নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অকালে বর্ষণ : অনিন্দ্য পাল


পাঁচিলের উপরে পেরেকগুলো ভেজারোদে মাখামাখি
দুটো শালিখ সেই উল্টানো পেরেকের শাসানি ভুলে
নাচছিল
খুনসুটি করছিল
আর বৃষ্টিতে ভিজছিল
                                 এখন আইনত বসন্তের শেষ
বর্ষার ধারা নামে ঝুরঝুরে আইনের মত
এখন কি খুব দরকার ছিলো
                                         বৃষ্টির ?
বসন্ত শেষ হয়নি এখনও
টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে আছে গ্রীষ্ম
বৃষ্টির কনভয় কোথাথেকে ঢুকে গেল
                                                      অকাল নিয়মে?
দরকার ছিল কি খুব ... এ বসন্তের শেষে
আকাশ-মেঘ আর দেবদারু গাছের দুঃখ দুঃখ খেলা?
দেবদারু পাতা থেকে স্রোত
নেমে এল অন্ধকূপ থেকে
নিদ্রা গেছেন দেব

অপ্সরীদের এখন ঋতুকালীন ছুটি
                                            ভেজা শিথিল রোদ্দুর
                         স্নান সেরে হেসে ওঠে বিফল বসন্ত
                  ভেজা হাসি থেকে ঝরে 
পারলৌকিক ফোঁটা

কান্না যদি বলা যায় সেই সব অকাল বৃষ্টিস্বরে
কবুতর মন তবে
                  ভেঙেচুরে নেমে আসা
                                           আকাশ আঁকড়ে ।

স্বপ্ন-পরী : মিঠুন কর্মকার


আর ঝরো না ও বৃষ্টি ভাই
                     দোহাই লাগি তোর,
তোর লাগি আজ বন্ধ হয়েছে
       নৌকা ক্ষেয়া দেওয়া মোর।
মাঝি আমি ক্ষেয়া দিয়েই
              মোর সংসারখানি চলে,
অতুরে দূরে বিদ্যুৎ চমকাইয়া
   কে যেন আসিতেছে দুলে দুলে।
কাছে আসতেই হৃদয় মোর
                  কেঁপে চলেছে হন হন,
কোন পরীর দেশ থেকে
            আজ তার অত্র আগমন ।
ভুলে গেছি আমি মাঝি
             দেখে এই অপ্সরীয় রূপ,
যেন স্বর্গ থেকে হেথায় এসে
           দিয়ে চলেছে দর্শনীয় সুখ।
বৃষ্টিতে ভেজা কালো চুল
                 আর চঞ্চল চক্ষু দুই খানি
হৃদয় ব্যাকুল করা কণ্ঠ স্বরে বলিল,
                আমায় পার করে দেবে তুমি?
কথা নয় যেন মুখ দিয়ে তার
                  বয়ে চলেছে অমৃতের ধারা,
আমি নিরবে নৌকা চালিয়ে চলেছি
                              লগি ও দাড় দ্বারা ।
হঠাৎ ভঙ্গিত হলে নিদ্রা
                     বসে পড়ি বিছানায় ,
একি দেখিলাম আমি,
কেন জাগিয়ে দিল বিধাতা মোরে হায় !
ছোট্ট বেলায় অনেক
                 পরীর গল্প শুনছিলাম আমি ,
স্বপ্নে দেখা দিয়ে আজ আমার
                  এ কি অবস্থা করিলে তুমি?
হে বিধাতা আমার সাথে
                       খেলিলে এ কি খেলা ,
আমি পাগলা নৌকায় পড়ে থাকি
                      সকাল সন্ধ্যা রাত্রি বেলা ।

বিষন্ন অপেক্ষায়: কৌশিক গাঙ্গুলি


অনেকদূর চলে যেতে যেতে
মনে হয় বলতে ভুলে গেছি
আসি বলে আসতে ,
আমার অপেক্ষায় বুড়ি মা
এখন অস্হির হয়ে আছে ।
তবু হাঁটছি চোখের জল মুছে
সামনে রুক্ষতা , সবুজ হারিয়ে গেছে , দেওয়ালেতে রক্তের দাগ যেন মানচিত্র ।
কে কাকে চিনতে পারছে বা পারবে কিনা তা নিয়ে শীতল প্রতিযোগিতা ।
তবু হাঁটছি অনেকদূর , রুক্ষতা
কুটিল কিংবা জটিল জীবন পেরিয়ে ,
অপেক্ষায় আছে বুড়ি মা , চোখের জল অবিরাম ,
এক বিষন্ন অপেক্ষায় .... ।
মনে হয় বলতে ভুলে গেছি
আসি বলে আসতে ।

চাতক পাখি : সুমিত মোদক



হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে এসে
চাতক পাখিও চেয়েছে জল ;
বার বার বলেছে ---
চোখ গেলো , জল ঢালো ....
কে আর জল ঢালবে !
জল ঢালার কেউ যে নেই এখানে  ;
বৃষ্টিও আর হয় না ;
প্রকৃতিও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে
এ পরিত্যক্ত গ্রাম থেকে ;
#
এখানে এক সময় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতো
আষাঢ়-শ্রাবণ-ভদ্রে....
এখানে এক সময় সোনালী ধান ফলতো  ;
সবুজে সবুজের সমারোহ ;
পুকুরে পুকুরে ডুবসাঁতার , চিৎসাঁতার....
#
ওরাও একদিন পুকুর ভরাট করলো ,
খাল ভরাট করলো ,
কেটে ফেললো গাছ ;
বাদ পড়লো না ভূগর্ভস্থ জলও. . .
#
এখানে আর বৃষ্টি হয় না বর্ষা কালে ;
কোনো ঋতুতেই ;
#
একটু একটু করে শুরু হল জলের হাহাকার ;
শুরু হয় আরেক গ্রামের খোঁজ ...
কিন্তু , কোথায় পাবে আরেক গ্রাম !
সব গ্রাম যে মৃত , মৃত এক সভ্যতা  ;
#
অথচ , হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চাতক পাখি আসে
বৃষ্টির আবাহনে , বর্ষার আবাহনে ;
#
আর আমরা ,
চাতক পাখি হয়ে তাকিয়ে আছি
চাতক পাখির দিকে  ,
আকাশের দিকে
এক ফোঁটা বৃষ্টির আশায় ;
বাঁচার আশায়  ....

আর এক বৃস্টি :- শুভম চক্রবর্ত্তী


আকাশ আনন্দে আত্মহারা হয়ে
রোদনে ব‍্যস্ত।
গাছেরও ব‍্যস্ততার অবকাশ নেই,
তারা প্রেমিক- প্রেমিকার মতো
বৃষ্টি খাচ্ছে।
কবির কলম আর ছোটে না,
তাদের বাড়ির আর মনের
জানালা দরজা বন্ধ।
ভোগী বাঙালির জালাতনের অন্ত নেই।
সুযোগ বুঝে বিদ‍্যুৎ পাখি
ফুরুত করে উড়ে গেছে।
অনেকে আবার কাজ-কর্মে
ক্ষতির হিসাব গুনছে।

আজ আর কাগজের নৌকা
ভাসেনা জলে।
আজ আর কেউ ফুটবল
খেলে না বৃষ্টিতে।
আত্মা আছে, তবে তা আর-
আত্মহারা হয় না।
বৃষ্টি এখন পুলকের নয়,
তা স্বাভাবিক।

আর এক দিকে,
আজও টিনের চালে ঝম ঝম-
করে আওয়াজ ওঠে।
আজও ফুটো চালের নীচে
পাততে হয় গামলা বালতি।
আজও বৃষ্টিতে সংগ্ৰাম চালাতে হয়
বেঁচে থাকার।

তাই ছন্দ তোলা রইল
তোমাদের জন্য।
আমার বিদ্রোহী চোখে- বৃষ্টি
কঠোর বাস্তব হয়ে ফোটে।
আমার বৃষ্টি-এ আর এক বৃষ্টি।

অনেকে বলবে এ কেমন বৃষ্টি,
উত্তরে বলি- "বৃষ্টি একই আছে,
শুধু দৃষ্টি টা পাল্টেছে।"

বর্ষণ-স্পৃহা: তন্মনা চ্যাটার্জি



গলির মোড় পেরিয়ে হঠাৎই দেখা তোমার সাথে,
চিনতে পারছো না বোধহয় আমায়
তা না পারারই কথা ।
বহু বছর আগে এভাবেই হঠাৎই ছেড়ে গিয়েছিলে!
ওমা , তাও বুঝি বুঝতে পারছো না!
মনে পড়ছে না সেই সে দিনের বৃষ্টির রাতে
এই গাছটার তলাতেই তো
ভীষণ জোরে চিৎকার করেছিল
আমি আর আমার অধিকার বোধ!
আর সেই মুহূর্তেই ,ওই ঝড় জলের রাতে
একলা একাকী আমায় পরিত্যাগ করেছিলে তুমি!
কি হোলো অনুভূতি ,ওহ! থুড়ি!
তোমাকে তো মন বলে ডাকতাম।।
চিনতে পেরেছো তাহলে।
কি হোলো কি বলছো
ফিরতে চাইছো?
না গো আমার এই শুন্য হৃদয়ে
তোমার আর কোনো জায়গা নেই!
ভালো থেকো তোমার অসম্ভব
তীব্র চাওয়া পাওয়ার সংসারে ;
অন্য কোথাও ,অন্য কোনো ঘরে!!

অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামলো
চেনা বট গাছটার তলায় ভিজতে থাকলো
বেঁচে থাকার অন্য গল্পেরা!!

*******************