পরিচিতি :
---------------
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতায় এম. এ.;যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এড.। ১৯৯০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় একফর্মার কবিতার বই ‘ছায়াপাত’।এ বছর বর্ধমান লিটিল ম্যাগাজিন বইমেলায় প্রকাশ পাচ্ছে ‘ব এ বর্ণমালা’।মূলতঃ ছড়া এবং কবিতা নিয়ে লেখালেখি ।ছোটদের বেসরকারি একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক । জীবন শুরু সেন্ট জুডস্ একাডেমিতে শিক্ষকতা দিয়ে । কালান্তর দৈনিকে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যুক্ত ছিলেন । বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মী।১৯৬৮ এর মার্চে জন্ম। জন্মস্থান সুন্দরবন, এখন সোনারপুরে বসবাস।
প্রকাশিতব্য বই ২৩ টি।
সাক্ষাৎকার
***********
প্রশ্ন :১:- আপনার কাছে কবিতা কি ?
উত্তর: আমার কাছে কবিতা হল আত্মখনন।নিজেকে নির্মমভাবে খুঁড়তে থাকা।খুঁড়তে খুঁড়তে কখনও কখনও যন্ত্রনায় দু'চোখ বেয়ে ধারা নামে।তারপর পারিপার্শ্বিকতাকে বলি এবার খুশি তো!
২:- আপনার প্রিয় কবি কে ?আপনার অনুপ্রেরণা কে বা কি ?
উত্তরঃ জীবনানন্দ দাশ, বিনয় মজুমদার, জয় গোস্বামী প্রমুখ।
আমার কবিতার অনুপ্রেরণা আমার একান্ত।
৩:- কেন লেখেন আপনি কবিতা ?
উত্তর: জীবনে না পাওয়া স্বপ্নগুলো, বাইরের জগতের ঝড় ঝাপ্টা, টালমাটাল হয়ে পড়া জীবন - এসবই আমার কবিতা লেখার কারণ।
৪:- আপনার প্রথম কবিতার নাম ও কাব্য গ্রন্থের নাম (প্রকাশিত/ অপ্রকাশিত)
উত্তর: আমার প্রথম প্রকাশিত লেখা একটি চার লাইনের ছড়া "পিড়িং পিড়িং", এটি বেণারসের "সবার সাথি" প্রকাশ করে ১৯৮৮ সালে।
প্রথম প্রকাশিত বই "ছায়াপাত", ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে এটি নিজ খরচে প্রকাশ করেন "মৌসম" পত্রিকার সম্পাদক শ্রদ্ধেয় তপন মণ্ডল।
আনন্দবাজার ও বর্তমান বইটির খুব প্রশংসা করেছিল।
৫:- কবিতা/কবি সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ?
উত্তর: আমার মনে হয় কবির সঙ্গে পাঠকের সম্পর্কটা দ্বন্দ্বমধুর।অনেক অভিজ্ঞ পাঠক কবিকে যথার্থ পরামর্শ দেন।এমনকি ঘোরতর বিপদে অন্ন - জল - আশ্রয়ও দেন, সাহস যোগান।
আমি তার বড় উদাহরণ।
৬. ফেসবুকিয় কবিতা বা সাহিত্য বাংলা সাহিত্যে জগতে কতখানি গুরুত্ব রাখে ?
উত্তরঃ ফেসবুকে কবিতাসহ অন্যান্য লেখালেখি নিয়ে এই বছর দেড়েক আমি এসেছি।অনেক শক্তশালী কবির লেখা এখানে পাচ্ছি। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সাহিত্য সংস্থাগুলো প্রিন্ট মিডিয়ার লেখককূলের মত এদেরকে গণ্য করলে বাংলা সাহিত্য আরো সমৃদ্ধ হবে বলে মনে হয়।তবে কবিদের / লেখকদের পূর্ণাঙ্গ বইও এখানে প্রকাশিত হওয়া দরকার। আশার কথা এটা এখন বেশি বেশি হচ্ছে।এবং আর্থিক পুরস্কারও চালু হয়েছে।
৭.ছাপা ম্যাগজিন ও ব্লগ ম্যাগজিন বা ওয়েব ম্যাগজিনের মধ্যে কার বেশি গুরুত্ব ? এবং কেন ?
উত্তর: ছাপা ম্যাগাজিনগুলো এখন ওয়েব ম্যাগাজিনগুলিকে ভয় পাচ্ছে, তাই নিজেরাও ওয়েবে এসেছে বা আসছে।সুতরাং এটা পরিস্কার ওয়েব ম্যাগাজিনের গুরুত্ব দিনকে দিন বাড়বেই।
৮. আজ কাল অনেক কবি জন্ম নিচ্ছে ,কেউ বা প্রেমে আঘাত খেয়ে ,কেউ বা ব্যর্থতায় আবার কেউ কবি হবে কবিতা লিখছে , কিন্তু যখন লেখা ছাপাতে চাইছে টাকার অভাবে বই করতে পারছে না ,বা করলেও বই বিক্রি হচ্ছে না , মানুষের এই বই বিমুক হওয়ার কারণ কি ? বইয়ের অভিমুখে আনতে গেলে কি করা উচিৎ বলে আপনার মনে হয় ?
উত্তর: দেখে তো মনে হচ্ছে না মানুষ বই বিমুখ।বই এর জন্যে দৌড়াচ্ছে, মেলা হচ্ছে, কিনছেও ছাপাবই বা অনলাইনে।আর যারা হুজুগে মাতে তাদেরকে মানুষ হুজুগ শেষে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।বই তো মানসিক উৎকর্ষসাধন করে,তাই না? যার সেটা দরকার সে তো কিনবেই। চারধারেই তো প্রচার চলছে, সব মিডিয়ায়।
৯.ছন্দ ও ছন্দ পতন বলতে আপনার কি মনে হয় ? অনেক সময় দেখা যায় যে একটি কবিতা স্বরবৃত্ত বা মাত্রাবৃত্ত ছন্দ তে শুরু হলেও শেষ হয় অক্ষর বৃত্ত ছন্দে ,এতে কি কবিতার ছন্দ পতন হয় বলে আপনার মনে হয় ? কেন ?
উত্তর: ছন্দ কবিতা সহজে মানুষের মনে গেঁথে যায়।মানুষ এই কারণেই শোকে তাপে আনন্দে বিষাদে সেগুলো আবৃত্তি করে। আমরা কোন বিষয় যখন কাউকে বোঝাই তখন কি এক স্বরে লয়ে তা বোঝাই? কখনও নিচু কখনও মধ্য বা কখনও উঁচু খাতে, কখনও ধীরলয়ে কখনও দ্রুত বা কখনও মধ্যলয়ে বোঝাই,তবেই না সেটা সহজবোধ্য হয়।কবিতার ক্ষেত্রেও একই।সুতরাং একই কবিতায় ভিন্ন ভিন্ন ছন্দ ব্যবহৃত হলেও ছন্দপতনের প্রশ্ন আসে না।
১০.কবিতার ক্ষেত্রে ছন্দ ও মাত্রা এর কি বিশেষ প্রয়োজন আছে নাকি নেই ?
থাকলে তা গুরুত্ত্ব কত খানি ?
উত্তর : আগেই বললাম ছন্দ কবিতা মানুষের মনে সহজে গেঁথে যায়। গদ্য ছন্দও এর ব্যতিক্রম নয়।তারমানে এই নয় আমি আবার সনেটে ফিরব, পয়ারে ফিরব, যা বাতিল তাকে ফিরিয়ে কি করব? বরঞ্চ অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও দলবৃত্ত - এই তিন মূল ছন্দরীতিকে আত্মস্থ করে নতুন কিছু করা যায় কিনা সেটাই দেখব।
কিছু কবিতা দিয়েই শেষ হোক তবে ...
শব্দেরা লুকিয়ে ঐ শূন্যতায়
১
একটা দিনের
দুটো দিনের
দিনের পর দিনের
চাওয়াগুলো হতাহত হয়।
অসহায় পিতৃ মন।
আমার কি ডালপালা কাটছে কেউ?
এত চোরাস্রোত আমাকেই ঘিরে!
স্বপ্নগুলো পাথর
আর
পাথরগুলো স্বপ্ন হচ্ছে বারংবার।
একদিন
দুদিন
দিনের পর দিন
ভালবেসে দেখেছি
জল চাইছে সবাই
এমনকি ঘাস লতা পাথরও।
আমার কি কিছু হওয়ার কথা ছিল?
কারো ছায়া
কারো শীতের রোদ?
আমি তো আকন্ঠ বেসেছি ভাল
সন্তানকেও
তার রোগে
হতাশার অন্ধকারে
তাথৈ আনন্দেও।
তবুও পেরেক বাঁধা হাটু
বেঁকে থাকা লেগ হেড
জোড়া পাঁজর
কোমরের জোড়া হাড়েরা
বিন্দু বিন্দু জল চায়
চিৎকার জোড়ে
মড়াকান্না কানে তোলে।
এত জল কোথায় যে পাই!
ভূত্বকের জীবিত ঈশ্বরেরা কাঁদে
মানুষকে জল বিলোতে বিলোতে
তাদের চোখও আজ খটখটে মরুভূমি।
২
দীর্ঘ সাড়ে কুড়ি বছরেরও বেশী পর.......
কিছু সুখী-স্মৃতি........
কিছু ডুকরে ওঠা স্মৃতি পিছু টানে......
আচমকা হৃদকম্পনে........
এমনটা তো হবারই ছিল.......
কারো কি কিছু হারিয়েছিল?........
কেউ কি তুমুল খেয়েছিল নাড়া..........
নাকি অনেকেই চুপিচুপি বা প্রকাশ্যে অসহায় ছিল?........
অজানা শ্মশানে তোর পোস্টমর্টেম করা শরীরটা ........
রাতের অন্ধকারে আগুনকে দিয়ে খাওয়ালাম...........
তুই চলে গেলি.......
কিছুই নিয়ে গেলি না...........
কিম্বা আমার ভাল থাকা নিলি........
কিম্বা অন্য কেউ কেউ শতছিদ্র হলো দুর্দান্ত ...........
পাশাপাশি কতদিন এক তক্তাবোসে আর ঘুমাইনা.........
গুলিও খেলিনা, কউও না......
মনে আছে কউ লেগে থুতনি ফেটে গেল তোর?........
সব রহস্য, সব মরমী রেষারেষি, প্রশংসা সব আগুনে মিশল......
শুধু ঊনত্রিশ বছরের স্মৃতিগুলো একি আজো দগদগে হায়! ..........
৩
ঘিলু আঁটকে ঘাঁটকে টানি
বোধ খুঁড়ে শূন্যতাকে তুলে আনি।
আয় শূন্যতা লোফালুফি খেলি
আরে তুই কি করে পারবি!
আমার সন্তান যে আজ আমারই পাশে।
তোকে ভস্ম করে
তোর ছাই চটকে চটকে
দ্বিতীয় হুগলি থেকে ওড়াব আকাশে।
আগুন বাতাসে ফাগুন বাতাসে
সে খবর পৌঁছে যাবে
ভূত্বকে সবে আসাদেরও কানে।
শূন্যতা তুই কি ভেবেছিলি
আমার এ সারি শরীর
ফুলচারায় ভরাবি, লাগাবি বাগানে?
৪
একা থাকলেই কিসের যেন শব্দ আসে
সবাই আসো আর শোনো রহস্য কথা।
লোকটা রোজ ভোরে কাকেদের কিছু বলে
কিছু কথা হয় শিউলিদের সাথে, নিঃশব্দে।
অনেক শব্দ নিজে নিজেই কথা বলে
ভূত্বকে আপন আপন শব্দ সব ডাকে।
শূন্যতাই কঠিন কুয়াশায় লুকালে শরীর মন
হাহাকার সমাজ সংসারে, একা থাকা মনে।
কিছু অলৌলিক লোক শব্দকে জাপ্টে ধরে
মায়ার শরীরে ঈশ্বরের বারবার জন্ম হয়।
সব শূন্যতাই জন্ম দেয় ভরা বিস্ময়
শব্দেরা লুকিয়ে ঐ শূন্যতায়, ঐ শূন্যতায়।
আহা, শব্দ বাণে শব্দ কব্জা করে, কব্জা করে
রামের মত অভিশাপ খায় সব কবি মনে হয়।
৫
ঠিক কতটা বাড়লে নাগাল পাওয়া যায় হাকুতকুত করতে করতে জানার চেষ্টায় আছি, ছাইগাদার উপরে ফেলা কাঁঠালের ছালে বসছে আর উড়ছে ডুমো ডুমো মাছি, তোমাকে হয়নি বলা এখন আমি দর্শকে বাঁচি।
পাখিদের হঠাৎ ছায়াতে ঠকে যায় ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ, আমি কি করবো বল পাশেই দাঁড়িয়ে গাছ, ও তে তো ফল ভরা পাখি করে নাচ, মুখ কালো বানরেরা লেজে চুল বাছ।
তোমাকে হয়নি বলা করে নিও আঁচ, বেঁচে তো এখনও আছি, চারদিকে কাঁচ, মাঝে মাঝে হাত পা কাটি, রক্তের নাচ, এখনও খেলে, চেয়ে থাকে গাছ।
সাক্ষাৎকারে : জ্যোতির্ময়