নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

"বেলা শেষে সবাই একা" : অপেক্ষার প্রহর






#মাদার তেরেসা একবার বলেছিলেন
" সবচাইতে ভয়ঙ্কর দারিদ্রতা হচ্ছে একাকিত্বের দারিদ্রতা এবং এইটা অনুভব করা যে আমাকে কেউ ভালোবাসেনা। "
 
“The most terrible poverty is loneliness, and the feeling of being unloved.”

সারাজীবন দরিদ্র,অসহায়,দুস্থমানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া মাদার তেরেসা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন বস্তুবাদী জগত বা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ওয়ার্ল্ডের মৌলিক চাহিদাগুলোর অভাব কাকে বলে।
টানা একমাস খেতে না পারা হাড় জিরজিরে শরীরের মৃতপ্রায় সোমালিয়ান বালক কিংবা ঘুর্ণিঝড়ে স্বজন হারানো মানুষের হাহাকার ,মানব জীবনের যত রকমের দারিদ্রতা যত রকমের কষ্ট আছে সেইটা মাদার তেরেসার চাইতে বেশী কেউ কাছ থেকে দেখেছিলেন কিনা জানিনা।

 
সেই মাদার তেরেসাও দিনের শেষে এসে বলেছিলেন
" দা গ্রেটেস্ট পোভার্টি ইজ দা লোনলিনেস। "

সবচাইতে বড় অভাব হৃদয়ের সঙ্গীর অভাব। সবচাইতে বড় যন্ত্রনা একা থাকার যন্ত্রনা।
 
কিন্তু সবচাইতে স্যাড ফ্যাক্ট হলো,দিনের শেষে আমরা সবাই একা।
   
 
আমি প্রায় সময় আমার লেখায় রবিন উইলিয়ামস নামক এক ভদ্রলোকের কথা বলি। এই ভদ্রলোক কে আপনারা জুমানজি হিসেবেই চিনেন। আজীবন মানুষ কে হাসিয়ে গেছেন। বিভিন্ন রোল প্লে করে। গুড উইল হান্টিং এ ম্যাট ডেমনের থেরাপিস্ট হিসেবে ডেমন কে ডিপ্রেশন থেকে বেঁচে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। কিন্তু সেই রবিন উইলিয়ামস কে অনুপ্রেরণা দেয়ার কেউ ছিলনা।
একদিন তার লাশ পাওয়া গেলো বেল্টে ঝুলন্ত অবস্থায়।
আজীবন মানুষ কে হাসানো মানুষটা নিজের বলা সেই বিখ্যাত উক্তিটিকেই প্রমাণ করে গেলেন।

" এমন অনেক মানুষ থাকে যারা মানুষ কে হাসায়, সেসব মানুষ ভিতর থেকে অনেক একলা। তারা অন্যকে হাসায় কারণ একা থাকার যন্ত্রনা কি সেটা তারা জানে। "

রবিন উইলিয়ামসের টাকা পয়সার অভাব ছিলনা। লেজেন্ডারি এক্টর্। কিন্তু রবিন উইলিয়ামস একা ছিলেন। অনেক বড় একটা হোল ছিল তার বুকের ভেতর্। পৃথিবীর সব টাকা পয়সা দিয়ে এই হোলটা ভরাট করা যায়না।

এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ নিজস্ব অবস্থান সাপেক্ষে তিনটা প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে বাস করে।

রবিন উইলিয়ামসদের মত লেজেন্ডদের  আত্মহত্যা আসলে এইটা প্রমাণ করে ,টাকা পয়সা যশ খ্যাতি এইসব একটা পর্যায় পর্যন্ত কোন মানে রাখে।
   
 টাকা ,পয়সা ,নাম খ্যাতি এইসবের দৌড় বস্তুবাদী জগত বা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ওয়ার্ল্ড পর্যন্ত।

আবার পরিবার ,আপনজন এরা থাকে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আসলেই কি শেষ পর্যন্ত। না। রবিন উইলিয়ামসেরও সন্তান ,স্ত্রী ছিল। তারা যথেষ্ট ভালোবাসত তাকে। সাপোর্ট দিত। কিন্তু পরিবার ,আপনজন , আত্মীয় স্বজন ,বন্ধু বান্ধব ,প্রিয়তম, প্রিয়তমা এরা একজিস্ট করে মানুষের সামাজিক জীবন বা সোশাল ওয়ার্ল্ডে। এটা মানুষের দ্বিতীয় জগত যেখানে সে প্যারালালি বাস করে।

আর একটা জগত থাকে। রাত বারোটা পেরোনার পর সেই জগতে মানুষ ঢুকে। রাতের খাবার খাওয়ার পর ছেলে মেয়ে দের কে গুডনাইট জানিয়ে ,বিছানায় স্ত্রী কে আদর করে শেষ একটা চুমু খেয়ে বা ফোনে প্রিয়তম কে ঘুমিয়ে যেও বলে প্রতিটা মানুষ পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে সেই জগতে ঢুকে পড়ে।

আমাদের বাস করা সেই তৃতীয় জগতের নাম হলো স্পিরিচুয়াল ওয়ার্ল্ড। আধ্যাত্বিক জগত। সেই জগতে আমরা সবাই একা। এটা শুধু নিজের একান্তই নিজের জগত।
 
সেই জগতে আমরা প্রত্যেকেই মস্তিষ্কের নিওরনগুলোর সাথে হিসেব কষতে বসি।
অদ্ভুত সব প্রশ্ন রাখি নিজের সামনেই।
আমি কে?
কি আমার পরিচয়?
শুধু দুই বেলা ভাত খাওয়া আর দু তিন বার রিপ্রোডাকশন করাই কি আমার কাজ? প্রকৃতির সাইকেলে আমার ভূমিকা কি শুধু একটা রিপ্রোক্টাটিভ এলিমেন্ট হিসেবে? গাছকে কার্বন ডাই অক্সাইড দান করাই কি আমার কাজ?

আচ্ছা আমি কি সুখী? আচ্ছা সুখী হওয়ার ডেফিনেশন কি? আমার যদি কষ্ট পেতে ভালো লাগে তাহলে কি কষ্টই আমার সুখ নয়? জীবন এত আপেক্ষিক কেন?

আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই নিজের আত্মার কাছে নিজে এইসব প্রশ্ন রেখে উত্তরের অপেক্ষায় ঘুমাতে যাই। আমরা ভাল থাকি। কিন্তু  কেউ কেউ প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেয়ে খেপে যায়। নিজের মন কে প্রশ্ন যেতে থাকে। আমার অবস্থানের মানে টা কি? উত্তর না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়। হাল ছেড়ে দেয়। একদিন এই বোবা পৃথিবীর উপর প্রচন্ড অভিমান করে দুম করে মরে যায়। বুম ,দা শো ইজ ওভার্।

কিন্তু এই অশরিরী বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে লুকোন থাকে একমাত্র সত্যটি।

সারাদিন সন্তান ,বন্ধু ,ভাই বোন , এমপ্লয়ি ,স্বামী স্ত্রী ,বাবা মা হিসেবে রোল প্লে করে ক্লান্ত হয়ে দিনের শেষে রাত বারোটার পর আমরা সবাই একা। উই আর অল এলোন। দিস ইজ দা ওনলি ইউনিভার্সাল ট্রুথ!

আমার তো জানালা নেই :রোমা





আমার তো জানালা নেই
জানালা দিয়ে আমি
কাঁচকথাদের দেখিনি কতোদিন
আমার তো ছাদ নেই,
আকাশটাও দেখা হয়নি কতো কাল তাই,
এক টুকরো উঠোন! সেটাও কি ছিল কোনদিন?
তুলসী তলার সেঁজুতিটাও
তাই নিভে  গেছে সেই কবেই.....
 
কতোকাল দেখিনি
গাছ গাছালির অরন্য রোদন,
পূব আকাশটার অকাল বোধন,
পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া,,
দেখিনিতো জোনাক আলো,
জোনাক বাতি ছিল বুঝি কভু ,
সকল বাঁধন ছাড়া. ??

আজও কি রাতের আকাশ
আমার অপেক্ষায়?
আজও কি তারাগুলো
আগের মতোই হেসে লুটোপুটি খায়..?
আজও কি ঐ চাঁদটা অমনই সুন্দর দেখায়?
আজও কি আকাশের গায়ে
মেঘেরা সহবাসে যায়?

মেঘ ,বৃষ্টি, বারি
তারা আজও কি আছে সই?
আজও কি মেঘগুলো পরবাসী,
তবে বারির বাড়ি কই?
আর বৃষ্টি!
সেকি আজও উদাস মনে
আমার উঠোনেই ঝরে,
আমার তো জানালা নেই
তবে দেখব কেমন করে ??

আমার তো জানালা নেই,,,
তাই আকাশ,বাতাস,রোদ বৃষ্টি
দেখা হয়নি কতো কাল
দেখিনি রাতের আন্তরিকতা,,
মানবিকতার সকাল.....

আমার তো জানালা নেই,
 নিজেকেও দেখিনি কতো কাল....


প্রাক্তন তোমাকে :মান্নুজা খাতুন



মার্কেটের  ভরা ভিড়ে পিছু হতে তোমার অবয়ব দেখে
মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেছিল সখা,
শরীরের যত শক্তি আছিল
পা দুটোয় করেছিল ছিল ভর
স্বচ্ছ জলের মতো ছুয়ে গেল মন
ফেলে আসা নানা রঙিন স্মৃতি গুলো।
ভেবেছিলাম কখনো হবে না দেখা ;
মনে মনে করেছিলাম সংকল্প
কভু দেখা না দেবার, 
তবুও সময়ের খেয়ালে হয়ে গেল দেখা
ব্যস্ততায় ভরা জন জোয়ারের স্রোতে।


মন চাইছিল প্রিয়
একটা মিস্টি হাসি হেসে
তোমার খবর নিতে।
দু হাতের মুঠোয় দুটি হাত পুরে
হদয়ে গ্রহন করিতে ।
নিকোটিনের জ্বলন্ত স্পর্শে পুড়ে যাওয়া ঠোটে
একটা গভীর চুমু এঁকে দিতে৷

কিন্তু! 
বিবেকের ষড়যন্ত্রনায়
সব ইচ্ছেকে ফেলে করেছি পথ অতিক্রম
তোমার গা ঘেষে, না দেখার অভিনয় করে।     
     




০৪/০৫/১৯
১টা ৪৫ মিনিট (দুপুর)

আধখানা অপেক্ষা :অভিজিৎ দাসকর্মকার





আমাকে যে তিলটি ভাবিয়েছে
কল্পনাপ্রবনে ফিরে এলাম-

দিগন্ত আসছে-

ট্রাপিজিয়ামের দেওয়ালে
গতকালের রাত আশ্চর্য হচ্ছে
শব্দকোষ সিগারেট টানছিল
সময়ের মুখোমুখি

তীব্রতাকে মধ্যাহ্নভোজন করাবো-

উচ্চাঙ্গসংগীতে যৌবন উড়ছে
সাক্ষী থাকুক কৃষ্ণপক্ষের জ্যোৎস্নাকলা

অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ধস নেমেছিল সূচক ধরে
বাদ দিয়েছে তিল
ছায়াগন্ধ নিয়ে আল্পনা দিচ্ছি
চোখের রাতজাগা কালিতে

মহোদয়া
অব্যবহৃত তোষকের নীচে আমার কান্না রাখা
বিপরীতপন্থীরা স্নানজলে ধুয়ে দিচ্ছে
আধখানা অপেক্ষা

আলো ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়








।। পঁচিশ ।।


          অনেক বছর পরে ছোটবেলার হাত ধরে একটু বেরিয়েছিলাম আমার জন্মগ্রামের রাস্তা দিয়ে। আমি পায়ে পায়ে পথ ভুল করছি। কিছুতেই একটানা পথ চলতে পারছি না। কতবার যে থামতে হচ্ছে তা গুণে শেষ করা যাবে না। ভাগ্যিস ও সামনে ছিল তাই, না হলে যে কি হতো! নিজস্বতাকে কি কেউ এইভাবে খেয়ে নিতে পারে ? কিছুতেই চিনতে পারছিলাম না। শুধু বাড়ি আর বাড়ি। একটা গাছ নেই। ছোটবেলায় যাদেরকে খুব কাছ থেকে চিনতাম তারা আজ একজনও নেই। পথের মেজাজটাই নষ্ট হয়ে গেছে। কতবার এই পথ ধরে হেঁটে গেছি। কত কষ্টয় গাছের নিচে এসে দাঁড়িয়েছি। কখনও বসেও পড়েছি। গাছকে জড়িয়ে সামনে তাকিয়েছি। প্রখর দুপুরে গাছ প্রকৃত পিতার মতো বিছিয়ে দিয়েছে তার ছায়া। আজ কোথায় তারা! মনে আজ স্বজন হারানোর বেদনা। যেদিকেই তাকাই সারি সারি বাড়ির বন্ধ দরজা। চারিদিকে শুধু সন্দেহ আর বিদ্বেষের বিষবাষ্প। মানুষগুলোও কত বদলে গেছে। এদের একজনকেও আমি ঠিক চিনি না। আগে রাস্তায় দাঁড়ালে কত লোক হাত বাড়াত। এখন সব জানলা দরজা বন্ধ। কোনো কোনো বাড়ির অনেক উঁচুতে একটা জানলা হয়ত খোলা। তাও সেখানে কোনো মুখ নেই। অন্ধকারের মতো একটা গর্ত হয়ে আছে।



।। ছাব্বিশ ।।


          জীবনের অনেকটা সময় আমার বিভিন্ন রেল স্টেশনে কেটে গেল। গ্রীষ্মের দুপুরগুলো তো অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। একা একা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছি। কেন এত ভালো লাগে রেল স্টেশন ? অনেক প্রশ্ন করেছি নিজেকে, কোনো উত্তর পাই নি। আজ বুঝতে পারি সে কেন এত প্রিয়। ছোটবেলা থেকে একা একাই থেকেছি নিজের মনে। কাউকে কখনও বিরক্ত করি নি। ছোটবেলায় জ্বর হলে সকলেই মাকে খোঁজে। আমি একা একা বিছানায় শুয়ে থাকতাম। মায়ের এই নিয়ে একটা কষ্ট ছিল। আসলে আমি চাইতাম না আমাকে নিয়ে সবাই খুব বেশি ভাবুক। আজও এই স্বভাবের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় নি। আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। মানুষকে ভাবিয়ে তোলার মতো কোনো কাজই আমি করে উঠতে পারি নি।
          রেল স্টেশনে বসলে আমার মনে হয়, পৃথিবীর অনেক কিছু থেকে যেন নিজেকে বার করে আনতে পেরেছি। মুক্ত বিহঙ্গের মতো আমি তখন নিজের মনে উড়ে বেড়াতে পারি।



(চলবে....)

প্রেমের দাবিতে ধর্ণা : ফিরোজ হক্






দীর্ঘদিন একে অপরকে নিয়ে এক আকাশ স্বপ্ন দেখার পর একজনের একরখা সিদ্ধান্তে সেই স্বপ্নে বাজ পড়লে আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া-এই ধরনের ঘটনা আজকের নয় দীর্ঘদিনের।এখানে একজন বলতে কোনো একটি জাতিকে(ছেলে কিংবা মেয়েকে) বোঝালে ভুল করা হবে।'প্রতারক' শব্দটা আজ বেশ সস্তা দরেই বিক্রি হয়।সেখানে একজন ছেলে যেমন প্রতারক তেমনি একজন মেয়েও প্রতারনা করে এরকম ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে।এক্ষেত্রে কোনো একদিকে পাল্লা ভারি করলে একটি জাতির উপর ঘোর অন্যায় করা হবে বলে মনে করি।

কিছু সংখ্যক ছেলে মেয়েদের কাছে আজকাল ভালোবাসা বেশ সস্তা, রাস্তাঘাটে মুড়ির মোয়ার মতো।তাইতো তারা ভালোবাসাকে খেলার সামগ্রীর মতো মনে করে।এক্ষেত্রে খেলোয়ারের কিন্তু খেলার সামগ্রীর উপর একটা মায়া থেকে যায় তাই দীর্ঘদিন যাবৎ তারা কোনো খেলা খেললে(কম্পিউটার গেম কিংবা ফিল্ড গেম) সেই খেলা হুট করে ছেড়ে দিতে পারেনা।কিন্তু এই সমস্ত ছেলে-মেয়েরা কি করে একটা মানুষকে হুট করে ছেড়ে দিতে পারে সে তাকে খেলনা হিসাবেই ব্যবহার করুক না কেন!মায়া তো থাকে নাকি!

একথা আমরা সকলেই জানি কিংবা সাধারণ জ্ঞানেও এই কথাটা মানি যে ভালোবাসার সময়সীমা যত দীর্ঘ হবে সেই ভালোবাসার মানুষকে ত্যাগ করা বা ত্যাগ করে চলে যাওয়া ততটাই বেদনাদায়ক হবে।তবে একবছরের ভালোবাসা বা কিছুদিনের ভালোবাসা যে পীড়াদায়ক নয় এটা বলা ভুল।এক্ষেত্রে যারা আপাতত এই ধরনের প্রতারনার স্বিকার হননি কিংবা কোনোদিন কাউকে ভালোবাসেননি তারা এই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন বলে আমি মনে করিনা।

এখন আসি প্রেমের দাবিতে ধর্ণার বিষয়টিতে।যদিও অনেকে এই বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে দেখতে একপ্রকার বিরক্ত হয়ে পড়েছেন।তাদেরকে আরেকটু বিরক্ত করি আর কি!এখানে দীর্ঘ আট বছরের সম্পর্কের পর ছেলেটির মাথায় হঠাৎ বাজ আছড়ে পড়ে।রাগ-অভিমান করে ব্লক করে দেওয়া কিংবা কথা না বলা ভালোবাসার ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা স্বাভাবিক কেননা দুধ ছাড়া যেমন ক্ষীর হয়না তেমনি রাগ-অভিমান ছাড়া ভালোবাসা ঠিক জমেনা।তবে এই ধর্ণার বিষয়টি একটু ভিন্ন।এখানে রাগ-অভিমান করে ব্লক করা,কথা না বলা এসব ঘটেনি।এখানে ছেলেটি দীর্ঘ আট বছর পর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে।

তবে ছেলেটি এখানে যে ব্যতিক্রমী কাজটা করেছে সেটা হল ছেলেটা নিজেকে আত্মহনন করেনি।প্রথমত ছেলেটা মেয়েটার বাড়ির অভিভাবকের কাছে বিয়ের সম্পর্ক নিয়ে গিয়েছে,তাদের ভালোবাসার কথা জানিয়েছে।ছেলেটা বারংবার চেষ্টার পর যখন ব্যর্থ হয়েছে তখন ধর্ণার মতো ব্যতিক্রমী পথ চয়ন করেছে।সম্ভবত ভারতবর্ষের ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা পূর্বে ঘটেনি এমনটি দাবি করা যায়।

এখানে সমস্যাটি হল আমাদের বুদ্ধিজীবি মহল ছেলের এই কাজটিকে হাস্যকর মনে করেছে কিংবা ছেলেটির এই কাজটিকে অন্যায় মনে করেছে।অনুরূপ কাজ একজন মেয়ে করলে... বাকিটা আশা করি বলতে হবেনা।একথা ঠিক যে জোর করে ভালোবাসা আদায় করা যায়না তবে দীর্ঘ আটবছরের ভালোবাসার শিখা হঠাৎ নিভে যাবে এটা একজন প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা কিভাবে মেনে নিবে!

ভারতবর্ষে অনেক বিপ্লব কিংবা আন্দোলন ঘটেছে তবে মনে নিয়ে খেলা করা-এর বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার বিপ্লব ঘটেনি।তবে এই ধরনের ব্যতিক্রমী বিপ্লব ভারতবর্ষে কি দরকার ছিলো না!

আমি মনে করি এই ধরনের বিপ্লব ভারতবর্ষে অবশ্যই দরকার ছিল।এখানে যুবসমাজ একটা শিক্ষা পেয়েছে বলা যায়।১০০জন বা ১০০০জনের মধ্যে এই ঘটনা দেখে একজনও যদি শিক্ষা নেয় তবেই এই বিপ্লবের সার্থকতা।কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে ভালোবাসার নামে প্রতারণামূলক কাজ করার ক্ষেত্রে যদি একবার চিন্তিত হয় তবে সেটা ভারতবর্ষের বৃহত্তর জনজাতির ক্ষেত্রে কি সুফল নয়!তবে এই বিপ্লব কতটা কার্যকরী হলো এটা আমরা জানতে পারবো না এই যা।

এবার আসি ছেলেটি একপ্রকার জোর করেই মেয়েটিকে বিয়ে করেছে তাদের পরবর্তী জীবন কতটা সুখের হবে এই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।যে মেয়ে আট বছরের ভালোবাসাকে অস্বীকার করতে পারে সে নিশ্চয়ই বিয়েকেও অস্বীকার করতে পারবে!তারপর ছেলের বাড়ি থেকে কিংবা ছেলে স্বয়ং পণের জন্য মেয়ের উপর অত্যাচার করবে না এমনটিও দাবি করা যায় না! এই প্রশ্নগুলি আমার নয়,আমাদের বুদ্ধিজীবি মহল থেকে উঠে এসেছে এই ধরনের হাজারো প্রশ্ন।

এবার শুরু করি আমার প্রশ্ন।যে ছেলে নিজের জীবনের পরোয়া না করে একটি মেয়ের জন্য ধর্ণায় বসতে পারে তার ভালোবাসা ঠিক কতটা হতে পারে!যদিও মানুষের মন পরিবর্তনশীল তবুও এই ধরনের ঘটনা করার পূর্বে ছেলেটির মনে কি ভয় থাকবে না!দ্বিতীয়ত-আট বছরে ছেলেটির উপর কি মেয়েটির এক ছিটেফোটাও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়নি!ছেলেটি একপ্রকার অসুস্থ হওয়ার পর মেয়েটি বিবাহের জন্য রাজি হয়।এখান থেকে কি বোঝা যায়!ছেলেটির প্রতি মেয়েটির একটু হলেও তো ভালোবাসা ছিল!

যাই হোক অনেক বেশি বলে ফেললাম।এখন আশা করি ছেলেটির সমুদ্রের মতো অন্তহীন ভালোবাসায় মেয়েটি এক ছিটেফোটা ভালোবাসা নিয়ে দুজনে পরবর্তী বৈবাহিক জীবনে সুখ খুঁজে পাবে।তাদের পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা রইলো।ভারতবর্ষে প্রেমের প্রতরণামূলক ফাঁদ থেকে ছেলে মেয়ে উভয়েই রক্ষা পাক এই আশা রাখি।