নোটিশ বোর্ড
স্ট্রাজেডি বিকেলে স্টপ: বিকাশ দাস (বিল্টু )
একটি তরতাজা বিকেলে পেন্ডুলাম ঘড়ি টিক টিক আওয়াজে মনের স্রোতের লাভাকে আগ্নেয়গিরির লাভা করে বুনো মহিষের মতো চঞ্চল করে তোলে....
কভার পেজে তোমার ছবি, "ব্ল্যাক ডে "হয়ত আমারই, পুরানো মলাটটা বেঘোরে মারলো...
জামার পকেটে শিরশির হাওয়াতে উত্তপ্ত ধমনী ;
হার্ট বিট মেপে দেখি ডানহাত বামহাতের উপরে রেখে :72 প্লাস
বুক পকেটে রাখা তোমার দেওয়া শেষ বাটা পান আজ ঝিমিয়ে আছে;রস নেই।ঠিক আমার কিডনীর মতো, সেটাও তো নিকোটিনে ভরা ...
তবুও বাটাপান মুখে দিয়ে: হারিয়ে যাওয়া রোমন্থনকে ডেকে তুলি
সদ্য কেটে নেওয়া বোরো ধান ক্ষেতের উপর তোমার নগ্ন পায়ের জলচাপ খুঁজি
কুড়িয়ে নেওয়া ধানের খোঁসা ছাড়িয়ে, মুখে নিয়ে দানা একাই হেঁটে চলি দিগন্তের পথে, কিছুটা অভ্যাসগত....
যেখানে মাছরাঙা ঠোঁটে মাছ নিয়ে আমার অপেক্ষায়..... তবুও কল্পনা হয়ত !
শেষ বিকেলের শেষ চিঠি তবুও ডাকে গেলোনা, চিঠি তো গাঁজার কলকেই হলো.... বা !!বা'রে !!
আজকাল বিকেল গুলো খুবই ভাবুক করে তোলে, বকবক করে ফেলি অনেকটা বেশিই মেকি হয়ে -
তবে মেকির আড়ালে বুক পকেটের ব্যথা জমাই থাক পেন্ডুলামের ঘড়ির কাছে
টিক টিক টিক... স্টপ.... ব্যাটারী নেই, অভিশপ্ত বিকেল তবুও রেহাই দিলো না......
এই বুঝি স্ট্রাজেডি... হা হা হা... !!!
দিবস গুলি পালিত হয়:শুভঙ্কর রাহা
২৭ শে জুন ।
গত কয়েক বছরের মতো এইবছরেও দেবু দা সকাল সকাল পৌঁছে গেছেন Lilabati Orphanage এ। সাথে নতুন জামাকাপড়ের কয়েকটি সেট, হরেকরকম মিষ্টি ভরা কিছু প্যাকেট এবং একটা কেক।
পৌনে আটটায় প্রার্থনা সেরে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলো অদ্ভুত এক আনন্দ এবং নতুন কিছু চমকের আশায় দেবু দার কাছে এসে হাজির হলো। দেবু দা কেক কেটে সেই কেক , উপহার এবং মিষ্টি গুলো ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলোর মধ্যে ভাগ করে দিলেন।
ওখান থেকে বেরিয়ে অফিসরুমে এসে এক টুকরো কেক orphanage এর কর্তা সৌমিত্র বাবুকে দিয়ে দেবু দা বললেন, " সৌমিত্র বাবু এটা আপনার জন্য।"
সৌমিত্র বাবু কেকের টুকরো টা খাওয়া শেষ করে দেবু দা কে জিজ্ঞেস করলেন, " দেবব্রত বাবু, গত ৭ বছর ধরে আপনাকে দেখছি প্রতি ২৭ শে জুন আপনি এই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু গুলোর সাথে দিনটি উদযাপন করেন। কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞেস করি? "
-" আরে না না কিছু মনে কেন করব? অবশ্যই জিজ্ঞেস করুন। ", দেবু দা বললেন।
- " এই ২৭ শে জুনেই কেন? আজকের দিনটিতে কী হয়েছিল দেবব্রত বাবু? "
দেবু দা একটু থমকে গেলেন। চুপ করে নরম হয়ে যাওয়া চোখের কোনা দুটো মুছে দেবু দা বললেন," সৌমিত্র বাবু, তখন আমি কলেজের লাষ্ট ইয়ারের ছাত্র । আমার বাড়ির থেকে ২ টো গলি পাশেই সোহিনী থাকত। আমি বই-খাতা গুছিয়ে টিউশন যাই, সে দাঁড়িয়ে থাকে গলির মাথায়। উৎসুক চোখ, হেয়ার ব্যান্ডে ঢাকা ছোট চুল। ফ্রকের লেস আঙুলের মাঝে জড়াতে জড়াতে লক্ষ্য করে আমার চাপ দাড়ি বেয়ে নেমে আসা জল, লক্ষ্য করে কপাল থেকে গড়িয়ে আসা ঘামে ঘোলাটে হয়ে যাওয়া চশমার কাঁচ, অদক্ষ সাইকেল চালকের মতো কাঁপতে থাকা হাত, এককথায় সর্বাঙ্গ।
এভাবে একদিন আলাপ হলো। কথা হলো।
তারপর একদিন বিকেলে বাড়ি ফিরছি ওদের গলির সামনে দিয়ে। পথ আটকে বলে উঠলো, 'দেবু দা জানো আজ আমার জন্মদিন।'
আমি বললাম কি রে তুই? আগে জানাস নি কেন? আজ তো তোর দিন রে পাগলি। কী নিবি তুই বল?
ও বললো, ' দেবে যা চাইবো?'
আমি বললাম, আমার সাধ্যের মধ্যে হলে নিশ্চয়ই।
ও বললো, ' দেবু দা আমাকে ওই অনাথ আশ্রম টায় নিয়ে যাবে? ওই নিষ্পাপ ছেলেমেয়ে গুলোর সাথে আজ দিনটা কাটাব।'
আমি ওর এই মিষ্টি বায়না রেখে ওর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছিলাম সেই প্রথম। শেষবারও বটে।
কারন তারপর তার না বলা বায়না টা আমি বুঝতে পারা সত্ত্বেও আমি মুখ ফুটে তাকে বলতে পারি নি।
শেষে আমাকে বলেছিল, "ভিতু তুমি একটা"।
তারপরেই দৌড়ে তার শেষ চলে যাওয়া।
সৌমিত্র বাবু আজই সেই ২৭ শে জুন। সোহিনীর জন্মদিন। ও তো একমাত্র মুখফুটে এটাই চাইতে পেরেছিল আমার থেকে। "
সৌমিত্র বাবু তখন হতভম্ব। মনে মনে ভাবছেন- এইভাবেও দিবস পালন করা যায়?
হ্যাঁ। আমাদের চেনা অচেনা পরিবেশের মধ্যেই এমন কতশত দিবস পালিত হয়। হ্যাঁ এইভাবেই দিবস গুলি পালিত হয়।
আলো ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
।। তেইশ ।।
মানুষ মুখে বলে এক, আর যখন কাজ করতে যায় তখন করে সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজ। এটা দিনের বেশিরভাগ সময় করে বলে এটা তার একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। কিছু করার নেই। চেষ্টা করলেও সেখান থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারছে না। কারণ তার ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক। ছোটবেলা থেকে সে এইসবেরই অনুশীলন করেছে। কিন্তু যখন সে বাইরে আসছে, মানুষের সঙ্গে মিশছে তখন সে নিজের একটা অন্যরকম ভাবমূর্তি তৈরি করতে চাইছে। আসলে সে তো জানে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। আসলে বাড়িতে যে জামাই পড়ুক, বাইরে একটা অন্যরকম ছাল দরকার হয়ে পড়ে। এটাও ঠিক সেরকম। খুব ঘনিষ্ঠ জন যখন এটা করে তখন এটা খুব কষ্ট হয়।
আমরা অসহায়। কিছু করার নেই। বাঁচতে তো হবে। তাই এসব মানুষদের নিয়েই পথ চলতে হবে। জীবন থেকে বাদ দেওয়ার উপায় নেই, তাহলে তো ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।
।। চব্বিশ ।।
প্রায় ত্রিশ বছর লেখালিখির সঙ্গে ঘর করার পর মনে হল, আমি লিখতে পড়তে দুটোই ভালোবাসি। লেখা ছাপানোর থেকে লেখা লিখতেই আমি বেশি খুশি হই। আমি সবসময় বলি, লিখে আমি যে আনন্দ পাই, সেই আনন্দ আমাকে কেউ কোনদিন দিতে পারবে না। এতদিন সাহিত্যের সঙ্গে ওঠাবসা করার পর বুঝতে পারলাম, এটা একটা এমন জগৎ যেখানে থাকে সম্পূর্ণ নিজের একটা পৃথিবী। দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা যেখানে প্রবেশ করতে পারে না। ঠিক পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসা যায়। কে কত বড় কবি সে তো সময় বলবে। কিন্তু একটা জিনিস পেয়েছি ------- হাজার না পাওয়ার মাঝেও নিজের মধ্যে পরিপূর্ণতার একটা স্বাদ। এজন্য সাহিত্যের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
সকাল: অজাত শত্রু
মিঠে আলো ,কে ছুঁলো? রোদ ভিজেছে জানালা।
ঘুম ভাঙা গান,হারানো পাখির কলতান,মুখ ছুঁয়ে যায় ওড়না ।।
বেহাসাবি দিনযাপনে ,দৌড়ঝাঁপময়।হাতছানি'র সময় ।
আজ চেনা মুখ কাল মুখোশ'এ ,বাঁচার অভিনয় ।।
হদ্দ বোকার মত আমিও গিলছি আবেগে
ভাঙছে ,ভাঙছি নিজেই নিজে,চোখ ক্লান্ত হলে ।।
তারপর দীর্ঘ মৃত্যুর উপভোগ।নিথর শরীর
চোখ খুলে দেখি ,একা নই, অনেক মাছির ভিড় ।।
আলো - ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
।। একুশ ।।
একদিন এক কবিসম্মেলন থেকে রাতের ট্রেনে ফেরার সময় মনে হল, কতদিন বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা হয় নি। কথাও হয় নি কতদিন। এরকম মাঝে মাঝেই মনে হয়। এমন নয়, কবিতা লেখার একটা ঘোরার মধ্যে আছি তাই এমন একটা ইচ্ছা জেগে উঠেছে। এই মনে হওয়াটা ভীষণই স্বাভাবিক। নিজের মধ্যেই কেমন যেন একটা তালগোল পাকিয়ে যায়। কিছুতেই সেই জট ছাড়াতে পারি না। ভেতরে ভেতরে এত অস্থির হয়ে উঠি যে নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারি না। জন্মগ্রামে থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টা দূরে থাকি। মনে হয় এক্ষুণি দূরত্বটা পেরিয়ে যাই।
যে কথা মাকে বলা যায় তা তো আর কাউকে বলা যায় না। হয়ত বলা যায় কিন্তু শুনবে কে মায়ের মতো অত ধৈর্য্য ধরে ? কার অত সময় আছে ? তাই বলতেও পারি না। বুকের মধ্যে জমা হয়ে থাকে কত কথা। হঠাৎ যেদিন সন্ধেবেলা বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় সেদিন বই পড়তে, কবিতা লিখতে কিছুই ইচ্ছা করে না। চোখের সামনে ভাসে, মা রান্না দুয়ারে বসে ভাত রান্না করে। ভাত ফোটার আওয়াজ শুনতে পাই। খিদে বাড়তে থাকে। রান্না দুয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকি। লম্ফর আলোয় মায়ের মুখের ঘাম চকচক করে। একসময় মা ভাত খেতে ডাকে। গরম ভাতের গন্ধ আর মায়ের মুখের হাসি। আমি ভাত খাই আর মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কত বছর কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় নি। তাই মাঝেমাঝেই মাথাটা খুব ভারি হয়ে যায়, কিছুতেই তুলতে পারি না।
।। বাইশ ।।
রথ এলেই মেজ জেঠিমার কথা খুব মনে পড়ে। আমাকে রথ দেখতে দিত পঞ্চাশ পয়সা। আর ছোটো ঠাকুমা দিত পঞ্চাশ পয়সা। তবে মেজ জেঠিমাই এই নিয়ম প্রথম চালু করে। আমার একটা মন আছে আর সেই মনও আনন্দ চায়। তাই কোনো মেলা উপলক্ষে আমার মতো একটা ছেলেকে পয়সা দেওয়া যেতেই পারে। এই এক টাকা নিয়ে আমি সেদিন রথের রাজা। আজ বড় হয়ে গিয়ে কত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পয়সা দিতে হয় কোনো মেলা উপলক্ষে। খুব আনন্দ পাই এসব দেওয়াতে। তবুও আজ খুব পেতে ইচ্ছা করে। আমি চাই কেউ মেলা উপলক্ষে আমাকেও পয়সা দিক। তবে এসব কথা তো কাউকে ভুলেও বলা যাবে না। কারণ খুব সহজেই সে আমাকে পাগল বলে চিহ্নিত করবে। মনে পড়ে, তখন মহাশ্বেতা দেবীর "বর্তিকা" পত্রিকাটি দেখাশোনা করি। বিকেল হয়ে গেছে। কাজ শেষ করে বাড়ি আসব এমন সময় দিদি আমাকে ঘরে ডেকে দশটা টাকার একটা নোট হাতে দিলেন বইমেলায় যাবার জন্য। আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম সেদিন। সত্যিই আজ আমার জীবনে পয়সা দেবার মতো কোনো মানুষ নেই।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)