নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

রাজীব লোচন বালা




"অন্ধকারে এ উৎসব"
  *****************

                     

আজ এ পৃথিবী ক্ষুধার রাজ্যে গদ্যময়, 
মা দুর্গা আসছে , আনন্দ বাড়ছে যার... আছে ।
আজ মহাপঞ্চমী , কত সুর- কত গান চারপাশে করি আকর্ণন ,আজও কিছু শব্দ শুনতে পাই, "ও দাদা কিছু দাও না" "কদ্দিন ধরে কিচ্ছুটি খাইনিগো"।

আজ উৎসব এসেছে, মনে দোলা দিয়ে যায় প্রেমিক প্রেমিকার,
আমার ঘর এখনো আঁধারে, মা আজও কান্না করে, বোন আজও ভিক্ষা মাগে।
কিঞ্চিৎ উৎসব দিয়ে  সব ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা আজ,
পাড়ায় পাড়ায়, কত ঘরে ঘরে , যার আছে....।

আজও সেই বড় প্যান্ডেলের সামনে দিয়ে অর্ধ নগ্ন  "মা" , একটা থালা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
আর ভেতরে আরেক মা লক্ষ টাকার স্বর্ণখোচিত শাড়িতে বন্দিত হয়।
বাইরে আমার মা, রাস্তার পাশে ড্রেনের কাছে এসে খাবার খায়,
আর ভেতরে খাওয়ারের জোয়ার এসেছে, 
এখন হাত দেওয়া যাবে, কালকে ফেলে দেওয়া হবে।
সেই  খাবার  কুকুর- বেড়ালের সাথে খাচ্ছে দেখো "উৎসব" কতদিন ধরে।

আবার আমরা অনেক এগিয়ে, অনেক! এই গোলকের মহানপ্রাণী ,
ও সৌরভের মা , এবার তোর ছেলের ক'টা জামা হয়েছে?
এইতো দিদি, বেশী না মোটে দশ খানা, তোমার  মেয়ের থেকে  ছয় খানা কম্ 
ওওওওও... এত জামা নিয়ে কী করবে বলো সামনে আবার দিওয়ালি আসছে...তো
মেয়েটার ইচ্ছে হয়েছে, তাই মামা, কাকা, জ্যাঠা , দাদু, পিসি, বাবা, মা, সব্বাই মিলে দিয়েছে।

নিত্যদিন নতুন নূতন ..... আর আমার ছেলেটা ,বলেই মা কানতে কানতে  বললো ওও রাজশ, তাপস আর বারিণ,, ওদের উৎসব চুকে গেছে...
কত আশা করে বাড়ি এসেছিল, কত কিছু নিয়ে , এক উৎসব , তার মৃত্যু উৎসব হয়ে গেল..
সব তার মুছে গেছে, চিতাভষ্ম আজ শীতল হয়ে গেছে।

তোমাদের মশগুল জীবন পুজার আনন্দে ভালোই কাটছে।
আমার উৎসব মাটির ঘরে, শতশত মৃত্যুর অন্ধকারের শব বানায়....
মৃন্ময়ী আজ সাজসজ্জায়, চিন্ময়ী  রাস্তায় রাস্তায়
খুব ভালো উৎসব হচ্ছে কোটি টাকার লাল শরবতে আর বিছানায়।

উন্নতির আলোকসজ্জা রাস্তায় রাস্তায়, জীবন ভরে পেটে আগুন নিয়ে,
পুজোর দিনে সাজবে হাজারে হাজারে ,রঙে্র বাহারে
বিসর্জনে মায়ের মুখশ্রী জলের তলায়, কাকের বিষ্ঠায় কালো ছায়া,
চার- পাঁচ এদিনের আলো , আজকের অন্ধকারের উৎসবকে ভেঙ্গায়।

অক্ষয় কুমার সামন্ত





অসুখ
******



যেমন করে নদীর ব্যথার কথা
ঝড়ের রাতে বুঝতে পারে নদীর পাড়
তেমন করে অসুখ সহসা এসে
মৃত্যুর পথ চিনিয়ে দিয়ে গেছে।

অবহেলার সিঁড়িতে কতটুকু আর ওঠা যায়
কাজগুলোকে জমিয়ে জমিয়ে স্তূপের নীচে
চাপা পড়ে গেছি - শব্দ খুঁজি অক্সিজেনে
আমাকে থামিয়ে শেষ চিঠি লেখে কলম
তার না লেখা ব্যথার কালিতে।

অগোছালো সময় ঘড়ির কাঁটাকে
অবজ্ঞা করে হারিয়ে ফেলে গতি 
আর তার পিছনে আমি প্রবাহহীন --
বিছানায় শুয়ে শুয়ে মুমুর্ষু চোখে
ব্যর্থতাকে ফিরে ফিরে যোগ করি;
আর কি এক মোহে একটু ভালোবাসার জন্যে
গায়ে লেপ মুড়ি দিয়ে
শীতের রাতে নক্ষত্রের কপালে
আমার মৃত্যুচিহ্ন আঁকি।

কাজী জুবেরী মোস্তাক





নেতা তুমি কি শুনছো 
*******************



নেতা আমাকে চিন্তে কষ্ট হচ্ছে তোমার?
আমি বাংলাদেশ জনগন নাম আমার
পাঁচটা বছর আগে গিয়েছিলে সেবার

ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী ছিলো পরনে
হ্যামিলিয়নের বাশিওয়ালার মতো করে
পিছনে একঝাঁক তরুন তরুনীদের নিয়ে
ছুটে চলেছিলে তুমি শহরের প্রতি ঘরে
আর আশার বাণী শুনিয়েছিলে কানে
বলেছিলে অন্যায়ের প্রতিবাদী কন্ঠ হবে ৷

গরীব অসহায়রা স্বপ্ন দেখেছিলো বাঁচবে
তুমিই দেখিয়েছিলে সে স্বপ্ন ওদেরকে ,
একদিন কাঙ্খিত সে ক্ষণ এলো অবশেষে
বিজয়ের বাণী ধ্বণীত আকাশে বাতাসে
তখনও তুমি আশার বাণী শুনিয়েছিলে ৷

অথচ !
সময়ের সাথে সব নেতাদের মতো করে
তুমিও দেখি তোমার স্বভাব পাল্টে নিলে,
কাঁধে হাত রেখে কানে কানে এসে বললে
ভয় পেওনা আমি আছি তোমাদের পাশে ,
এটাকেই এখন ক্ষমতার রাজনীতি বলে
ইস্পাতের কি যেন কোমরে গুঁজে দিলে
বললে এটা কাছে রাখ কাজে লাগবে ,
আর আমার সাথে সাথে সবসময় থাকবে
আমার যা কিছু আছে সব নিয়ন্ত্রণ করবে ৷

কিন্তু বেইমানি করলে তোমার জীবন যাবে
অসহায় আমি ভয়ে কাতরতায় আরষ্ঠ হয়ে
তোমার কথা মেনে নিলাম মাথা নিচু করে ,
পথচলা শুরু হলো আমার ঘোর অন্ধকারে
শুনেছি সে ইস্পাত অনেককেই দিয়েছিলে ৷
অতঃপর একদিন তুমি সময় সুযোগ বুঝে
আমাকে দিয়ে জ্বলজ্যান্ত মানুষ হত্যা করালে ,
যেই আমার হাত কাঁপে একটা পিপরা মারতে ৷

আর বললে কেউ জানলে তোকেও মরতে হবে
নেতা তুমি কি জানো সেই রাতের পর থেকে
এতটুকু নিঃশ্ছিদ্র নিদ্রা আসেনি এ দু'চোখে ৷

সিদ্ধার্থ সিনহামহাপাত্র



পরিণাম
***★***
 


 ১
শুধু তোমাকে ছেড়ে যাবো বলেই
কার্তিক দা আমার প্রাণের দোসর।

দু জোড়া ঠোঁটে মহুল গন্ধ, রঙীন নেশা
বন্ধুত্বের মদ্যপ বন্ধন, বেপরোয়া বাক্য সমর্পণ।

নেশা চড়তে চড়তে ছুঁয়ে যায়
ভাতের হাড়ি, মায়ের পিঠ, বাবার গাল
ভুল নয় ঠিক নির্ভুল ভাবে
নিজেকে চড়িয়ে রাখি নিজের ওপর।
তোমাকে ভুলেছি কবেই, কতকাল
কার্তিক দা এখন ছায়া শরীর, স্মরণে তাকে জিইয়ে রাখি

আজ নেশাহীন জোৎস্নায় ভিজতে ভিজতে
অলীক স্বপ্নের মতো অতীত আসে,
মায়ের আদুরে গলা, বাবার গম্ভীর স্নেহ
পরিবার, ছেলেবেলা যেন জরাহীন রামরাজ্য।

এক অনুতাপ এসে ঘাড় ধাক্কা দেয়,
পচনশীল শরীর মৃত্যুভিক্ষা চায়, মুক্তি চায়
মুক্তি মেলেনা,
প্রতি মুহুর্তে এক মৃত্যুযন্ত্রণা ছুঁয়ে যায় প্রতিটা কোশ।

সুনন্দ মন্ডল




বিসর্জন
 *******

              

এ পাড়ায় কাঁসর ঘন্টা,
সমারোহে পুজোর কটা দিন।
ঢাকের বোলে নবমীর রাত
এলো মায়ের বিদায়ী ক্ষণ।

ভাসান যাবে মা, দশেরা হুল্লোড়ে
সংসার গুছিয়ে পাট চুকাবে।
ঢাকির নাচ, ঢাকের শব্দ
ছেলেরা সব নেশা মেখে মাতাল হবে।

পিছনে পিছনে ভক্তরা লুটাবে
চোখের জলে শোকের টিকা।
শান বাঁধা পুকুরে মায়ের দেহ
ভেসে যাবে সব গ্লানি দৈন্যতার রেখা।

ও পাড়ায় দেখ ঝোপের আড়াল
বিসর্জনে নাচছে মত্ত যুবকেরা।
পাতার খসখস শব্দ, কিছু বেড়াল
ভেসে যাচ্ছে কুমারীর ইচ্ছেরা।

লাল রক্তে ভাসে যোনি, কেউ নেই উৎসবে
শুধু শিকারির ছোবল, নরম মাংস পিণ্ডে।
কোথায় মা? কোথায় মানুষের শুভ চেতন
ফুস-ফুসমন্তর সকালটা হয়ে গেল সন্ধ্যে।

চোখের জলের নেই দাম আর
কামার্ত চাইবেই দাবি মেটাতে।
সুখের মুহূর্ত দান করে একা যুবতী
নিজেই গভীরে যাবে মায়ের সাথে।

যে পুরুষ মায়ের ভাসানে উদ্দাম নাচে
চোখের জলে আবেগটুকুই প্রদর্শিত।
বিসর্জনের শেষে হাসাহাসি পাশাপাশি
যুবতী তখনও ঝোপের পাশে গচ্ছিত।

চিরঞ্জিত সাহা





দুর্গা




শেষ স্টেশনের শেষ বেঞ্চে ঝরা বকুলের নতুন দেশ
গোলাপ হেথায় পাপড়ি ঝরায়, ক্যাকটাসেরা হাসছে বেশ ;
গান ভুলেছে হলুদ পাখি , নীলাঞ্জনা নিরুদ্দেশ
নেমেসিস মেশে ধমনিস্রোতে , রাজশ্রী আজ খুলছে বেশ । 
সিয়াচেনে সৈন্য মরে , পিঁপড়ের ডিম আমলাশোল ,
মগ্ন তখন দশভূজা , ম্যাডক্সে তো ঢাকের বোল ।
পাড় গড়নে বিরক্ত ঢেউ , বিষ মিশেছে সবুজ ঘাসে ,
বৃষ্টি হয়ে ঝিন্টি ঝরে আপনার ঐ ভূ-কৈলাসে ? 
চোখটা ধাঁধায় ডুমুর ফুলে , শিবঠাকুরের আপন দেশে ,
কাক কোকিলে লড়াই করে শ্বেতপায়রার শুভ্র বেশে ;
আসবি যখন বছর ঘুরে , সঙটি সেজে মর্ত্যলোকে ,
পারলে আনিস আশার ফানুস , স্বপ্নমোড়া লাল ঝিনুকে ॥