উত্তর পত্র (১)
********
গ্রা+পো :- শিমূলপুর
হে রাজশ্রী, মনে পড়ে!--
পল্লীর শীতল শিরীষ ছায়ার মতো দুলে উঠেছিল তব দুই হিমাখি! অবাক করা চাওয়া---যেন পূর্বজনমের চেনা নিদর্শনচুম্বন শেষে প্রাচীনালয়ে ফিরে যাওয়া।
ধীরে ধীরে এমনি করেই শুরু হল চাওয়া-পাওয়ার হিসেব।
সহসা একদিন বলে উঠলে,--"পল্লীতে আমার একটু ঠাঁই হবে?"--বলেই এমন ভাবে চেয়েছিলে- আমি কেন, অমুকুলিত তরুলতাও বুঝেছিল- সেই চেয়ে থাকার মানে।
বিশ্বাস করো, তখনও আমি পল্লী-তরণীর পরিপূর্ণ কাণ্ডারি হয়ে উঠতে পারিনি।
তোমার কথার উত্তর দিতে পারিনি ঠিক, কিন্তু সেদিনের সেই করুণ চাওয়া আমার মরমে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে-- তা আজও দীপ্যমান।
আমি আজও ভালবাসি তোমায়, কিন্তু এমন কিছু পণ করোনা, যা-- সেই পণের দরুণ আমার জন্মভূমি পল্লীকে ভুলে যেতে হবে।
আমি তোমার চিঠি পড়েছি-- আমি জানি তুমি অভিমান করেছো-- কিন্তু আমি আজও ভুলতে পারিনি-- ক্ষয়া-তুলসীবেদীমূলে নিভে যাওয়া পুষ্টিহীন প্রদীপের ধোঁয়ায় কেঁদে ওঠা-- গাঁ'য়ের সেই মেয়েটাকে!
প্রখর তপনতাপে ধবলীর পিছে পিছে ফিরে যে তুলে দেয়- ক্ষীণকায়া জন্মদাত্রীর কম্পমানাননে তুণ্ডলের কণা!।
তটিনীর ওপার পল্লীর দূরাগত অস্পষ্ট শঙ্খের ইঙ্গিতে নেচে উঠে--এপারের বনছায়ে যামিনীরর কাল প্রাণ!
বনকুটির প্রাঙ্গণে ডাহুক-ডাহুকীর দীর্ঘসংলাপে বিবস হয়ে আসে-- সানতাড়ী নব মাদলের নূতন বোল!
চারিদিক নিঝুম-নিঃসাড় স্তব্ধতায় আঁধারাতঙ্কে আঁতকে উঠে-- বেণুবনে শালিখের ঝাঁক"
হঠাৎ জেগে ওঠে মেয়েটা- - -কান পেতে শোনে বনের পিছে বিরাট রুদ্ধঝরিণীর ধ্বসছাড়া পাড়ে প্রাচীন অস্হিখণ্ড ভাগে সমবেত শেয়ালের হাঁকাহাঁকি-- তবু চেয়ে থাকে জননীর পানে,- নয়নের খরাগাঙে ফুলে ওঠা মরা ঢেউয়ে পল্লীর সাত রঙ তার চোখে আমি দেখেছি।
এখানেও যামিনীর ভোর হয়, পাখির ডাকে ফুল ফোটে, প্রভাতের নরম সোনারোদের স্পর্শে ঝরা পাতার অন্তরালে- নেচে উঠে আগামীর বৃহৎ অরণ্য!।
স্হূল দূরগামিনী বেগবতী তটিনীর মরা বিজন তটে-- আদিবাসী কিশোরীর নৃত্যে মেতে উঠে রাখাল-রাখালী সীমাহীন ইসারার মরণ সুখে!
এ আকাশ - বাতাস -মহূয়ার চাতক - সবুজ মাঠ - শিমুল বনের রাঙামাটি সবাই আমাকে চেনে।
তাদের শিকড় আমার অন্তরের অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে!।
আমাকে কাছে পেয়ে দু'কথা বলবে তাই আমার আতিথ্য গ্রহণ করার সুযোগ চেয়েছো। কিন্তু এত কম সময়ের মধ্যে আমার পল্লীকে ছেড়ে যেতে পারবোনা বন্ধু!"
যদি আবার কখনও আসি এই পল্লীরই বুকে--দু'দণ্ড সময় নিয়ে সেদিন দুটো কথা বলবো,--মাঠের ঐ ক্ষয়া আলের উপর কাল ডুমুর ছায়ায় বসে!!।
মেঘাসৃতা
গ্রা:-গোয়াল ডাঙ্গা
পো: পারুলিয়া
জে:- বাঁকুড়া