নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অনির্বাণ দাস




মানবতা 
*******



মিশছে মানুষ মাটির নিচে
থাকছে মানুষ কাহিনীতে
ওই ছেলে টা সহজ সরল
হিংসা ভরা পৃথিবী তে !
যাচ্ছে মুছে শহীদের দান
ভাবছে ওপারে পূর্ব গণ
বলছে ঝুঁকে , হচ্ছে টা কি  ?
মা এর বুকে , এ কোন পাষাণ !
লাল মাটির অরুণ ছায়ায়
তরুণ কেনো রক্তে ভরায়
নদীর কূলে ওই ছেলেটা
মিথ্যে  কেনো দ্বন্দ্বে জড়ায় ?
গোলাপ চারা অরুণ , বরুণ
কাঁটায় আছে রক্ত বিন্দু
হালকা বুলেটে রাস্তা বুলেটিন
বিবেক হবেনা পূর্ণ চেতনা কিন্তু !
পারি না  আমি ফোটাতে ফুল
পারি না আমি জাগাতে কুল
পাই না আমি গোলাপ বর্তমান
পাই না  মাতুঃষ্বসা , মাতুল !
হোক , মেঘের ভেলা আকাশের জন্য,
নীল জল সমুদ্রের জন্য,
সবুজ রঙ প্রকৃতির জন্য,
কোকিলের গান বসন্তের জন্য,
সবুজের উচ্ছ্বাসে, ফুলের ঘ্রাণে
জাগুক আলোড়ন সবার প্রাণে  ! 
একটা আকাশ কি পারে সবটুকু মেঘ ধরে রাখতে?
একটা সাগর কি পারে সবটুকু জল জমা রাখতে?
আর একটা বসন্তই কি পারে সবটুকু ভালবাসা প্রকাশ করতে?
তার পরও যেন ভালোবাসায় পূর্ণ থাকে এই বসন্ত।
সেই শুভকামনাই থাকবে  আমার কলমের মূলে !
নীশি যখন ভোর হবে,
শুকতারা নিভে যাবে,
শুরু হবে নতুন দিন।
দু:খ হতাশা ক্লান্তি ভুলে
দিনগুলি হোক অমলিন,
শুভ হোক প্রতিটি দিন।

রবি মল্লিক




বিপথগামী
**********




আর কতটা রক্ত ঝড়িয়ে
                  তোমরা শান্ত হবে?
আর কতগুলো লাশ দেখলে
                তোমাদের ঘোর কাটবে?
মৃত্যু মিছিল এর প্রচার
                করে চলেছ সগৌরবে,
রক্ষকই নিয়েছে আজ
                ভক্ষকের দায়িত্ব;
"জোর যার মুলুক তার"
                মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে,
রাখতে চাইছো অক্ষুণ্ন
                  ধ্বজার স্থায়িত্ব;
অনিবার্য প্রলয়
              ডেকে আনবেই ধরাধমে,
মায়ের শূন্য কোলের
              হাহকার কাতর বাণী,
বর্তমান আর ভবিষ্যত্‌
             প্রজন্মকে ধ্বংস করে,
কাদের ওপর শাসন চালাবে
             "রাজা আর রাণী"!

অনুরাধা সরখেল







মেয়েকথা ৬
*********



সহেলীর বিবাহের তৃতীয়দিন পরেই নতুন সংসার ছেড়ে চলে আসতে হল।তৃতীয়দিন অর্থাৎ,ফুল সজ্জার ঠিক পরেরদিন।সাদা চাদরে সহেলীর রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি।তাকে পতিতা হতে হল।অথচ যে পুরুষটির সাথে এই নব বধুর বিবাহ ক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সে উচ্চ শিক্ষিত।সমাজের উচ্চস্তরের মানুষের মধ্যে একজন।বিবাহিত পুরুষটির মা,বাবা অধিক আগ্রহে মেয়েটির প্রতি তীব্র কুরুচিকর মন্তব্য প্রর্দশন করলেন এবং সদ্য বিবাহিত কন্যাটি ঘরছাড়া হতে বাধ্য হল।
                                  সতিত্ত রক্ষার প্রধান দায় নারীদের সগর্বে গ্রহন করতে হয়।এঁঠো খাবার যেমন মানুষ খেতে চায়না।পরিস্কার চকচকেথালায় ভিন্নরুপে সুসজ্জিত  ভাবে সাজানো খাবার গ্রহনে আগ্রহী ঠিক তেমনি একজন নারীকে সতিত্ত রক্ষা করে সুসজ্জিত হয়ে পুরুষের সামনে নিজেকে মেলে ধরতে হয়।সাদা চাদরে রক্তের দাগ না পেলে চরিত্রহীন শব্দটি মাথা পেতে গ্রহন করতে হয়।একটি ছেলের অবশ্য এসবের কোনো বালায় নেয়।যৌবনে বহু ক্রিয়াকলাপের পর বিবাহের সময় একটি সুন্দরী কুমারি মেয়ে খুঁজতে বেড়িয়ে পরে।শহরান্চলে বড় হওয়া বেশ কিছি পুরুষ ,যারা তথাকথিত সভ্য এবং শিক্ষিত বলে বিবেচিত তারা একটু অল্প শিক্ষিত গ্রাম্য মেয়ের সঙ্গে বিবাহ করতে মত প্রকাশ করে।তাদের কুমারিত্ত নিয়ে চিন্তার রেশ বেশ কিছুটা মনে করে সভ্য সমাজের পুরুষরা।
                 পুরুষরা চায় কচি চারা গাছে সদ্য প্রস্ফুটিত একটি ফুল,যে পুর্বে কেও স্পর্শ করেনি,ঘ্রাণ নেয়নি বিবাহের পর তিনি প্রথম স্পর্শ করবেন,ঘ্রান নেবেন এবং ইচ্ছেমত ফুলের একটি একটি করে পাঁপড়ি ছিরবেন।
                                   সায়েন্সের ভাষায় ,হাইমেন
শব্দটির বাংলা অর্থ স্বতীচ্ছদা।সাঁতার,খেলাধুলা,নাচসহ দৈনন্দিন বহু কাজ কর্মের ফলে এই পর্দাটি ছিরে যেতে পারে।এছাড়াও অনেক নারী এই পর্দা ছাড়াই জন্মগ্রহন করেন।এসবের বিচার না করেই কিছু পুরুষ এখনও নারীদের চরিত্র নিয়ে কথা বলে।পতিতা হতে হয় বহু নারীকে।যারা মুখ বুজে সব অত্যাচার সহ্য করে তারা সমাজের চোখে জীবিত থাকে আর যারা সহ্য করতে পারেনা সমাজ তাদের নির্বাসন দেয়।
                                 

তাপসকিরণ রায়




উলঙ্গ দৃষ্টি 
 **********




রক্ত স্খলিত হয়ে যাচ্ছে-- 
চুরমার আলোর টুকরোগুলি দিয়ে 
আমরা জোড়াতালি দিতে পারি তোমার মুখ-- 
এবং ক্রমশ দৈহিকতা ফিরে আসে।

খটখটে রোদ্দুরে কিছু গুলাল ছুঁড়ে দিই,
বলিএই দেখোআমারা গোধূলি রাখল,
হাতের দণ্ড আমার বাঁশিঠিক মত ধরে রাখতে চাইছি  
আমাদের গোপাল হাসি।
কখনও ধোঁয়াসা গন্ধভাল লাগা বারুদ গন্ধ শুঁকে যাই,   
বাঁচার মধ্যে মাদল বেজে ওঠেআবার কোথাও কানেস্তারা,
অরণ্যের আলো ছায়া পড়ে
ব্যথার হাতলে ছুঁয়ে দেখি চাপ চাপ আমাদেরই হৃদপিণ্ড !

এই দেখোবিষণ্ণতা ছিঁড়ে ফেলছি কেমন,
পেটে শুধু এক পিণ্ড জাবর ঘাস,
জানি সবুজ ঘাসের প্রচুর তত্ত্বকথা !  
আমি হাঁটছিআমি ছুটছিপায়ে পায়েজীবনটাকে মাড়িয়ে 
আমরা জিঘাংসা মাংসের পুটুলি ছিঁড়ে খাচ্ছি,
জানি ভয়ের মাঝে মৃত্যুর স্বাদ আছে,
উচ্ছ্বাসে ধরে রাখার শিক আছে,
হা হা হাসির মাঝে জীবনী শক্তি কুড়াতে কুড়াতে 
উলঙ্গ দৃষ্টিকে আমরা খুবলে খাব।     

রানি মজুমদার

 


বুদ্ধিজীবী
********




মুখ যেটা ভাবছো মুখ সে তো নয়।
মুখশের আড়ালে মুখ ঢাকা রয়।

ধান্দা যেখানে গভীর অসুখ
সেলেবের আড়ালে জুজুর মুখ

কষ্টের হাসিতে ভাঙ্গা মেরুদন্ড
বুদ্ধিতে উই পোকা আস্ত ভন্ড

নাম চাই ডাক চাই, চাই প্রতিপত্তি
গাড়ি বাড়ি নগদ কিছুতে না আপত্তি।

গান গেয়ে কবি সেজে পুরস্কার দরকারি
প্রভাবটা বেড়ে ওঠে দাগ লাগা  সরকারি।

চশমা সুগন্ধি ব্যাগ ঝোলা পরজীবী
বাজারে বেচলে পরে দাম শুধু এক জিবি।

খক খক হাসিতে চালখানা নবাবী
আওয়াজ বন্ধ রাখা ওটা নাকি স্বভাবী

এক কালে প্রতিবাদী এখন তা বন্ধ
আখের গুছিয়ে নেওয়ার কারবারি গন্ধ।


মহারাজের দরবারে এরা সব পোষ্য।।
লেজ নেড়ে গুটিসুটি ম্যাও ম্যাও হাস্য।


আসলে আবডালে লোভী এক মূর্তি
বুদ্ধির জীবিকায় মিথ্যেটা সত্যি।

স্বরূপা রায়



থিমের দুর্গা
*******



যেদিন মিনা ঢুকেছিল অজিতের বাড়িতে কাজের জন্য, সেদিন থেকেই খারাপ নজরে দেখছে ওকে অজিত। প্রতিদিন যখনি মিনা কাজ করতে আসে, ওকে অজিত একেবারে পা থেকে মাথা পর্যন্ত মেপে নেয়। অজিতের স্ত্রীয়ের আড়ালেই চলতো অজিতের এই রঙ্গলীলা।
আগামীকাল মহালয়ার পূণ্যলগ্ন। তাই আজ পাড়ার ক্লাবের সব মেম্বাররা মিলে ঠিক করেছে যে, রাত জেগে পিকনিক করবে। অজিত এই ক্লাবেরই সেক্রেটারি।
অজিতদের এই ক্লাবে বড় করে দুর্গাপূজা হয়। আগে সাধারণ মূর্তি এনে পূজা হলেও, এখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে থিম পূজার আয়োজন করা হয়। পাড়ার কিছু ধনী ব্যক্তির সহায়তার জন্যই বাজেটটা বড় রাখা সম্ভব হয়।
রাতে ফিরবেনা স্ত্রীকে জানিয়ে অজিত চললো ক্লাবের দিকে। ক্লাব ঘরের ছাদেই হবে পিকনিক।
পিকনিকে খাওয়াদাওয়া শেষে মদের আসর জমে উঠলে নেশার ঘোরে অজিতের চোখের সামনে ভেসে উঠলো মিনার ছবি। মিনা নগ্ন অবস্থায় ঠিক কেমন লাগতে পারে অনুমান শুরু করলো অজিত। নিজের বয়সী তিনজন ক্লাবের বন্ধুকে বললো, "একটা কচি মাল আছে। লাগলে আমার সাথে যেতে হবে এখনি।"
একজন ভয়ে বললো, "আমি নেই বাবা এসবে।"
"ধুর ভিতু" বলে অজিত বাকিদের দিকে তাকালো। বাকি দুজনে একটু ভেবে রাজি হয়ে চললো অজিতের সাথে।
বাপ-মা মরা মিনা একাই থাকতো গ্রামের বাড়িতে। অন্ধকার আর গ্রামের নিরিবিলি পরিবেশের সুযোগ নিয়ে অজিত আর ওর বন্ধুরা সবার আড়ালে এসে পৌছালো মিনার কুঁড়েঘরের সামনে। তারপর বেড়ার দরজা সহজেই ভেঙে ঘরে ঢুকেই শুরু করে দিল মিনার উপরে পাষবিক খেলা। মিনা যাতে চিৎকার করতে না পারে সেইজন্য একজন চেপে ধরলো ওর মুখ।
মিনার চোখেমুখে ভয়ের সাথে এক অবাক দৃষ্টি। যাকে ও "কাকাবাবু" বলে চেনে, তাকে এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে মিনার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
নিজেদের অমানবিক খেলা শেষে মিনা যাতে ওদের ফাঁসাতে না পারে, সেইজন্য একটা বড় পাথর নিয়ে এসে যখন অজিত ওর মাথাটা থেঁতলে দিতে নিল, তখন বাইরে অল্প অল্প আলো ফুটছে। মিনা কাতর কন্ঠে নিজের প্রাণ ভিক্ষা চাইছে। কিন্তু অজিত থামলো না, নিমেষেই থেঁতলে দিল মিনার মাথাটা। তখনি আশেপাশেই কোনো বাড়ি থেকে বেজে উঠলো আগমনী সুর, "আশ্বিনের শারদ প্রাতে, বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির"।
মিনাকে ওভাবেই ফেলে রেখে নিজেদের জামাকাপড় খুলে একটা ক্যারিব্যাগে ভরে অজিত আর ওর বন্ধুরা পা বাড়ালো ক্লাবের দিকে। ক্লাবে এসে দেখে, সবাই মদের নেশায় ঘুমে আচ্ছন্ন। তাড়াতাড়ি আগুন দিয়ে নিজেদের জামাকাপড় জ্বালিয়ে দিল ওরা।
আগুন নেভার পরে, "এবার আমি আসি রে।" বলে অজিত বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। রাস্তায় হঠাৎই দেখা হওয়া পাশের পাড়ার একজন বয়স্ক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, "কি রে কোথায় যাচ্ছিস?"
"এই তো বাড়ি ফিরছি। ক্লাবে রাতে পিকনিক ছিল।" অজিত বললো।
"তাই নাকি! তা এবারের থিম কি?"
"নারী নির্যাতন।"