"গত সপ্তাহের টাকা টা বাকি আছে..., আজ আর বাকিতে দিতে পারবোনা.."
হারানবাবু কথাটা শুনে অনেক নিরাশ হলেন।
হারান বাবু, কেশবপুরের একজন বাসিন্দা, সেখানেই তার একটা ছোটো টিনের বাড়ি, বাড়িতে উনি আর তার স্ত্রী আলো রানী। অতীতে, বলতে গেলে দশ বছর আগেও তাদের অবস্থাটা এমন ছিলোনা। চাষের জায়গা ,জমি, আমের বাগান নিয়ে বেশ খানিকটা জমির ফসলে তাদের জীবনটা ভালোই কেটে যেত। তবে সেসব আর কত দিন...! ছেলে, রতন, বিদেশ যাওয়ার আগে জমি লুকিয়ে সব বেঁচে দিয়ে শুধু বাবার জন্য বাড়ির পিছনের আম গাছ সহ কিছুটা জমি রেখে দেয়।
পাকা পিচের রাস্তা, দুধারে যতদূর দেখা যায় চাষের ক্ষেত। তখন বাজে বেলা বারোটা , সূর্যের তাপটা যেন এখন জাঁকিয়ে বসেছে। চারদিকের বাতাসের গরম ছোয়া যেন শরীরের চামড়া শুদ্ধু জ্বালিয়ে দিচ্ছে,
নিঃশ্বাসের বায়ুর সাথে এক গোছা তপ্ত বাতাস যেন প্রবেশ করছে।
উঃ!...
হারানবাবু রাস্তার ধারে একটা মেহগিনী গাছের নিচে বসলেন। যত দূর দেখা যায় শুধু জমি আর জমি..
একসময় এমন চাষের জমিতে তার অধিকার ছিল, আজ সেসব অতীত...!
জলের পিপাসা মেটানো দায় হয়ে গেছে এমন পরিস্থিতি। হারানবাবু কিছুক্ষনের জন্য চোখ বন্ধ করলেন।
"কি গো মনিকার মা , আজ কি রান্না করলে..?"
মনিকা, হারান বাবুর একমাত্র মেয়ে.. একবার এমনি গরমের সময় ঝরে গাছ ভেঙে পরায় আজ সে এমন অসহ্যকর গরম থেকে মুক্তি নিয়ে হয়তো কোন অজানা গ্রামে , অথবা কোন মেঘের দেশে ভেসে গেছে..!
"শাক রেঁধেছি গো.."
উননের তাপ টা যেন আজ একটু বেশিই লাগছিলো।
সূর্য্য তখনও নিষ্ঠুর..
হারানবাবু হঠাৎ চোখ খুললেন। চারদিক তখনও যেন জ্বলছে...চোখ যেন এক জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড।
তিনি উঠে দাঁড়ালেন। বাড়ি ফিরবেন।
তখন বেলা সোয়া চারটে,
হারানবাবু ঘরের বাইরে বসে আছেন, ঘরে স্ত্রী অসুস্থ, জ্বর কখন আসছে আবার যাচ্চে।হারানবাবু অবস্থা বুঝতে না পেরে ডাক্তার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন ভাবলেন..কিন্ত্তু
আকাশটা হঠাৎ কালো হয়ে আসছে, মুহূর্তের মধ্যে চারদিকের আলো কমে আসলো। বাতাসে গরমের প্রকোপ তখন একটু কম...
হওয়া দিচ্ছে অল্প..
দেখতে দেখতে বাড়ির পিছনের আমগাছ টা যেন খুব বেশি দুলতে থাকে।
ঝড় আসে, একটা সময় যেন যুদ্ধের সৈনিকের মতো একদল হওয়া এসে সব যেন উথাল পাথাল করে দেয়, হওয়া যেন থামতেই চায়না , চলে যাবো করেও যায়না...
ঘরের প্রত্যেকটা অবলম্বনের ওপর যেন নির্মম অত্যাচার চলে। ঘরের টিনের দেওয়াল গুলো যেন এখনই ভেঙে যাবে। চারদিক তখনও কালমেঘে ঢাকা। বিকেলের আকাশ যেন রাতের অন্ধকার ডেকে আনছে।
হারানবাবু আম গাছটা দেখতে ঘরের পিছনে যেতেই ভীষণ শব্দে ঘরের চাল টা উড়িয়ে নিয়ে যায়...
তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।
ঘরে গিয়ে স্ত্রী র দিকে নজর দিতেই সব যেন নিমেষে শেষ হয়ে যায়...
অসহ্য গরম যেমন কষ্ট দায়ক তেমনি বিধ্বংসীও।
পরিবেশের সাথে আমার অভিযোজিত হতে পারলেও হারানবাবুর মতো অনেক মানুষ আজও অসহায়...
তাই পরিবেশ এর স্বার্থে মানুষের উপকার্থে গাছ বাঁচান। একটা গাছের জীবনদান না করতে পারলে একটা গাছের মৃত্যু ডেকে আনবেন না!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন