদী ছুটতে-ছুটতে দারুণ বাঁচে!
মাধুকরী করেই আমি পাহাড় দেখে ঝর্ণাতলে
সেই যেখানে অরণ্য-বন ভালবাসার কথাই বলে;
সেই সে দেশে যেই না গেছি ছুটতে ছুটতে হন্যে হয়ে
নদীও দেখি দারুণ খুশি, আমার জন্যে যাচ্ছে বয়ে।
টুনটুনিটার মতই সরল, আমার হাতে রাখল সে হাত
তারপরে তো আপন হল, নদীর সে গান, জলপ্রপাত।
ছপ-ছপা-ছপ সাঁতরে শুধু ডুব-সাঁতারে, চিৎ-সাঁতারে
যাচ্ছি ডুবে উঠছি ভেসে কুল না পেয়ে সেই পাথারে।
এরপরে তো হঠাৎ করে সেই ফোয়ারা উথলে ওঠে
এমনি করেই ঝলমলিয়ে বাগানজুড়ে গোলাপ ফোটে।
গেলাম ভুলে পথের কাছে কথা আমার দেওয়াই আছে
বন্দী আমি আটকে গেছি, আটকে গেছি তোমার কাছে!

অস্তিত্বে: মুহম্মদ আল আমিন


পরিশ্রান্ত দিন শেষে যদি একলা লাগে-
আসবো তোমার ঘুমের দেশে।
মাঝ রাতে যদি মন খারাপ থাকে-
আসবো জোছনার বেশে।

আকাশ জুড়ে শূন্যতার ভরা রোদ্দুরে,
আসবো কায়াহীন ছায়া হয়ে।
নিশি রাতে সজনে পাতার অভিমান ভাঙিয়ে
তারার আলোর মতন দেবো তোমায় ছঁুয়ে।

সব আলো ফুরিয়ে গেলে
আমার দু’চোখের আলোটুকু নিও,
হঠাৎ তোমার ধারায় দিনেই যদি রাত নামে,
তবে সে অন্ধকার আমায় দিও।

তন্ত্র: সঞ্জয় গায়েন


--মানুষকে বশ করতে চাই বাবা। একসঙ্গে অনেক অনেক মানুষ বশ হবে। তার মন্ত্র বলে দিন।
--এ তো খুব সহজ রে বেটা। যা ঘরে ফিরে গিয়ে সবথেকে বড় তন্ত্রের সাধনা কর। একসঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ বশ হয়ে যাবে।
--সত্যি বলছ, বাবা। কিন্তু সবথেকে বড় তন্ত্র! তার নাম কি? আর সেই তন্ত্রের সাধনা কেমন করে করতে হয়?
-- এই তন্ত্রের সাধনা করতে হলে তোকে মানুষের অরণ্যে যেতে হবে। মনে রাখবি এই সাধনায় মানুষই শব। মানুষই সব। সেই মানুষদের স্বপ্নের নেশায় বুঁদ করতে পারলেই কাজ হাসিল। কি রে পারবি তো?
-- পারব।  আমাকে পারতেই হবে। কিন্তু বাবা, এই তন্ত্রের নাম কি?
--ওরে, এর নাম গণ-তন্ত্র।

খোঁজ: নীলাদ্রি হাসানাত



এক টুকরো হাসির খোঁজে  ফিরব কোথায় বলতে পারো? 
গৃহের কোনে? সবার মাঝে? লুকিয়ে আছে হৃদয়ে কারো?

সবার সাথেই মেলাতে গিয়ে,
 সবার মতো হতে গিয়ে
বারে বারে বদলে যাচ্ছি
হারিয়ে ফেলছি নিজেকে যে!
কারণ, ওরা চাইনা আমায়
চাইনা রাখতে কাছে,
কাছে গেলেই তাই তো সবাই
দূর দূর দূর করে। 

খাবার খেতে যাচ্ছি যখন
আহ্লাদে আটখানা
যেই ঘেঁষেছি ওদের কাছে
শুনিয়ে দিল কথা ষাটখানা।

এবার বলো কোন সুখেতে ফিরব তাদের কাছে? 
কোন আশাতে ঘুরব বলো তাদের পিছে পিছে? 
আমিও মানুষ  এই কথাটা যাচ্ছে কি ওরা ভুলে? 

বাবা: মুহম্মদ আল আমিন



চৈত্ররোদে ফেটে চৈচির হওয়া ফসলের মাঠের মতোন- কষ্ট বুকে চেপে

বর্গাচাষী রহিদ মিয়া বেঁচে রয়। মরণ এসে ফিরে যায় বারংবার!

লাঙলের হাতলে হাত পড়তে পড়তে- কড়া পেয়ে বসেছে হাতের তালুতে।



'বউট্যার পেটের ব্যাটাটা য্যান মোর ভরসা হয় আল্লা! "



তারপর-

ভরসা হয়ে জন্মানো ছেলেটা আজ অন্যঘরে- জ্বেলে যায় আশার আলো;

বর্গাচাষী রহিদ আজ অচল- ঘরের আলো, চোখের আলো নিভে গ্যাছে!

গাছের পাতায় অস্থিরতা জাগায়, উঠোনে গড়াগড়ি খায় রহিদের বেদনার্ত স্বর:

বাজান, ও বাজান...মইরবার আগে তোর মুখখান দেইকপার পাইম না বাজান..?

লটারি : পিনাকী কর্মকার


বোধনের বাজনা বাজে ধরার বুকে আজ।
 কৈলাসে দেবদেবীরা করছে নতুন সাজ।
আজকে সবে মহাখুশি মামার বাড়ি যাবে।
শুয়ে বসে চারটি দিন মণ্ডা-মেঠাই খাবে।
সাজগোজ মিটলে পরে বাজলো কাঁসর ঢোল।
কিসে চড়ে যাবে তারা বাঁধল বিষম গোল।
কার্তিক বলে এই বছরে ঐরাবতের পিঠে।
চড়ে যাবো মামার বাড়ি, রোদ্দুর খুব মিঠে।
গণপতি চেঁচিয়ে বলে কি যে বলিস ভাই।
চলনা এবার সবাই মিলে নৌকা চেপে যাই।
সরস্বতী বিরক্ত হয়ে পিছিয়ে যায় দুপা।
নৌকায় আমার ভয় করে তুই তো জানিস তা।
তারচে' চল দোলায় চড়ে মামাবাড়ি যাই।
এই না শুনে লক্ষ্মীদেবী তোলেন বিষম হাই।
ঘোড়ায় চড়ে যাব মোরা চেঁচিয়ে বলে ইন্দিরা।
মাথায় সবার কিলবিল করে নিত্যনতুন ফন্দিরা।
দুর্গা একটা বুদ্ধি করে বলল সবে একসাথে।
আসা-যাওয়া হবে কিসে ঠিক হবে লটারি তে।


কলাবউ :শক্তি পুরকাইত


গ্রামের মেয়েদের সঙ্গে মেয়েটা   কলাবউ স্নান করানো দেখতে  গিয়েছিল ।

আর ফেরেনি
 ফিরে আসে নি ।

 কলাবউ দেখতে গিয়ে
 নিজেই কলাবউ হয়ে গেছে
  কখন জানতে পারেনি ।

 জানতে পারেনি , ওর নিজের বাবা-মা ,আত্মীয় স্বজন ।

শহর থেকে এসেছিল
     গ্রামের পুজোতে
      গ্রামের বাড়িতে ।

তবুও দূর থেকে এখনও
শোনা যায় , ঢ্যাম-কুড়া-কুড়
   ঢাকের বাদ্যি ।

মাতৃ আরাধোনা
 ইয়া দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা ।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ

মেয়েটা শাড়ি পরতে জানত না
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
 শাড়ি পরা শিখেছিল ।

 জীবনের প্রথম ঘোমটা টানতে গিয়ে
লজ্জা পেয়েছিল
ভীষণ , লজ্জা !

মেয়েটা শহর থেকে গ্রামে এসেছিল
মা দুগ্গাকে দেখবে বলে ।

পাড়ার বোখাটে কয়েকটা ছেলে
পিছু নিয়েছিল মেয়েটার
  জানতে পারেনি ।

সুযোগ বুঝে কখন মুখে হাত চাপা দিয়ে তুলে নিয়ে গিয়েছিল
পাশের ধানজমির ভিতর ।

ছুড়ে ফেলেছিল শাড়ি , ব্লাউজ
নগ্ন করে ধর্ষিত করেছিল
মেয়েটাকে ।

পায়ের আলতা ধুয়ে যাচ্ছিল
দেবীবোধনের , দেবীবিসর্জনের ।

মেয়েটা , কলাবউ স্নান করানো দেখতে গিয়ে নিজেই কলাবউ হয়ে গেল কেউ জানতে পারল না ।

শহর থেকে এসেছিল মেয়েটা ।

শরৎকাল: অনোজ ব্যানার্জি



বর্ষারাণী নিলো বিদায়,এলো শরৎকাল,,
বৃষ্টিজলে পূর্ণ এখন,নদী, পুকুর খাল।
সবুজ ঘাসের ডগায় ডগায় শিশিরকণা
 হাসে। বাদল,বৃষ্টি, ঝড়,গরম,গুমোট ,বন্যা,
 হয়তো নেবেই ছুটি। গুটিগুটি পায়ে আসে
 ওই স্নিগ্ধ শীতলবুড়ি। পূজোর সুগন্ধ ভাসে,
 আকাশেবাতাসে।মুক্তো ঝরে, মাটির পরে,,
 শিশিরকণার বেশে,দুর্বাদলে,ঘাসেদের ঘরে।

দুর্বাদলের হীরের ছটায়,চোখ করে ঝলমল,
মরুর বালি হিংসে করে,আঁটছে কত ছল।
অসুরেরা চায়না ভালো,মন্দ শুধুই চায়।
অন্যকে দুঃখ দিয়ে ওরা নিজে মজা পায়।

কাশফুলেরা মিছিল করে নদীর দুটি পাড়ে,
সবুজ গাছের মধুর শোভায়,মন যায় ভরে।।
প্রকৃতি মা উঠছে সেজে,আগমনীর আশে।
ডাকছে মাকে,,দুর্গামাকে,,পূজোর গন্ধ ভাসে।
নতুন কাপড় কিনছে সবে,মনের আনন্দে।
শিউলিফুলের সুগন্ধে  হৃদয় পূর্ণ ছন্দে।
 **-**********

পাগলা নিতাই: কৌশিক গাঙ্গুলি


চারপাশে ধূলো , বালি মাখা পৃথিবীতে ইশ্বরের মতন মাটিতে বসে আছে পাগলা নিতাই । দু চারটে অবশিষ্ট গাছে কাকেরা কর্কশ কন্ঠে গালি দিচ্ছে সব সফলতাকে ।  চায়ের দোকানে বাতেলাবাজেরা প্রচুর জ্ঞান বেলাচ্ছে বোকা ও পাঁকাদের উদ্দেশ্যে ।  মাখন মাখা সুন্দরীরা ব্যাপক সেজে গেস্টহাউসে সেক্স বিক্রি করছে কামুক দু নম্বরীদের ।  বেপরোয়া গাড়ি ছুটে যাচ্ছে বেখাপ্পা রাস্তা দিয়ে । দেশকে রক্ষা করেও মধ্যবিত্তের পেটে লাথি পড়ছে । ভবিষ্যত না ভেবে দেদার জল নষ্ট করছে ক্যালানে পাবলিক । হারিয়ে যাচ্ছে বিবেক বোধ আর মনুষ্যত্ব ।বলো হরিবোল ধ্বনিতে মুখরিত আকাশ বাতাস ।

পরিক্রমণ : শ্যামল কুমার রায়।



জীবনের পরিক্রমণ অ্যাত অদ্ভুত,সর্পিল!
ভাবায়, ভীষণ ভাবে ভাবায়।
এই সেদিনও যা ছিল আগুন রঙা ফুল
আজ তাই আগুনের লেলিহান শিখা।
আবার জ্বলে,পুড়ে ছাই হওয়া জীবন
ঠিক,ঠিক যেন ফিনিক্স পাখি।
শেষ! সব শেষ! শেষের পরেও শুরু।
      ------------------------

আবাহন-৩ : কিশলয় গু প্ত


মাটির প্রলেপ দিস না বুকে মা
খড়ের বাঁধন চাই না
রক্তে মাংসে আসবি যদি আয়
হাজার আলো শুকনো মুখে মা
চড়াই। উতড়াই না
প্রতিদিন চোখ স্বপ্নটা পাল্টায়।

চন্ডীপাঠে পাকদন্ডীই থাক-
গন্ডী কাটা ঘর
রাস্তায় তোর খুব বেশী দরকার
ঠাকুরদালান শূণ্যই চমকাক
নাচুক বছর ভর
তুই ঠিক কর কে কার সরকার।

মাটি লাগুক পায়েরই আলতায়
নজরে আন সন্দেহ
আমাদের সামনে বিশাল খাদ
আয় মা- এবার অস্ত্র হাতে আয়
তুলে রাখ অপত্য স্নেহ
চেখে দ্যাখ বদরক্তের স্বাদ।

   
                 
                              

তোমার আবক্ষমূর্তি :শাহীন রায়হান


পানাম নগরে ঈঁশা খাঁর রাজধানী ডিঙিয়ে
প্রিয়তম কামাগ্নি নদী বার বার ফিরে আসো
পালক ঝরা ভাঙা হৃদয়ে পঞ্চ মোহনায়।
.
তোমার প্রেমময় গোপন চত্ত্বরে কামনায় জেগে থাকা
সূঁচালো কাঁটাতার উড়ন্ত পাখির ডানায় একাকি ছুঁয়ে ছুঁয়ে
কুসুমিত জোড়া নিতম্বে আজও নগ্ন স্বপ্ন আঁকে।
সোঁদা গন্ধে অনন্ত ঝর্ণার অন্তহীন রিনিঝিনি শুনে
প্রতীক্ষার গ্রীবায় জাগা ফাল্গুনী রূপালী চাঁদ
পুরুষত্বের সুখে উষ্ণতায় গলে গলে যায়।
.
কামনা মেঘের প্রার্থণায় তখনও শুধুই তুমি
হৃদয় চত্ত্বরে দাগ কাটা অভিমানী নিশি কন্যা
কতোদিন তোমাকে নিয়ে জীর্ণ ছাদের চিলেকোঠায়
পুরনো টেপরেকর্ডারে সুরের মাতম তুলি না-
গড়িনা তোমার পতিত অন্দরে রক্তস্রোত পেরিয়ে
তোমার আবক্ষমূর্তি-