নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

তাপস গুপ্ত





বুড়ো চাঁদ চোখ পালটায়ে



(অর্ক, সিদ্ধান্ত,দীপ্ত, দিয়ান,  অরিত্র, সৌরভ, তোমাদের পাহাড়ি রাতের সেই উদ্দাম অনুভূতির প্রকাশ...এই কবিতা..যদি হয়ে থাকে)

এবার পাহাড়ে মদ গিলে যা হয়েছিল
তুমি না সামলালে কি যে হতো,
হর হর বমির সঙ্গে ভেতরের জমা বাসি
শুধু মণিপুরী জয়েনে ভাসে কামু কাফকা,

ওই তো স্পষ্ট
দু দুটো বুড়িকে খুন করে
একদিকে চুপ করে দাঁড়িয়ে রোডিয়া
তলস্তয়ের দাড়িতে উকুন বাচ্ছে
তারপর দেখে সেগুলো সাইবেরিয়ার
ফ্যাকাসে বরফকুচি ট্রোজান বাগ;

ওফ্! কি যে হবে এখন এত ধোঁয়া মদে
সব তালগোল পাকাচ্ছে,
এই চাঁদিম পাহাড়ি ঠান্ডায়
যতবারই চন্দ্রাহত আমি কর্ডে টিউন বাঁধি
ততবারই এসে দাঁড়ায় অনুষ্কা,প্রিয়াঙ্কা ভাবনা
রোশনাই সোনিয়া(এই সোনিয়া আট বছর নির্বাসনে ছিল
রোডিয়া র সঙ্গে, ছামিয়া বিদায়কালে দিলজ্বলা নেচে
গববরের কাছে শ্রমনী মুদ্রায় চেয়েছিল ধনেখালি তাঁত
গব্বর ব্যস্ত ছিল মাছি মারায়, বেচারি আর বেচারা
যদি এ ওর পিঠ চুলকোতে পারতো…)
চাঁদ মেয়ে সব,
জোছনার জোনাকি এদের শরীরে খেলে,
কতবার চেয়েছি ধরতে ওই জোনাকি ফুলকি
আঙুল জমেছে হিম কামনায়,
সব নোট পথ খোঁজে ধ্রুব পদে,
তখনই কামনার গণ হিস্টিরিয়া
রক্তমাতনে আমাকে সব ভুলিয়েছে,
ও চাঁদ তুমি কেনো জোছনা হলে
অনুমুখ ডায়ামিটার এর লাভা উদগীরণ
তুমিও অহল্যা ব্যাসল্ট হলে!
বুড়ো চাঁদ চোখ পাল টায়ে কয়
আমি নিয়েন্থার্ডাল প্রেমিক পিতা
প্যাপিরাস পাতা রক্তে চুবিয়ে লিখেছিলাম
তারা , ইয়োর বডি ইজ আ ওয়ান্ডারল্যান্ড,
অদ্ভুত চোখ হেনে বৃহস্পতি বলেছিলেন,
এক বেদনাদীর্ণ পুরুষ পশু হয়ে ধ্বংস হতে চলেছে
ঈশ্বর শুধু তখন করতল ঘষেন,
গিটারের কর্ড ছিঁড়ে জয়েন টেনে
গন্ধর্ব জন মেয়ার বলে ওঠে
এ মায়াকোভস্কি ফুঁকছে...তুমি পালাও..।
আমি মেনেছি সেই দেব পুরুষের কথা!
হে নক্ষত্র সুন্দরি ,
গ্যালাক্সি থেকে গ্যালাক্সি ঘুরে
আমরা তো গেয়েছি জীবনের গান,
গিটারে খেলেছিল আঙ্গুল
বিস্ময় বিভূষিত তোমার শরীরে জীবনানন্দ
আমার গানের চরণে , সে এক বিপন্ন বিস্ময়;
যতবার বলেছে কবি বুড়ি চাঁদ,
ততবার বলেছি আমি হয়নি,
আমি ক্ষয় রোগী কিন্তু লিঙ্গান্তরিত হইনি,
তাছাড়া তারা মা হবে এবার!
তখন কবি চোখ পাল্টিয়ে কয়
পৃথিবী তোমার মা প্রেমিকা সহোদরা,
হে আচার্য মাতুল,
এবার এক আশ্চর্য উটের গ্রীবার মত
স্তব্ধতা এসে তোমায় গ্রাস করবে
মাত্র কয়েক মাইক্রো পলে!
তখনই জ্যোৎস্না চিরে দৈব বাণী শুনি
নিজের শিরায় তুমি বয়ে নিয়ে চলেছে অপেক্ষার নদী
ভালোবাসা স্থির হয়ে শুনছে,
ওয়েটিং ইন ভেইন,
তখনি আমি নিজেকে ভেঙে চুরে জানতে চাই
আই ডোন্ট ওয়ানা ওয়েট ইন ভেইন ফর ইয়োর লাভ,
কিন্তু তুমি যত দিন না আসছ,
আমার প্রেমিকা নারী
ঋতু পর ঋতু
আমি চাঁদ নক্ষত্র পুত্র
আই এম স্টিল ওয়েটিং দেয়ার।


(ঋণ স্বীকার: জীবনানন্দ, মায়াকোভস্কি, জন মেয়ার, বব মার্লে, আধুনিক বাংলা গান)



স্বরূপা রায়








এই রাত
*******




রাত এখন বেড়ে চলেছে,
নিঁঝুম হলো এই পৃথিবী।
ঘুমিয়ে পড়েছে সবকিছু,
শুধু জেগে আছি আমি।
মাঝে মাঝে স্তব্ধতা ভাঙছে,
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে।
পূর্ণিমার চাঁদ উঁকি মারছে,
গাছের ডালের ফাঁকে।
চারিদিকে চলছে এখন,
আলো আঁধারের খেলা।
আকাশ জুড়ে বসেছে,
অজস্র তারার মেলা।
অন্ধকারে ফুটে উঠেছে,
হাজার জোনাকির আলো।
রাতের এরূপ দেখলে,
কে বলবে রাত হয় কালো!


আফরোজা সুলতানা






আফসানার অনুসন্ধান  


ইন্ডিয়া ব্যাটিং করতে  নেমেছে এবার । তাড়াতাড়ি রুটি বানিয়ে সপরিবারে খেলা দেখতে বসলো আফসানা । না , খেলা দেখার নেশায় নয় । ইমরানকে খোঁজার নেশায় । ইমরান আখতার , যার সাথে পত্র মিতালি হয়েছিল আফসানার আজ থেকে ঠিক ১৬ বছর আগে ।  তখন ইমরান স্টেট লেভেল ক্রিকেট খেলত । সময়ের সাথে কত যে ঠিকানা বদলাল দুজনের । তখন কোন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ছিল না । মোবাইল কিছু জনের হাতে বিলাসিতার আমেজ এনে দিত মাত্র ।

একে অপরকে না দেখা এই বন্ধুত্তের একসময় ইতি ঘটলো । তবু আফসানা আজও খোঁজে তাকে । টি.ভি.র মাধ্যমে । যদি সে ন্যাশনাল লেভেলে খেলার চান্স পেয়ে থাকে ।

খেলার শুরুতে তার উৎসাহটা শেষে পাল্টে যায় বিষণ্ণতায় , হতাশায় । আজও তাই হল । কত নতুন নতুন খেলোয়াড় সব । কিন্তু তার ইমরান কই ?
ডিনার করতে করতে সে শুনতে পেলো ম্যান অফ দা ম্যাচের নামটা । ঘোষিত হল শেখ হাসানুজ্জামানের নাম ।

শেখ হাসানুজ্জামান , যার কোন এক সময় ইমরান আখতার ছিল ছদ্মনাম !


শাহীন রায়হান




মৃত্যুময় মাতাল নগরে



জানি বৃষ্টির মত ঝরে যাব একদিন
অক্ষমতার প্রাচীরে ঝুলিয়ে শ্যাওলা পর্দা
বর্ষণমুখর দীঘল প্রাতে কদমের পাপড়ির মত
ভেসে যাব শ্রাবন নদীতে। 
স্বপ্নহীন ম্লান দুটি চোখে গোধূলীর শেষ আলো
তখন মিলাবে বেদনাহত নিঃস্তদ্ধ সন্ধ্যার আবছা আঁধারে।
মনের ফ্রেম ঢেকে যাবে নিঃসঙ্গ বার্ধক্য পলিতে
নিজেই নিজের কাছে হয়ে যাব অচেনা অপাংক্তেয়
যখন প্রতিটি ইচ্ছে পালক পুড়ে যাবে অবহেলার আগুনে।
যেদিন দূরন্ত শৈশব কামার্ত যৌবন বন্ধুত্বের
নিরন্তর উচ্ছ্বাস প্রেমিকার ত্রিভুজ চতুর্ভুজ ভালোবাসা
ধুলোচিহ্নের মত উড়ে যাবে গ্রীষ্মের
দূরন্ত বাতাসে।
আর আমি মৃত্যুময় মাতাল নগরীর
পথে হেঁটে যাব অবিরাম
মৃত্যুরই আবেশে।

সানন্দা নন্দী






দু'মুঠো অন্ন চাই 





তুমি কি দিতে পারো দু' মুঠো অন্ন ?
ঐ যে ঠাঁয় বসে থাকে রাস্তার ফুটপাথে দিনরাত
দিতে কি পারো দু' মুঠো অন্ন ওদের মুখে তুলে ?
ওদের পরিচয় শুধু যে ফুটপাথবাসী
ওরা তোমার-আমার কাছে বেকার তা জানি
তবুও পেট তো আর বোঝে না সে কথা
শোনে না ওদের দারিদ্রতার কথা
খিদের জ্বালায় কাঁদে ওদের অবোধ শিশুটা
তারা যে নিষ্পাপ, বড়ো অসহায় !
তারা জানে না তাদের দারিদ্রতার কথা
তারা জানে না তাদের জনক-জনকীর ব্যর্থতার কথা
শুধু কেঁদে মরে খিদের জ্বালায় দিন-রাত
তুমি কি পারো না ওদের মুখে তুলে দিতে
শুধু দু' মুঠো অন্ন ?

পেট ভরে দু' বেলা দু'  মুঠো অন্ন
এ যেন স্বপ্নের মতন
স্বেত-শুভ্র অন্ন যেন রাজকীয় খাদ্য সম ।

পথের ধারে ঘুমটি দোকানের পাশে
পরে থাকে ডাস্টবিনের পাত্র
এঁটো খাবার আর নোংরা পচায় ভর্তি সে বাক্স
ওরা খুঁটে খায় সেই নোংরা ফেলা বাক্সের খাবার
তাতে ক্ষণিক মেটে খিদের জ্বালাটা
কিন্তু রোগে ভুগে মরে অপুষ্টির কারণে
দু' বেলা দু' মুঠো অন্ন তুলে দিতে যে ব্যর্থ ওদের জনক-জনকী ।

ওরা জানে না বার্গার - পিৎজার স্বাদ
ওরা জানে না কোনো পোশাকী খাবারের নাম
ওরা তুষ্ট দু' বেলা দু' মুঠো অন্নে ।

কাঁচের দেওয়ালে ঘেরা রেস্তোরার সামনে
দাঁড়িয়ে থাকে করুণ ভাবে
লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে উচ্ছিষ্ট খাবারের পানে ,
দোকানীরা দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়
পাছে ব্যঘাত ঘটে ব্যবসায়
ভীড় কমে যায় রেস্তোরার ।

ওরা যে ভীষণ দরিদ্র
পেট ভরে খেতে পায় না দু' বেলা দু' মুঠো
খিদের জ্বালায় ভিক্ষে করে রাস্তায় রাস্তায়
হাত পেতে গঞ্জনা শুনে নেয় ভিক্ষের পয়সা
খিদের জ্বালা মেটাতে ওরা বেছে নেয় এমন পন্থা ।

প্রতিদিন না জানি কতো বাড়তি খাবার
ফেলা হয় রাস্তার ডাস্টবিনের বাক্সে
তুমি কি সত্যিই পারো না দু' বেলা দু' মুঠো অন্ন
তুলে দিতে ঐ সব অসহায় মানুষের মুখে ?
হয়তো এতে লাভবান হবে না কিছু
কিন্তু দোয়া পাবে ঢের
" সকলের তরে সকলে আমরা
      প্রত্যেকে আমরা পরের তরে "
            স্বার্থকতা পাক কথাখানি ।


রিয়া ভট্টাচার্য




তোমার আমার গল্প
 



যখন খোয়াবনামা মুচকি হাসে, আবদারসুতো আবেগী হয়ে জড়িয়ে নেয় পাকে পাকে। হিমরাতে যেভাবে শিশিরস্নাত হাঁটে পাথুরে পিচ রাস্তা, শেষবাস ফিরে যায় রাত্রিশেষে নিঃশব্দে ; ঠিক এই সড়কেই লেখা হয় তোমার আমার গল্প।

আপেক্ষিক পিছুটানে যখন পিঞ্জরে পোষ মানে উদাসীন জেদি পাখি, পরাশর বন্ধক রাখেন গলা মৎস্যকুমারীর কাছে............  
গলিত কুষ্ঠঘায়ে আঁকা হয় মরমিয়া চুমুর নিশান, বিপদসংকেত তুচ্ছ করে রাক্ষসপুরীর বন্দিনীদের জন্য রাত জাগে লালকমল - নীলকমল।  কিছু রূপকথা যেখানে হাসনুহানা হয়ে ফোটে; ঠিক সেই দেশেই লেখা হয় তোমার - আমার গল্প।

যেখানে অভিমান কিলিমাঞ্জেরো মেঘের মত ভিড় করে আসে, চিরহরিৎ বনানী নিমেষে পত্রশূন্য হয় অদেখা অভিশাপে। শ্রাদ্ধকালে পাকানো আলোচালের পিণ্ডের মত গলার মধ্যে দলাপাকিয়ে ওঠে বিস্বাদ কান্না, কুঁচকে ওঠা চাদরে কুঁকড়ে শুয়ে থাকে অস্পর্শী আঘাতখতিয়ান। আপন প্রতিবিম্ব ভুষোকালি হয়ে ব্যঙ্গচিত্র আঁকে আয়নায়, অশ্রুসিক্ত চোখ শেষ মিনতি জানায় প্রিয়াস্পদের দরবারে ; ঠিক সেইক্ষণে আর্তধ্বনি আখরে লেখা হয় তোমার - আমার গল্প।

বেহায়া ইচ্ছেরা যখন কল্পতরু হয়ে আঁকড়ে ধরে মৃত্তিকাকণা, শেষ চুম্বনের মত তৃষ্ণার্ত খড়খড়ে ঠোঁট শুষে নিতে চায় শেষ জলবিন্দু......
দেখা অদেখার মাঝখানে যখন কল্পনারা গড়ে তোলে স্বপ্নসেতু, বসন্তরাতে যখন দিগন্তপার হতে ভেসে আসে বিরহী কেকার বিষাক্ত নিঃশ্বাস। প্রত্যাখানের নীলে জর্জরিত প্রেমিক মন যখন ছটফট করে মৃত্যুকাঙ্ক্ষায়,   ভোরের স্নিগ্ধ সমীরণ যখন চাবুকসম আছড়ে পড়ে পিঠে ; ঠিক সেই সন্ধিক্ষণে লেখা হয় তোমার - আমার গল্প।

যখন পাতাবাহার গাছের ফাঁকে মগ্নচিত্তে বাসা বোনে গতঝড়ে সর্বহারা বাবুইপাখি, যখন প্রেমিকার কোলে মুখ গুঁজে মায়ের গায়ের গন্ধ খোঁজে আদরকাড়া প্রেমিক.....
বলা না বলার মাঝখানে যেভাবে অজান্তেই গড়ে ওঠে ধূসর গলিপথ, নিঃসীম অন্ধকারে দেবদূতসম মুমূর্ষুকে ভরসা দেয় নাইটিঙ্গেলের লণ্ঠন। যখন ঝাপসা চোখ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ঠিক যেভাবে গরম ভাতের গন্ধ পেলে নেচে ওঠে ক্ষুধার্ত স্বাদকোরকেরা ; সেইখানে নিকানো মেঝেতে কাঠকয়লার কালিতে লেখা হয় তোমার - আমার গল্প।

আদপে সবাই বলে রূপকথা বাস্তব হয়না কখনো, কিন্তু জীবনের প্রতিটি বাঁকেই বাস্তবের অবগুণ্ঠনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে সে।
গল্প..... সেতো জীবনপথেরই নামান্তর। রাজা - রাণীর মিলন - বিরহের নিঃশব্দ আক্ষরিক অভিযান। আসলে গল্প সবার হয়না, সবাই সবার সাথে সুখীও হয়না। পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের একটা সম্পূর্ণ গল্প আছে, যা তার জীবনকাল বেয়ে চলে অনন্তের পথে; মসীচালনা করে কোনো রাজা বা রাণী। আর পুরাতন অসমাপ্ত গল্পগুলো! তারা পরিত্যক্ত হয় উইধরা ডাইরির পাতায়, কোনো হিমরাতে আগুন উৎসবে আত্মাহুতি দেবে বলে।।