নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

রানি মজুমদার




নবজাতক: অঙ্গীকার
*******************




বেশ্যা হও, বেশ্যা হওয়া তোমাদের জন্মগত অধিকার....আমরা পুরুষ, আমরা এনজিও, আমরা সমাজ !!.. .. মহিলার শরীরকে বাজার বানানোর যে যুক্তিটা যত্ন করে সকলকে বোঝানো হয়, তা হলো অভাব....শিক্ষার নাকি চাল ডালের ?... কিন্তু শিক্ষা দিয়ে  প্যান্টের তলায় মারাত্মক অস্ত্রটাকে কে কবে শান্ত করতে পেরেছে !...  আর অভাব. ? আমাদের নীচুপাড়ার সাঁওতাল মাসিরা প্রতিদিন সকালে দলবেঁধে মিস্ত্রীর কাজে যায় সেটাও তো অভাবের তাড়নাতেই...তবে ?....মনুয়ার স্বামী থাকতেও আরো একটা পুরুষ শরীরের প্রয়োজন ছিলো....কেন ?... কারন একটাই.সেটা তীব্র কাম যন্ত্রনা ....কিন্তু তাই বা কী করে হয় ?.. সেই তাড়নাতেই যদি কেউ শরীরকে ভাড়া খাটায় তাহলে জীবনে এত অন্ধকার কেন ?... এখানে একটা মজাও আছে, সম্মতিতে যৌনশিল্প আর অসম্মতিতে ধর্ষন !...অথচ দুটো ভাত কাপড়ের জন্য  নারী শরীরে প্রতিদিন তিরিশটা শরীরের দাপাদাপি এটা অত্যাচার নয় ?... ইঁদুর পচা ঘন্ধময় পেনিসকেও চুষতে বাধ্য করা  আরো ১০০ টাকা দিয়ে, এরপর পেছনে নাও, কুকুর সাজো..ইত্যাদি ইত্যাদি......যৌন কর্মী !!....নিজের নিজের ঘরের  মা  বোনেদের সুরক্ষিত রেখে "বাইরের"  ঘরের মেয়েদের অসহায় দেখতে আমরা খুব  ভালোবাসি, সেই সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে আরো ভালো বাসি.... অসহায়  সেই বাজারের মেয়েটি কারোর বোন নয় ? কারোর মেয়ে নয় ?....অথচ এই ব্যবসাকেই শিল্প নাম দিয়ে আমরাই মুনাফা লুটি,.. যুক্তি দেখাই এদের জন্য নাকি আমাদের নিজের ঘরের মা বোনেরা সুরক্ষিত থাকে !!.. এদিকে তারা রয়ে যায় অন্ধকারেই তবে কারোবারিদের পকেট ভরে, লকপকানো পুরুষ অঙ্গ ঘন্টাখানেক তৃপ্ত হয়..... আমাদের পরম মাননীয়া  সিএমের  যখন কন্যাদের নিয়ে এত প্রকল্পের কথা শুনি....তখন বিশ্বাস করুন  মুখ লুকোনোর জায়গা পাই না.....অষ্টম শ্রেণীর স্কুল ছুট নাবালকও স্কুল ড্রেস ব্যাগে লুকিয়ে সোনাগাছির ঘরে ঢোকে.....সোনাগাছি, কাদারোডে যারা এই যৌন শিল্পের কারবারে নেমেছেন সেখানে ১৩ বছরের কচি মালও পাওয়া যায়.....এই মা, দিদি, বোনেদের ওপর প্রতিদিন চলা অমানুষিক অত্যাচারকে আমরা কেউ কেউ  নির্লজ্জ সমর্থন করি... অতএব " সে  মন্দিরে দেব নাই"....এ মন্দিরেও আর  আমাদের মনূষ্যত্ব নাই.....পড়ে আছে শুধু  "মানুষ"  নামক আমড়ার আঁটি....

আর রেপ টেপ দেখতে চান তো গুগলে আসুন...বৌদির শাড়ি ছাড়া থেকে স্নান....হস্ত মৈঃ থেকে হার্ড ফাকিং.....  OK আপনার কচি মাল পসন্দ  তাই তো ?স্কুল সেক্সে পেয়ে যাবেন....আছে   টিন সেক্স....১৬ বছরের যুবতীর সব কিছু. ...খিড়কি  থেকে সিংহদুয়ারের ভেতরের  সমস্তটা....বৌদি মানে লাখ লাখ বৌদি.....যুবতী মানে লাখ লাখ যুবতী.......হাতের মুঠোয়  ভ্যারাইটিস যৌনাঙ্গ....থেকে থেকে মেয়েদের মুখে আরামের আওয়াজ.....ক্লাস ফাইভের ছেলের দলও টিফিনে  স্কুলের মাঠে বসে  দেখে নিচ্ছে সব টুকু.....মাল  !!গুরু মাল !! ....মোমবাতি, বেগুনেই যদি শীৎকার হয়....তবে লোহার রোড, ভাঙা কাচের বোতল, গাছের গুঁড়িতে তো সুখ সাগরে  মাল ভেসে ভেসে  উঠবে....সন্দেশ খালির বৃদ্ধার যৌনাঙ্গ থেকে নাকি  নাড়ি ভূড়ি বেরিয়ে এসেছিলো.....গোপন অঙ্গ আর গোপন নেই, লজ্জাস্থানে আর লজ্জা নেই.....মা বাবা তাদের ছেলেকে মোবাইল না কিনে দিলেও ছেলে বন্ধুর মোবাইল থেকে দেখে নেবে XXX.....কচি মাথাতে যা ঢোকে তা রয়ে যায় বরাবর.....তবে?...  উপায় ?....কী হবে ভবিষ্যত- পৃথিবীর ??উপায় জানা নেই...তবে ভাবলে গা শিউরে উঠছে.....বিকৃতির যেন প্রতিযোগিতা চলছে....নৃশংসতায় আমার চেয়ে কে আগে !!. ২২ দিন যমে মানুষে টানাটানি, অবশেষে সেই মায়ের মৃত্যু ...সেই রাতের রেপ,  ভাঙা বোতল ঢোকানো যোনিদ্বারের  লাইভ ভিডিও যদি  নেটে এসে গেছে....তা দেখে কত শত পুরুষ অঙ্গ  যে প্যান্ট ভেজাবে তার ইয়াত্তা নেই....এদিকে ততদিনে সেই শরীর পুড়ে ছাই, জীবনেও, মরনেও.....সাড়ে তিন থেকে একষট্টি !!.... মহিলা  হলেই হলো....রাস্তার পাগলীটাও চলবে..... কে  দায়ী এ প্রশ্ন বৃথা. ..দায়ী আমরা নিজেরাই......জ্যাঠামো নাম দিয়ে সব সতর্কতাকে  তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মাশুল গুনছি আমরা........

শ্যামল কুমার রায়






বিসর্জন 
-----------


গিরিরাজ কন্যা পার্বতী তুমি, 
পিতৃপক্ষের অবসানে মর্ত্যে আবির্ভূত হও তুমি, 
খুশির জোয়ারে মর্ত্যবাসী ভাসে।
আনন্দের আগমন হয় তোমার সাথে,
 মর্ত্যবাসী ভালোবেসে তোমাকে আনন্দময়ী বলে ডাকে।
তোমাকে ঘিরে আছে পৌরাণিক কাহিনী কত ! 
কার্ত্যায়নের আশ্রমে পূজিত হয়েছিলে তুমি -
সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী ।
দশমীর ঐ শুভ দিনে অসুর বধ করেছিলে তুমি ।
দেবতারা ফিরে পেল স্বর্গের অধিকার।
অশুভ শক্তির হল নাশ , 
শুভ শক্তির হল উচ্ছাস ।
পৌরাণিক ঐ উপাখ্যান যদি হয়ও প্রতীকী, 
অশুভ শক্তির বিনাশে তুমি চির ব্রতী ।
গীতার ঐ উবাচ নয় যে মিছে, 
ধর্মেরই প্রতিস্থাপনে তুমি আস যে মর্ত্যে ।
পৌরাণিক ঐ অসুরের তবু ছিল ন্যায় অন্যায় বোধ, 
আজকের অসুর ওসব থেকে বহু দূরে, 
নীতি, নৈতিকতার নেইকো বালাই ,
কামিনী, কাঞ্চনে আসক্ত এরা ভাই।
ভোগের বাসনা ভীষণ তীব্র, 
যোগ্যতার চেয়ে এদের প্রত্যাশা বেশি, 
সবকিছুই পেতে এদের ভীষণ তাড়াতাড়ি ।
আইনের শাসন এরা মানে না কখনও ।
এরা কোনও বিশেষ ধর্মের নয়, 
অপরাধীর কোনও ধর্ম হয় না জেনো, 
অপরাধীকে শুধু মানবতা বিরোধী মেনো ।
কোথাও এরা ধর্ষক, কোথাও ছিনতাইকারী, 
কোথাও বা ধর্মোন্মাদ , কোথাও জেহাদী ।
শিক্ষিত আর অশিক্ষিতে এখানে ফারাক নেই কোনও ।
মগজ ধোলাই করে এদের ফিদায়ে বানানো হয়। 
সন্ত্রাস  আর ধ্বংসে হয় উল্লাস এদের ।
এদের অত্যাচার থেকে বাদ যায় না কেউ, 
নির্ভয়া থেকে নিরীহ জনতা হয় এদের শিকার, 
এদের হাত থেকে বাঁচাতে মাগো অবতার আসা দরকার ।
এরা যে শুধু সমাজে আছে, তা কিন্তু নয় !
শিক্ষিত পরিবারেও কন্যা ভ্রূণ হত্যা হয়।
সুরক্ষিত নয়কো মানুষ সমাজের কোথাও ।
শিক্ষা নিকেতনেও শিশু নির্যাতিত হয়। 
তুমি তো বধিলে একটা অসুর , 
মনুষ্যরূপী অসংখ্য অসুর বধে মাগো অনেক দুর্গা দরকার, 
বর্ষব্যাপী যারা করবে এদের সংহার।

রাণা চ্যাটার্জী






মৃত্যু 
*****


                    

মৃত্যুর রঙ কে দেখেছো ? গাঢ় নীল না সবুজ ! 
মৃত্যু ঘন্টা বাজলে পরে,নিস্তব্ধতা,সব অবুজ । 
দিকে দিকে ওই লেলিহান শিখা,মৃত্যুর পরোয়ানা,
টিভির পর্দা,খবরকাগজে অকালে মৃত্যুর মুন্সিয়ানা

  জীবন ও মৃত্যু ব্ন্ধু প্রগাঢ়,হিম শীতল  গভীরতা , 
  মৃত্যু তো, মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ ,স্পন্দিত নীরবতা । 
  কিছু মৃত্যু তবু রোখা যায়, এলে পরেও মৃত্যু থাবা , 
 নারীশিক্ষা,সচেতনতা,জীবনকে সহজ ভাবে ভাবা।কতো সহজে মৃত্যুর গ্রাস, পুরুষ তন্ত্রের দেখি ধ্বজা
মাতৃ শক্তি হয়েও নারী,বয়ে চলে কতপাপের বোঝা

কোথাও মৃত্যু সরল মায়ের,জন্ম দেওয়ায় কন্যা , 
মেয়ের মুখে অ্যাসিড অ্যাটাক, বইলে রূপের বন্যা। আবার মৃত্যু গৃহ বিবাদ,মদ্যপ স্বামীর মাতাল গুনে,  
অসহ্য চাপে আত্মহত্যা,কেরোসিনে দগ্ধ আগুনে । 

আরো কতো বলি মৃত্যুর পথ,ধর্ষণ,খুন,পণ প্রথা , 
নারীর ওপর যত বাহাদুরি ,ছল চাতুরী ,কু-কথা ।
এই নারীই সৃস্টি কারী , সমাজের  ধারক বাহক,  
নয়কো নারী সেবা দাসী, কিংবা পুরুষ তুষ্ট গ্রাহক। 

তবু আজ বলি ,গর্বে ফুলি,নারী পুরুষের নেই ভেদ,
মৃত্যু আনে করাল ছায়া,জীবনহানি,হটাৎ পূর্ণচ্ছেদ।

অরিন্দম দাস





 "হায়রে সমাজ"
    -----------------



সত্যিই কি আমরা জীবিত
আর যদি জীবিত হয়...
তাহলে কেন আমাদের প্রতিনিয়ত
মরার অভিনয় করতে হয়,
বেঁচে থেকেও ।
কেন পারিনা আমরা
অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে,
কিসের এত ভয়।
দোষ করে দোষী কেন মুক্তি পায় ?
উত্তর দেবে  আমায় ?
জানি
উত্তর নাই..
প্রতিদিনই সংবিধান তৈরি হয়,
টাকার খেলায়।
আর উকিল বুদ্ধি ও যুক্তি কে সাজিয়ে গুছিয়ে
অন্যায় কে ন্যায়,ন্যায় কে অন্যায়
প্রতিষ্ঠা করে।
হায়!এ কোন সমাজ
যেখানে শাস্তি পায় সাধারণ মানুষ,
মুক্তি পায় অপরাধী।।

বিকাশ মন্ডল

  


"গণতন্ত্র ধর্ষণ"
**************



বিষাক্ত রক্তিম জেহাদ, নাস্তিক সমর্থকেরা সব মার্কসবাদী,
ঠোঁটকাটা স্লোগান, প্রতিবাদে হাতে নিয়ে মোমবাতি।
গণতন্ত্র প্রবঞ্চকের হাতিয়ার, ক্ষমতা জাহিরের আস্ফালন,
ইস্যু পেলেই রাস্তায় নামে, লোক দেখানো আন্দোলন।
রাজনীতির মূল সংজ্ঞা পাল্টেছে, লিপ্ত ওরা হানাহানিতে,
কখনও গোষ্টীদ্বন্দ্ব, তো কখনও মত্ত গদি নিয়ে টানাটানিতে।
দেশের মেয়ে ধর্ষিতা হয় রাত-দিন, ধর্ষকরা পায় না কোনো সাজা,
ছোট্ট ইস্যু পেলেই বনধ ডাকার নীতি, কারণ ওরাই দেশের রাজা।
নির্বাচনের আগে হাতে-পায়ে ধরে, দেখায় কত শত ছলনা,
জেতার পর পাঁচটা বছর হাতে পেলে, ওদের টিকিটি তখন মেলে না।
জনগণও বোতাম টেপে, কার হয়ে কে জানে দাদার না দিদির?
আদতে ওরাও জানে না, তবুও স্লোগান দেয় জয় হোক রাজনীতির।
তাই আতঙ্কের বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলে ব্যাসল্ট বুকে সাহস করো অর্জন,
রাজনীতির ভুতকে হাড়িকাঠে দাও বলি, ভয়কে করো বিসর্জন।

নিগার সুলতানা লিয়া





মা
***


প্রথম যেদিন তার সাথে পরিচয় হয়েছিল,  খুব অবাক হয়েছিলাম আমি৷  আর হ্যাঁ, অনেক ভয়ও পেয়েছিলাম৷ পাবই বা না কেন? কতই বা বয়স তখন আমার? কেবল ১২ কি ১৩ সপ্তাহ৷ সবে হাত পা নড়াচড়া শুরু করেছি তখন৷  একদিন আমার ছোট্ট আঙ্গুলখানি মুখে পুরে গভীর এক ভাবনায় ডুবে আছি৷ ভাবছি, শীতকাল তো এল বলে৷  আমার এই পানিভর্তি প্যারাস্যুটটাতে থেকে এই কনকনে শীত পার করব কীভাবে?

হঠাৎ তার ছোঁয়া পেলাম৷  একটা কোমল মায়ার আবেশে আমার ছোট্ট ভুবনখানি দুলে উঠল৷ ভীত-সন্ত্রস্ত আমি চুপসে এক কোণে সরে আসলাম৷  মৃদু কাঁপা কণ্ঠে বললাম, “কে? কে ওখানে?”
কেউ শুনতে পেল কিনা বুঝলাম না৷ কোনো জবাবও এল না৷ কান পাতলাম দেয়ালটায়৷ শুনতে পেলাম মিষ্টি রিনরিনে কণ্ঠে কে যেন বলছে, “জ্বী ম্যাডাম, আমি টুং বাবুর নড়াচড়া টের পাচ্ছি৷ এ এক অন্যরকম অনুভূতি৷ প্রথম মা হবার সবকিছুই অনেক উপভোগ করছি৷”

“অনুভূতি?” ভ্রূ কুঁচকে গেল আমার৷  এতদিন খুব মন খারাপ করে ভাবতাম, আমি বুঝি একা৷  কিন্তু না, এই যে বাইরের কে যেন আমাকে নিয়ে মিষ্টি অনুভূতি পাচ্ছে৷ মনটা প্রচণ্ড রকমের ভালো হয়ে গেল৷ হঠাৎ খেয়াল করলাম আমি অ্যাঙরি বার্ডের গানটাতে নাচ শুরু করে দিয়েছি৷ নাচ শুরু হতেই বাইরের উনি হঠাৎ ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলেন মনে হল৷
“ইশশ ব্যাথা দিয়ে ফেললাম মনে হয়৷ সরি৷” নিজে নিজেই বললাম আমি৷ মানুষটাকে আমার বেশ পছন্দ হয়ে গেল, আচ্ছা, উনার কী নাম দেওয়া যায়? এত নরম হাতে আদর করে আমায়...উমম... পমপম কিংবা তুলতুল? সেই থেকে পমপমের সাথে ভাবটা জমেই গেল বেশ করে৷

সেদিনের পর থেকে সে প্রায়ই আমার উপর হাত বুলায়৷ আমিও আমার ছোট্ট আঙ্গুলটা দিয়ে দিয়ে তাকে একটু ছুঁয়ে দিই৷ যেন খুব আপন মনে হয় তাকে৷ আমরা একসাথে “মাশা এণ্ড দ্য বিয়ার” কার্টুন দেখি৷ গল্প শুনি৷  আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্প মেকু কাহিনী৷  প্রিয় কবিতা বীরপুরুষ৷ পমপম এতবার শুনিয়েছে যে আমি মুখস্থই করে নিয়েছি৷  ভাবছি কোনো একদিন টুপ করে প্যারাস্যুট থেকে বেরিয়েই বলব,  “এই আমি,আমি বলব৷ শুন তুমি চুপটি করে৷” সে নিশ্চয়ই খুব খুব অবাক হয়ে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকবে৷

পমপম একটা স্কুলে পড়ায়৷ একদিন শুনি স্কুলের বাচ্চারা নাকি আমার জন্য ছবি এঁকে, চকলেট নিয়ে এসেছে৷ শুনে তো আমার খুশিতে কান্নাই চলে আসল৷  বাইরের মানুষগুলো তাহলে এত ভালো?

পমপম আজ একটা নতুন গল্প বলেছে৷  আগের সব গল্প থেকে আলাদা৷ খুব আলাদা এক আবেগের গল্প৷ দেশে যুদ্ধের সময় বাচ্চাকে বাঁচাতে এক মায়ের জীবন দেবার গল্প৷ যুদ্ধ কী সেটা না বুঝলেও মা শব্দটা আমার হৃদয়ে গেঁথে গেল৷ “মা,মা,মা” বারবার আওড়ালাম আমি৷  এত মিষ্টি-মধুর শব্দটা তাহলে এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিল?
আমার এই ছোট্ট আদুরে টুং নামটা খুব পছন্দের৷  পমপম মা এখন আমাকে এই নামেই ডাকে৷ আর আমি সাথে সাথে একটু নড়েচড়ে জ্বী বলি৷ তখন মা আমায় একটু আদর করে দেন৷
আজকে শুনলাম আমি নাকি মেয়ে বাবু৷ তারমানে আমার গলাটাও মায়ের মত মিষ্টি রিনরিনে হবে৷ কোমল মমতা মেশানো হাতটা চুড়িতে ভর্তি থাকবে মায়ের মতই৷  মা আজকাল আর স্কুলে যাননা৷  ব্যালকনিতে ক্লান্ত শরীরে ইজি চেয়ারটাতে বসে আমার জন্য লাল টুকটুকে একটা উলের লাল জামা বোনে আর আমায় গল্প শোনায়৷  আর আমি ভাবি লাল জামাটা পরে লাল, ক্লিপ পরে ঝুঁটি করে মায়ের স্কুলের বাচ্চাদের একদিন থ্যাঙ্কস দিয়ে আসব৷ ঐ ছবিগুলো দেখতে কত যে ইচ্ছে হয় আমার৷  এসব ভাবতে ভাবতে আঙ্গুলটা মুখে পুরেই ঘুমিয়ে গেলাম৷

হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার৷ মাথাটা কেমন যেন ঘুরে উঠল৷ মাকেও কেমন অপ্রস্তুত মনে হচ্ছে৷  ভয়ে গুটিসুটি হয়ে কয়েকবার ডাকলাম মাকে৷  সাড়া দিলেন না৷ আদর করে বললেনও না “ভয় পাসনা টুং, আমাতো আছি৷”হঠাৎ খুব চিৎকার- চেচামেচি, ভাংচুরের শব্দ৷ কানে হাত দিতে বাধ্য হলাম৷ কিন্তু  “যৌতুক” “মেয়ে বাচ্চা” এরকম কয়েকটা শব্দ কানে এল৷ তবে কি, তবে কি বাইরের মানুষগুলো চায়না আমায়? কিন্তু..কিন্তু আমিতো না দেখেই ওদের ভালবেসে ফেলেছিলাম৷

হঠাৎ মাকে ওরা খাট থেকে ফেলে দেয়৷ এলোপাথাড়ি মারতে থাকে৷  আমার খুব ব্যথা লাগছে৷  এর চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে মায়ের জন্য৷ চেঁচিয়ে বলতে লাগলাম, “প্লিজ,তোমরা আমার মায়ের সাথে এমন কোরোনা৷” হঠাৎ পাশ থেকে মহিলা কণ্ঠে কে যেন আগুনের কথা বলে উঠল৷ প্রচণ্ড ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম আমি৷  ওরা মাকে টানতে টানতে বাড়ির উঠানে নিয়ে গেল৷ মা এই প্রথম মুখ খুললেন৷ “আমার জীবনের বিনিময়ে আমার টুংকে তোমরা বাঁচতে দাও, বাঁচতে দাও৷” হাসির রোল পড়ে গেল৷  অট্টহাসির গভীর ফাটলে পড়ে চাপা পড়ে গেল বাঁচার আকুতি-আর্তনাদ৷  একি? আমার এত গরম লাগছে কেন? আমার প্যারাস্যুটটা পুড়ে যাচ্ছে দ্রুত৷  রক্তের প্রবল স্রোত নাক মুখ দিয়ে ঢুকছে৷ আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার ৷  কেবল মায়ের মুখটা একটাবার দেখতে ইচ্ছে করছে...প্রচণ্ডভাবে৷

তারপর…. মেকু কাহিনীরা কাগজের পাতায় ধুলো ময়লায় মাখামাখি হয়৷  রিনরিনে সেই গানের সুরগুলো বিরহের সুর তোলে তানপুরায়৷ ছোট্ট লাল সেই উলের জামাটি ঝুল-কালি মেখে পড়ে থাকে চুলোর একপাশে৷  লাল-নীল রঙিন স্বপ্নগুলো সুতো কাটা ঘুড়ির মত মেঘের দেশ পাড়ি দিতে দিতে হয়ত ক্লান্ত হয়ে আটকে যায় সময়ের ডালে৷  কিন্তু এত বড় পৃথিবীটা আমাদের মত টুংদের আর চোখ মেলে দেখা হয় না৷ একটা নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে অনেকটা অভিমান নিয়ে খুব সন্তর্পণে চলে যেতে হয় লোকচক্ষুর আড়ালে৷  এ শুধু আমার মত কেবল কোনো নিরপরাধ প্রাণ কিংবা রঙিন স্বপ্নগুলোর বিসর্জন নয়, যুগে যুগে শাশ্বত নারীজন্মের পাপমোচনও৷  ধরার মানুষদের সে খোঁজ রাখার ফুসরতটুকু ও মেলেনা৷ কেননা, সত্যিই তো, এ জগতে কে কার?