নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

✍️সূচীপত্র ...




✍️সম্পাদকীয় কলমে

কবিতা
******

অজাত শত্রু
শাল্যদানী
পিন্টু মাহাতো
তৈমুর খান
বৈশাখী চ্যাটার্জী
দেবব্রত সেন
অ mrita
চন্দ্রানী পাল
ফজিহত (দেবস্মিতা চ্যাটার্জী)
অচিন্ত্য রায়
পবিত্র চক্রবর্তী
কৌশিক গাঙ্গুলী
রুপা রায়
সোমা বিশ্বাস
সায়ন্তনী হোড়
সুকান্ত মণ্ডল
তপময় চক্রবর্তী
অসিতাভ দাস
মায়িশা তাসনিম ইসলাম
তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়
সুদীপ ঘোষাল
কাজী জুবেরী মোস্তাক
সিদ্ধার্থ সিনহামহাপাত্র
মহাজিস মন্ডল
জয়শ্রী রায় মৈত্র
সন্দীপ ভট্টাচার্য
অনোজ ব্যানার্জী
শরীফ সাথী
শুভদীপ পাপলু


অনুকবিতা
*********
অষ্টপদ মালিক

অনুগল্প
******
জিবেন্দু রাজবংশী 

✍️ সম্পাদকীয় কলমে






"জমছে ধুলো মনের কোণে ,বিকোনো আবেগ
তুমি বৃষ্টি চেয়েছো ,আমি সাজাই মেঘ "


আকাশে মেঘ জমলেই ,বুকের ভিতর যেন কেমন কেমন করে উঠে প্রতিবার ।অভিমান ,অজুহাত গুলো নিঃস্তব্ধতায় পাহাড় বনে ...আর রং বদলানোর নামে জল ছুঁয়ে যায় খেঁজুর পাতা ।বৈশাখে ,সাজানো ঘর পুড়েছে ভীষণ রোদে ,ঘামের দামে বিক্রি গেছে কখনো ভালোবাসাবাসির অজুহাত কিংবা পেরোডি ।
চোখের সব টুকু অশ্রু শুকিয়ে গেছে পুকুর ,নদী ...।


তারপর হঠাৎ মেঘ জমে এলে ঘুমোট গরম হওয়ায় "বেশ ভালো আছি'র " মিথ্যে অভিনয়ে দিন যাপন ।ডাল ভাত ফুরিয়ে গেছে শেষ পাতে ,বেনামী কোনো উপন্যাসের মতো ।।



তাই এবারের এই "মেঘ" সংখ্যা ।প্রতিবারের মতো এবারেও  এক গুচ্ছ কবিতা ও কথায় ভরে উঠেছে "তোমার আমার কথা" ।।
সকল কবি ও লেখক/লেখিকা মহোদয়কে নিকোটিনের পক্ষ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।পাশে থাকুন এভাবেই এই আশা রাখি ।ভালো থাকবেন ,ভালো রাখবেন প্রিয় মানুষটিকে ।


"এখানেই শেষ নয় , আরো কিছু কথা আছে ,যেহেতু "তোমার আমার কথা" নিয়েই নিকোটিন তাই আজ কিছু আমার কথা বলা হোক , হ্যাঁ আমি নিকোটিনে ,অভ্যাসে নয় লোকের বদঅভ্যাসেই মিশে থাকা ,রোজ পুড়তে থাকা ,ঘাত প্রতিঘাতের সাক্ষী ।"

অনেকটা ঝড় বয়ে গেছে ইতি মধ্যে নিকোটিন প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রমে বলতে পারেন ।আমি একা কি করে চালবো বলুন ,লেখা সংগ্রহ ,এডিটিং ,লোকের খিস্তি ,অপমান তো আছেই । নিজে লেখা ছেড়ে দিয়েছি এরজন্য ,কোনো ম্যাগাজিনে আর লিখছি না ,টুকটাক ছবি আঁকছি ,টাও বাজে । আর এদিকে বেকারত্ব জাকিয়ে বসেছে আমার ভিতর । এর মধ্য দিয়েই শুধু একা চালিয়ে যাচ্ছি এই " নিকোটিন" ।
আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনার লেখা বেরোলে অবশ্যই share করবেন । আজ কাল অনেক জনকেই দেখি লেখা পাঠায়, লেখা বেরোয় কিন্তু কোনো দিন একবারও নিজের চাহিদায় ব্লগে ভুল করেও সার্চ করে দেখে না । আমি তো কিছুই চাইনি আপনাদের কাছে ,আপনাদের লেখা গুলো যেভাবে লাইন না ভেঙে ,সাজিয়ে ,গুছিয়ে আমি ব্লগে দেই ,একটা তো আশা থাকে ,যে একটু কমসে কম নিজের লেখাটা পড়ে দেখুক কবি/ লেখক ,নিজের লেখাটা share করুক ।


যাইহোক আপনাদের জন্যই এখনো বেঁচে আছে এই "নিকোটিন " আশা করবো বাঁচিয়ে রাখবেন ...যেমন আছে ।





                                      ধন্যবাদান্তে ,
                                 জ্যোতির্ময় রায়
                               ( কার্যকরী সম্পাদক)

**
অনেক অনেক ধন্যবাদ এবারে নিকোটিনের মেইন প্রচ্ছেদ আঁকার জন্য মনোরঞ্জ সরকার মহাশয়কে ।


এবারের প্রচ্ছেদে
**************

জ্যোতির্ময় রায়


অজাত শত্রু

                     
   


                             মেঘ 

                            (১)



ভীষণ অসুখের মত মন খারাপি চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সেই ছেলেটাও সিগারেতে আগুন জ্বালায় আলতো ভাবে ।


হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় মিস কলে ।এক বছর ব্লগ লিস্টের ফোন নাম্বারটি ভেসে উঠে স্ক্রিনে ,চোখ মুখের ঝাপটায় ঘুম তবুও ভাঙ্গে না ।।


সেই মেয়েটি আজ আর জানালার বাইরে তাকায় না ।ভীষণ অভিমানে ,"মেঘের রিডে হারমোনিয়াম" বজায় অন্য সুরে। সবার মাঝে খোঁজে প্রথম ঠোঁট ছোঁয়ার মুখ ।।


ক্লান্তি গুলো এখন আর ভেজে না ,বিকেলের বৃষ্টিতে ভিজে ফেরেনি সেই ছেলেটিও আজ ।। বৃষ্টি ধরেছে উল্টো ছাতায় ।।

                              (২) 



 ঘুমহীন  আজ শহরে ভীষণ মন কেমনের অভিমানে,
ঝাপসা আলায় চোখ পুড়েছে ,ছায়ার ভিতর অন্য গানে ।।

গল্প গুলো আজগুবি হয় ভীষণ রকম কম দামি ,
"ছলচাতুরীর হওয়ার ভিতর ক্লান্তি নিয়ে  হাঁটছি তুমি আমি ।।"

রোদের সাথে ভাবমিতালি ,জানলা জুড়ে কাটাকুটি খেলছে সে ।
"ব্যর্থ প্রেমের দিব্যি" নিয়ে আঁকছে ছবি কার্নিশে ।।

ঠিক তখনই বৃষ্টি হবে ,জামার উপর বোতাম আটা ,
মনকেমনের গল্প গুলো ভীষণ দামি ,সিগারেটে পুড়ছে ভালোবাসা ।।




                       
                        (৩)


রোজ রাত পাহারা ,মনকেমনের চৌকিদারী ।
ফিরবে বলে আর ফেরে না।মন বাড়ি ।।

গল্প গুলো হয় পুরোনো,চোখে ভিতর চোখ দেখে।
ইচ্ছে ঘুড়ির সুতো কাটা।দাগ কেটেছে ছক রেখে ।।

বাসতে ভালো চায় না আর সে ,ভীষণ রকম এগুয়ে।
সিদ কেটেছে অতীত কোনো।মন-শহর'এ থাক  শুয়ে ।।


হঠাৎ তখন মেঘ করেছে ,হাঁটছি তবু উচিয়ে ছাতা ।
হাঁটুর উপর জল ভিজেনি,নিরবতায় ড্রইং খাতা ।।




শাল্যদানী






সব্বাই চুপ!



ওরা এতো কথা বলছে কেন?
অপূর্ব শ্মশানের নিস্তব্ধতা বেশ ছিলো
মাঝখানে ঝনঝট ওই ওদের কথা,
যাদের কথা ফুরায় না
বলতে বলতে থেমে গিয়ে একটু আগে জল খেলো।
জলের জন্য বাজনা
জলের জন্য খাজনা
কথা এভাবেই বইতে থাকলো।।

আমিতো ঘামছি এত বলার রোদে
ওমনি ফিক করে হেসে ফেললুম,
আরে আমিওতো বকে চলেছি!

সামনের শ্বেতপাথরের টেবিলটা এখনো-
হালকা গেরুয়া দাঁত নিয়ে হাসছে
তার উপরে রাতের খাবার বহনের দায়
সেও আলুচচ্চড়ির স্বাদ বোঝে এঁটোকাঁটায়
কবিতা লেখে মনে মনে,
শোনাবার কেউ নেই
তাই নিজে নিজে শুনে নিজে নিজে হাসে
হালকা গেরুয়া দাঁত নিয়ে

তার হাসি শুনতে গেলে ওই ওদের কথা বলাটা বন্ধ করা দরকার,
আমিও চুপ করবো
আলুচচ্চড়ি কবিতা শুনবো
গোলমরিচ চায়ে চুমুক দিতে দিতে


পিন্টু মাহাতো




সমুদ্র ছুঁতে চাই না 


কখনও সমুদ্র ছুঁতে চাইনি আমি
ভয় হয় যদি শুকিয়ে যায়....!!
তাহলে...........??
বালির নগ্ন শরীরে খেলবে পুরুষাঙ্গ.....
ঢেউএ কাতর শঙ্ক, শ্যাওলা ফিরবে নির্ভয়ার জগতে.........
মৃত্যু, এক জঘন্য মৃত্যু...........
ধীরে ধীরে ঝাপসা হবে প্রতিবাদী মোমবাতিরা,
আরও ফিরবে ধর্ষকের নির্মম শাবল....
ক্ষতবিক্ষত হবে সতীত্ব যুগের নেশায়....
আঁধারে ছুঁতে আসবে কিছু কালো হাত,
মুখ চেপে বলবে "চোপ শালি....."

না, না...... আমি অপরাধী হতে চাই না,
আমি সমুদ্র ছুঁতে চাই না.................. ||

                 

তৈমুর খান



দিঘি


একটা দিঘি খুঁড়ছি মনে মনে
আর ভাবসলিলে ভরিয়ে চিচ্ছি
পদ্ম ফুটুক, আমার শব্দপদ্মগুলি

কেউ জলকুমারী সাঁতার দিতে আসে
ঢেউ ভাঙে সে দেখি
তার রূপের প্রদীপ জ্বলে
অঙ্গে অঙ্গে অনুভূতির শোভা

জেগে জেগে আমার কত রাত চলে যায়
আমার কত দিনের ক্লান্তি দেখতে থাকে
এই অবাস্তব জলাশয়

তবুও রোজ স্নানের পর ভাষা খুঁজে পাই
ভাষার অন্ন, ভাষার ভালোবাসা
ভাষার হাঁস উড়ে উড়ে এখানেই নামে

একটা দিঘি খুঁড়ছি নিজে নিজে
দিঘির পাড়ে দারুণ পলাশ বন
পলাশ বনে শুনি কোকিল ডাকে…

বৈশাখী চ্যাটার্জী



মেঘ গুলো 



ছোট ছোট মেঘ জমে আছে দেওয়ালের গায়ে । 
সারা ঘর মাঝে মাঝে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ঝরে , 

জমা মেঘগুলো ওড়ে , 
জমা মেঘগুলো ঘোরে । 

বালিশ বিছানায় ভিজে ভাব 
শরীরে জ্বরের তাপ । 

ছোট ছোট মেঘগুলো জমে থাকে । 
নিকানো উঠোন -মনমেঘ উড়ে তাতে ,  

আকাশের থেকেও দূরে যেতে চায় ,
তবু গন্ডিটুকু ঘিরে বৃষ্টি ঝরে যায় । 

                 

দেবব্রত সেন



মেঘ 



সময় বলছে আয় ভাসিয়ে নিয়ে যাব
      আকাশ ছিদ্র পথে......
ভরাট করে দেব নদী নালা মাঠ
দেখবে সূদৃশ্য প্রহরীর মতো
আমি তখন মেঘ...............
যখন রাশি রাশি মিলে যাই তখনই হই মেঘমালা
আমি মেঘ হলে কি হবে...
আমি ভালোবাসি পৃথিবীর যা কিছু আছে সকলকে ...
হিংসা আমার নেই......
আমি চুম্বন আর আলিঙ্গনের ছোঁয়ায় ভালোবাসি
আমার হৃদয়টা কোমল.....
একবার ছুঁয়ে দেখবে পুরুষ তুমি
আমার জাতও নেই, ধর্ম নেই
ধর্ম নগরে আমার ধর্ম ভালোবাসা
আমার বিরোধীরা আমার কাছে তৃপ্ত হয়
যখন বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরি...

অmrita




বৃষ্টি বোধন 




বৃষ্টি শেষে ঘামের শরীর,কে কিভাবে ভিজতে চায়,
আবেগ ভেজায় গল্প কারও,চোখ ভিজে যায় নির্দ্বিধায়।।

সন্ধ্যে হলে জানলা খুলে মোম জ্বালানোর গল্প কোরো,
বর্ণমালায় মন ডুবিয়ে আঙুল ছোঁবে পদ্মকোরক।।

এমনি রাতে আসতে হবেই,তবুও তুমি ভয় দেখাও,
কান্না মোছার আগলানো হাত বুঝতে পারে খুব একাও।।

যে কোনোদিন পথ ভুলবো,কিন্তু তুমি যত্নে থেকো,
কষ্ট হলেও তমাল গাছে মোহন বাঁশি সামলে রেখো।।

ফিরবোই তো,তোমার কাছে, রাত শরীরে উজান বেয়ে,
চওড়া বুকে ঘুম খুঁজেছি  অর্ধচেনা চন্দ্রাবতী মেয়ে।।
                                                   

চন্দ্রানী পাল





মেঘ বালিকা 



আমি যখন ছোট....
      পড়তাম,
একচালার ওই ঘরে
মেঘবালিকা হঠাৎ এসে
আমায় প্রশ্ন করে...
এই মেয়েটা,নাম কিরে তোর!!
আমি বললাম...বৃষ্টি..
হেসেই সে গড়িয়ে পড়ে..
বলে,লাগলো ভারী মিষ্টি।
অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি
নেই তো পাশে কেউ....
তবে কি আমার স্বপ্নে আজ
নীল আকাশের ঢেউ!!

সন্ধ্যাবেলা মা যখন
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালে,
আকাশ পানে তাকিয়ে
এ-মন অন্য কথা বলে..
আকাশ থেকে ঝুপ করে
মেঘবালিকা আসে...
গালটি টিপে আদর করে
বললো,ভালোবেসে....
এই মেয়ে,তুই যাবি আমার সাথে!!
মেঘের সাথে ভেসে যাবি
রূপকথার ওই দেশে যাবি
নীল পরী, আর লালপরীর
দেখা ও পাবি শেষে....
এই মেয়ে তুই যাবি....!!
স্বপ্ন না সত্যি তা...
আজ ও মনে ভাবি...!!

ফজিহত (দেবস্মিতা চ্যাটার্জী )



মেঘ 



ও মেঘ!আমার সভাবে-অভাবে জড়িয়ে থাকা ঘর-
ও মেঘ!উষ্ণ প্রেমে ধরে থাকা এক ভীষণ জ্বর।



ও মেঘ!অযথা নেতিয়ে যাস দিলের অশ্রু সেজে-
ও মেঘ!বরফকুচি তল তোর,বৃষ্টি হয়েও পাইনা খুঁজে।



ও মেঘ!বারিষ যে গুলফাম রসে কাঁদিয়েছে তোরে-
ও মেঘ-ছাই হয়ে ঝড়ে পড়িস,স্রেফ!আমারই কবরে।

অচিন্ত্য রায়




গাছ 



বন বিক্রি হলো বন্যতার হাতে
অক্সিজেন কোথা পাবে মৃত্যু স্তুপে
কাটো আরও বেশি করে কাটো
গড়ো নগর মহানগর রাজপথ সভ্যজগৎ

তারপর একদিন গাছের তলে বসে বলো
আঃ কি প্রশান্তি!
গাছ তোমাকে চোখ রাঙাবে না...
বলবে না তুমি অপরাধী ।

বরং বলবে আর একটু জিরিয়ে বন্ধু
আমি তোমারই জন্য শিকড়সমেত
মাটি আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছি ।

পবিত্র চক্রবর্তী

চিরাচরিত গল্পের বাইরে


সে সময়টা ছিল বৃষ্টি আর বিদ্যুতের সঙ্গমকাল ,
বিদ্যুতের মৃদু আদরের ডাকের কাছে মেঘের অভিমান
সব বাঁধ ভেঙেছিল । তুমি এমনই এক বিকালে প্রশ্ন
করেছিলে , বৃষ্টি আর বিদ্যুতের লিঙ্গ কী !! ভাবতে
ভাবতেই একটা বাজ বেশ তীব্রতা নিল , আর , তুমি
আশ্রয় নিলে আমার আধ-খোলা বুকে । প্রকৃতপক্ষে
এদের লিঙ্গ পরিচয় কাব্যে থাকলেও আমার কাছে
অর্থহীন । তোমার শরীরময় ভিজে গন্ধ , আমার বুকের
উষ্ণতা , এদের পরিচয় নারী-পুরুষ হলেও ,
ভয় আর আশ্রয় অপেক্ষা করে না লিঙ্গ পরিচয় দিতে ।

আজও নেমেছে বৃষ্টি । এখন আমার শরীর ভেজে
চিরাচরিত ছন্দে । তোমার ধুয়ে গেছে কবেই চুল্লির আগুনে । উষ্ণতার ভিন্নতা । স্মৃতি সময়ের অন্তরালে
জমায় পলি । খালি বুকে ভরাট ক্ষয়িষ্ণু চিহ্ন ।
সব কিছুর কী লিঙ্গ হয় ? বৃষ্টি তোমার বজ্র কোথায় ??

কৌশিক গাঙ্গুলি



ছদ্মবেশী 



কেযে আসল
কেযে নকল ?
সব কিছুতেই ছদ্মবেশ
সবকিছুতেই আহা বেশ !
তারা ছিল , তারাই আছে
নানারূপে কাছে কাছে
নুন আনতে পান্তা ফুরায়
বিরিয়ানীর গল্প শোনা যায়
হাড়হাভাতে স্বাধীনতা চায়
মিথ্যাকে পাশে খুঁজে পায়
এতো দারুণ বেশ বেশ
ঠগেদের গায়ে উপকারীর
ছদ্মবেশ .... ।

রূপা রায়






ভালো থেকো 



যদি কোনদিন ছেড়ে চলে যাও,
সাথে তোমার দেওয়া স্বপ্ন গুলো ও ফিরিয়ে নিয়ে যেও।
যেদিন তুমি জানতে পারবে, তোমার আমার ইচ্ছেরা একসাথে আর উড়তে পারবে না নীল আকাশের বুকে,
সেদিন না হয় তোমার  ইচ্ছে ডানা সরিয়ে নিও আমার থেকে।
তুমি সরে থাকতেই পারো বেশ অনেকটা তফাতে,
দুজনের মাঝখানে টেনে দিতেই পারো সীমারেখা;

কোন দায়বদ্ধতা ছিলো না কখনো,
গড়ে ওঠেনি কোন বিনিময় প্রথা,
তোমার সাথে যে সুখ টুকু ছিলো
ছিলো এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
আজ তবে বুঝতে পারিনা অনেক কথা আদৌও কি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যায়, বোধহয় যায়!
হয়তো বা যায় না;
তখনই ভালোবাসা  তখন ইমুখ ফেরায় যখনই তা বাসি হয়ে যায়,
ফুলের মালায় যে ভালোবাসা সাজে তা কখনো চিরন্তন সুখের হয়না,
কাঁটার সাজে সাজালেই তা বেঁচে থাকে প্রখর উত্তাপে।

ভালোবাসি এই কষ্টের কাঁটা নিয়ে
হাসিমুখে বিদায় দিলাম তোমায়,
যাও তুমি মুক্ত ;মুক্ত বিহঙ্গের মতন বেঁচে থাকো,
আর  এইটুকু বলে যাই ভালো থেকো ভালোবাসা।।


সোমা বিশ্বাস




মেঘ বালক 


মেঘবালক, তোমার নাকী এখন ভীষণ জ্বর !
বৃষ্টি হয়ে ঝরবে তুমি কবে ?
চাতক হয়ে বসে আছি, তোমার পথ চেয়ে
বিদ্যুৎটা হুঁঙ্কার দিলো সেই যবে ।
মেঘবালক, মেঘবালক, হবে কি আমার সখা ?
তোমার জন্য পুঁতেছি টবে চারা ।
তুমি যখন ঝরঝর বেগে আসবে বৃষ্টি নিয়ে,
ফুটন্ত গোলাপফুল নিজেই দেবে ধরা ।
মেঘবালক, মেঘবালক, আর কিছুক্ষণ থাকো
যাবার জন্য কীসের এত তাড়া ?
বৃষ্টিটাকে সাথে রেখো, খেয়াল রেখো তার,
তাকে হারালে তুমি আসলে ফণি মণিহারা ।


সায়ন্তনী হোড়





মেঘের গল্প 




    নীলচে আকাশ কে ধার
   করে নিয়েছে কিছু কালো মেঘ 
   সেই মেঘেদের উপন্যাসে 
 ভেসে  যাচ্ছে সব স্বপ্নের নৌকা
  হঠাৎই মেঘের অন্তরালে  
   বৃষ্টির ত্রিভুজের আভাস ।
   
 একটা সবুজ মাঠের পারে
   পড়ে থাকে বৃষ্টিদের গল্প 
    পড়ে থাকে সেই 
      মেয়েটার গল্প . . .
 যার কাছে ছেঁড়া শাড়ির
 শব্দগুলো খুবই বাস্তব 
অথচ সে ও একদিন মেঘেদের 
রাজ্যে পরী হতে চেয়েছিলো  ।।


                                          

সুকান্ত মণ্ডল




মেঘ কাহিনী 




তখন মেঘ, আকাশ থেকে দূরে অধ্যয়নে;

চুপচাপ মনে শপথ, হাজারো ত্যাগস্বীকার 
মাঝে মাঝে পিছুটানে যায় থমকে।

দিনরাত একাকার সাধনার জলোচ্ছাসে,
শেষে সিকেভাগ স্বপ্ন, মেঘের দরজায় বর্ষে।

তারই উচ্ছাসে আত্বহারা মেঘ;
সব পিছুটান ফেলে নষ্টের স্রোতে,
নিজেকে হারাতে চায় মা-এর চোখের জলে।

ফেরারী মেঘের আকাশ ঢাকে কালোমেঘে,
চারিদিক নিশ্চল ;ভিতু প্রবাহের বন্যা।

মেঘের শেষ সম্বল ,পরম প্রিয়- 
মা, মেঘের জীবন থেকে মুক্তিলাভে স্বর্গবাসিণী।

তপময় চক্রবর্তী




মেঘ বৃষ্টি 


ইচ্ছে গুলো বড় হচ্ছিলো বিসর্গ এর অন্তরে,
আমার আবেগ-অনুরোধ ছুঁয়ে যায় বুদ্বুদে,
ছুটে পালিয়ে দাঁড়াই এসে রাস্তার শহরে,
লাম্পস্টের গোড়ায় দাবদাহে একলা ডুবে,
আত্মত্যাগের কোনো কারণ না হলেও,
এ মাটিতে বৃষ্টি কবে নামবে...
জিভে সব নোনতা লাগে,
মোটা মোটা অশ্রু বিন্দুর উপর ভর দিয়ে , 
 লক্ষ্য বোকা টিকটিকি ও ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে,
বৃষ্টি থামছে না, গাভীর মতো মেঘ ভেসে চলেছে...
দুপুরের ক্যারাম আর রোদে ঘাম লুকিয়েছে রুমালে,
অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ গর্ত বানিয়ে সংসার পাতলো জীবনে,
নীল দেওয়ালের বুকে সাদা বকের ছাপ যায় উড়ে,
ঠান্ডা বরফ আঙ্গুল গুলো ভয়ে কেঁপে হারিয়ে ফেলি সম্মানে,
বেঁচে আছি, থাকবো চুপচাপ ,পাই না শুধু বট গাছে,
পুরো ক্যান্সার এখন ফুটবল,কালোটাকা,পরস্ত্রী ও ল্যাদে !

অসিতাভ দাস



মেঘ 



মেঘ বললেই মনে পড়ে যায়
চম্পা টুডুর বুক ।
মেঘ বললেই মনে পড়ে যায়
লালাঝরা উজবুক ।


মেঘ বললেই আসর জমে
কষা-চিকেন আর মদে।
মেঘ বললেই কচি হরিণী
পা রাখে ঠিক ফাঁদে।

মেঘ বললেই মুখ চেপে ধরে
রক্তনেশার সুখ।
মেঘ বললেই মনে পড়ে যায়
বেকারত্বের দুখ্।

মেঘ বললেই কাজ শেষে সেই
অনুতাপে হয়তো জ্বলা।
মেঘ বললেই ভালো হতে চেয়ে
খারাপ পথেই চলা।

মেঘ বললেই ছায়া হয়ে আসে
রাজনীতির এক হাত।
মেঘ বললেই ভুলে যেতে হয়
পশু, মানুষের জাত।


মেঘ বললেই
এই মেয়ে তোর মুখ দেবো পুড়িয়ে ।
মেঘ বললেই
আড়চোখে দেখে চলে যাও এড়িয়ে।


আয় রে বৃষ্টি, আয় রে শ্রাবণ
আয় রে সজল ধারা।
মেঘটাও আজ কাঁদছে অঝোর
সদ্য শিশুর দ্বারা ।

মায়িশা তাসনিম ইসলাম





গোলাপ চক্র



গ্রীষ্মের অভিধান মুখস্ত করে আসা ভালোবাসা
        বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করে
                    শরতের আসন্ন মৃত্যু!
বজ্রের আঁকাবাঁকা সরু দাঁত
          আকাশে নিয়তির অট্টহাসি!
জল-করুনায় ভিজে থাকা পথে
     কিছু ম্যানহোলের জিভ হয়ত খুঁজবে        
                      নোনাজলের স্বাদ!

শরীরের স্পর্শগুলো ধুঁয়ে দিতে চাইবেন
          বৃষ্টির যিঁনি রক্ষণশীল স্রষ্টা...
পা থেকে মাথা অবধি সজল চাবুকের বাড়ি!
     হে শ্রাবণ, তুমি তাঁকে বলে দাও
তাঁর ক্ষমতা তিঁনি নিজেই করেছেন সসীম,
অদ্ভুত মেঘ-প্রচ্ছদে কামার্ত প্রেমের অন্য বরষায়।
শ্রাবণের এই অবাধ ধারায় ভিজবে না কোনোদিন
    স্পর্শধারায় রচিত মস্তিষ্কের সংবিধান।

এক একটা ধারার উন্মোচনে,
     ইতিহাসের নির্লজ্জতা এসে দাঁড়িয়ে যায়!
ভালোবাসার রাষ্ট্রে বসে
     ঐতিহাসিক মহাশ্মশানের আয়োজন!
চামড়ার কাফন উলটে পালটে দেখে, 
     ভাগ্যচিতায় সাজানো শরীর ছাই বানায় ধর্মের পাপ!

দিক বেঁকে যাওয়া নদীস্রোতের অনীহায়
                    ছাইগুলো থেকে ফুটে ওঠে 
                               প্রথম দিনের গোলাপ!
শুরু হয় আরো একবার
           প্রণয়ের বিনিদ্র নেশায় 
             পেলব রাত্রিগুলোর অবগাহন!
কিন্তু কোন এক শ্রাবণদিনে
     সেই গোলাপ আবারো শুয়ে পড়ে 
                               ভাগ্যচিতার আসনে!
এভাবেই জন্ম-জন্মান্তর পুড়তে থাকে 
    রক্ত-লালের
           আজন্ম পুরাণ।

তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়




মেঘের পাড়ায় 


সেদিন যখন হাত বাড়িয়ে ডাকল আকাশ,
আমি তখন পা বাড়ালাম মেঘের পাড়ায়।
এক সাদা মেঘ অমনি দেখি পাল তুলেছে,
আমিও তাকে পাঠিয়ে দিলাম তোর ঠিকানায়।
মেঘদূত ওই মেঘটা তখন তোকে ছুঁলো।
আবার সে ফিরে এল তোর ইশারায়।
তখন দেখি মেঘের মনেও মেঘ জমেছে।
বললো আমায়- তুই ভুলেছিস আমার কথা।
এমনি করেই দূরে গেলে সবাই ভোলে,
আয় মেঘ আয় লুকিয়ে রাখি মনের ব্যথা।
আমার আর মেঘের চোখে তখন  শুধুই জলের ধারা,
ঝাপসা মনে সোঁদামাটির গন্ধমাখা নক্সিকাঁথা।।

সুদীপ ঘোষাল





মেঘ 


মাটিমাখা মেঠো মেয়ে তুমি বৃষ্টি মাখো
মায়ের ঐশ্বরিক পরশের মত তোমার হৃদয়
বেলি ফুলের সুগন্ধে ছুটে আসা অবোধ বালিকা
পলকহীন নয়নে কাজ ভুলে যায়...



বৃষ্টি ফসল ফলিয়ে ভরে উঠুক
আরও প্রাণ আরও আলো
ভালোবাসা ছড়িয়ে  ছুটে চলে আঁধার পেরিয়ে...

কাজী জুবেরী মোস্তাক






ওরা ভুলে গেছে 



মাঝে মাঝে ওরা বেমালুম ভুলে যায়
এ বাংলা কোন ব্রিটিশ কলোনী নয় ,
নয়কো জারজ পাকিস্থানী কলোনী ৷

মাঝে মাঝে ওরা বেমালুম ভুলে যায়
যে,আমার টাকাতে ওরা বেতন পায় ,
খেতে পায় আমার ফলানো ফসলে ৷

মাঝে মাঝে ওরা বেমালুম ভুলে যায়
যে,আমার ভোটে ওরা ক্ষমতায় যায় ,
অথচ আমার উপরেই ছড়ি ঘোরায় ৷

মাঝে মাঝে ওরা বেমালুম ভুলে যায়
এই দেশ কোন স্বৈরতান্ত্রিক দেশ নয় ,
এদেশ স্বাধীন সার্বভৌম একটা দেশ ৷

মাঝে মাঝে ওরা হাতে হাতও মেলায়
আবার বুকে জড়িয়ে নেয় অবলীলায় ,
আহ্ কি সুনিপুন ওদের সে অভিনয় ৷

আমার মাথাতেই কাঁঠাল ভেঙে খায় 
তাকেও আবার শূলে চরায় নির্দিধায় ,
হাতে মেলানো হাতটা সাতবার ধোয় ৷

মাঝে মাঝে ওরা অতীতটা ভুলে যায় 
শেকড়কে ভুলেই শিখড়ে উঠতে চায় ,
দেশকেও বাঁশের খাঁচা বানিয়ে ছাড়ে ৷

সিদ্ধার্থ সিনহামহাপাত্র






মেঘ বন্দনা
 

প্রতিবার এসেছ তুমি,
অপলক দৃষ্টিতে চেয়েছ আমার পানে।
আমি খোলা আকাশের নীচে
অপেক্ষারত তোমার আহ্বানে।
তোমার সিক্ত পরশে
আমি ভিজেছি সর্বক্ষণ।
তুমি আগামীর কামনায়
ভিজিয়েছ গর্ভবতীর ওষ্ঠ।

তোমার পানে চেয়ে শুস্ক ধানের ক্ষেত অপেক্ষায়,
ফসলের কামনায় চাষি করজোড়ে প্রার্থনায়।
তোমার আগমনে ঘোষিত হয় জীবন,
বৃষ্টি তোমার গর্ভধারিণী অমুল্য সন্তান।

হে প্রাণময়ী মেঘরাজী,
তোমার গর্ভজাত সন্তান ফিরুক
মৃতপ্রায় মাতৃভুমির শুস্ক বক্ষদ্বয়ে।
তোমার গর্জনে প্রাণ পাক মেঠো ক্ষেত।
তোমার হৃদয়বীণার সপ্তসুরে
     বেজে উঠুক করমের গান।

মহাজিস মণ্ডল




জলছবি 


                       
একা একা ভেঙে যাচ্ছি রোজ
একটা হলুদ আকাশে উড়ে যাচ্ছে একটা পাখি
ঠিকানাবিহীন চিঠির মতো


কোত্থাও কোনও অস্থিরতা নেই
পুকুরের জলের মতো স্থির হয়ে আছে সমস্ত রঙ
কাচের আয়নায় ও কার মুখ দেখি


রবাবর আঁকতে হলে জলছবি
অবয়বে ধরতে হয় তার সমস্ত রূপ
যেভাবে আকাশ ধরে রাখে বুকে আস্ত একটা চাঁদ।

অষ্টপদ মালিক


স্বচ্ছ ভারত 


রাস্তাঘাটে ময়লা ফেলে কি মজা পাই
রোগ জীবানু ধরবে যখন পালাবার পথ নাই !
স্বচ্ছ ভারত গড়ব এসো
দূর হবে সব মনের ক্লেশ-ও
বাঁচার মতো বাঁচতে হলে সুস্থ সমাজ চাই ।



প্রত্যয়

মাথায় হাত রেখে যে কথা বলেছিলে
আজ সে কথা রাখতে পারবে না জানি
দিন বদলে সম্পর্কের সুতোয় টান
প্রত‍্যয়ের শিথিল শিকড় দৃশ‍্যমান ।

জিবেন্দু রাজবংশী




গরীব ঈদ 


আজ বিহানে যখন নামাজের সুর ভাইসে আস‍্যা
খড়ের ছাউনি দেয়া ঘরত করিম মিঞার লাশটা তখন ঝুলছে ।
তাঁর বেটা আর বিবি যখন ঈদের খুশিত মাতিবার কথা
 তখন করিমের নিথর লাশ আগা করি রাখে শোক পালনে ব্যস্ত
গেরামের বিবি তো সুর টানে টানে কাঁদে আর বলতে থাকে
"কেহ নাহি কেহ নাহি গরীবের জন্যে ফেরেস্তা কাঁথা মুড়ি দিছে রে বেটা"
"আগে জাইনবার পাইলে মোর কানের দুল বেইচা ঈদ মানাইতু।"
"হে আল্লাহ তুই বড় নিঠুর "
১২ বছর বয়সী করিম মিঞার বেটা 
বাপের বুকের মাথা রাখে হায় রে কি কান্না
"বাজান তুই কই গেল, তুই কই গেল বাজান"
বাজান মুই তোর ঠেনা কিছুই চাহনি"
এমন দিনত মইলে করিম কেউই নাই
আখন আছে খালি একটা নিথর লাশ আর দুখান শোকাতুর মানুষ।
শেষ কাজ করিবার মতন মাইনষের যে বড় অভাব
গরীব মাইনষক কে নিয়ে যাবে গোরস্থান?
করিম মিঞা কি আর মরিবার চাহিছিলো বেটা আর ফুটুফুটে বিবিক ছাইরে।
কিন্তুক সেই কবে থেকে করিম বেটা আর বিবিক ঈদে নয়য়া কাপড় দিতে চায়
সেই একটা ছিড়া শাড়ি আর বেটাটা একখান ছিড়া শার্ট পরে বেড়ায়
দিলে না দিলে না বড়লোক মোল্লারা করিমক  বাইচবার দিলে না।
খুটরিত জইমে থয়া টাকা সব নিছিল কাইহরে।
কাপড় দিবা না পারার দুঃখে করিম মিঞা মইরে গেল্।
কিন্তু তাঁর বেটা আর বিবি তো কাপড় চাহিনী,
শুধু মাইগেছিলো কমদামী গরীব ভালোবাসা। 
সেটা করিম মিঞা বুইজবা না পায়ে গরীবের দায়ে মইরে গেল্।।

     


হিজল গাছের ছায়া 
******************




কলেজ থেকে সামান্য দূরে চার পা হেটেই একটা ছোটো জমির পাশেই পুকুর ধারে একটি বেশ ছায়া প্রদানকারী হিজল গাছ। নিরিবিলি জন-মানবহীন একটা জায়গা চুটিয়ে প্রেম করা যায়।
সাগর একজন  দ্বিতীয় বর্ষের কলেজে পড়া ছেলে ভালোবেসেছিলো তারই বান্ধবী নদী কে। সেতো সাগর নয় যেন জলের প্রাচুর্যের মতো কবিতার অসীম ভান্ডার । আর নদী যেমন প্রতিদিন বয় তেমনি প্রায় কেঁদে ফেলত মেয়েটা সাগরের কবিতা শুনে। অবশ্য একথা অনস্বীকার্য যে নদী কিন্তু সাগরের কবিতা শুনে নিজের আবেগকে থামতে না পেরেই তার প্রেমে পড়েছিলো।ওই যে কলেজের প্রথম দিন সাগর ক্লাশে সেই কবিতাটা শুনিয়েছিল না রবীন্দ্র নাথের "হঠাৎ দেখা"।এভাবেই তো ওদের রিলেশনটা শুরু। সম্পকের্র প্রথম দিন সাগর ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল নদী কে সেই ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় হিজল গাছের নিচে।হিজল গাছের নিচে বসে ভালোবাসার পৃথম দিনেই সাগর নদীকে শুনিয়ে ছিল জয় গোস্বামীর কবিতা '"ঈশ্বর ও প্রেমীকের সংলাপ"
               — ‘সে যদি তোমাকে অগ্নিতে ফেলে মারে?’
:বিনা চেষ্টায় মরে যাব একেবারে
— ‘সে যদি তোমাকে মেঘে দেয় উত্থান?’
:বৃষ্টিতে, আমি বৃষ্টিতে খানখান
— ‘সে যদি তোমাকে পিষে করে ধুলোবালি?’
:পথ থেকে পথে উড়ে উড়ে যাব খালি
— ‘উড়বে?– আচ্ছা, ছিঁড়ে দেয় যদি পাখা?’
:পড়তে পড়তে ধরে নেব ওর শাখা
— ‘যদি শাখা থেকে নীচে ফেলে দেয় তোকে?’
:কী আর করব? জড়িয়ে ধরব ওকেই
বলো কী বলব, আদালত, কিছু বলবে কি এরপরও?
— ‘যাও, আজীবন অশান্তি ভোগ করো!’........""
            নদীর দু-চোখ ভোরে জল এসেছিল আবেশে। দূরের ওই মাঠের স্নিগ্ধ বাতাস, হিজল গাছের শীতল ছায়া সব কিছু যেন দারুন ভাবে আলোড়িত করেছিলো নদীকে।আর তক্ষুনি নদী জলস্রোতের মতো কলকল শব্দে বলেছিল - "আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি সাগর খুব"। প্রথমদিনের কাটানোর দারুন অম্ল-মধুর আমেজ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল দুজনই।
           সম্পর্কের ১বছর হলো যেদিন ,সেদিন সাগর নীল পাঞ্জাবি আর নদী গোলাপি শাড়ী পরে এসেছিল।দুজনে বসে কথা বার্তা চলছে এমন সময় হঠাৎ করে আনমনা হয়ে সাগর আওড়াতে খাকে জীবনানন্দ দাশের "বনলতা সেন"
                "..........হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি.......
           আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন..."
এই একবছরে কত যে কবিতা শুনিয়েছে  সে নদীকে একমাত্র হিজল গাছটি ছাড়া কেউ জানে না।  এই তো কবে যেন ঠিক মনে পড়ছে না সেদিন সাগর Robert Browning এর .."Meeting at Night" কবিতাটা নদীর চোখে চোখ রেখে বলেছিলো।
      ".....and a voice less loud,though its joys and fears,
             Than the two hearts beating each to each!"
কবিতা যখন থামল নদী তখন বিভৎ্স মায়া নিয়ে সাগরের দিকে চেয়েছিল।একদিন সাগর নদীকে বলেছিলো যে তাকে সে বিশ্ব কবিতা দিবসে এক গুচ্ছ কবিতা শোনাবে।২১শে মার্চ কথা মতোই এসে নদী সাগরের অপেক্ষায় বসে ছিল হিজল গাছের নিচে।কিছুক্ষন পর ফোন আসে নদীর কাছে।ফোনের ওপার থেকে জানান দেয় সাগরের একসিডেন্ট হয়েছে।
                     (৭ দিন পর)
সাদা কাপড় পরে একটা মেয়ে গাছের নিচে বসে আছে।মুখটি এখন তার দারুন মায়া,দেখলেই যেন কান্না পাবে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে।আর বিড়বিড় করে একরাশ কবিতা হেসে হেসে শুনিয়ে যাচ্ছে কাকে যেন? আর অস্থির আশা নিয়ে সাগরকে জিজ্ঞেস করছে 'ভালো হচ্ছে তো?' কিন্তু শুনবে কে তার কবিতা?সাগর ? সেতো বেঁচে নেই। যে কবিতার কোনো শ্রোতা নেই,আবৃতি শুনে বাহবা দেবার কেউ নেই।সেই কবিতা আবৃত্তি শুনে কে তাকে উত্তর দেবে যে ভালো না খারাপ হয়েছে।এভাবেই প্রতিদিন দিশাহীন নদী যার সামনে একরাশ কবিতা আওড়িয়ে যাচ্ছে সে এক স্থির শান্ত শীতল হিজল গাছের ছায়া । হ্যাঁ হিজল গাছের ছায়া।

"কোনও একদিন ফিরে এসো,যে কোন
একদিন যেদিন খুশি....
.....
আমি খুব বেশী চাইছি বলে
আমি চাইলে কখনও তুমি না দিয়ে
থাকোনি।(তসলিমা নাসরিন)।। 


          ~~সমাপ্ত~~

জয়দীপ রায়


মেঘপক্ষ 


ঘন কালো আবছায়া
লুকিয়ে আছে কার্নিশ ধেয়ে
এক প্রেয়সীর কায়া
কালো ওই দুরবীন রেখা
বর্ডার দিয়ে...
একটা পুরুষ এঁকেছি
ধ্রুবের বুকে
তীর ধনুক ওয়ালা
মানুষটার বদলে ওকে
খাড়া করব
পাশের সিংহাসনে
যোনি আঁকবে
প্রসবস্থলে জন্ম নেবে বিকেল
আরেকটা বৃষ্টি পক্ষে। 
                                 

জয়শ্রী রায় মৈত্র


   ওরে ও মেঘ  



ওরে ও মেঘ 
তুই এত চঞ্চল ?
ভোর হতে না হতে এক কালো শামিয়ানায়
ঢেকে ফেলেছিস আকাশের রঙ,

বিশাল কালো ওড়না উড়িয়ে
দু’হাতের বন্ধনে খিড়কি পেরিয়ে
এ কোথায় নিয়ে এলি ?
বিশাল অজানা সফরে,

ঝমাঝম ঝুম ঝুম তালে
জুড়িয়ে গেল সারা শরীর
একমুঠো উত্তেজনার উল্লাসে
হারিয়ে দিলি মন ?,  

আজ কি তুই শান্ত হলি ?
প্রেমাসিক্ত আলিঙ্গন লেপনে
“হারিয়ে যাবার নেই মানা”-য় 
বর্ষণ মুখর ভালোবাসার আঙিনায় ।।

সন্দীপ ভট্টাচার্য



       আমি'র কাহিনী 



         
একটা অনুপস্থিতি 
ধাওয়া করে রাত দিন সময় অসময়
স্বপ্নের মতো দীর্ঘ আকাশের মতো বিস্তীর্ন
তাড়া করে ট্রাম বাস রেস্তোঁরা বিছানায়

একটা ঢেউ দুলিয়ে দেয় মন অজান্তে
রক্তাক্ত "আমি" খোঁজে একটা ঠিকানা
ক্লান্ত কেরানি ঘামের বাষ্পে গুমোট মেঘ
মনখারাপি রেলিঙে অপেক্ষা বৃষ্টিঘ্রাণ

আপাত রঙীন আচ্ছাদনে নাগরিক ধুকপুক
দূরত্ব দীর্ঘতর ক্রমশঃ চাওয়া পাওয়ার
হারাচ্ছে কেউ একটু একটু করে সামাজিকতায়
সময় কোথায় ঝড়া পাতার গল্প শোনার

আসলে জ্বলতে থাকা অহরহ
আর জ্বলে পুড়ে ছাই হওয়ার অপেক্ষা
মাঝে কিছু মিথ্যা মনের রঙে বানানো 
আর বাকিটা নির্বাসিত সেই আমি'র কাহিনী

অনোজ ব্যানার্জী


   এসো কালবৈশাখী



   ‎
ঐ ডাকছে গুরগুর,ভয়ে বুক দূরদূর কাঁপে,
‎নীলাকাশে জমছে কালোমেঘ,
‎আলো কাঁদে, আঁধারের দাপে। 
‎কী ভয়ংকর, কী দুর্বার, কালো কালো
‎মেঘের মিছিল।পাগলী প্রকৃতির,
‎অসহ্য খেয়ালে,ভয়ে সবে...
‎ঘরে আঁটে খিল। ক্ষুব্ধ প্রকৃতিরাণী,
‎সেজেছে আজ, এ কোন রণে???
‎লেগে যাবে হানা্হানি,দাপাদাপি,
‎গাছেগাছে বনেবনে। আকাশ মাটিতে
‎নিবিড় মাখামাখি,বিজলীদীপ্ত
‎লিপ্ত চুম্বনে।ঝরে পড়ে প্রেমের সুধা,
‎অবিরত ধারাবরিষনে।এলোমেলো
‎কুন্তলরাশি,বড়ো বড়ো লাল লাল
‎আঁখি।এসো ঝনঝন প্রলয়নৃত্যে,
এসো ‎,এসো প্রিয় কালবৈশাখী।
ধুয়ে দাও,মুছে দাও,করো সাফ,
আছে যত জমা জঞ্জাল।....
যত পাপ,যত তাপ,করো হরণ,
হে মহাকাল।
ভেঙে দাও, দাও করে তছনছ, 
অন্যায় অত্যাচারী  যত গাছ....
ডালপালা, ফুলফল তার।করো
ধ্বংস গভীর জলের মাছ।
এসো টর্ণেডো,এসো টাইফূন,
পাপের প্রাসাদ দাও গুড়িয়ে,
এসো বজ্র,এসো বিদ্যুৎ, পাপাচারী
চিত্ত,দাও পুড়িয়ে।ধনীদের অবহেলা,
অহংকারে,ঢালো জল,আরো  জল,।
বঞ্চিত বুকে তৃষিত মুখে,দাও জল,
ঝরঝর,শান্তির কলকল।নতুন প্রাতে,
নতুন সূর্যালোকে এই ধরণী করো,
উদ্ভাসিত।এসো এসো কালবৈশাখী,
নব মনেপ্রাণে, সবারে করো উল্লসিত।