নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

চিরঞ্জিত সাহা




অ্যাবোরশন
**********



প্যালেট আজও রং মুছেছে শেষ টানেতে এসে ,
মধুর তরী যায় তলিয়ে তীরের কছে ভেসে ;
হঠাৎ বারিশ!দেয় গুঁড়িয়ে খেলনা কাদাবাড়ি ,
তুই আর আমি বোধ হয় তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি ।
সিঁড়ি ভাঙার অঙ্কসারি যেই খাতে উতরায় ,
জীবনখাতা শেষের পাতায় ঋণাত্মকই পায় --
রেসের মাঠের ক্লান্ত ঘোড়া বগ্গা হতে চায় ,
ছিন্ন পাতা জোড়ার নেশা,  স্মৃতির বড়ো দায় । 
সটান সুতো , মসৃণ টান , ডরহীন এক কাঁচি ,
স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা , তবুও বেঁচে আছি ।
মন ভাঙনের শাস্তি যখন ব্যর্থ কিছু শ্লোক ---
প্রতারণার ফল সেখানে অ্যাবোরশনই হোক ॥

জয়ী সামসুল





জগদ্ধাত্রী পুজো ও শাঁখ সন্দেশ


শুভলক্ষ্মী উবাচ :
চাটুজ্জ্যেবাড়িতে তখন জগদ্ধাত্রী পুজো চলছে মহাসমারোহে ! সেদিন পুজোয় নবমী, তাই ঠাকুর দালানেও তিলধারণের জায়গা নেই আত্মীয় কুটুম্ব বন্ধুবান্ধব সকলের দৃষ্টি দেবীপ্রতিমার দিকে আর  দালানের প্রতিটি থাম, ঝাড়বাতি, প্রদীপ, কলাপাতা যেন সেই আনন্দে ভাগ বসাতে চাইছে খুশিতে ঝলমল করছে তারাও! এটা আমার মাসির বাড়ির পুজো, কাজেই আমার আনন্দের শেষ নেই আসলে যে কোনো উৎসব আনন্দ করার উপলক্ষ্য মাত্র  আর চাটুজ্জ্যেবাড়ির পুজো মানেই দেদার খাওয়াদাওয়া, হৈচৈ, আনন্দফুর্তি আর "এক্স ফ্যাক্টর" বিশ্বজয়! আমার মাসির দেওরের ছেলে; সম্পর্কে আমার কাজিনই হবে ওর ওপর আমার ক্রাশ সেই কবে থেকে!
আজ আমি লাল-সাদা জামদানি পরেছি, যাতে আটপৌরে বঙ্গললনা লাগে,
কানে ঝুমকো নয়, চাঁদবালি ! যাতে মাটির কাছাকাছি লাগে,
পায়ে নুপুর পরেছি  যাতে রুনুঝুনু শব্দে ও  ফিরে তাকায়; যদি আনমনা হয়েও  চলি , ওর যেন নজর পরে
চোখ কাজল পারিনি, যাতে চোখের স্বাভাবিক কথার না হারিয়ে যায়; যাতে দেখা যায়, আমার চোখে  কালো চক্র নেই, নেই বেদনার মালিন্য !! যে চোখ নীল/ হলুদ আইশ্যাডো মাখে, সে তো আসলে অনেক  কান্না বোতলবন্দি করে রাখে!
কিন্তু ঠোঁটে লাগিয়েছি লাল কমলার মাঝামাঝি রঙের এক ওষ্ঠরঞ্জনী; যাতে ঠিক পান খেয়েছি মন হয়!
এতো সবকিছু তো ওই বিশ্বজয়ের জন্যই! ইচ্ছে  করে ওকে সবটা বলি ...কিন্তু কিসের যে এতো  বাধা ..
বিশ্বজয় ভীষণ আড্ডাবাজ আর সবসময়ই আড্ডাচক্রের মধ্যমণি আজ হলুদ পাঞ্জাবিতে কি ভীষণ হ্যান্ডসাম আর সপ্রতিভ লাগছে ওকে ! ওর এতো বন্ধুবান্ধব, আমাকে তো দেখেও দেখছে না...কিন্তু আমি ওকে দেখছি, কাছ থেকে একটু দূরে
বিশ্বজয় উবাচ :
আজ মহারানীকে একদম আসল জগদ্ধাত্রী লাগছে ! ; হাসছে, খেলছে, ঘুরছে ফিরছে, আমার দিকে তো ফিরেও তাকান না, যেন আমি এক্সিস্টই করি না...আর আমি কিনা ওকে দেখে জীবনধারণ ধারণ  করি ...
কতদিন পরে তোমাকে আবার শাড়িতে দেখছি ! আমি পরখ করে বলতে পারি যে জগদ্ধাত্রীর পুজো করছি সে তোমার থেকে বেশি সুন্দর নয় ! আমি এমনি কি আর কবি লিখেলেন, "দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়রে দেবতা"...সরি, ওটা প্রিয়া হবে !! আজকাল অবশ্য জেন্ডার ব্লেন্ডারের যুগ!
ইচ্ছে করছে ছুট্টে গিয়ে তোমার হাতটা ধরি; একবার নাড়িয়ে দিই তোমার ঝোলা দুলটা. তোমার লাল-সাদা শাড়িতে ছোট্ট ছোট্ট হলুদ বুটি; আমার হলুদ পাঞ্জাবিতে ছোট্ট ছোট্ট লাল-সাদা বুটি...আমার একসাথে হাঁটলে কি দারুন মানাবে বল !!
তোমার চোখগুলো এমনিই এতো সুন্দর যে কাজল/ আইলাইনার পরার দরকার নেই; এতক্ষন ধরে বন্ধুবেষ্টিত হয়ে বসে আছি , অথচ আজ এখনো পর্যন্ত  একবার চোখাচোখিও হলো না ওই  কয়েক সেকেন্ডই আমার কাছে চিরন্তন ; স্বর্গ তো পৃথিবীর বুকে  কিছুক্ষনের জন্যই নাম ! এই যেমন এক প্লেট বিরিয়ানি , গরমের দুপুরে একবোতল কোক ,  মনকেমনের বিকেলে কালবৈশাখী , ছুটির দিনে আকাশভাঙা বৃষ্টি ...যা : কিসব ভেবে যাচ্ছি ...
মহারানী কি ইচ্ছে করে উদাসীনতার ভাণ করছেন ? ঠিক আমি যেমন করি ? আজকের  স্পেশাল পাঞ্জাবি আর ট্রিম করা দাড়িটা তো ওনার জন্যই ...
ওকে গিয়ে বলে দেই মনের কথা ? না থাকে ! শেষে  হয়তো স্বাভাবিক কথাবলা টুকুও বন্ধ হয়ে যাবে ! আমি  কি ওকে চিরকাল নিজের মতো করে ভালোবেসে যাবো , ও জানতেই  পারবে না !

শাঁখ সন্দেশ উবাচ :
এরা দুজনেই  সমান ; দুজনেরই বুকে  তোলপাড় হয় তবু মুখ ফোটে না ! আমাদেরই যা করার করতে হবে “অরে  ঐতো বড়গিন্নী তো  এদিকেই আসছেনকাঁসার থালার  মধ্যে থেকে বলে  ওঠে একজন
হা  তাইতো ”
ওরে শুভলক্ষ্মী , অভিনন্দা, অভিলাষ  তোরা কোথায় গেলি ...মিষ্টির থালা গুলো  যে সব এখানেই পরে আছে ; নে সবাইকে দে !” চেঁচিয়ে  বলতে থাকেন বড়গিন্নী
এগিয়ে  আসে শুভলক্ষী ! অনভ্যস্ত  হাতে তুলে নেয় এক থালা সন্দেশ . ধীরে  ধীরে সবার হাতে দিতে থাকে সন্দেশ ; আর আমি প্লেটের  মধ্যে থেকে মজা দেখতে থাকি...
শুভলক্ষী এগিয়ে যায় যেদিকে বিশ্বজয় আর তার দলবল বসেছিল সেদিকে! "আমাকে দুটো দাও, আমি শাঁখ সন্দেশ খুব ভালোবাসি" বলে ওঠে বিশ্বজয়ের এক বন্ধু সৌম্য "হ্যাঁ হ্যাঁ, নাও" শুভলক্ষী ওকে সন্দেশ দেয়; আর বাকিরাও নিজের ইচ্ছে মতো সন্দেশ তুলে নিতে থাকে থালা থেকে; বিশ্বজয় আর থাকতে না পেরে বলে ওঠে, "আরে আমিই তো এখনো পাইনি" ।।
"তোমার বাড়ির পুজো, তুমি নাহয় একটু পরে খেও, বাকিরা আগে দেই"  দুষ্টুমির হাসি ছড়িয়ে বলে শুভলক্ষী ! সবাই নেবার পর দেখা গেলো, থালায় একদুটি ভাঙা সন্দেশ অবশিষ্ট আছে; দেখে ভারি রাগ হলো বিশ্বজয়ের সে সবসময় সবকিছু আগে পেয়ে এসেছে; ঠাকুমার বড়নাতি হিসাবে...সে মাছের মাথা হোক বা প্রথম পিঠে! সে মুখ কালো করে চলেই যাচ্ছিলো, হঠাৎ তার পথ আটকাল বন্ধুনি বাসন্তিকা
"সামান্য মিষ্টির জন্য এতো রাগ করছিস?? তুই তো মিষ্টি খেতে ভালোবাসতিস না" বাসন্তিকার কথাগুলো বিশ্বজয়কে জ্বালিয়ে দিলো, তবু মুখে অল্প হাসি রেখে বলল, "এখন আমি মিষ্টি ভালোবাসি"
"তাহলে আমার থেকে নে; দেখ এখনো আমি খাইনি"
"না না তুই খা"
"কেন খা না"
"বলছিতো আমি এখন খাব না, কেন আমার মাথা খাচ্ছিস?" তবু বাসন্তিকা সন্দেশ টা খাইয়ে দিতে গেলো বিশ্বজয়কে! সন্দেশ মুখ অব্দি পৌঁছনোর আগেই কোথাথেকে সেখানে শুভলক্ষী এসে হাজির !! হাতে একটা ছোট প্লেটভর্তি মিষ্টি !
"দেখ, শাঁখ সন্দেশ, মাছ সন্দেশ, চমচম, ক্ষীরকদম, রাজভোগ, আরো কত কি এনেছি; এটা শুধু তোমার" মিষ্টির থালা ওর দিকে এগিয়ে দেয় শুভলক্ষী, "মাসি পাঠালো  তোমার জন্য"মহারানী একদম ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় হাজিরদেখে আমার নাচতে ইচ্ছে হল
অতঃপর মিষ্টির দিকে দৃষ্টিপাত করল বীরপুরুষ
বিশ্বজয় তো শুধু মিষ্টি দেখল না, দেখল, সে এখনো বাড়ির সবার প্রথম প্রায়োরিটি; তার কথা কেউ তাহলে ভাবে ! শুভলক্ষ্মীর ওপর হওয়া রাগ তখুনি গলে জল হয়ে গেল !! খুব রাগ অভিমানের পর যদি প্রেমিকার হাতের খাবার পাওয়া যায়, যেমন লাগে আর কি ! শুভলক্ষ্মী শান্তভাবে ওর হাতে মিষ্টির প্লেট দিল.শুভলক্ষীর হাত থেকে মিষ্টি নেবার সময় আঙ্গুল ছোঁয়াছুঁয়ি হলো একটু; তাতেই বিদ্যুৎ খেলে গেল দুজনের শরীরে ! বিশ্বজয় অনুভব করল বুকের ভেতর কে যেন হাতুড়ি পিটছে ! আর শুভলক্ষ্মী...সে তো লজ্জায় লাল !
এখন রাত একটা; বেশিরভাগ আত্মীয় অতিথি অভ্যগতই ঘুমিয়ে পড়েছে, নয়তো চলে গেছে শুধু শুভলক্ষ্মী-বিশ্বজয় এখনও বসে আছে ঠাকুর দালানের এককোণে! বিশ্বজয় বসে আছে একটি থামে হেলান দিয়ে আর ওর কাঁধে মাথা রেখে শুভলক্ষ্মী ! ওদের ভালোবাসাবাসি এখনও শেষ হয়নি, ঘুম নেই কারো চোখেই...হয়তো আজ সারারাত ওরা এভাবেই বসে থাকবে
যাইহোক, আমার দুষ্টুমিটা এখনো বলা হয়নি তোমাদের ! শুভলক্ষ্মীর হাত থেকে মিষ্টি নেওয়ার সময় বিশ্বজয় সরাসরি তাকাল ওর চোখের দিকে; তাকিয়ে তো বীরপুরুষ আর চোখ ফেরাতে পারেন না ! শুভলক্ষ্মীও যেন কিসের মন্ত্রবলে তাকিয়ে ওর দু'চোখের দিকে...শেষে মিষ্টির প্লেট পড়ার উপক্রম হলো, তখন দুজনেরই সম্বিৎ ফিরল; বিশ্বজয় তড়িৎগতিতে ধরে নিলো প্লেটটা...আসলে প্লেট থেকে আমরা কয়েকজন ঝাঁপ দেবার উপক্রম করেছিলাম, ওরা সেটা বুঝতে পারেনি !!
ঝাঁপ দেবার উপক্রম করলাম বলেই বাবাজির মুখে বুলি ফুটল, সে কোনক্রমে শুভলক্ষ্মীকে বলল, "এভাবেই আমায় সবসময় মিষ্টি এগিয়ে দিও আমার মনখারাপ হলে !"

সুধাশ্রী মণ্ডল






এক আকাশ ভাবনা আমার
 ************************


চাঁদনি রাতে ছোট্ট জোনাকি আমার
স্বপ্নের বারান্দাটায় উঁকি দিয়ে বলে ....
---এখনো ভালোবাসো ?

হাজার তারার আলোয় ভরা ,আঁধার নেভানো রাত
দুচোখের তারায় তবুও কাজল কালো মেঘে
অনন্ত বর্ষার ঢল ; ক্রমাগত শুধু জল থই থই শাঁওন
মায়াবী অবকাশে, অভিমানী মেঘে দুলে ওঠে তুফান ;

ভেজা চোখে তাকিয়ে বলি ....
---খুব বাসি !
---কেন বাসো ?
কই সে তো কখনো বাসেনি !
বাসতেও তো বলেনি !
---তো কি !
আমি তো বাসতে ভুলিনি ....
সে যে আমার পদ্মপাতায় ঢেউ
দুঃখ রাতের সুখতারা ফুল চাঁদ
আমার গায়ে ফাগের হাওয়ার গন্ধ হয়ে মিশে
আমি জল থই থই বুকে ,
সেই হাওয়ার সুখ মেখে
আলতো পায়ে নূপুরে তাল গুনি ...
আমার নয়ন দীঘির ভ্রমর কালো জলে
অথৈ সাগর নীল ঝরনা জলের ওড়না ওড়াই মেঘে ....
তার বাঁশির সুরে আনন্দ গান গাই ,
সে যে আমার নয়ন তারায় মুক্তো
সোনা রোদ অহংকার ;
ভোরের আগে আমার ঘরে আসে
আদরে ভিজিয়ে মন কেমন
দু চোখের শোক ছুঁয়ে যায় রোজ ! 

নবনীতা সরকার




নরক কোথায়?
 ************


           
এখানে এখনো আগুন জ্বালেনি আলো। 
এ পৃথিবী এখনো প্রদীপ শিখার তলে

কালের যাত্রা রুখে আজ
রোশনাই হয়েছে আলপথ। 

উপড়ে গেছে আগাছা মূল
দিনের শেষে শুধুই পোড়া গন্ধ আর কুন্ডলীকৃত ধানজমি। 

তবু,পত্পত্ করে উড়ছে সুসভ্যতার বিজয় পতাকা। 
কপাল ঢেকে গেছে শোণিত টিকায়। 

শুধু,বিস্তীর্ণ মরুর মাঝে
যজ্ঞভস্ম অঙ্গে ঢেলে আপাদমস্তক ঘৃত লেপন করে নিস্পলক আকাশপানে চেয়ে শুয়ে আছে-উলঙ্গ শৈশব। । 



  আবেদন
  ********



গভীরতার আর এক নাম প্রেম-
যদি তাই ই বলতে হয়,তবে

রাত্রি কে গভীর হতে দাও আর ও

নিস্তব্ধ রাত্রির শব্দিত তরঙ্গে
কান পেতে শোন-

সমুদ্র যতটা ঢেউ তুলে গাঢ় হয় ধীরে ধীরে,
রাত্রিকালীন জোয়ার এলে ঠিক ততটাই গাঢ় হচ্ছে নীলচে প্রেম। ।

পুলক মন্ডল





বৃষ্টিধারা 
********


            
ছেলে বিশুকে নিয়ে দু'জনের সংসার তার।আর একটা বিয়ে করে পুরুষটা চলে গেছে অন‍্য কোথাও। অবশ‍্য তা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই রেখার।কেননা মানুষটার অত‍্যাচারী চেহারা এত দেখেছে দিনের পর দিন যে সে না থাকায় বরংস্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে। ক্লাস টু-এর ছাত্র সাত বছরের বিশুও যেন হঠাৎ করে অনেক কিছু বুঝতে শিখে গেছে ! তাই কোনদিন-ই কোন কিছুর জন‍্য বায়না করে না সে। অথচ ওর বন্ধুদের কত ঝকমারি জামাকাপড়, কতজনের টিফিনবাক্সে কত রকমের খাবার ভরা থাকে তা বিশু কোনদিন না বললেও কলতলায় জল আনতে গিয়ে এসব গল্প অনেক শুনেছে রেখা। তাই কাল রাতে যখন রোজকার মতো ছেলের মাথায় আলগোছে হাত বুলিয়ে তাকে ঘুম পাড়াচ্ছিল তখন বিশু আচমকা একটা চাবি ঘোরানো মোটরগাড়ী চেয়ে বসায় সে একটু অবাক হয়েছিল। কথায় কথায় জানতে পারলো মাছের আড়ৎদার চিত্ত-র ছেলে গাড়ীটা নিয়ে স্কুলে খেলছিল কিন্তু বিশুকে একবারও হাত দিতে দেয়নি, উল্টে বলেছিল এসব দেখেছিস্ কোনদিন ! জানিস্ পাঁচশ টাকা দাম !
                      ঘুমিয়ে পড়েছে বিশু। ঘুম নেই রেখার চোখে। সারাদিন রাখী তৈরী করে আর কটা পয়সা মেলে ! পাড়ার মুদী দোকানে ধার, সবজীওয়ালার কাছে ধার।   পাঁচশ টাকা ! কিভাবে আসবে ভাবতে ভাবতে কখন যেন ক্লান্তি আর অবসাদে রেখার দু'চোখের পাতা নেমে আসে।
                রাখী কারবারি জগার চোখদুটোতে সবসময় এক ধূর্ত চাহনি এদিক ওদিক করে। মানুষের দূর্বলতা মাপতে জগার খুব বেশী দেরী হয়না। তাই রেখা যখন ছেলের জন‍্য খেলনা কিনবে   
বলে পাঁচশ টাকা আগাম চাইল তখন তার অসহায় অবস্থা একনজরে বুঝে জগা বলে উঠল, চাবি দেওয়া মোটরগাড়ী তো শহরে পাওয়া যায়, তুই এক কাজ কর, সন্ধ‍্যেবেলা কারখানায় আয়, আমি আনিয়ে রেখে দেব। রেখা ইতস্ততঃ করছে দেখে সে বলে উঠল, তোর মজুরী থেকে একটু একটু করে কেটে নেব, চিন্তা করিস না।
                 আধখোলা দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই একা জগা'কে বসে থাকতে দেখে বুকটা ছ‍্যাৎ করে ওঠে রেখার। দেতোঁ হাসিতে জগা বলে ওঠে, ওই দ‍্যাখ তোর ছেলের মোটরগাড়ী। অফিসের টেবিলের ওপর চাবি ঝোলানো খেলনাটা দেখে রেখার চোখমুখ এক অনাবিল খুশীতে ভরে যায়।ঠিক তখনি চেয়ার থেকে উঠে ঘরের এককোনে থাকা তক্তপোষে বসে জগা বলে , ছেলের খেলনা তুই এমনিই পাবি, যা দরজাটা ভেজিয়ে দে। কয়েক পা পিছিয়ে এসেও তার চোখ পড়ে যায় চাবি ঝোলানো মোটরগাড়ীটার দিকে। ঐ চাবিটা ঘুরিয়ে দিলেই গাড়ীটা চলবে !
                    যেন একটা উত্তপ্ত লৌহশলাকা তীক্ষ্ণবেগে তার ভূমি ক্ষতবিক্ষত করে প্রবেশ করে। আচমকা যন্ত্রনায় চোখ বন্ধ করে রেখা। তার বন্ধ চোখের সামনে ভাসতে থাকে একটা কচি হাত। সেই হাতটা চাবিটা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। গাড়ীটা চলতে শুরু করেছে। গাড়ীটার পেছন পেছন হাসতে হাসতে ছোট ছোট পায়ে ছুটছে তার বিশু। রেখার বন্ধ দু'চোখের কোল বেয়ে হৃদয় নিংড়ানো জল ধীরে ধীরে নামতে থাকে ক্রমশঃ নীচের দিকে, বৃষ্টিধারার মতো ধুয়ে দিতে থাকে তার ক্ষতবিক্ষত ভূমির যত যন্ত্রনা আর অপমান.....

তাপসী লাহা



তমসো মা
*********


ছন্নছাড়া  ঘরকন্যায়  বিন্যস্ত মানবজীবনে কাশফুল ফুটলে লোকে জানে এবার মা আসছেন।ধুলো ধুলো  দুঃখদের ঝাড়পোছ করে মনের ঘরে লাগাতে থাকি উদযাপনের খুশিরং।
বিস্তীর্ণ  সৃষ্টিরাজিতে প্রকৃতিও তুলে ধরে নিজের অপরুপ কলাকৃতি,পুকুরগুলো ভরে যায়  পদ্ম শালুক এ।প্রখর রোদের তেজ অমলিন  থাকলেও জলপাই রঙ গাঢ়তর  হয়,ঠিক পাওয়া উপহারের সোনালি  মোড়ক যেন। দীঘির গভীর জলে ঢেউএর আলোড়ন মানবমনের আকুল চঞ্চলতাকে ভাষা দেয় যা  মায়ের জন্য  সন্তান অনুভব করে।কবে আসবে তুমি,তাড়াতাড়ি এসো আর রাঙিয়ে  দিয়ে যাও  আনন্দে এ ভুবন। 
 ।      সময় বড় কম।মোটে একটা সপ্তাহ।জানি পাল্টাবে না দু ঃখের  সুবিশাল সিলেবাস।তবু প্রচেষ্টা  থাকুক,আশা থাকুক,আলো থাকুক  সব  প্রতিকুলতা,অসহায়তা, আধার থেকে উত্তরণের।একটা পথের  সন্ধান থাকুক,যার  রেখাসুত্র অনুসারে আমরা একটু ভালোর খোজ করে যাবো।শিশুদের পৃথিবীটা একটু নিরাপদ হোক।বয়স্কদের পৃথিবীতে পরিবারের সান্নিধ্যের ছোঁয়া লাগুক।নির্যাতিতরা বিচার পাক।
একটা সুন্দর সমাজের রুপায়ণে তোমার  শুভ কল্যাণী  সাহচর্য  ছাড়া আমরা তোমার সন্তানেরা কিভাবে এগোবো।
          দিকে দিকে বেজে উঠছে আলোর বেণু।আর আমরাও প্রস্তুত যাবতীয়  অনাড়ম্বতায় তোমায় গ্রহণ করে নিতে।আমাদের ঘরের মেয়ে, হে দেবী এসো এ আলোয় পথের দিশারি  হয়ে।