নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

বৈশাখী দাস



গল্প নয়
*******

গল্প তো সবারই থাকে।কারুর গল্পে গণনারা হাঁতড়ায় 'আগামী',জন্মতারিখের হরোস্কোপে।কারো আবার, চিতাভস্মের দহনে অশ্রুর আর্দ্রতা ঢালতে ঢালতেই এগোয় যাপনচিত্র।কেউ কেউ সুখ-দুঃখের সমান্তরালেই আঁকে গল্পের সঞ্চারপথ।কেউ, স্থিরচিত্রে থেমে থাকা প্রশ্বাসহীন মুহূর্তে রেখে যায় অসমাপ্ত গল্পের উত্তরাধিকার।গল্প তো সবারই থাকে।স্বপ্নসম্ভবা রাত্রিও জমায় আকাঙ্ক্ষিত ভোরের গল্প।গল্প কি শুধুই বাক্যবিনাসে,কল্পনায়,অলঙ্করনে?কলমের কৌলীন্যে,শব্দের অনুরণনে?ছুঁয়ে দেখো, নৈঃশব্দ্যেও লেগে থাকে কি নিবিড় গল্পের ঘ্রাণ!
   

বৈশাখী চ্যাটার্জী




পুজো এলে
**********



পুজো এলে -পুরনো উঠোনটায় একটা স্থলপদ্মের গাছ মনে পরে ।
ফ্রক পড়া একটা মেয়ে -ঝুড়িতে স্থলপদ্ম গুলো সাজিয়ে দুর্গা মণ্ডপে নিয়ে যেত পুজোর চারটে দিন ।
ষষ্ঠীর সকালটা কি দারুণ প্রত্যাশা নিয়ে আসত ।
মণ্ডপে তখন ব্যস্ততার চূড়ান্ত প্রস্তুতকরণ  ।

বাবা বলতেনা -'মা এসে গেছে ষষ্ঠী তলায়' । 
মেয়েটা কোথায় যে খুঁজবে সেই ষষ্ঠীতলা বুঝেই পেতনা ,
তবু অলীক স্বপ্ন সাজিয়ে নিয়ে দেখত কোন একটা গাছের তলায় মা দুর্গা দাঁড়িয়ে রয়েছে ছেলেমেয়েদের নিয়ে । পুলক লাগত মনে --!

শরৎকালীন সকালগুলো নদীর চর ধরে আজও আসে ।
ফ্রক পড়া মেয়েটা প্রবাহিনীর চরের ওপর  সাদা কাশফুলের পথে হাঁটতে হাঁটতে কখনো যেন বদলে গেলো ।
বদলে গেলো মহালয়ার ভোর ,
শরৎ আকাশ -
কাশফুল -
এমনকি দুর্গাপুজোর মন্ডপটাও  ।

পুরনো উঠোনটা এখন সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো ।
স্থলপদ্ম আর ফোটে না ।
মেয়েটাও আর এ পাড়ায় আসে না পুজোতে ।
তবে তার চোখ এখনও সাদা সাদা মেঘে,  সাদা কাশফুল খুঁজে বেড়ায় ।
উঁকি মেরে খুঁজে আনতে চায়-
সেই সকালটা -ঢাকের শব্দ , নদী থেকে ঘট তুলে আনা , কলাবউ এর স্নান ।

চণ্ডীপাঠের শব্দ ভেসে আসলে -!
রোমকূপে কেমন শিহরণ হয় ,
মনে পড়ে,  দূরে অনেক দূরে একটা ফ্রক পড়া মেয়ে ।
অমনি আনমনে কেঁদে ওঠে ভেতরটা ।
শারদ সকালগুলো এখন নতুন শহরে ভাসে ।
ফ্রক পড়া মেয়েটির মুখে , মনকেমনগুলো সাদা কাশফুল হয়ে এখনও দিব্যি হাসে  ।

                   

তুলি রায়





বেলা অবেলা কালবেলা
******************



যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে খেইগুলো
মাঝ দরিয়ার তরী
উড়ছে শুধু ছাই
চিত্রনাট্যের নাটকীয়তায়
প্রলাপ সংলাপগুলো
মাখছে বিসর্জনের মাটি
আবাহনের থেকে বিসর্জন অনেক সহজ ছিল
যবনিকার পরেও জেগে থাকে উপন্যাসের আলো
যতটা আঁধার
তার থেকেও তীব্রতর হয় মুহূর্তমগ্নকাল
কাল-আকালের লীলায়
বাঙ্ময় হয়ে থাকে
আমাদের যাবতীয় ধূসর বার্তালাপ


                                     

লগ্নজিতা রায়






টাকার সম্পর্ক
***********



কুঁড়েঘরে জন্মানো একবেলা না খেয়ে থাকা
ওই শিশুটাও মা'য়ের অর্থ বোঝে,
দিন পেরোলে মা'য়ের আঁচলে মাথা পাতে,
জ্বরের সময় বদ্যি লাগেনা,মা'ই যথেষ্ট

অপরদিকে ফ্ল্যাটবাড়ির ওই শিশুটা 'মা' বলতে
মাদার্স ডে তে কিংবা চিলড্রেন্স ডে তে
 উপহারের মধ্যে মা'য়ের সুখ খোঁজে;
স্কুল থেকে ফিরেই সে জানে তাকে টিউশনে যেতে হবে,
সামনের মাঠটা তার খেলার জন্য নয়
ওখানে তো বস্তিবাড়ির ছেলেরা খেলে;

আমরা দোষ এড়াই কাজের অযুহাতে,
টাকা দিয়ে শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ি হোস্টেলের চারগন্ডির মাঝে,
এভাবেই তারা একদিন গড়ে ওঠে উচ্চশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডাক্তার,
যেন ইতিহাসের চাকার মত
দায় এড়াতে তারাও একদিন আমাদের ঠিকানা খোঁজে
বৃদ্ধ কোনো আবাসনে ।।

অমিত কুমার দাস



তোমার কি ইচ্ছে হয়না সর্বনাশ করতে?
***********************************



প্রতিদিনের গল্পগুলো লেখা থাকে ডায়েরিতে,
কথাকার থাকেন নামে বেনামে।
তুলতুলে বালিশে খটখটে মাথায় সর্বনাশী চিন্তা,
ভালোলাগার পরশে আবারও মাথা হয় তুলতুলে।

ওই লোকটাকে দেখেছ?যিনি একগোছা ঢেঁকিশাক তুললেন?বাড়িতে স্মিতহাস্যে বলবেন 'কিনে আনলাম'।

সেই বাবাটাকে দেখেছ?যিনি কাঁধের ব্যথায় কুপোকাত হয়েও চিনিকলে কাজ করে চলেছেন?ছেলের জন্য হরলিক্স আনবেন বলে!

পৃথিবীর কতরুপ তাইনা?
এসব দেখে তোমার কি ইচ্ছে হয়না সর্বনাশ করতে?
আবার নতুন করে গড়তে?

চিরঞ্জিত সাহা




তৃষ্ণা
******




দেয়ালের স্রোতে ধোঁয়া টিকটিকি সাজে ,
আদিম আরশি হাসে শরীরের খাঁজে
প্রেমহীন যৌনতা কন্ডম যুগে ,
মিশছে রক্তে নেশা,বিষের হুজুগে ।
সূর্য দেবতা কুন্তীর যোনি চিরে
সাদরে কুলীন মধ্যমাদের ভিড়ে ,
আটকে পার্থ ঊর্বশীর ওই বুকে
বৃহন্নলা ঘুমপাড়ানি বন্দুকে ।
তবু বনলতা আসে ঘৃণ্য স্বভাবে
ক্লিওপ্যাট্রারা হাসে ভুলের হিসেবে ,
হস্তমৈথুনের ক্লান্ত দুপুরে
তোর স্মৃতিদের ভিড় কেন কারাগারে? ?