নোটিশ বোর্ড
উল্লাস :- অভিজিৎ দাস কর্মকার
এখনো নামেনি বৈশাখি,
গ্রহান্তর ছেড়ে-
নিম্বাস একটি মেঘেরই নাম
অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ঝাপাটায় অশ্বশক্তির দলিল
কল্পনাপ্রবণ সন্ধ্যেগুলোয় পিঠ চাপড়েছিলো
বিজ্ঞাপন আর চোখ
বিভাসরাগে জ্বালিয়েছি ইশারার মোমবাতি সমাধির নীচে ঐতিহাসিক মালিকানায়
রাত বদলে যাচ্ছে স্বেচ্ছাচারীতায়
মাননীয়,
আমি টাল খাচ্ছি
হৃদপিণ্ডে উভচরী শব্দের শিলাবৃষ্টি
আলটপকাই উপত্যাকার সাথে শুয়ে পড়েছি-
এবং
অসাধারন ব্যক্তিত্বে বায়োমেট্রিক ছাপ
বিকেলবেলা বাড়ালো মান্দাক্রান্তা ছন্দটি
আমারা মনের হসপিটাল সেই
নিকুঞ্জতলার কালো লক্ লকে মেয়েটি
যার যৌনতা গাছের ছায়া আর
গন্ধ হয়ে মিশে গেছে সপ্তাহের শেষে
আমি এখন বৃদ্ধ
কোমর অব্দি ব্যাথাটা নিয়ে
চিল্কায় দাঁড়িয়ে ঢেউ ফেরা দেখি মহেঞ্জোদরো আর ঈশ্বরের দিব্যি লেখা
একটি ঔঁ আর
কিছু কিটসের রোমান্টিকতার উল্লাসে... **
সময়ের ঘড়িটা :- অথৈ দেবনাথ
স্নেহাশিস খোকা,
আমার বাবা মানে তোর দাদুকে এক দিন আমি বলেছিলাম,
বাবা তোমার কি কখনো কষ্ট হয়না?
তোমাকে কাঁদতে দেখিনি কোন দিন।
আমার কথা শুনে তোর দাদু মুচকি হেসে বলেছিল,
পুরুষ মানুষের যে অনেক কর্তব্য।
তারা যদি কাঁদে,
নিরাশ হয় তাহলে সংসার নামক এই নৌকাটা,
মাঝ সমুদ্রে ডুবে যাবে।
বাবার সেই কথার মানে আমি পরে বুঝেছি।
আর এটাও বুঝেছি যে পুরুষের জীবনটা অনেকটা শামুকের খোলসের মত আবৃত থাকে।
যা উপরে শক্ত আর ভীতরে নরম।
আর তাই তো তোকে যখন বকা দিতাম, আমারো খুব কষ্ট হত।
কিন্তু তুই যখন রাতে ঘুমিয়ে পরতিস।
আমি তোকে মন ভোরে আদর করতাম।
আর তোর মাকে বলতাম, দেখে নিও আমার খোকা একদিন অনেক বড় হবে।
সত্যি খোকা , আজ তুই অনেক বড় হয়েছিস। আমি আর তোকে ছুঁয়ে দেখতে পারিনা।
সময়ের ঘোড়িটাও আজ উল্টো দিকে বইছে। আমিও স্হবির হয়ে যাচ্ছি।
এক সময় ছিল,
তুই তোর পরিচিতদের কাছে গর্ব করে আমার পরিচয় দিতিস।
কিন্তুু এখন তোর লজ্জা হয়।
আর তোর এই লজ্জা আমায় অনেক কষ্ট দেয় খোকা।
তা তুই বুঝবিনা।
জানিস খোকা,
প্রতিটা মানুষের জীবনে যেমন জোয়ার আসে .... , তেমনি আসে ভাটা।
এক সময় আমারো এসেছিল জোয়ার সে সময় আমি অনেক পেয়েছি ,
তোর মাকে পেয়েছি গৃহ লক্ষি হিসেবে।
তার পর তুই এলি আলো হয়ে।
কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি,
এত দ্রুত বদলে যাবে। এক ভয়ঙ্করী ভাটা এসে তোর মাকে নিয়ে গেল। আমি প্রার্থনা করি যেন সে ভালো থাকে স্বর্গে স্থান পায়।
এই দুর্বিষহ জীবন তাকে বইতে হয়নি,
এই বলে নিজেকে শান্ত্বনা দেই।
আজ আমি তোর কাছে বোঝা হয়ে গেছি তা আমি বুঝি,
কিন্তু কি করব বল,
সময়ের ঘোরিটা যে উল্টো দিকে বইছে কিন্তু থামছে না,
জানিনা আর কত দিন চলবে,,
সব কিছুই তো একসময় ফুরিয়ে যায়,
কিন্তুু আমার জীবন কেন ফুরায় না?
জানিস খোকা,
এই দু হাত ভোরে তোকে দিয়ে এসেছি।
চাই নি কিছুই।
আজো দিতে চাই, তোমায় মুক্তি,
আমার ভার থেকে।
যেই বুকে তোকে আগলে রেখেছিলাম,
সেই বুকের স্পন্দনটা দিতে চাই তোর হাতে।
কিন্তু এতটাই স্হবির হয়েছি,
আমি তাই পারছিনা,
আমি পারছিনা।
ইতি তোর অক্ষম
বাবা
তখন ও এখন :- মান্নুজা খাতুন
একটা সময় বড্ড অচেনা ছিলাম তাই না?
ব্যস্ততার পথ ধরে চলতে ফিরতে
পথের অন্তিমে তোমার বেখেয়ালে লেগেছিল ধাক্কা
অবনত নয়নে, খুব ছোট্ট করে বলেছিলে ‘'সরি’।
তারপর!
ঘরে ফিরে ক্লান্ত দুচোখ এক করেছি যেই
ভেসে উঠতে থাকে তোমার ছবি!
আর শুনতে পায় তোমার মিস্টি সুরের ‘’ সরি’ শব্দটা।।
সেদিন হঠাৎ করেই হয়ে গেল সাক্ষাৎ
অফিস ফেরতা পথে।
শেষ সন্ধ্যার এক্সপ্রেস কামরার তৃতীয় শ্রেনীর কামরাতে
লজ্জায় তুমি করেছ আনত মুখ, আমি হেসেছি মুচকি।।
তারপর আলাপ, আলাপ হতে বন্ধুত্ব
বন্ধুত্বের গন্ডি পেরিয়ে গেছিল কখন আমার অনুভূতি
তা জানতে পারি তোমার দীর্ঘ অদেখায়!
যদিও আমি জানি আমার মতোই হয়েছিলে ব্যাকুল
খুজেছিলে অফিস ফেরতা পথে
উৎসুক দৃস্টিতে চেয়েছিলে ফাঁকা স্টেশনের পানে
দেখা যেদিন হয়েছিল প্রিয় অভিমানে ঘুরিয়েছ মুখ
সে আমি জানি।
কিন্তু কখনো কি জানতে পারবে প্রিয়
দীর্ঘদিনের বিচ্ছেদের অনলে আমিও পুড়েছি মরে
দিবস কি রজনী অবসর সময়ে মনে করেছি তোমাকে
আর হৃদয়ের পার্লামেন্টে লড়েছি ভালোবাসার প্রতীকে
জিতেছি শেষ মুহুর্তে যখন দেখা হলো তোমার সাথে।।
একতাই বল:-অনোজ ব্যানার্জী
একতাই বল আনে জানি,হবে তাই জোট বাঁধতে।
বিন্দুবিন্দু জলে গড়ে সিন্ধু, কথাটি হবে মনে রাখতে।।
একা যে আমি বড়ো বোকা,তুমি যদি থাকো সাথে।
সব বাধা করবোই জয়,পারবেনা কেউ কখনোই টলাতে।।
জীবনের পথ বড়ো দুর্গম, কাঁচ কাঁটা বারুদেতে ভরা।
রাক্ষস খোক্কস, ডাকিনী যোগিনীতে পূর্ণ হয়েছে এই ধরা।।
এসো বন্ধু, হাতে রাখো হাত, পিশাচের সাথে হবে লড়তে।
শয়তানের শয়তানি পুড়িয়ে,, নতুন সমাজ হবে গড়তে।।
ভেঙে দাও ঘুঘুদের বাসা, কাটমানি,সিণ্ডিকেট দাও উড়িয়ে।
পাপীদের মুখোশের প্রাসাদ,বিপ্লবের ঝড়ে দাও গুড়িয়ে।।
চেতনার জোয়ার আসুক আমাদের সকলের হৃদয়ে।
জ্বলছে সন্ত্রাসের আগুন,তবু থাকবোনা আমরা ভয়েভয়ে।।
লুটেপুটে খাচ্ছে যারা,দেশের সব ধনরত্ন, দিতে হবে শাস্তি তাদের।
আসবে সুখ শান্তি তবেই। এই প্রিয় দেশ আমাদের।
এই দেশ তোমার আমার, সকলের সমান অধিকার।
তবে কেন বিভেদ এত,,ধনী দরিদ্রে? কেন এত হাহাকার....?
ফুটপাথে পথশিশু , কাঙাল ভিখারি, বেকারের কেন আর্তনাদ??
দেশের সুদিন এলো ফুরিয়ে,সামনেই দেখো বড়ো খাদ!!
কে বাঁচাবে এই পচা সমাজ? এসো সবাই একসাথে।
দড়ি ধরে মারো টান,,দুর্নীতির ইমারত লুটিয়ে পড়বে ধুলোতে।।
উদ্বাস্তু :-অনিন্দ্য পাল
যেমন সব কিছু থাকে
ঘাস মাটি পাথর , ঝরা পাতা
অস্তিত্বে প্রত্যয়িত বাস্তব অথচ ঠিকানা নেই কোনো
ঠিক তেমনি,
ওরাও আছে জোয়ারের জলে ভেসে আসা
অমর পলিথিনের মত
অনেকটা ওই খাল বিল নদী থেকে সদ্যজাত
চঞ্চল মেঘ
নাম গোত্রহীন
না হিন্দু না মুসলিম না খৃষ্টান না ইহুদি
অথবা বৌদ্ধ অথবা জৈন
ওদের ধর্ম বর্তমান দিন
ওরা সামাজিক অথচ বাস্তুহীন
কোথাও স্থায়ী নয় দর্মা পাঁচিল
একফালি টিনছাদ, পোষাক বাতিল
ওরা কারা জানে না ওদের ছেলেমেয়ে
জীবন দরজাহীন, নেই কোন খিল
অসীম না হোক এই নীলগ্রহ অনেকটা বড়
স্থল জল এত কিছু দখল নিল কে?
শুরুতে সবাই ছিলাম বন্য একাকার
কেন কেউ স্বর্গ পেল, কারো হাহাকার
এদেশ ওদেশ নিজের ঠিকানা কোথায়
সন্তান আঁকড়ে বুকে বাবা মারা যায়
আয়লান একা নয় অসংখ্য যেমন
অদ্ভুত জেলখানায় বাঁচতে বাধ্য হয়
সীমারেখা টানলো কে পৃথিবী টা কার?
বাস্তুনেই তবু বাঁচে ওদের সংসার
দেবালয় ঠাঁই দেয় আর আছে ফুটপাথ
ওদের সরকার নেই, আছে নগ্ন কালো হাত
প্রমাণ কোথায় তোমরা এ পৃথিবীর জীব ?
গ্যারান্টি দেবে কে তোমরা নও ক্লীব!
এ নাটকে অভিনেতা নও তুমি, দর্শক ও নও
তুমি শুধু এ গ্রহের উদ্বাস্তু হও!
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যসমূহ (Atom)
