নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

নিখোঁজ: মধুমিতা মুখোপাধ্যায়






ভাবছি একবার নিখোঁজের সন্ধানে' পাতায়
ফেলে আসা স্মৃতির বিজ্ঞপ্তি দেব
লাল কালিতে লেখা বেরোবে 'ঠিক বুকের বাঁদিক ঘেষে গাঢ় নীল জড়ুল'...জড়ুল তো ওটা ...?
নাকি যন্ত্রণার গাঢ় নীল ছোপ ?
নিরুদ্দেশ মনটার তখনো দুচোখ লাল
'দে ছুট' বলে লাগামহীন প্রতি রাতেই...
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো খুঁজে চলা।
ভোর হলেই ভিড় প্যাসেঞ্জার ট্রেন এসে দাঁড়ায় জংশনে
প্রতিটা কামরায় চেনা-অচেনা মুখের ভিড়
স্মৃতি খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত প্রহরগুলো হারিয়ে যায় কখন
অবহেলা,নাকি উদাসীন সম্পর্কে টানাপোড়েন
জীবন পিছোতে থাকে ধীর পায়ে
শুনেছি নতুন আসে পুরোনোকে ম্লান করে
তোমার উপেক্ষাগুলোও একদিন জমা হবে অবহেলার পুরোনো পাতায়
আমি শুধু নির্জন রাত অপেক্ষায়..
হাতরাবো অতীত...ছুঁয়ে নিতে আমাদের যাপনের মাত্র কটা প্রহর !

পিতা :উত্তম মণ্ডল





হুবহু তোমার মতোই খুঁজছি
কত স্বপ্নের সৌধ হয়েছে চূর্ণ,
কত বিশ্বাস চুরমার।

বিশ্বাস বুকে বেঁধে তবু মুহুর্ত গুনছি
সাতচল্লিশের পর অবিরত,
খুঁজছি তোমায় সমুদ্রে,খুঁজছি জেলে,চরকায়।

খুঁজে পেলেই তোমায় বলবো,
এই তোমার মাতৃভূমি, তোমার দেশ,
শিকড় ছিঁড়ে তুমি চলে যেতে পার না-
তোমাকে ফিরতেই হবে সত্যে,
ফিরতেই হবে অহিংসায়।


মরুভূমিতে,
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে-
মরিচিকা ও জাতির পিতা।


 

পথ হারিয়েছে যে নক্ষত্ররা :অতনু নন্দী






পড়ন্ত বিকালের রোদে ময়দানের পাশে 
ফুটপাথ ধরে একদিন হেঁটে ফিরছি , হটাৎ দেখা হয়ে যায় ক্লাস এইটের স্কুলছুট এক বান্ধবীর সঙ্গে । 
ব্যাগ থেকে একটা ডাইরি খুলে আমার দিকে এগিয়ে দেয় সে, 
লেখা দেখে আমি চমকে উঠি -

যেদিন  দূর থেকে দূরবর্তী হয়ে গেছে
সম্পর্ক এর জেটিঘাট , 
সেদিনই  আমি বরফ প্রতিমা হয়ে গেছি । 

এ যেনো অনন্তের অভিমান , পুড়ে মরে 
আমার স্বত্ত্বা ।  
প্রশ্ন করেছিলাম কোন পত্রিকায় লেখা দিস' না কেন  ? 
উত্তরে বলে গেল 
আঁধার আমার ভালো লাগে । 

সেদিন ভাঁটিখানায় গিয়েছিলাম সন্ধ্যা বেলায় 
এক ছিপছিপে তরুণ বাংলা খেয়ে 
বলে চলেছে- 

বুকে মৃত নদী রাখি ,
পুড়ে যায় ইহকাল 

ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরি তাকে , বলি আকাশে তাকিয়ে দেখো পূর্ণিমা মেলেছে ডানা , 
আর এক পেগ চুমুক দিয়ে সে বলে ওঠে - 

আমি দেখি ছায়াপথ 
মিশে যাই মৃত নক্ষত্র'র দেশে 

শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই । 
তার কবি জন্মের কাছে মাথানত 
করে ফিরে আসি । 

দিনের কোলাহল ফুরিয়ে আসে রাত গভীর হলে,  মুঠোফোনে আমি ফেসবুকে প্রিয় কবিদের টাইমলাইনে ঢুকে পড়ি কবিতা 
ঈশ্বরকে খুঁজবো বলে , 

হটাৎ কোন তরুণ অনামি কবির পেজে চোখ আটকে যায়,  
কি অনায়াসে সে লিখে রেখেছে -

বুনো আঁধারে ঢেকে গেছে আমার পুংজন্ম 
তাই আজ  আর রোদ্দুর খুঁজি না । 

তিন চার বার অনায়াসে পড়ে ফেলি 
মুগ্ধতা গ্রাস করে আমায় ।
জীবন পিতার মতো জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে তাকে । 

সুন্দরবনে পিকনিক করতে গেছি বন্ধুদের সাথে জানুয়ারির শেষে , 
স্টিমার থেকে জঙ্গলে নেমে এসে দেখি 
হোগলা পাতার উপড় পড়ে আছে অসমাপ্ত একটি কবিতার কএকটি লাইন, 
প্রেমিকার মতো আঁকড়ে ধরি ।

দেখি কবি লিখে গেছে -

এসো প্রিয় স্বদেশ 
সবুজে বোনা সোয়েটার হয়ে,
শিকারীর গল্পে হিম ঢেকে রাখি ..

আমি অরণ্যে পাগলের মতো খুঁজতে থাকি কবিকে , মৃত্যু ভয় উড়ে গেছে তখন  
একটি বার তার চরণ ছোঁব বলে ।

মন বনাম শরীর মান্নুজা খাতুন ( মালা)



তোমার আমার সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল
চলমান ব্যস্ত জীবনের অন্যতম অঙ্গিকার
ইন্টারনেটের দৌলতে সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে
এমনই এক ভরা গ্রীষ্মের দাবদাহে ভরা দুপুরে!
আমি তখন কতই বা!
এই উনিশ পেরিয়ে বিশে
দেহে আমার নতুন যৌবন,
মন পূর্ণ ছিল আবেগে
তাই তো তখনও  বুঝি নি
তোমার সাজানো কথা গুলোর চাতুরী
যখন তোমার কথা বলছিলে,
আমি শুনছিলাম আর বুঝতে পারছিলাম
আমার যোগ্যতার কাছে হেরে যাচ্ছ তুমি
তবুও  স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমায় নিয়ে,
 দেখিয়েছিলে তুমিও
একটা সংসার
একটু ভালোবাসা
   আর
সুখি জীবনের।
ভুল বুঝলাম সেইদিন
যেদিন দেখা হয়েছিল তোমার সাথে
সেইদিন বুঝতে পারলাম ভালোবাসার মনটা তোমার মৃত
বেচে আছে শুধু শরীরটা,  আর বিকৃত কামনার লালসা।

ঝড় :প্রীতি





ঝড় কি? সেই বেকার ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করো-
যার যোগ্যতা হেরে গেছে মোটা ঘুষের কাছে।
ঝড় কি? সেই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করো-
যে রাতের আঁধারে ছিন্নভিন্ন হয়েছে সমাজের পশুর নখে।
ঝড় কি? সেই মাকে জিজ্ঞেস করো-
যে পরের বাড়িতে বাসন মেজে ছেলেকে ডাক্তার করেছে, আর বিনিময়ে ঠাঁই পেয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে।
ঝড় কি? সেই মাঠে খাটা চাষিটাকে জিজ্ঞেস করো-
যে ফসলের দাম না পেয়ে প্রাণ দিয়েছে কীটনাশকে।
ঝড় কি? সেই পথশিশুকে জিজ্ঞেস করো-
যে দিনের পর দিন না খেয়ে মুখ ঢোকায় ডাস্টবিনে।
তাই এই জোড়াল বাতাসকে মিথ্যে 'ঝড়' নামকরন করোনা।

"উষ্ণতা" : ঈশিতা দেবনাথ




"গত সপ্তাহের টাকা টা বাকি আছে..., আজ আর বাকিতে দিতে পারবোনা.."
হারানবাবু কথাটা শুনে অনেক নিরাশ হলেন।
হারান বাবু, কেশবপুরের একজন বাসিন্দা, সেখানেই তার একটা ছোটো টিনের বাড়ি, বাড়িতে উনি আর তার স্ত্রী আলো রানী। অতীতে, বলতে গেলে দশ বছর আগেও তাদের অবস্থাটা এমন ছিলোনা। চাষের জায়গা ,জমি, আমের বাগান নিয়ে বেশ খানিকটা জমির ফসলে তাদের জীবনটা ভালোই কেটে যেত। তবে সেসব আর কত দিন...! ছেলে, রতন, বিদেশ যাওয়ার আগে জমি লুকিয়ে সব বেঁচে দিয়ে শুধু বাবার জন্য বাড়ির পিছনের আম গাছ সহ কিছুটা জমি রেখে দেয়।

পাকা পিচের রাস্তা, দুধারে যতদূর দেখা যায় চাষের ক্ষেত। তখন বাজে বেলা বারোটা , সূর্যের তাপটা যেন এখন জাঁকিয়ে বসেছে। চারদিকের বাতাসের গরম ছোয়া যেন শরীরের চামড়া শুদ্ধু জ্বালিয়ে দিচ্ছে,
নিঃশ্বাসের বায়ুর সাথে এক গোছা তপ্ত বাতাস যেন প্রবেশ করছে।
উঃ!...
হারানবাবু রাস্তার ধারে একটা মেহগিনী গাছের নিচে বসলেন। যত দূর দেখা যায় শুধু জমি আর জমি..
একসময় এমন চাষের জমিতে তার অধিকার ছিল, আজ সেসব অতীত...!
জলের পিপাসা মেটানো দায় হয়ে গেছে এমন পরিস্থিতি। হারানবাবু কিছুক্ষনের জন্য চোখ বন্ধ করলেন।

"কি গো মনিকার মা , আজ কি রান্না করলে..?"
মনিকা, হারান বাবুর একমাত্র মেয়ে..  একবার এমনি গরমের সময় ঝরে গাছ ভেঙে পরায় আজ সে এমন অসহ্যকর গরম থেকে মুক্তি নিয়ে হয়তো কোন অজানা গ্রামে , অথবা কোন মেঘের দেশে ভেসে গেছে..!
"শাক রেঁধেছি গো.."
উননের তাপ টা যেন আজ একটু বেশিই লাগছিলো।

সূর্য্য তখনও নিষ্ঠুর..
হারানবাবু হঠাৎ চোখ খুললেন। চারদিক তখনও যেন জ্বলছে...চোখ যেন এক জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড।
তিনি উঠে দাঁড়ালেন। বাড়ি ফিরবেন।


তখন বেলা সোয়া চারটে,
হারানবাবু ঘরের বাইরে বসে আছেন, ঘরে স্ত্রী অসুস্থ, জ্বর কখন আসছে আবার যাচ্চে।হারানবাবু অবস্থা বুঝতে না পেরে ডাক্তার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন ভাবলেন..কিন্ত্তু

আকাশটা হঠাৎ কালো হয়ে আসছে, মুহূর্তের মধ্যে চারদিকের আলো কমে আসলো। বাতাসে গরমের প্রকোপ তখন একটু কম...
হওয়া দিচ্ছে অল্প..
দেখতে দেখতে বাড়ির পিছনের আমগাছ টা যেন খুব বেশি দুলতে থাকে।
ঝড় আসে, একটা সময় যেন যুদ্ধের সৈনিকের মতো একদল হওয়া এসে সব যেন উথাল পাথাল করে দেয়, হওয়া যেন থামতেই চায়না , চলে যাবো করেও যায়না...
ঘরের প্রত্যেকটা অবলম্বনের ওপর যেন নির্মম অত্যাচার চলে। ঘরের টিনের দেওয়াল গুলো যেন এখনই ভেঙে যাবে। চারদিক তখনও কালমেঘে ঢাকা। বিকেলের আকাশ যেন রাতের অন্ধকার ডেকে আনছে।
হারানবাবু আম গাছটা দেখতে ঘরের পিছনে যেতেই ভীষণ শব্দে ঘরের চাল টা উড়িয়ে নিয়ে যায়...
তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।
ঘরে গিয়ে স্ত্রী র দিকে নজর দিতেই সব যেন নিমেষে শেষ হয়ে যায়...



অসহ্য গরম যেমন কষ্ট দায়ক তেমনি বিধ্বংসীও।
পরিবেশের সাথে আমার অভিযোজিত হতে পারলেও হারানবাবুর মতো অনেক মানুষ আজও অসহায়...
তাই পরিবেশ এর স্বার্থে মানুষের উপকার্থে গাছ বাঁচান। একটা গাছের জীবনদান না করতে পারলে একটা গাছের মৃত্যু ডেকে আনবেন না!