নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

শর্ত : কিশলয়



প্রথম লড়াই বুকের দিকে আসে
তারপরেই পড়শী- বান্ধবী
ঝড়ের মতো জান্তব উল্লাসে
ফুঁসে ওঠে যমুনা, জাহ্নবী

মনকে বোঝাই পথের কথা গুলো
সময় কিছু কঠিন পরীক্ষা নিক
ঠিক হয়ে যাক একটা দুটো ভুলও
ঝড়কেও তুই মান্য করিস খানিক

বুকের ভিতর লড়াই পড়ুক জ্বরে
ছাই হয়ে যাক অকাল দাবানলে
যেমন হাড়ে নতুন নাটক করে
পুরুষ মানুষ প্রথম বাবা হলে

সকল লড়াই আচমকা যায় থেমে
জ্যান্ত হলে বুকের তাজা খুন
পায়ের কাছে শত্রু আসে নেমে
শান্তি টানে জ্বলন্ত আগুন

তবু জয় চাই, জয় : সকুমার দাস




তবু জয় চাই,  জয়
-- অনীশ্বর

অপেক্ষারত
মৃত্যুমিছিল! ভয়!
তন্দ্রাহত অন্ধকার, অন্ধকার করে তুলছে
সমস্ত দিব্যদৃষ্টি!

অনাহুত অতিথি, অবিরাম
আগল ভাঙছে, ভেতরে ঢুকবে বলে
দরজা সামলে সমস্ত শক্তি নিংড়ে
শিরা- উপশিরা টানটান করে
দাঁড়িয়ে আছি। ধ্বসে পড়ার ভয়
শক্তিহীন করে তুলছে ক্রমশঃ

রাগ ক্ষোভ দুঃখ ভয়, সব মিলমিশে
একাকার। কোনটা তুলে রাখি
ভবিষ্যতের জন্য...
জয়  জয়  জয়, জয়শক্তি অর্জন
 করতে করতে
অকস্মাৎ শক্তিহীন শক্তিশালী বিশ্ব,
প্রলাপধ্বস্ত, বিদ্ধ
কত ঠুনকো আমাদের শক্তি, অহঙ্কার
মেদবহুল আস্ফালন, --- সব অপলাপ
ভীতি-বাণীজ্যের অমোঘ দেউল
অসারত্ব বিলিয়ে যায়
মেরে বাঁচার আদিম কৌশল!

কে যেন
পাপ ধ্বংসের প্রতিশ্রুতি প্রতিষ্ঠা করে
অস্ফুট সংলাপে!
অনবদ্য করতালি
বিশ্বাস বিলুপ্ত করে
প্রশ্নহীন দীর্ঘশ্বাসে!

তবু জয় চাই, জয়
মানুষের জয়
জীবনের জয়
স্বপ্নের জয়, আর
দয়া দাক্ষিণ্য নয়---
বেঁচে থাকবার জন্য
জীবিকার জয়।


প্রেমিকা : শ্যামল কুমার রায়



   বছর পঁচিশ আগের তারুণ্যে ফিরে গেলেন ডঃ প্রিয়তোষ সান্যাল। একি কাকে দেখলেন আজ? সেই চেনা মুখ, চেনা হাসি। নিশ্চিন্তপুরের বিনোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ঘাড় ঘুরিয়ে তিনি যাকে দেখতেন সে নয় তো? পিছনের বেঞ্চে বসা ক্লাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল চেহারার মেয়েটাকে তিনি বারবার ঘুরে ঘুরে দেখতেন, তাঁর প্রথম ক্রাশ।
        খাতার মলাটে যার নাম তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে লিখে রাখতেন; যার হাসি তাঁর চোখে মনে লেগে থাকতো। এতো সেই ঊর্মি। হাঁ নিশ্চিত ঊর্মি। সেই সময়ও মুখ ফুটে বলতে পারলেন না, আজও চুপ থেকে গেলেন ব্লুমহার্ট স্কুলের আজকের রাশভারী প্রিন্সিপাল ডঃ সান্যাল। ঊর্মি এসেছে সিঙ্গেল পেরেন্ট হিসেবে মেয়ের ভর্তির জন্য ইন্টারভিউ দিতে।
                 চোখাচোখা প্রশ্ন দক্ষ হাতে সামাল দিয়ে চলেছেন মিসেস ঊর্মি ব্যানার্জী। মুখ ফস্কে ডেকে ফেললেন ' পুলু' বলে। পুলু হলো প্রিয়তোষের ডাক নাম, বন্ধুদের দেওয়া। ব্যাস, চোখাচোখি, মুচকি হাসি অষ্টাদশী প্রেমিকা ঊর্মি ফিরে এলো পুলুর কাছে।
               -----------------------------------

সাদা প্লেটে মৃত্যু : গোলাম রসুল



আকাশে পৃথিবীর প্রতিফলন
মৃত্যুর অববাহিকায় বয়ে যাচ্ছে  যে নদীটি আমারই দুঃখের মতো
শুকিয়ে গেছে কথা আর ছিঁড়ে গেছে আমার মুখের থেকে
হাওয়া শোকের পোশাক

মনুষ্য জাতি ডুবছে ঢেউয়ে
আর সন্ধ্যা নামছে
গলির মুখে  মায়ের কোলে সন্তান  স্তম্ভের মতো কাঁপছে রাত্রি
আমি রাত্রির কিছু জানি না
তাই প্রথম নক্ষত্রটিকে জিজ্ঞেস করি কি আছে  আমাদের ভাগ্যে

প্লাস্টার করা নিশি
অসংখ্য শামুকের মুখ
ঝনঝন করে বাজছে পাতাল
 ঝিঁঝিঁ পোকার ঐক্যতান
চোখের দৃষ্টিতে দ্রাঘিমা রেখা
ওপরে  কে বসে রয়েছে
কে চালাচ্ছে এ্যাম্বুলেন্সের গাড়ি

একদিন চাঁদ ছিলো মানুষের মুখ
সে চাঁদ ডুবে গেছে সন্ধ্যায়
আকাশ ছিলো আরোগ্য
সেখানে ও ভারী পায়ের শব্দ
দূরবর্তী মেঘ বন্ধুর মতো
যদি বৃষ্টি নামে  সমুদ্রের মাঝে
তাও শুনতে পাবো না উচ্চারণ

আমাদের দেখার জন্যে
সাদা প্লেটে মৃত্যু
    __________________

খিদে : ইসমাইল মোল্লা


দেশ  জুড়ে  লকডাউন  নভেল করোনা
বলছে  নাকি  ঘরেই  থাকো  বাইরে  যেও  না 
দোকানদানি  রাস্তাঘাটে  লোক  মেলা  ভার
আমার  ঘরে  যে  ধিকিধিকি   জ্বলছে  অনাহার 
আমার  ঘরের  বছর আটেক  শুনেছে  রাস্তায়
বাপের নাকি  কাজ   বন্ধ   ইঁটের  ভাটায়
মায়ের  মুখে  চাপা  ভয় 
চলবে কেমন করে
ঘরে  যে মোটে  দশটা  টাকা
খাবার এতে মেলে !
বউটা মোটে পাঁচমাস
 মাসি বলে  ভালো খাবার চাই
বাপের  সুগার  ভীষণ  চড়া
বলতো দেখি  টাকা কোথায় পাই ?
বলছে  লোকে  মাস্ক  পড়ো 
 হাত ছুঁয়োনা হাতে
 জ্বলা  পেটে  বলতো দেখি
 মাস্ক  বাবু কিসের কাজে আসে ?
আমায়  তবে  নিয়ে চলো  ওই বাবুদের কাছে
বলবো  বাবু  দুবেলা ভাত  দে  না ওরে খেতে 
না  পারলে  মানব না  যা
সব  বলব   মিছে
বলতে পারিস  খিদের চেয়ে 
কোথায়  বড়  মহামারী আছে ?

গোপাল ভাঁড় : পিনাকি কর্মকার



বাংলাদেশের রসের রাজা, কি নাম বল তাঁর?
সমস্বরে বললে সবাই, তিনি গোপাল ভাঁড়।

নাদুসনুদুস গোপাল বাবু, টাকে ভরা মাথা ।
পেটটা যেন বটের গুঁড়ি, লম্বে খানিক নাটা।

কৃষ্ণনগর রাজার দেশ ,সেথায় তাঁর নিবাস।
রাজামশায়ের প্রিয়পাত্র, লোকটি তিনি খাস।

রসের রসিক ছিলেন তিনি, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি তাঁর।
ধূর্ত গোপাল পেয়েছিলেন, রাজার সমাদর।

কৃষ্ণচন্দ্রের ভাগ্য ভালো, সঙ্গী এমন ব্যক্তি।
একা গোপাল বাড়িয়ে দিলেন, মহারাজের শক্তি।

যতই আসুক বিপদ আপদ, না থাক পাশে কেউ।
একাই একশ গোপাল ভাঁড়, সামলে দিতেন ঢেউ।

রসের রাজা গোপাল ভাঁড়, জন্ম নাপিত ঘরে।
হাস্যরসে মন মজিয়ে, বিখ্যাত দেশজুড়ে।।

স্পষ্টবক্তা ছিলেন তিনি, ছিলেন যুক্তিবাদী।
রাজার ভুলও ধরিয়ে দিতেন, পেলেন ভাঁড় উপাধি।

তাঁকে নিয়ে হাজার গল্প, মজার এবং ভালো।
ভূবনজুড়ে মজার ছলে, ছড়ায় জ্ঞানের আলো।

ছোট্ট বেলায় সব হারিয়ে, একা হলেন ভবে।
দুঃখ ব্যাথা লুকিয়ে রেখে, হাসিয়ে গেলেন সবে।

রসের রাজা জ্ঞানের রাজা, তিনিই গোপাল ভাঁড়।
ভূবনমাঝে যতই খোঁজ, তুলনা নেইকো তাঁর।