নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

লীনা দাস




মন কেমন করে




মন তো কত কিছুর জন্যই কেমন করে!
ছেলেবেলা,আমার গ্রাম,গাছপালা,
পুকুর,মৃত বাবা মৃতা মায়ের জন্য!
ফেলে আসা এত বছর এত মাস এত দিন!

সব কিছুর জন্যই মন কেমন করা!

কতকিছু মুছে নি:শেষ হয়ে গেছে।

তবুও ঐটি আমার গ্রাম,ঐখানেতেই
হৃদয় আমার গেছে চুরি।

জালের মত জড়িয়ে থাকা স্মৃতি
একটা একটা করে ছাড়াতে থাকি
স্মৃতি রোমন্থন নি:সঙ্গ জীবনে 
আনন্দের বাতাবরন!

মরানদীর খাত হয়ে থাকা মন,
স্মৃতিচারণে আচম্বিতে প্লাবনের
কল্লোল ছুটে আসে।      

রং বদলে যায়,বিবর্ণ মুখ ঠোঁট থরথরিয়ে কাঁপে-----
বিচিত্র অনুভূতি ঢেউ তোলে,
মিলিয়ে যায়! হিসাব নেই!
বৃদ্ধাবাসের জানালা দিয়ে আকাশপানে চেয়ে একদিন প্রতিদিন!!

দেবযানী ভট্টাচার্য্য

                  




        
                            ভয় 






 অন্ধকারকে আমি ভয় পেতামনা
ছোটবেলায় ,সবাই বলত সৃষ্টিছাড়া মেয়ে--ছোট্টখাট্টো চেহারা --জেদী--হিংসুটে আর দস্যি-।বাবা নেই বলেই নাকি এমন আমি। সুন্দরী  শান্তশিষ্ট  দিদির কম হেনস্তা  হয়নি এই দস্যির হাতে।বিনা নালিশে বেমালুম  হজম করতো প্রশ্রয়ে। কতবার মা অন্ধকার চিলেকোঠায় বন্ধ করে রেখেছে ,আমি কাঁদিনি--চিৎকার করে ছড়া বলেছি,ভুলসুরে উৎকট গান গেয়েছি , একসময়  ক্ষিধেয় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি ধুলোমাখা মেঝের উপর। 
অনেক রাত্রে ঠাকুমা আর দিদি এসে চুপিচুপি ডেকে তুলেছে।ঠাকুমা অধৈর্য  হয়ে পদ্মাপারের ভাষায় ক্ষোভে ফেটে পড়তেন----'আপদ্ মাইয়াডা কাউরে ডরায়না !-জন্মাইয়া বাপেরে খাইসে-অহন আমাগো জ্বালাইয়া পোড়াইয়া খাইবো।" এরকম আলোর বিপরীতে নিজেকে স্থির রেখেই স্কুল পালাতে শিখলাম --সাইকেল নিয়ে সোজা দামোদরের পাড়ে। কতবার মাঝিদের পটিয়ে জেলেনৌকোয় চেপেছি । নদীর চড়ায় মড়া পোড়ানো দেখেছি, ক্ষেত থেকে তুলে নিয়েছি টাট্কা সবুজ কড়াইশুঁটি । কখনো রাস্তা থেকে তুলে এনেছি খোঁড়া কুকুরছানা, কখনো বা্চ্চা শালিখ।নিজের পুজোর জামা ভিখিরি  মাকে দান করে চরম পিটুনি খেয়ে রাগে মায়ের মুর্শিদাবাদী সিল্কে  কাঁচি চালিয়েছি নিষ্ঠুর উল্লাসে।কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো দেখেছে এই ছোট্টখাট্টো  মেয়েটার সাংগঠনিক  ক্ষমতা--এক ডাকে একটা জমায়েত --মিছিল। মারপিট, ঘেরাও, পিকেটিং ,স্লোগান, গনসংগীত  ,স্ট্রিট্-কর্ণারিং ,পথনাটক, গ্রুপ থিয়েটার--জনপ্রিয়তার নেশা নেশা ঘোর। রাত করে বাড়ি ফেরা ছিল, ছিল ছেলেদের সাথে গ্রামে গ্রামে রাত কাটানো-।আত্মীয়রা বিদ্রুপ করে গেছে বাড়ি বয়ে--পাড়া প্রতিবেশীরা তকমা দিয়েছে-- "গেছো মেয়েছেলে" ,
"ছেলে চড়ানো মেয়ে" । নিজের ছেলেদের আমার ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলার উপদেশ দিয়েছে । আমি কিছুই গ্রাহ্য করিনি- -দরকারে পরে ওই বাড়িগুলোই আমার কাছে এলে মনে মনে হেসে কাজে লেগে পড়েছি । আমার নামে শুনতে শুনতে ধৈর্য্যহারা মা চড় মারতে উঠলে হাত চেপে ধরেছি,মায়ের অসহায় কান্না ও দুর্বল করতে পারেনি আমায় ।
হাসপাতালের মর্গ থেকে যখন সাতমাসের অন্তঃসত্ত্বা  দিদির কাঁটাছেঁড়া শরীরটা আনতে গেলাম--কালসিটে পড়া হাত,ছ্যাঁকা লাগানো গাল, কপালের মাঝ বরাবর একটা সেলাই---কি বীভৎস একটা অন্য পৃথিবীর গন্ধ ঘরটায়-অন্ধকার ,স্যাঁতসেঁতে। একটা কালচে মুখ, নীল ঠোঁট নিয়ে শুয়ে আছে দিদি-ঠোঁটের কোণায় শুকিয়ে যাওয়া রক্ত।ওরা বললো দোতলার সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে-। অথচ আমি তো জানি ক্রিটিক্যল প্রেগন্যান্সির কারণে  বেডরেস্টের নিদান পাওয়া দিদির সাথে ওরা কি কি করেছে। না---তখনও ভয় পাইনি আমি ,বের করে এনেছি ওকে মর্গ থেকে । দাঁড়িয়ে থেকে পুড়িয়েছি  ওর শরীরটা । তারপর
আইনি লড়াই--ওর হিংসুটি বোন শেষ দেখে ছেড়েছে এ অন্যায়ের । 
শুধু আজ যখন আইটি সেক্টর থেকে ভোর রাতে হা-ক্লান্ত আমি দরজা আনলক করে আমাদের ফ্ল্যাটটায় ঢুকলাম আর টানটান শূন্য বিছানাটা দেখলাম--আমার বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো-এই প্রথমবার-।টেবিলের ওপর ল্যাপটপ, তার পাশে ফটোস্ট্যান্ডে তোর গত জন্মদিনে তোলা ছবিটা--তুই আমার মুখে কেকের ক্রিমগুলো মাখাচ্ছিস্ , আমি কপট বাঁচার ভঙ্গী তে মুখ আড়াল করছি--কি ভীষণ প্রাণ ছবিটায়।  ঠিক সামনেই উপুড় করা "রিভার অব্ স্মোক"  বইটা, যেন রাত জেগে পড়তে পড়তে এই মাত্র উঠে গেছিস-। তার পাশেই তোর শূণ্য কফিকাপটার তলায়  সাদা একটা কাগজ কি ভয়ংকর শূণ্যতা  নিয়ে পড়ে আছে আমারই জন্য--আমি হাতে তুলে নিলেই যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচবে-।আমি জানি ওর বুকে লেখা অক্ষরগুলো--গত দু সপ্তাহ ধরে ওরা তোকে যন্ত্রণা দিয়েছে--অবশেষে ওদের থেকে তুই নিজেকে মুক্ত করেছিস--মুক্ত করেছিস এই একবছর তিনমাস বারোদিনের একত্র যাপন থেকে--।যে তুই একদিন আমাকে ছেড়ে ট্যুর এ যেতেও বায়না করতিস --কেমন আলগোছে সব ফেলে চলে গেলি --হঠাৎ উগ্র ,রুক্ষ মনে হতে থাকা এই জেদী মেয়েটাকে ফেলে এক নরম রূপকথার বুকে মাথা রাখবি বলে -। আস্ত একটা জীবন গুটিয়ে নিয়ে চলে গেলি--দায়হীন, শর্তহীন--বিশ্বাসই হয়না যেন-সব তো পড়ে আছে ঠিক তেমনি-
-সকালে যেমন ছিল বেরোবার  সময় -।কিন্তু এই সাদা কাগজ হাতে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা দস্যি মেয়েটা জানে কিভাবে ভিতর থেকে তাসের ঘরের মত ভেঙে যাচ্ছে তার সাহসের ইমারতটা--কি ভীষন এলোমেলো অর্থহীন   হয়ে যাচ্ছে জীবনভোরের আপোসহীন লড়াইগুলো । এই টিপটপ্  করে গুছিয়ে রাখা দেড়কামরার শূন্য লিভ ইন ফ্ল্যাটটার মধ্যে আমি অক্সিজেন পাচ্ছিনা।তোকে ছাড়া বাঁচবার ভয়ে আমার নিঃশ্বাস  আটকে যাচ্ছে ।


মৌমিতা পাল






জীবনকথা 




নীরব  মুহুর্তেরা বড়ো বেশি বাঙ্ময় 
বিষাদ জন্ম হয় বিষাক্ত শ্বাস আভাসে
 ছলনা ভ্রান্ত  করে অভ্রান্ত জীবন পথে 
 স্তব্ধতা গ্রাস করে চেতন মার্গ।

সু - কু  লড়াই চিরকালীন 
কু এর অনেক তীব্রতা
তবুও সু এর দৃঢ়তা 
অপরাজেয় অভ্রান্ত।

জীবন এক চড়াই উৎরাই
আরোহণ অবরোহন  অবশ্যম্ভাবী
সাপ লুডো খেলা খেলে যায় বারবার
সহিষ্ণুতা নিয়ে অগ্রসরে হওয়া যায় জয়ী।

ফল্গুধারা সাথে নিয়ে বয়ে চলা অন্তর্জগৎ
 বহিরঙ্গে ছদ্মবেশ অলীক মায়াবী।

নবনীতা সরকার






স্রোতের ধারে
          



তারপর,
অন্য অন্তর ভাঙে অন্তরাল---

অমানিশি জাল বুনে চলে
নির্ভেদ মায়াচাদর ঢেকে বুকের ক্ষত লুকায়-
অতসী চাঁদ। 

ঘোর একাকীত্ব----ঘর বেঁধেছে---রাতের গুহামুখ

ভিতহীন অঙ্গীকারের সিঁথি আজ তাই ধূ ধূ মাঠ। 

রাত জানে শুধু,
তার আসার পর থেকে তার মাড়িয়ে যাওয়ার পর পর্যন্ত---বৃত্তাকারে ঘুরে চলেছে যে পথ,
সে পথেই সমাধিস্থ সকল নীরব কথা। 

তাই আজ,জলসমাধি নিক এ অন্য অন্তর -
অন্য অন্তরালে।

সায়ন্তনী হোড়








সীমাহীন ঘুম



একটা রেলিং-এ  জড়িয়ে 
বেড়ে ওঠা কিছু অদৃশ্য শব্দ ।
 নিঝুম দ্বীপ । হঠাৎই বেখেয়ালি বর্ষার 
  শরীর ছাপ ।

ঘুমিয়ে থাকা প্রেমিকার স্বপ্নরা 
ভেসে বেড়ায় সেই  অগণিত বিন্দুদের মধ্যে

 নগ্ন ইচ্ছেরা বারবার ফিরে আসতে চায় 
ভেজা পাতাদের গায়ে ।

একটা ছোঁয়াচে রোগের
 অস্তিত্ব ফুটে উঠেছে প্রতিদিন 
মেঘলা আকাশের বুকে ।

ব্যক্তিগত স্কেলের মাপগুলো আজ
বড্ড অসাবধানী হয়ে পড়েছে ।
সমুদ্রে ডুবে যাওয়া প্রতিটি রাতের 
ঘুমকে যদি আবার ফিরিয়ে আনা যায়
তাহলে হয়তো ঘুমের মধ্যেই
টিপবাক্সে বন্দি পাথুরে সময়কে খুঁজে পাওয়া যেত ।।

                                     

বিনয় লাহা






বিশ্রাম 


চৌকাঠ পেরিয়ে নিদ্রা নামে মানুষের 
আমার পাশেই কুলিকের মৃতদেহ 
তোমার কথায় ঝাঁপ দিয়েছি আগে 
একটু পরেই নামবে বিদ্রোহ। 

ভাববার নেই শান্ত হয়ে বসো 
চৌকাঠে তার চরম নিদ্রা নামে 
গৌধূলিতেয় ফেরত আসছে গরু 
এখান থেকেই পাগলা জীবন থামে