নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

চন্দন বাসুলী





                 রক্তাক্ত অন্তর্বাস 





 উন্নয়নের খাম খেয়ালী হওয়ায় জঙ্গলে রাজপথে ,
 প্রাসাদে বস্তিতে উড়ে বেড়াচ্ছে রক্তাক্ত অন্তর্বাস ;
 ডিজের শব্দে চাপা পড়ছে ধর্ষিতার তীব্র আর্তনাদ ,
 ক্ষিপ্র কাম দণ্ডের প্রবল আঘাতে ছিন্নবিন্ন 
 সহস্র শান্ত গোলাপের কোঁকড়ানো পাপড়ি ।

ডান বাম , উত্তর দক্ষিণ দাবি করে আমাদের বলে 
তখন মহামন্ত্রী নিলাম চালায় বয়সের বিচারে ;
শোক মিছিলে পায়ে পা মিলিয়ে রাস্তায় নামে বুদ্ধিজীবর দল ,
অবশেষে ভাষণ শুনে মুগ্ধ হয়
এই বাংলার আপামর মূর্খ  জনসাধারণ !

অক্ষয় কুমার সামন্ত






মৎস্যকন্যা
********* 



ঠিক করে উঠতে পারছিল না কিভাবে কথা বলবে। আসা-যাওয়ার পথেই আলাপ। খুব স্মার্ট মেয়ে মধুরীমা। তার দামী দামী স্কার্ট দেখে অল্পেশের কথা বলার সাহস হারিয়ে যেত।
খুব সাদা মাটা অল্পেশ। ধুলো কাদা মেখে একটি প্রত্যন্ত গ্রামে তার বড় হওয়া। ছোটবেলা থেকে তার পড়াশোনায় ঝোঁক ছিল। তাই দারিদ্র্যকে পিছনে ফেলে সে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। সরকারি স্কলারশিপ পেয়ে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়। কলেজে 1st সেমেস্টারে সে রেজাল্টও ভালো করে।  বাসে দেখা হলে কথা হতো। তারপর কলেজমোড় থেকে দশ মিনিটের হাঁটা পথে তার সঙ্গী হওয়ার চেষ্টা করতো মধুরীমা।
অল্পেশের ছাতা হারানোর ব্যামো ছিল খুব। প্রত্যেক বছর মা একটা করে ছাতা দিতেন। কিন্তু কতোবার যে চায়ের দোকানে ছাতা ফেলে আনমনে হাঁটতে শুরু করেছে তার হিসেব নেই। তাই তার কাছে ছাতা না থাকাটাই স্বাভাবিক। বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় কলেজমোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতো সে। কিন্তু মধুরীমা তাকে ছাতার তলায় ডেকে কথা বলতে বলতে কলেজে যেতো। গ্রীষ্মের রোদেও সে ছাতা নিয়ে অল্পেশের অপেক্ষায় থাকতো। ধীরে ধীরে কথাগুলো গভীর হয়। তাদের কথার সুরে হাওয়া বৃষ্টিকে ডেকে আনতো। অল্পেশ বুঝতেই পারে নি কখন সে তার মনের গভীরে মধুরীমার জন্য আসন পেতে ফেলেছে। অনেককিছু বলবে ভাবে কিন্তু নিজের ছেলেবেলা মনে এলে সব ইচ্ছেগুলো আহত হয়। কথায় কথায় একদিন মধুরীমা বলেঃ আমি শুধু ছাতা হাতে নয়, সারাজীবন তোমার ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকতে চাই।
অল্পেশের ভয় হয়। চোখের সামনে দেখতে পায় কতো সুন্দর প্রেমগুলো বিয়ের পর কেমন যেন হুড়মুড়িয়ে পড়ে। কথা রাখার থালায় অভাব পড়লেই ওঠে তোলপাড়।
সেটা ঝড় হয়ে নিভিয়ে দেয় ছোট্ট সংসারের ছোট্ট উনোনকেও। সাজানো কল্পনার ডানা হঠাৎ যেন বাস্তবের ঝড়ে পথ হারিয়ে ফেলে। একসঙ্গে বয়ে যাওয়া দুটো জীবন যেন উবু হয়ে বসে থাকা সারি সারি প্রস্তরখণ্ডে ধাক্কা খেয়ে নদীর মতো দুদিকে বইতে থাকে। রাতের বিছানাগুলো যেন দম্ বন্ধ হওয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের গুমোটে ঘন্টার কাঁটার একটু হেঁটে চলা। এইসব ভাবতে ভাবতে তার ইচ্ছার রং গুলো যেন মরা স্রোতে ভাসতে ভাসতে জল-কাদা-বালুকণায় ডুবে যায়।
সেদিন মধুরীমা কলেজে আসে নি। সল্টলেক থেকে একা একা ফিরছিল অল্পেশ। যাদবপুরে নেমে একা একা হাঁটতে হাঁটতে ঝিলপাড়ের কাছে গিয়ে বসল। তার চঞ্চল মনের ভাবনাগুলো স্থির হতে হতে সে দেখতে পেল মাছগুলো শ্বাস নিতে নিতে জলের ওপর ভাসতে শুরু করছে। চিন্তার ঘনঘটায় ক্লান্ত চশমার ফাঁক দিয়ে দেখতে পেল মধুরীমা যেন মাছ হয়ে তার সংগে কথা বলতে ভেসে উঠছে। সেও বিড়বিড় করে একান্তে তার সংগে কথায় মগ্ন হলোঃ

- যদি তোমাকে সাগর থেকে তুলে আনি?
আমার এ ঘরের উষ্ণ মরুতে থাকবে কেমন করে?

- যদি সত্যিকারে চোখ তুলে তাকাও
তোমার তারায় খুঁজে নেব জল- জীবনের সম্বল।

- আমার সামান্য জীবন- পায়ে আটকায় পথ
টিউশানের টাকা চলে যায় মেসের খরচায়
তোমাকে রাখবো কোথায় ?

- ভালোবাসার ভিক্ষা চেয়ে চেয়ে যে আগুন ওঠে
মনের ভেতর তারও আঁচ লাগে আত্মায়
তুমি শুধু রেখো হৃদয়ের বারান্দায়।

- যদি আর না ফেরাই চোখ তোমার চোখে?
- আমার চোখের কোনে খুঁজে নেব জল
আমার ভেসে থাকার আজীবন সম্বল!...

কুনাল গোস্বামী




রূপকন্যা......
 ********



জন্মান্ধ মেয়েটি স্বপ্ন দেখেছিল..
হয়তো কোনোদিন সেও দেখবে শরতের সোনালি রোদ্দুর,
কিংবা বসন্তের কচি বাতাবির মতো সবুজ ঘাসে শিশিরবিন্দু জমে থাকবে তার অনুভূতি গুলো
তার আগুনলাগা ডানা মেলে উড়তে চেয়েছিল দিগন্তরে
যেখানে সাদা সাদা মেঘপুঞ্জ তার ঘনকালো চুলের মতো ছড়িয়ে থাকবে নীলাম্বরে;
ছিল এক বামুনের ছেলে----
সে খুব পিরিত করে ডাকতো তাকে রূপকন্যা বলে
সেও কি জানতো এমন অদৃষ্টের নিষ্ঠুর পরিহাস অপেক্ষা করেছিল তাদের তরে?
মেয়েটি চিৎকার করতে চেয়েছিল....
    তবে তাকে চিত করা হল
সে ধর্ষিত হল এক পাশবিক ধর্ষকের কাছে
   সেই ছেলেটির চোখের সামনে
সে শুধু নিরুপায় হয়ে দেখেছিল সব,
  দেখেছিল তার রূপকন্যা কিভাবে
শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত বারেবারে আঁতকে উঠেছিল!
আর আজ এক আত্মহারা কবি এইসব লিখতে বসে রক্তঅশ্রু ঝড়িয়ে বারংবার বলছে------
       ধংস হোক, ধংস হোক এমন বর্বরতার।

শোভন মণ্ডল




নিথর অবয়ব
                                

 
রেডিও-বার্তায়  কে যেন ছড়ালো গুজব
সেসব আগুনের ধোঁয়ায় নীল হয়ে যাচ্ছে শিরা-উপশিরা
পোর্সেলিনের টব থেকে ঝরে গেল সন্ধের ফুল
হাওয়াকল শুষে নেয় পুরনো নুন
আধো প্রেমে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে দেখে 
থেমে যায় সাধের দোলনা
প্রাচীন গাছের গায়ে যে ক্ষত লেগে আছে তার দখল নিচ্ছে লাল পিঁপড়ের দল
একটা ফ্যাকাসে সভ্যতার বুকের ওপর খেলায় মগ্ন 
অজস্র নেকড়ে
এসবের মধ্যে থেকে এভাবেই লাল মোরামে ছড়িয়ে পড়ছি নিজে

কাক এসে খুঁটে খাচ্ছে নিথর অবয়ব

অভিজিৎ দাসকর্মকার





কয়েকটি রাগের কথা
********************




আমি বৃষ্টি ভাবি আর সূর্য ভৈরবীর ছবি তোলে
চার দেওয়ালের পটদীপ দৃশ্যকে
   শাওয়ার জলে আদর করি
তোমার দৃষ্টিতে ধুতরো ফুলের গন্ধ
ল্যাম্পপোস্টের মোড়ে আলো হয়ে যেতে দেখি।
সোনালি চন্দ্রকোষের কোলে তোলা মেয়েটির গার্গী নাম
   পিচ রাস্তার মোড়ে সেলুনকবি
   সমুদ্র-আকাশ মিলিয়ে সরলরেখা টানে
   মুড়ির ঠোঙায় দাঁতের কালসিটে রেখা
প্রতিটি লাইন সমতলে গাণিতিক নৃতত্ত্ব থাকলেও
    শূন্যতার ভিতর ভালোবাসারও সন্ধে নামে 
আসাবরী থেকে কাফির ঠোঁটে ক্রিয়াপদের সুর
       দুচোখে তোমার অঘোষিত ছবিতে
মোনালিসার হাসি...

জারা সোমা




বাবার মতো
*********


শয্যা পেতে রেখো পরিপাটি 
আসছি একটু পরেই
পাশবালিশ জড়িয়ে ঘুম 
তবে আজকের স্বপ্নে
আসবে অন্য কেউ 

কবিতা গোছের কেউ একটা এসেই
খসিয়ে দেবে আঁচল 
লেপ্টে যাবে সিঁদুরের টিপ 
ডালপালা মেলে নিবিড় করবে বন্ধন
মোহময় হবে রাত 

তুমি তখন প্রেমিক থেকে 
বাবার মতো হয়ে যাবে।।।