নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অমৃতা রায় চৌধুরী





সমাজ-পুরাণ




শৈশবের ছোট্ট পাড়া, শৈশবের বাড়ি,
বর্তমানে পুকুর ঘিরে নতুন ফ্ল্যাটের সারি।
ফ্ল্যাটের নতুন বারান্দাতে নতুন নতুন মুখ;
স্কোয়ার-ফিটের মাপা ঘরে একলা থাকার সুখ!
ছোটো ফ্ল্যাটে সবই মাপা 'রোদ-হাওয়া-জল',
মৃদু হাসি, চাপা কান্না, মাপা হট্টগোল ।
একই সাথে বাস করা আজ খেয়াল পুরাতন,
এখন শুধু দেখা হলে, মৃদু সম্ভাষণ -
ছোট্ট 'হ্যালো', হালকা হাসি, অল্প কথা বলা;
সযতনে দূরে থাকার জন্য এড়িয়ে চলা। 
একলা থাকতে চায় যে মানুষ, এক‌লা সংসার, 
একলা তুমি, একলা আমি, একলা চারিধার!
একলা থাকতে চাইতে চাইতে বাবা-মা'ও পর,
নানান মাপের বৃদ্ধাশ্রমই তাঁদের নতুন ঘর।
একবিংশ শতক আজ কানে দিয়েছে মন্ত্র; 
মানুষ এখন আবেগহীন, হৃদয়বিহীন যন্ত্র ।
সবখানেই প্রতিযোগিতা, সবাই প্রতিযোগী,
ত্যাগমন্ত্র জানে'না কেউ, সবাই চরম ভোগী।
হানাহানি ও হিংসা তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে আজ,
ভালোবাসা-মমতা-স্নেহ'ই  শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ।। 

পায়েল খাঁড়া








দেওয়ালি




আলোয় আলোয় ঝলমল করছে মন্ডপ।বৈদ্যুতিন সজ্জা মাকড়সার জালের মতো শাখা ছড়িয়েছে রাতের কালচে দেওয়াল জুড়ে।চারপাশে পোড়া বারুদের গন্ধ আর থেকে থেকে শব্দ বাজির বিকট উল্লাস বুঝিয়ে দিচ্ছে আজটা অন্য পাঁচটা দিনের চেয়ে আলাদা।
অমাবস্যাটা অবশ্য পুরোদস্তুর লোপাট হয়নি।তার আপাতত ঠিকানা বড় রাস্তার উল্টো দিকে ফুটপাতের একচিলতে উদ্বাস্তু সংসারটায়।একটা টিমটিমে লুন্ঠনের আলো কোনো রকমে পাল্লা দিচ্ছে মধ্য কার্তিকের ঠান্ডার সাথে।তার বিষন্ন আভা একটা ফ্যাকাসে প্রশ্নচিহ্নএর মতো লেপে আছে শীর্ণ কচি মুখটায়।
"মা, আমাদের দেয়ালি কবে আসবে?"
"আসবে রে আসবে, একদিন ঠিক দেয়ালি আসবে --দেখিস; আর সেদিন চারদিক শুধ আলো আর আলো!"
সহসা একজোড়া বেপরোয়া তীক্ষ্ণ আলোয় ওদের চোখ ধাঁধিয়ে গেল।সেদিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো অস্ফুটে বলে উঠল মেয়েটা-- "মা, ওই দেখ_দেয়ালি_আসছে....."
মায়ের আর্তনাদ হারিয়ে গেল উৎসব মুখর শহরের শব্দের ভিড়ে।


চৈত্রী চৌধুরী





পূজো





পূজো কিন্তু সবার কাছে খুশির পুজো হয়না। 
তোমাকে কি পুজো এলেই হাতছানি দেয় আয়না? 
নতুন শাড়ি, নতুন জুতো, জামাকাপড় আর গয়না? 
সবার কিন্তু এত খুশি, এত মজা সয়না। 
পূজো কিন্তু সবার কাছে খুশির পুজো হয়না।।

যে ট্রেনটা পিষে দিলো এত লোকের দেহ।
যে বন্যা কেড়ে নিলো মা-বাবার স্নেহ।
যে ঝড়টা তান্ডব হয়, শুধুমাত্র বয়না।
পূজো কিন্তু সবার কাছে খুশির পুজো হয়না।।

যে ছেলেটার মাথা ন্যাড়া, মা মরেছেন স্ট্রোকে,
যে মেয়েটা ভুগছে এক কঠিন জরা রোগে,
যে লোকটা ভিক্ষা করে, খায় কিংবা খায়না! 
পূজো কিন্তু তাদের কাছে খুশির পুজো হয়না।।

যে ছেলেটা গুলি খেয়ে বুকে এখন মৃত।
যে মেয়েটা রেডলাইটের নিচে অনাবৃত। 
বনের পাখি কয়েদ করে পুষছ ঘরে ময়না?
পূজো কিন্তু তাদের কাছেও খুশির পুজো হয়না।।


আমার বাবার পা ভেঙেছে, তাতে কার কি?
ঢাকির গায়ে নেইতো জমা, নোংরা কত! ছিঃ!! 
সবাই ব্যস্ত দুগ্গা নিয়ে, কেউতো ফিরে চায়না।
পূজো কিন্তু সবার কাছে খুশির পুজো হয়না।।


প্রণব রায়





গদ্যে ভরা আলাপী সন্ধ্যায়




অনন্ত  গদ্যে ভরা 
   এক আলাপী সন্ধ্যায় খুব জানার ইচ্ছে...
    ফন্দিবাজ আশার আলো একবার জ্বলে
    একবার নেভে একান্ত আলাপচারিতায়,
    নিজেকে উদ্ধারে ব্যস্ত আমার সময় ঘড়ি
    টিক টিক জীবন খাতায় খরচের আঁচড় 
             কেটে রক্তাক্ত করে ,
      নিজেকে ঘষা কাঁচে অস্পষ্ট মনে হয় ,
      কখনও বা স্বচ্ছ শিশিরে আলোর জ্যোতি 
                          প্রতিসরিত হয়.....
       যাকে দেখার ছিল তাকে পাইনি এখনো
       স্বপ্নের পালক খুঁজে তাই
                            এতগুলো বসন্ত বাড়ন্ত ;
       কখনও মরীচিকায় ভরা ব্যাথিত মন 
                         ভাবে বসন্ত আগত দ্বারে 
      কখনো ভাবে...
      না, এ যে বসন্তের মাঝে পাতা ঝরানোর 
                     অভিসন্ধি শীতের পদধ্বনিতে
      যার নেই কোন স্বীকৃতি এ মনে 
      পেলনা এক চিলতে হাসির আলিঙ্গন 
     শুনেছে অবিরত দুঃখের গাথা রোজনামচা,
      জুড়িয়েছি প্রাণ হৃদয় বাতাসে ,
      সুখের দিনে যে ছিল নিষেধ পাহাড় 
             আমার অমরাবতী তে
       সেই যে প্রকৃত নিষেধ ভালোবাসা ছিল,
       যার প্রয়োজন ছিল এ পূজারীর
       কিন্তু ভক্তি বিনা সে পূজার নৈবেদ্য 
       সাজানোই থাকলো পেলনা রাঙা চরণ 
       এ পূজারী শুন্য দেবাঙ্গনে 
                      শুন্য থাকলো ..............।

সুধাশ্রী মণ্ডল




প্রেমময় তোমাকে




আমার মন কেমনের মেঘলা বেলায়,
বৃষ্টি ধোয়া ভিজে শরতের আকাশ
মেঘ বৃষ্টির খেলায় অনিমেষ মোহময় !
নিশীথ রাতে অমাবস্যার নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে ,
ঝোড়ো হাওয়ার ইন্দ্রজালে প্রেমময় তোমার
পথ হারানোর কথা ভাবতে গেলেই
আকুল এ মন হাহাকারের তীব্রতায় স্তব্ধ হয়ে রয়
আমার ঘুমহীন অভিমানী অকাল আষাঢ়ের
কাজল ঘন মেঘে
ক্রমাগত শুধু জল থই থই শাঁওন.....
দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় জল ঝরতেই থাকে ;
দেখি, সহসা বিষাদ আগুনে
সাতরঙা রামধনুর শ্যামলিমাটুকুও পুড়ে
মিশমিশে কালো ছাই ,
এলোমেলো চুল অগোছালো মন
মৃদু সুগন্ধ এ হৃদি জুড়ে
উদাস ব্যাকুল আমি তখন শুধু দুহাত ভরে
পথের বাঁকে পড়ে থাকা
ঝরা ফুল দলের দুঃখ কুড়োই !
অশ্রু রাঙা তুলিতে দিগন্ত পারে ঐ যে  সুদূর
আকাশের  নিস্তব্ধ  আঁধারের নৈঃশব্দ্যের বুকে
চাঁদের ছবি আঁকি....
মেঘবতী জোছনাকে চুপিচুপি  বলি
আমাদের আকুল  ভালোবাসার গল্প ,
ভাবি, দূর গগনের সহস্র লক্ষ  তারার মাঝে
ও চাঁদ  " তুমি " কি আর কারো নয় ?
শুধু কি মোর একার হবে ?

রাত্রি আরো গভীর হলে ,
দুচোখ যখন  ঘন হয়ে আসে ঘুমের চাদরে,
ঘনায়মান আঁধারে ডুবে যায় ঐ মগ্ন চরাচর, 
বেহায়া রাত পাখিটা ও হয়তো গেয়ে ওঠে
ছন্দহীন কোনো তান
হয়তো তখন " গান হয়ে " মোর অস্থিরতায়,
হৃদয় মাঝে তুমি ও এলে , মেখলা বিছানো পথ ধরে
ঠিকানার ভুলে ভুল পথে আবেগের ব্যাস্ত পারাপারে
অমনি শুরু হল
' আমার  ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে '
দিগ্বিদিকে
ঝমঝমিয়ে মুষল ধারে  বৃষ্টি  পাগল পারা ,
আমিও তখন  সেই সৃষ্টি ছাড়া তুমুল বৃষ্টির তোড়ে
উদ্ভ্রান্ত দিশাহারা ,
ভীষণ জ্বরে কাঁপছি, শুধু তোমাকে ছাড়া....
ঠিক তখনই আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে
হয়তো দূরে তোমার পাড়ায় বিদ্যুতও যে চমকালো ,
আমি তখন মনকেমনিয়া  কষ্ট মেখে
বুকের আরো গভীরে গুমরে মরা কান্না  রাখি  ,
চূড়ান্ত অপ্রেমে অবহেলায় উপেক্ষায়
বিষাদে বন্য  নিষাদে
খুব কাছেতে তোমায় অনুভব করতে পারি

তারপর ধরো,
সেই মুষল ধারে বরিষণ ধারায় তোমার সাথে ভিজে
আবার আমার  ঠান্ডা লেগে গেল !

আমার আবহমান হাহাকারে কবিতায় ঝরে পড়া
চোখের জলের আড়ালে , তোমাতে বিমুগ্ধ
এ পোড়া মন আজও যে
শুধু তোমাকেই খোঁজে বর্ষাস্নাত ... !

তুমি কি এখনো আমার অরূপকথার চুপকথায়
শিউলি ফোটা ভোরের আকাশ হবে ?


অক্ষয় কুমার সামন্ত





কবি হতে পারো নি 




এখনও যদি মাসিক কিছু রোজগারের ভেতর
নিজেকে হাঁটা চলা করতে দ্যাখো
মাথার মধ্যে চলা কিছু হিসেব নিকেশ
তোমাকে বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়
তাহলে বলবো দারিদ্রতা দোষী নয়, তুমিই দোষী
তুমি কবি হতে পারো নি --
কবিত্বের মধ্যে কোন দারিদ্রতা নেই।

এখনও যদি প্রতিবাদী কথায়
তোমার কলম চুম্বন না করে
সমাজ ফোটাতে তুলি না ধরো
বুলেটের সামনে নিজেকে ছুঁড়ে দিয়ে
বলতে না পারোঃ এই ধরো কবিতার পাতা
আমাকে মেরে ফেলার আগে আগুন ধরাও
আর তার উত্তাপে বাষ্প হোক
তোমাদের রক্তে মিশে থাকা সব সাধ --
তাহলে বলবো তুমি কবি হতে পারো নি
কবিত্বের মধ্যে কোন ভয় নেই।