নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

ছুঁতে না পারা : আকাশ কর্মকার



কবিতারা আজকাল তেমন আর আসে না..
চোরাস্রোতের টানে হারিয়ে যাচ্ছে আবেগ..
বৃষ্টির বিকেলে কেউ আমার কবিতা পড়ে প্রেয়সী হতে চাইবে,
সেরকম কবিতা আর এলো কই!
ধূসর একটা আস্তরণে আবৃত হয়ে পড়ছি নিজের অগোচরেই।
না এলো মেঘ, না পেলাম বৃষ্টির দেখা!
সঙ্গী শুধু কয়েকটা ভাঙা ভাঙা শব্দ।
অনুভূতি গুলো ঝাপসা, আরো ঝাপসা হচ্ছে দিনদিন।
শব্দের তীব্রতা, ক্ষিপ্রতা আজ ম্রিয়মাণ..
সাদা কাগজ গুলো হলদেটে হয়ে ঝুলে মিশছে ক্ষণেক্ষণে।
ঝিরঝিরে বৃষ্টির মাঝে এ আমার একা পথচলা..
পথগুলো জরাজীর্ণ, ক্লান্ত কলমের কালি;
আশ্রয় খুঁজেছে সে কোনো এক নিশীথে নিষিদ্ধ পল্লীতে।
আমাদের যে আর সত্যিই দেখা হয়না আজকাল!

আলো ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





ঊনচল্লিশ



               তারকেশ্বর লাইন। মালিয়া স্টেশন। ট্রেন থেকে নেমেই মনটা ভরে গেল। চারপাশ সবুজ। খোলা মাঠ। যেদিকেই তাকাই চোখ জুড়িয়ে যায়। যখন নামলাম তখন ঘড়িতে চারটে বেজে পনের। বেশ খানিকটা সময় বসে রইলাম চুপচাপ। কখনও স্টেশনটা দেখছি। কখনও দেখছি স্টেশনের চারদিক। এইসব জায়গায় এলেই একমাত্র মনে হয় সব কথা যেন বলা হয়ে গেছে। মনে হয় বোকারাই যেন কথা বলে। প্রকৃতির মতো মিতভাষী আর কে আছে ! নিঃশব্দে যেন সে কাজ করে যাচ্ছে । কথা বলতে গেলে তো ফাঁকি হয়ে যায়। আর তাছাড়া কিসের এতো কথা বলা। আমি তো নতুন কিছু বলতে পারব না। যা বলব তা যেন প্রকৃতি আগেই ছড়িয়ে রেখে দিয়েছে।
               মাঠের আল ধরে হেঁটে গেলাম। মুরগি, হাঁস, গরুর পাশ কাটিয়ে গিয়ে উঠলাম একটা প্রাইমারি স্কুলে। খুবই আন্তরিক ওখানকার মানুষজন। কবিতা পাঠ হল। অনুষ্টানের শেষে মুড়ি আর ফুলুরি। কী দারুণ তৃপ্তি করে খেলাম। এই খাওয়াটাই যদি আমার শহরে হতো তাহলে মোটেই এই আনন্দ পেতাম না।
               অনুষ্টান শেষ করে যখন স্টেশনে এসে পোঁছলাম তখন চারপাশে অন্ধকার নামছে। দূরে একটা মাঠে কিছু ছেলে দলবেঁধে ফুটবল খেলছে। ওই দলের মধ্যে আমি যেন আমাকেও দেখতে পেলাম। একটু পরেই বাড়ি ফিরব। বাড়িতে ঢোকার আগে পুকুরে নেমে হাত পা ধোব। সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই দেখব, বাবা দুয়ারে বসে পুঁথি লিখছে আর মা রান্নাচালায় বসে সন্ধের চা তৈরি করছে। সম্বিত ফিরলে দেখলাম চোখের কোলটা কখন যেন ভিজে গেছে।

জীবন মানে : প্রবীর রায়


জীবন মানে শূন্য হেথায়,জীবন মানে মৃত্যু
জীবন যখন জীবন মারে,ছোবল মারে পিত্তু
জীবন মানে কয়লা খনী,পুড়বে ধিরে ধিরে
জীবন মানে রক্ত দেখা,স্ফূর্তি পাঁজরা ঘিরে
জীবন আজ ঝলসা আগুন,মেরুদণ্ডে পচন
হাস্য রসের ঘোর পেয়ালা,মিথ্যে বাঁচার বচন
জীবন আজ মরতে শেখায়,স্বাধীনতার দিনেও
ঘৃণ্যতা আজ গর্জে ওঠে,প্রেমের নীতি বিনেও
জীবন আজ কাফন ঘরে,বেহুশ আছে কল্পে
বাঁচবে জীবন বাঁচার মতো,শূন্যতারই গল্পে।

তরঙ্গে :দেবলীনা


  

বহুদিন পর আজ আমি আকাশ দেখছি ! 
  ঘন নীলে জড়ানো মেঘলা মসলিন 
 চারদিকে থৈ থৈ মুক্তির ঘ্রাণ ,
 কিছু পুরোনো হিসেব মিলে যাওয়ার 
     ইঙ্গিতবাহী সুরতান । 

 সারা দুপুরের জল ভরা টুকরো মেঘের  জমায়েত দেখে,
      পশ্চিমের ছায়াসূর্য পাশ ফিরে শোয় - 

  সেই থেকেই , নীল ধারায়
 ব্যাকুল বাঁশির সুর বেজে যায় ,
    ইথার তরঙ্গে - 
আর ঠুং ঠাং জলতরঙ্গে আকাশ ভেসে যায় !

ধর্ম :সুদীপ্ত বিশ্বাস

 

আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে কেউ মুসলমান ছিল না।আজ থেকে সাড়ে তিন হাজার বছর আগে কেউ হিন্দু ছিল না।কিন্তু  তার আগেও বহুকাল ধরে মানুষ ছিল।মানুষের সাথে মানুষের বিবাদ বা বিভেদ যেটুকু ছিল তা ছিল খাদ্য ও বাসস্থানের। এরপর এল কিছু সুবিধাবাদী চালাক মানুষ। তারাই ধর্ম সৃষ্টি করল। পুঁতে দিল বিভেদের বীজ।এরপর মানুষ মানুষের থেকে এভাবে আলাদা হয়ে গেল যে আজ এতযুগ পেরিয়ে এসেও, এই স্মার্ট ফোনের যুগেও মানুষ এক হতে পারেনি।বরং ধর্মের বিষগাছটি শাখা প্রশাখা বিস্তার করে মানুষের রক্ত মজ্জায় ঢুকে গেছে।মানুষ হয়ে পড়েছে ধর্মান্ধ।শিক্ষা মানুষের জ্ঞান চক্ষুর উন্মোচন ঘটায় কিন্তু ধর্মের অন্ধত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে না।মানুষের জীবন, রাজনীতি, চিন্তাভাবনা সব কিছুর মধ্যেই ঢুকে পড়ে মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে সেই অতীতকালে কিছু চালাক মানুষের তৈরি ' ধর্ম '।

 ধর্ম আমাদের অন্য ধর্মের মানুষের থেকে আলাদা করে দেয়।ধর্ম সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করে।আর সম্প্রদায় থেকেই আসে সাম্প্রদায়িকতা।অনেকে মুসলমান ধর্মের লোকজনকে বিশ্ব সন্ত্রাসের জন্য দায়ী করেন।কিন্তু প্রকৃত সত্য হল সব ধর্মই সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ায়।প্রকট বা প্রচ্ছন্ন ভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দেওয়াটাই ধর্মের উদ্দেশ্য। ধর্মের প্রধান কাজই নিজের আখের গুছানো আর অন্য ধর্মের নামে কুৎসা রটানো। পৃথিবীতে এমন কোনও ধর্ম নেই যেটা বলে অন্য ধর্মগুলোও ভাল আর মঙ্গলকর।বরং সব ধর্ম এই শিক্ষা দেয়, যে সেই ধর্মই একমাত্র ভাল আর সব ধর্মই ভয়ংকর খারাপ। এভাবে মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে যত লেলিয়ে দেওয়া যায় ততই জ্বলে ওঠে সাম্প্রদায়িকতার আগুন।ধর্ম ব্যবসায়ীরা মনের আনন্দে এই আগুন জ্বালিয়ে রাখে আর সাধারণ মানুষ পোকার মত আত্মাহুতি দেয় নিজের বাড়ি,পরিবার এমনকি জন্মভূমিও।

 আমাদেরকে বলতে হয় না আমরা আগুনে বিশ্বাস করি, বা জলে বিশ্বাস করি।আগুনে বিশ্বাস করে আগুনে হাত দিলেও হাত পোড়ে, আগুনে অবিশ্বাস করে হাত দিলেও হাত পুড়ে যায়।জলে ডুবে যাওয়ার সাথে জলকে বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের কোনও সম্পর্ক নেই।সুতরাং, যা কিছুর প্রকৃত অস্তিত্ব আছে তা আমাদের বিশ্বাস অবিশ্বাসের তোয়াক্কা করে না।যার অস্তিত্ব নেই তাকে আমাদের বিশ্বাসে ভর দিয়েই বেঁচে থাকতে হয়।আমরা যদি ভূত,প্রেত, জীন, পরি, হুর,ঈশ্বর এসবে বিশ্বাস না করি, তাহলে এদের কোনও অস্তিত্বই থাকে না আর।আর তাই আমরা 'ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না' বললেই ধর্ম ব্যবসায়ীরা রে রে করে তেড়ে আসে।আমাদের অন্ধত্বই তাদের ব্যবসার প্রধান মূলধন। মানুষের মধ্যে যত বিদ্যা বুদ্ধি ও বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটে ততই অন্ধকার দূরে সরে যায়।অন্ধবিশ্বাস যত দূরে সরে যায়,প্রকৃত সত্য তত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। প্রকৃত শিক্ষা আমাদেরকে অন্ধবিশ্বাস ত্যাগ করে যুক্তিবাদী হতে অনুপ্রেরণা দেয়।

ছিলো না সায় : বিকাশ দাস



কবিতা আগে কোনদিন পড়িনি।
কবিতার সরোবরে  নাইতে এলে নন্দিনী
পুরুষের চোখ কতোটা ডুবলে জানবে,  লজ্জার স্বচ্ছতায়
নারীর সম্মতি। দৃষ্টির সায়। বুঝিনি। 
তুমি বয়স ছুঁয়ে লিখেছো কবিতা     ভালোবেসে নারীর স্বচ্ছতা 
আঙুলের স্পর্শের দাগে অনেক মেয়েলি শব্দ হয়েছিলো ধর্ষিতা  
মেয়েদের বুক ভারি হলেই যে সবাই নারী, জানি জানতে সে কথা। 
লজ্জার লাবণ্যতা 
অন্তর্বাসের পিঠের সুতো আগলা না করে।

তবু আধুনিক সভ্যতা 
কাঁখের লাজুক নগ্নভাঁজ শরীরের যুবতী কারু কাজ
স্বচ্ছতার আকর্ষণে ভেতরের আকর্ষী চেখে দেখার প্রবণতা  
দূর থেকে দু’চোখে মাখলে ধিক্কারে বলেছে এতো অসভ্যতা!  

কিছুটা বাজলো ঠোঁটের শিসে 
কিছুটা জিভ  খোয়ালো  বিষে  
কতোটা লিপ্সা কোন দেখার দর্শন,  বলবে যৌনতার ধর্ষণ? 
ফুলের তোড়ায় জড়িয়ে সৌজন্যতার ভাণ  
সুবিধাবাদিরা, নারী  খুবলে চোষার আনচান 
আছে, থাকবে যতোদিন নারী পুরুষ অসমান। 

আদালত আইন পড়বে আইন মেনে 
কথার ব্যকারণ পোশাকে আশাকে টেনে 
কতোটা স্বচ্ছতার দায়,  দৃষ্টির স্নান জেনেছে মানবকোষ অভিধান?