নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

এক আঁচলা জল:- সুমিত মোদক



হরপ্পা নগর থেকে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে ঠিকই পৌঁছে যাবো তোমার কাছে ;
সেদিন কি তুমি চিনতে পারবে আমাকে  !
চিনতে পারবে কি তোমার সেই পোড়া মাটির পুতুল !
যে গুলো নিয়ে তোমার মেয়েবেলার পুতুল খেলার দিন ;
সে গুলো সযত্নে আজও রেখে দিয়েছি নিজের কাছে ;
#
সেই হরপ্পা সভ্যতার অন্তিম থেকে আজও খুঁজে চলেছি তোমাকে ;
তোমার জন্মচিহ্ন ঠিকই ছিনিয়ে দেবে ;
সে কারণে , যেখানে যেখানে জলের হাহাকার দেখা দেয়  ,
যেখানে যেখানে জলের অভাবে সভ্যতার ধ্বংসের পদধ্বনি শুনি  ,
সেখানেই ছুটে যাই কেবল তোমাকে খুঁজে পাওয়ার আশায় ;
#
সে সময় তো চোখের সামনে দেখেছি কেবলমাত্র জলের অভাবে কিভাবে ধুঁকছিলে ;
ধুঁকছিলে তোমার হরপ্পা সভ্যতা ,
আমার হরপ্পা সভ্যতা ,
আমাদের ভারতবর্ষ  ;
#
কেবল জলের অভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে বেরিয়ে পড়ে ছিলে  , শুধুমাত্র তুমি নও , আমি নই ,
আমাদের হরপ্পা সভ্যতার প্রতিটি মানুষ
মানুষের মিছিল ;
একটা সভ্যতা থেকে আরেকটা সভ্যতার দিকে
জলের সন্ধানে  , বাঁচার সন্ধানে ;
#
রাস্তার দুধরে দেখেছি হাজার হাজার মানুষের মৃতদেহ  , সভ্যতার মৃতদেহ ;
মৃত এক নগরী ....
যে যেদিকে পেরেছে হেঁটে গেছে এক ফোঁটা জলের আশায় , বাঁচার আশায় ;
#
আজও হাঁটছি আমি ;
তুমিও হাঁটছো হয়তো এক ভূখণ্ড থেকে আরেক ভূখণ্ডে , আরেক সভ্যতার দিকে ;
#
এখানে এখন শ্রাবণের বৃষ্টি ;
ঝমঝম ঝমঝম বৃষ্টি  .  ..
বৃষ্টির জলে ভিজেছি আর ভাবছি কেবল তোমার কথা , তোমাদের কথা ,
আমাদের কথা . .
#
আজ এই সকালবেলায় তোমার জন্য রেখে দিলেন  এক আঁচলা জল , আমাদের জীবন  ।।

অষ্টাদশ এই যথেষ্ট :শুভম চক্রবর্ত্তী




আমি এক অষ্টাদশের যুবক।


ভোটের কার্ড হাতে লাইনে দাড়াই,

ছাপ্পা দিয়ে পয়সা কুড়োই।

টাকা পেলে ঝান্ডা ধরি,

দেওয়াল লিখি, প্রচার করি।


দাদারা বলে-'আমাদের দাবি মানতে হবে।'

আমরা বলি-' মানতে হবে, মানতে হবে।'

কী দাবি ? কী বুঝি ছাই,

ঝান্ডা ধরি স্লোগান চালাই।


কী হবে এডুকেশনে?

এডুকেশন কি পয়সা আনে?

দেশটা কী চলছে তায়,

আমাদের কিইবা আসে যায়।


সুখের জোগাড় কিইবা কষ্ট ?

অষ্টাদশ এই যথেষ্ট।।


এরকম যদি হয় চিন্তা,

সর্বনাশের মাথায় বাড়ী।

সমাজ হবে নেতা-মন্ত্রীর,

শখে রাখা মোচ আর দাড়ি।

নির্মল ধারা:-অথৈ দেবনাথ (রিনা)



প্রকৃতি যখন,
বর্ষণের ধারায় শুদ্ধ স্নানে রত।
তুমি তখন ঘড়ে বসে, রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনছিলে।
আর আমি,
 বৃষ্টির  অবিরাম নৃত্য  দেখছিলাম।
অতপর সেই বৃৃষ্টির ধারা
আমার দু'হাতে নিয়ে,,
তোমার কাছে এসে বললাম,
 চোখদুটো বন্ধ কর।
তুমি বললে কেন?
আমি বললাম তোমায় ভিজাবো বলে,
তুমি মৃদু হেসে বললে
পাগলী,
 এটুকু বৃৃষ্টিতে কেউ ভিজে নাকী?
আমি আমার ছিটানো সেই বৃষ্টির ফোটা,
তোমার উপরে ছিটিয়ে দিলাম,,
সেই ছেটানো বৃৃষ্টির  ফোটা,
তোমার সমস্ত শরীরে পড়ল।
তুমি বললে সত্যি তো এই টুকু বৃৃষ্টি দিয়ে,
তুমি আমায় ভিজিয়ে দিলে।
আমি বললাম,
এ যে ভালবাসার স্পর্শ।
এর প্রয়োজন বেশি হয়না,
তারপর তুমি আমার হাত দুটো ধরে,,
তোমার বুকের কাছে রেখে বললে।
এর নাম বুঝি ভালোবাসা,
আর অধরে ঊষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বললে,
এই বুঝি ভালবাসার স্পর্শ।
তারপর,
তুমি আর কি যেন বলতে চেয়েছিলে?
হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল,
আমি দেখলাম,
 তুমি বলে যাকে আমি ভালোবাসি,
ও আমার স্বপ্ন।
আর তোমার ভালোবাসা যা আমায় দিয়েছিলে,
তা ছিল কল্পনা।
আর অবিরাম সেই ঝড়া বৃ্ষ্টি,
ও আমার অতৃপ্ত ভালোবাসা
যা পাইনি বলে
 আজো অবিরাম ঝড়ে পড়ছে।।


জাগো : অযান্ত্রিক



মাটি কাটতে গিয়ে পেয়ে যাচ্ছি, দেখো কত সহজেই,
হঠাৎ হারানো সে নাম, পড়তে গিয়ে না ফেরা কোনো মুখ।
পাঁকে ভরা শুকনো পুকুর কেটেছি একশ দিনের কাজেই,
কত সহজেই জিতেছি বাঁচার বাজি, জিতে যাওয়াটাই সুখ।

চালিয়েছি কোদালের পরে কোদাল,এক নয় কত বার হাজার ,
মাটির আড়াল ঠেলে বেরিয়েছে ,কেটে যাওয়া গলা ,কণ্ঠহার
কান গলার টুকরো ,বাজুবন্ধ, আর কত  চেনা জীবন ফসিল,
গলে যাওয়া চোখের কোটর, তবু উজ্জ্বল পচা চিবুকের তিল।

হোক তবে হোক আরো ,মারো কোদাল সরাও,জমা কাদা মাটি,
সামনে আসুক  বুক পেট স্তনের আদল ঠোঁটহীন দাঁত কপাটি।
তারপর সাজিয়ে হৃদয়ের লড়ঝড়ে সমাধি মন্দির ,ওগো,
অবিনশ্বর সময় নেহাতই বাঁচার ছলে বলি ,
জাগো  মা দুর্গা জাগো।

আমি ক্লাসের ফালতু ছেলে : শুভম চক্রবর্ত্তী




ছিলাম যখন ক্লাস এইট-এ,

স‍্যারের চাবুক পড়তো পিঠে।

পড়াশোনার বালাই ছাই-

হো হো টো টো ঘুরেই তাই,

কাটতো দিন হেলেদুলে

আমি ক্লাসের ফাল্তু ছেলে।


নিলাঞ্জন সেতো গুডবয়

অঙ্ক, বাংলা, ইংরেজিতে।

আমরা সবাই যাতা যাতা

ওর সঙ্গে তুলনা যোটে।

মা বোকে বলতো তখন-

'দেখো, দেখে শেখো ওর থেকে।

কিল, চড়, উঠবোস

এই সবই কি তোর ভাগ‍্যে থাকে?'

আমি বলতাম-'ভালো লাগেনা,

যাওতো এখান থেকে চলে।

নিলাঞ্জন ভালো তো কী?

যানোনা আমি ক্লাসের ফাল্তু ছেলে।



একদিন এক অঙ্ক ক্লাসে,

অংক স‍্যার বলল হেসে-

'এই যে সব ক্লাসের বাজে ছেলে

এ প্লাস বি এর স্কয়ার সূত্র বলতে পারো।'

আমি তখন চুপ

নিলাঞ্জন বলল -'এটা কি এমন বড়ো।'

আমার বেশ মনে আছে

সেদিন নিলাঞ্জন ছিল বলে,

'হুঁঃ যত সব ফাল্তু ক্লাসের ছেলে।'


এখন নিলাঞ্জন বিশাল বড়ো,

বউ নিয়ে আলাদা আছে।

মা বাবার সুখ-দুঃখ ও‌ ভালো-মন্দ

বোঝার কি তার সময় আছে।

আমি আজ ট্রেনের হকার

নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

তবু মা আমার সাথেই

শাক ভাজা ভাত আনন্দে খায়।

কী হবে পড়াশোনায়

আমি তাই ফাল্তু ছেলে।


আমি থাকবো অট্টালিকা

বাবা মায়ের চোখের জলে,

মিধাবী ও দাদারা-

এটাকেই কি শিক্ষা বলে???

হাজার হাজার বছর পর : সুমিত মোদক





সকালের আলো ফুটতে না ফুটতে
সংবাদটি সকলেই পেয়ে গেছে  ;
কেবল , পায়নি সে ....
#
সে তখনও সেই হাজার হাজার বছর পুরানো আড়বাঁশিটি নিয়ে দাঁড়িয়ে যমুনার তীরে ;
#
মৃতপ্রায় যমুনাও যেন আজ বেশ চঞ্চল ;
ধোঁয়া-ধুলায় মলিন কদম গাছ গুলো যেন
নতুন করে মেলে ধরছে ফুলের পাপড়ি
সুঘ্রাণ ;
সমগ্র বৃন্দাবন জুড়ে বেজে চলেছে কিশোরী-নূপুর ;
হাজার হাজার বছর পর সকলেই জেগে উঠেছে আজ ;
#
কেঁদে কেঁদে কেঁদে কেঁদে শুকিয়ে গেছে চোখে জল ;
তবুও সে অপেক্ষায় থাকে গভীর বিশ্বাসে  ;
একদিন না একদিন ফিরবেই তার কাছেই . . .
#
সকালের আলো ফুটতে না ফুটতে
সংবাদটি সকলেই পেয়ে গেছে ;
কেবল , পায়নি সে ....