নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অমিত কুমার জানা

 সভ্যতার ভিত



আমরা যখন ইঁট হয়ে থাকি
হতবাক হয়ে চেয়ে দেখি
তোমাদের কি নিষ্ঠুর মানবিকতা!
হেয়জ্ঞান করে অবজ্ঞাভরে
লাথি মেরে সরিয়ে দাও সুদূরে,
তাই মোরা নিক্ষিপ্ত হেথাহোথা।

পুনরায় স্ব স্ব প্রয়োজনে,
উন্মত্ত হও আমাদেরই অন্বেষণে।
আমাদের অগণিত সহোদরে
একসাথে রাখো জড়ো করে।
গড়ে তোল অট্টালিকা গগনভেদী,
স্তরে স্তরে সজ্জিত মোরা বহুদূর অবধি।

যাদের দিয়ে গড়েছো সভ্যতার ভিত,
তাদের অবজ্ঞা করো না কদাচিৎ।
সভ্যতার ভিতে যদি ধরে ফাটল,
নিষ্ঠুর শাসকের গদি হবে টলমল।

সুমিত মোদক

 জ্বেলে যায় দীপ



অন্ধকার সরিয়ে সরিয়ে বার করে নিতে হয়
সামনের এগিয়ে চলার পথ ;
পথিক বার বার পথ হারায় ;
তবুও পথে নামে পঞ্চপাণ্ডব ও পাঞ্চালী ;

ঘোর অমাবস্যায় তন্ত্র সাধনায় মগ্ন অঘোরী-জীবন ;
গভীর জঙ্গলে থেকে উঠে আসে প্রেত-তত্ত্ব ,
মহাকাল …
অথচ , মুখোশের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যায় ;
দিকে দিকে চুরি হয়ে যায় শ্মশান ;
কেবলমাত্র পড়ে থাকে আধপোড়া চিতাকাঠ ,
ফুটোকলসি ;

রাতচরাপাখি গুলো রাতের অসুখ দেখে
ভয়ে ভয়ে থাকে ;
এই বুঝি আকাশ থেকে ভেঙে ভেঙে পড়বে 
সহজ সরল মানুষের কান্না ;
সে কান্নার শব্দ গুলোকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা
তাদের নেই ;
সে কারণে অপেক্ষায় থাকে নতুন ভোরের ;

ডোম হরিশচন্দ্র এখনও খুঁজে বেড়ায় 
একটা শ্মশান ;
চারপাশে তার হাজার হাজার মৃত দেহ ;

এমনই অন্ধকারের মধ্যে দিয়েই হেঁটে যায়
গৌতম বুদ্ধ ;
খুঁজে পেতে বোধিবৃক্ষ , সুজাতা পায়স …

এতো কান্না , এতো অন্ধকার , এতো নৈশব্দ
তবুও করা যেন দিকে দিকে , দিগন্তে 
জ্বেলে যায় দীপ ;
আলোয় আলোয় ভরে উঠছে সনাতন ভারত ভূমি ।

অনোজ ব্যানার্জী

 দীপাবলী


দীপ চায় শিখা,শিখা চায় দীপ,

আঁধারেতে তাই,আলো জ্বেলে যায়।
কালো মেয়ে আসে,বাংলা তাই হাসে,
সাজো সাজো রব,আলোর বন্যায়।

দুর্নীতি যত,যত অন্যায়,
এসো মাগো তুমি,দাও মুছে সব।
অসুরের হাত,দাও ভেঙে দাও,
শুনতে তো চাই,হাসি কলরব।

ছলনার ফাঁদে,দেবতারা কাঁদে,
বাঁচাবে কে আজ,স্বর্গের সুখ?
রক্তের বন্যায়,পথ,ঘাট ভাসে,
দেখাবে কে আজ শান্তির মুখ?

ডাকি মনেপ্রাণে এসো শ্যামা মা,
ওই অসুরদের দাওগো বলি,
আমাদের ঘরে ঘরে তাই আজ
দেবো জ্বেলে শুভ দীপাবলি।।

শাবলু শাহাবউদ্দিন

 টিএসসির চত্ত্বরে


 

টিএসসির চত্ত্বরে রবীন্দ্রনাথ ভেঙে হয়েছে খান খান

শিক্ষিত সমাজ রাখল না তার আজ মান-সম্মান

কাজী নজরুলের কণ্ঠে বাজে না আজ বিদ্রোহের গান

কবি সাহিত্যিকেরা হয়েছে বড়ই বেইমান

তাদের আছে দেহ, মণ্ডু খুঁজে পায় না কেহ্

তবে কে দেখবে আর এ দেশের সম্মান !

আইনের বেড়া জালে, জেলখানার ভয় পেলে

হবে কি স্বাধীন ? এ দেশের মান অভিমান !

বাঙালি হয়ে জন্মেছি মা, মানুষ হবো কবে ?

শিক্ষিত তো হয়েছি মা, আমরা সবাই ঘরে ঘরে

কে দিবে তার আসল প্রমাণ, স্বাধীন বাংলার তরে !

 

রূপবিলাস মণ্ডল এর কবিতাগুচ্ছ

 



বুদবুদ

  

কোন এক সন্ধ্যায় তোমার

হৃদয়ের‌ উষ্ণ  প্রস্রবণ ,

উষ্ণতা আমায় ঢেলে দিয়ে

শীতলতা করেছ বরণ।

জীবনের ধারাপাত জুড়ে

যোগ বিয়োগের এই খেলা ,

বিষন্ন  আকাশ বুকে করে

বিশ্ব পথে হেঁটেছি একেলা।

ক্ষণিকের অতিথির মতো

কিছু পথ ধরেছিলে হাত,

হাত ছেড়ে কোথায় হারালে,

কুসুমিত শুভ্র প্রভাত!

আমার প্রগাঢ় অনুতাপ

তোমায় নামায় মেঘ করে,

বৃষ্টি, সে দূরে সরে রয়

স্বপ্নের ক্রন্দসী পারে।

নিত্য এ আসা যাওয়া খেলা

বুদবুদ ঊর্মিমালায় ,

প্রেম আর অপ্রেম মিলে

জন্মায়, অসীমে মিলায়।

 

 

 

 

 

 

মানবতার ফেরিওয়ালা

 


 

শৈশব আর কৈশোর গেছে চুরি

স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে যৌবন,

উদ্ভ্রান্ত এ সময়ের অভিঘাতে

স্বপ্নের এক ফেরিওয়ালা প্রয়োজন।

সে স্বপ্ন  হবে মানবতা প্রতিরূপ

জীবনের তরে সঞ্জীবনীর মতো,

দুচোখে আঁকবে স্বপ্নের  অঞ্জন

দূরীভূত হবে হতাশা-দুরাশা যতো।

 

দিকে দিকে আজ বিপন্ন মানবতা

আর্ত কান্না বিষিয়েছে প্রতিদিন,

মানবতা হীন জীবন পশুর মতো

ফেরিওয়ালা করো মানবতা উড্ডীন।

গান্ধী ,নেতাজী যে স্বপ্ন দেখেছিলো

সেই স্বপ্নই বয়ে নিয়ে চল তবে,

সবাইকে যদি স্বপ্ন দেখাতে পারো

দেশ জননীর স্বপ্ন সফল হবে।

যে স্বপ্ন খোঁজে জাতপাত হীন বিশ্ব

মানবতা আনো,যেখানেই খুঁজে পাও ,

ঈর্ষা এবং হিংসা মুক্ত পৃথিবী ,

যুদ্ধ চাইনা, যুদ্ধ থামিয়ে দাও।

সাম্যের তরে এক হোক গোটা দুনিয়া

গভীর স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাক মন,

স্বপ্ন দেখুক শ্রমিক  মজুর কৃষক

পৃথিবীটা হোক আনন্দ নিকেতন ।

 

আসল কথা

 


 

আসল কথা বলতে গেলেই

ভরিয়ে দিচ্ছে নকল কথায় ,

সবাই হয়ে মন্ত্র মুগ্ধ

বোকার মতো হাততালি দেয়।

তুলছে না কেউ  আসল কথা

ভুলছে সবাই অভিনয়ে,

এরা ভাবছে ওরা বলুক

সত্য ডোবে অবক্ষয়ে।

 

কার প্রাপ্তি কে হাতড়ায়

কার অধিকার ধুলায় লুটায় !

নকল লড়াই বাধিয়ে  দিয়ে

নেপোয় শেষে  দ‌ই মেরে দেয়।

তোমায় যারা শোষণ করে

তাদের নিয়ে মাথায় তোল,

নিজের কথা, দেশের স্বার্থ

তোমায় ভোলায়, তুমি ও ভোলো।

 

এসব প্রশ্ন কে করবে?

বলবে যারা নেশার ঘোরে ,

প্রতিবাদের ঝাণ্ডা ঢেকে

সহজ পথে স‌ওদা করে।

সত্যি কথা, আসল কথা

সবাই মিলে বলতে হবে,

না হলে ওই শোষক শ্রেণীর

মর্জি মতো বাঁচতে হবে।

 

মেকি কথা মিটিয়ে দিয়ে

তোল সবাই  আওয়াজ তোলো

আসল প্রশ্ন উপেক্ষিত,

আসল কথা সবাই বলো।

মেশকাতুন নাহারের কবিতাগুচ্ছ

 শরতের আহ্বান

শরৎ বাবু বলছে ডেকে 
যাবে আমার সাথে? 
শিউলি ফুল মালা গেঁথে 
দেব তোমার হাতে।

শিশির ভেজা দূর্বাঘাসে
হাঁটবো দুজন মিলে, 
শাপলা হাসে চেয়ে দেখ
দুপুর বেলা ঝিলে। 

ইচ্ছে করে মেঘের দেশে
দেই দুজনে পাড়ি, 
নীল আকাশটা ছুঁয়ে দেখব
চড়ে হাওয়াই গাড়ি।

নদীর তীরে ফুলে ফুলে
কাশবন গেছে ভরে,
আসমানি রং শাড়ি পরে
থাকবে হাতটা ধরে।

মাঝে মাঝে উড়ে যাবে 
শালিক ময়না টিয়ে,
সুখের তরী বাইবো রানি
শুধু তোমায় নিয়ে।


সুখের চাবি


ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ পড়ে ভাবি! 
জীবনের ঢের দিন হয়ে গেছে পার,
অর্থকে ভেবেছি সুখ দুয়ারের চাবি 
মৃগতৃষ্ণায় ছুটে যে খেলাম আছাড়।
আপন কে দূরে ঠেলে পেয়েছি বিষাদ 
চারপাশে শূন্যতায় খাঁ-খাঁ মরুভূমি!
ছুটে চলেছি শুধুই গড়তে প্রাসাদ, 
সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভুল করে  গোঁয়ার্তুমি।

দু'চোখের আয়নাতে ভাসে কত ছবি! 
দিশেহারা ক্লান্ত যাত্রী পথ খুঁজে চলে, 
আঁধার শেষে উঠবে নিশ্চয়ই রবি, 
হৃদয় কানন পুনঃ ভর্তি হবে ফলে।
ব্যথা সব ছুড়ে ফেলে বাঁধি নব আশা, 
সবচেয়ে বড় সুখ শুদ্ধ ভালোবাসা।

সুখের তালাশে


ও পারে সুখের ঠিকানায় 
এ আমি তালাশে নিরালায় 
কি এক জটিল মায়াজালে,
এ মন প্যাঁচালো কুটচালে। 

সে পীড়া মনের মোহনায়, 
এ আঁখি জোয়ারে কান্নায়।
সে জ্বালা সবার অগোচরে, 
তা ক্ষত হয়েছে গহ্বরে।

ও মাঝি নাওনা কিনারায়, 
এ আমি ভাসছি নিরাশায়।
পা ফেলে নদীর লহরীতে,
সে চলে গতির বিপরীতে।

না জেনে নেমেছি তটিনীতে,
এ মোর বেদনা ধমনীতে। 
কি করি বলো'না প্রতিকার,
সে হেতু ভাবনা লেখিকার।

ও মাঝি ধরো'না দুটিহাত
এ হৃদে লাগছে করাঘাত
সে আমি করছি আহবান, 
এ প্রাণ পেয়েছে জ্ঞানদান।



ধ্বংসযজ্ঞ 


আরও একটা বিশ্বযুদ্ধ যেন চলছিল অন্তর প্রদেশে,
তীর ধনুক কিংবা বর্শার আঘাত নয়!
যুদ্ধাস্ত্র ছিল নিউক্লীয় বোমা! 
এ ধ্বংসযজ্ঞ আরেকটি বার হিরোশিমার কথা মনে করিয়ে দেয়,
প্রাণচঞ্চল হিরোশিমা নাগাসাকি শহর হয়েছিল পঙ্গুত্বের গহ্বর।
ঠিক সেইরকমই যেন আকষ্মিক ভাবে মর্মদেশ কম্পিত হয়ে ওঠে! 
স্বপ্ন শহর হলো মূর্ছিত! হলো নিষ্ক্রিয় পাথর!
যে হৃদয় নগরীতে নির্মিত ছিল ব্যাবিলনের উদ্যান,
ধুলোয় মিশে ধ্বংস স্তুপে আজ হয়েছে ম্রিয়মাণ।
সেখানে আজ অঙ্কুরিত হয় না সবুজের সমারোহ,
বাসা বাঁধে না কোনো পাখি, 
বাতাসে ভেসে বেড়ায় না মিষ্টি সুরের মূর্ছনা।
বয়ে চলছে সেথায় শব্দহীন শুকনো অশ্রু প্রপাত। 
শ্যাওলা জমে স্যাঁতসেঁতে হৃদয়ের কুঠুরিটা, 
হিরোশিমা আর জাগবে না,আর জাগবে না, 
পাবে না ফিরে সেই যৌবনের মুখশ্রীটা।


কঙ্কাবতীর দুঃখ 


এক যে ছিল দস্যি সর্দার দেখতে ঠিকই মানব,
কিন্তু সে যে আঁধার রাজ্যের মহা একটা দানব, 
কঙ্কাবতী কে আনে ধরে এমন বিকট মূর্তি, 
অনুরাগের ছোঁয়া পেতে ঘটায় অদ্ভুত কীর্তি।

কঙ্কাবতী তোমায় আমি রাখবো রানি করে, 
হীরা পান্নার মালা দিয়ে দেবো তোমায় ভরে।
রাজকুমারীকে নাকি সে করতো বহুত পেয়ার,
কারাগারে বন্দী করে চালায় ভীষণ প্রহার। 

দৈত্য সম্রাট বুঝে না যে রাজকুমারীর মন,
নারকীয় তাণ্ডব লীলায় করতো আক্রমণ। 
মিথ্যাচরণ আর লুকোচুরিতে করে নিত্য খেলা, 
রাজকুমারীকে কয়েদ রেখে 
বসায় জলসার মেলা।

সোনার পালঙ্কে ঘুম কি হয়! দৈত্য রাজের ভয়ে,
কত পালানোর উপায় খুঁজে চুপিচুপি সংশয়ে।
শক্তি দিয়ে কেনা যায় কী খাঁটি ভালোবাসা? 
দোহাই লাগে দৈত্য সম্রাট করিস না আর তামাশা।