নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সোনার বাংলা দেনার দায়ে অনোজ ব্যানার্জী


  ‎

 আমার বাংলা মা,,সোনার বাংলা মা,,আমি তোকে  কত ভালোবাসি।
 ‎তোর সর্বসুখে,, আমার মুখে, আনন্দেতে
 ‎ফোটে  আলো,হাসি।।
 ‎ ‎তোর সকল দুঃখে,আমার বুকে, চোখ ফেটে আসে জল।
 ‎অভাগিনী মা,দুঃখীনি মা,কেন তোর আজি  আঁখি ছলছল??
 ‎
 ‎তোর সন্তানের রক্ত ঝরে,,পথেঘাটে,
রাজপথে, খালেবিলে।
 ‎কান্নার রোলে,ভিজে আকাশেবাতাসে , ওড়ে ছাই চিতাঝিলে।।
 ‎ ‎সোনার বাংলায়, কোথায় সোনা? শুধু দানবের আনাগোনা,,
 ‎সোনার বরণ যে,পুড়ছে আগুনে,,বাঁচাবে কে?? নেই জানা।
 ‎
 ‎তোর সম্পদ খাচ্ছে লুটেপুটে,  ‎মীরজাফর
 ‎জোচ্চরের দল।
 ‎তোর সাজানো বাগান,হলোযে শ্মশান  , ভূতের বেড়েছে বল।।
 ‎মানুষেরা আজ, জীবন্ত লাশ, লাশ হয়ে আছে বেঁচে।
 ‎ভূতেদের ফাঁদে সাধুজনে কাঁদে,,ডাকিনী
 ‎যোগিনী হাঁচে।
 ‎
 ‎ডাইনীরা আজ ডাইনিং হলে,শ্যাম্পেন পানে মগ্ন।
 ‎নাচে  হাসে গায় ক্যাবারে বারে,,পোশাকেতে অর্ধনগ্ন।।
 ‎ ‎সোনার বাংলা দেনার দায়ে,কেন, কেন জর্জরিত আজ?
 ‎ভাতভাত করে বেড়ায় কেঁদেকেঁদে কেন  ভুখা পল্লীসমাজ।??
 ‎
 ‎
 ‎দেশমাকে ভালবেসে সেদিন,দিয়েছিলেন যারা নিজের প্রাণ,,
 ‎স্বাধীনতার ইতিহাসে তারা  সবাই কি পেয়েছেন স্থান?
 ‎
 ‎মহামানবের স্নেহ, আশীর্বাদের বৃষ্টি যে আজো  ঝরে।
 ‎সেই আশীষে,সবুজ পাতায় ফুলফল আজো ধরে।।
 ‎জাতি,ধর্ম নিয়ে কেন মাতামাতি, কেন কোন্দল ঘরেঘরে?
 ‎মানুষে মানুষে কেন ভেদাভেদ এত, সোনার বাংলার তীরে??
 ‎.......................
 ‎ ‎নেতারা এখন আপন স্বার্থে,,পরের ঘরেতে লাগায় আগুন।
 ‎বিরোধীদের গুণ্ডা দিয়ে, হাসতে হাসতে করায় খুন।।
 ‎
 ‎এ কোন বাংলা দেখছি মাগো,,উষার লগ্নেই অন্ধকার!!
 ‎ ‎হায়নারা ওই অট্ট-হাসে,,কেন আয়না ভাঙে? কেন,বন্ধদ্বার।।
 ‎ ‎সমাজসেবায় কাদের সেবা? রাজনীতিতে কিসের গীতি?
 ‎জনতা আজ পথেঘাটে, পাচ্ছে কেবল বারুদ বুলেট ভীতি।।
 ‎
 ‎সোনার বাংলায় হ্যাংলারা আজ, দিব্যি স্ফূর্তি করে স্বর্গাসনে।
 এখনো মোমবাতির মিছিল করে,প্রতিবাদী বিদ্বজনে।।
 ‎*******-******---***--************
 ‎কপিরাইট © অনোজ ব্যানার্জী।লাভপুর।বীরভূম। ভারত।
 ‎*-***************-** R******
 ‎
 ‎
 ‎
 ‎
 ‎
 ‎
 ‎

ডায়েরির পাতা থেকে,, পায়েল ব্যানার্জি



আজ আমার জন্মদিন।সকালবেলা ছেলে একটা কেক এনেছিলো,সেটা কাটলাম।দুপুরে মিমি (ছেলের বউ) পায়েস বানিয়েছিল,আর আমার ছোট নাতিটা একটা পেন দিয়েছে আমাকে।ডায়েরি লিখতে ভালোবাসি জানে।মাঝে মাঝে এসে আমাকে বলে
"ও ঠাম্মি তুমি যখন দাদুর কাছে চলে যাবে আমায় তোমার ঐ নোটবুকটা দিয়ে যেও।আর তোমার লেখা গল্প কবিতার ডায়েরিটা।আমি তোমার লেখা গুলো ছাপাব।তোমার প্রচুর নাম হবে।"
আমি শুধু হাসি আর বলি হ্যাঁ দিয়ে যাবো দাদুভাই।খুব পাকা পাকা কথা।ওকে নিয়েই সারাদিন কাটে আমার।এখন ওই আমার কর্তা মশাই।

আজ আমি সত্তর বছরের প্রৌঢ়া।কোথা দিয়ে পলকে জীবন কেটে গেল বুঝতেও পারলাম না।পড়াশোনায় ছোটো থেকেই ভালো ছিলাম।গ্র্যাজুয়েট হবার আগে থেকেই ছেলে দেখা শুরু হয়ে গেলো।তারপরেই বিয়ে।বাবা- মা কে বলেছিলাম আরো পড়তে চাই,চাকরি করতে চাই তারপর বিয়ে করবো।বাবা বলেছিলেন না ভালো ছেলে পেয়েছি করে নে মা।আমাদের অবর্তমানে কে দেখবে তোকে?মা বলতো বিয়ের পর পড়াশোনা করিস শ্বশুর বাড়ি গিয়ে। শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে পড়লাম বড় সংসার।তার উপর আবার বাড়ির বড় বউ ছিলাম সংসার সামলাতে সামলাতে পড়াশোনাটা ধোঁয়াশা হয়ে গেল।পুরো সংসারের সমস্ত দায়িত্ব আমার কাঁধে থাকলেও স্বাধীনতা কিছুই ছিল না আমার।বাড়িতে আমি বৌমা,জা,কাকী,মামী বেশি ছিলাম রঞ্জিতের (আমার বর)বউ কম ছিলাম।সামান্য রঞ্জিতের পাশে বসতেও পারতাম না কে কি ভাববে এই ভেবে।দিনের শেষে বিছানায় দুটো শরীর চাহিদা বসতো এক হতো।তারপরেই যে যার মতো সারাদিনের ক্লান্তি মেটাতে এপাস ওপাশ।মন দুটো যেন কর্পূরের মতো উবে যেতো।
                              তারপর বউ,বৌমা সমস্ত সম্পর্ক ফেলে মা হলাম।নিজের দায়িত্ব কর্তব্য সব পালন করে বাচ্চাকে মানুষ করতে করতে কেটে গেলো সারাটা জীবন।নিজের শখ বলতে শুধু ছেলে কে কি করে বড় করবো মানুষ করবো।নিজের লেখার শখ ছিল খুব।সেটা আর চরিতার্থ হয়নি।আর তখন তো এখনকার মতো এত মুঠোফোনের ব্যবহার ছিল না।যে তার মধ্যে দিয়ে বিশ্বের দরবারে নিজেকে পৌঁছে দিতে পারবো।দায়দায়িত্ব আমার থাকলেও বাচ্চার কোনো ব্যাপারে ডিসিশন নেওয়ায় অধিকার আমায় দেওয়া হতো না কোনদিন,সব রঞ্জিত নিত।কোনোদিন আমিও প্রশ্ন তুলিনি নিজের অধিকার প্রসঙ্গে।ভেবেছিলাম ও তো বাবা যা করবে ভালোই হবে।দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলো ছেলে,বিদেশ গেলো পড়তে।নিজের ইচ্ছায় বিয়ে।ছেলের বিয়ে দিয়ে ভেবেছিলাম রঞ্জিতের সাথে কাটাবো।ব্যাস ছেড়ে চলে গেলো আমাকে।ছেলে বউয়ের হাতে ফেলে রেখে।'আমাদের দুজনের'আর সময় কাটানো হলো না কোনোদিনই।পুরোপুরি ভাবে ছেলের ওপর নির্ভর করে দিন কাটাতে হয় এখন।না ছেলে বউ আমার খুবই ভালো তাদের নিয়ে অভিযোগ কিছুই নেই আমার।সারাদিন ছেলে বউ চাকরিতে বেরিয়ে গেলে নাতির সাথে ভালোই সময় কাটে আমার।ওই সব মুঠোফোনের দরকার ও হয়নি,আর ব্যবহারটাও ও ঠিক জানিনা ওই সব স্পর্শকাতর ফোনের।কিন্তু,তবুও দিনের শেষে কোথাও যেনো আমি একা।কিছু,টেলিভিশন সিরিয়াল আর আমি সন্ধ্যে থেকে একসাথে কাটাই।মাঝে মাঝে এই নীল রঙের ডায়েরিটার সাথে নিজের রাগ,দুঃখ,আবেগ,আক্ষেপ ভাগ করেনি।ছেলে বউ নিজের মতো সময় কাটায়, বাইরে ঘুরতে যায় ,সময় কাটায় নাতিও যায়,সারা বাড়িতে আমি একা।না,তারা তো তাদের মতো সময় কাটাবেই,সেই নিয়ে আক্ষেপ নেই আমার।আমি যা পাইনি,রঞ্জিতের সাথে সময় কাটাতে ,তারা তাই করুক আমি চাই।তারা আমাকেও নিয়ে যেতে চায় সাথে করে।কিন্তু,এখন যে আমি শরীরের অধীনতা শিকার করেছি।আমার শরীর আমার সমস্ত স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।এখন সারা শরীর শুধু ব্যাথার অধীনে।ভালো করে নড়তেই পারিনা।এবার গেলেই হয় সব ছেড়ে।কিন্তু, মৃত্যু যতো দিন না চাইবে আমায় নেবে না।সেখানেও আমার স্বাধীনতা নেই।মৃত্যুর ওপর তো কারুর হাত নেই।সে নিজে বড় স্বেচ্ছাচারী।বড় রাগ হয় মহাভারতের  ভীষ্মের ওপর যদি পারতাম অমন স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করতে।

আসল কিছু মেয়েদের সারাটা জীবন শুধু পরের অধীনতাতেই কেটে যায়।বিয়ের আগে ভাবি স্বাধীন আছি।কিন্তু,বাড়ি থেকে বেরোলেই সময় বেঁধে দেওয়া হয়,মনে করিয়ে দেওয়া হয় আমরা মেয়ে। বাড়ির বাইরে বিপদ নাকি পদে পদে!সন্ধ্যের পর বাড়ির বাইরে মানেই হাজার সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়।এখন অবশ্য সময় বদলেছে।তবুও কাগজের পাতায় যা পড়ি তাতে মনে হয় না মেয়েরা স্বাধীনতা পেয়েছে।আরও বেশি পরাধীন হয়েছে হয়তো।বিয়ের পর স্বামী সংসারের অধীনে থাকতে হয়।তারপর জীবনের কোন এক মোড়ে এসে বাচ্চাদের অধীনে  আসতে হয় ইচ্ছা অনিচ্ছাকৃত ভাবে।এই সমস্ত বাধা কাটাতে না কাটাতে 'রোগ 'হানা দেয় শরীর জুড়ে।আর তার কাছে মৃত্যু কাল অবধি মাথানত করে থাকতে হয়।
আমার মতো অনেকেই হয়তো এই অবস্থায় আছে।এই ভাবেই সাদরে গ্রহণ করে চলেছে জীবনটাকে।নিজের আক্ষেপ গুলো দূরে সরিয়ে রেখে,জীবনের এই শেষ বয়সে উপনীত হয়ে এখন শুধুই বলতে হয় যেভাবেই আছি 'ভালো আছি'।ছেলে,বৌমা,নাতি নিয়ে ভরা সংসারে বেশ কাটছে দিন গুলো।আজকে আরও একধাপ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলতে চাই এবার মৃত্যু চাই স্বাধীন হতে চাই সারা জীবনের মতো।
          রমলা।

                       

পাঁচ মিনিট,,,, শুভঙ্কর রাহা




বিয়ের দিন রীতিমত বর উঠে বসলো ঘরের চালে। শিউলি তার বরের উদ্দেশ্যে বলল-
"চালে থেইকে নামো তুমি, নিড়ানি খুঁইটে খাইয়াইবো আমি"।

বিয়ের দিনের কথা অনুযায়ী জমিতে নিড়ানি দিয়ে না হলেও ওই পাশের পাড়ার নকুল দত্ত মশাইয়ের বাড়িতে কাজ করে সংসারের কিছুটা সাহায্য করতো শিউলি রাজোয়ার। স্বামী রমানাথ তখনও আড়পেটে।
রাজমিস্ত্রি দলের প্রধান সেদিন বলল- ' রমা তুর তো দেখছি হাত ভালোই পাকা হইছে রে। ত রাজমিস্ত্রী হবি?'

সে দিন থেকে রমা রাজমিস্ত্রি। বউকে শুনিয়ে রেখেছে, ' বুঝলি শিউলি তুই আর কামিন খাটবিক লাই। উ দত্ত গিন্নি কে বইলে দিবি অন্য কামিন খুঁইজে লিতে।'
তারপর সেদিন তিনতলায় কাজ চলছিল গ্রামের হাইস্কুলের। সদ্য ডি. এম সাহেব এসে জমি ঠিক করে গেছিলেন। সুখ আর দীর্ঘস্থায়ী হলো না। ভাড়ার বাঁশ খুলে পড়লো রমানাথের উপর। দুটো বড় পেরেকও ঢুকে গেল, একটা মাথায় আর একটা ডান কাঁধে।
ডাক্তারবাবু বললেন,' পাক্কা ছয় মাস বিশ্রাম'।

দু মাস গেল, তিন মাস গেল। ঘরে আর টাকা নেই। ডাক্তার, ওষুধে যে অনেক টাকা গেল। পেরেকের ক্ষতগুলো সেড়ে গেলেও ব্যাথা টা এখনো বেশ আছে। এদিকে বাজারে এখন থেকেই ধার বাড়ছে।
সুভাষ মুদি তো সেদিন বলেই উঠলো, ' চালের দাম টা কিন্তু বাকি আছে। সঙ্গে দুটো নুনের দাম পাই। '

শিউলির অনেক চাপ। একদিকে টাকা নেই। অন্য দিকে স্বামীর কামিন খাটার উপর নিষেধাজ্ঞা। যাকে বলে ধর্ম সংকট।

-' শিউলি রে। তুকে আমি উনেক কষ্ট দিয়ে ফ্যালছি রে। আমি যদি একটু ওপর পানে তাকাতাম তাইলে আর আমার ওপরে পইড়তো না। '
-' ছাড়ো ওইসব। তুমার তো ওষুধ ফুরাই যাইচ্ছে। এই টা তো কাল সকাল অবধি চইলবে'।

-'আর খাবো না রে। আর তো টাকাও নেই মুনে হয়।'

শিউলি রান্না ঘরে উঠে গিয়ে চোখের জল মোছে। তারপর ফিরে এসে বলে-
' তুমি ৫ মিনিট বসো। আমি আইসছি। '

ছুট্টে গেল শিউলি দত্ত গিন্নির কাছে। দত্ত গিন্নির উঠোন ঝেঁটিয়ে, উনুন নিকিয়ে, বাসন মেজে অগ্রিম ৫০০ টাকা নিয়ে ওষুধ কিনে বাড়ি এলো শিউলি। দত্ত গিন্নি কে কথা দিয়ে এলো কাজ না ছাড়বার।
এতক্ষণে প্রায় ঘন্টা দেড়েক হয়ে গেছে।

- রমা বিছানায় শুয়ে বলে উঠল সেই কখন ৫ মিনিট বলে বেড়িয়েছিস। এই তোর সেই ৫ মিনিট? '


সুপারস্টার(প্রথম পর্ব) : সুকান্ত মন্ডল





বৈশাখ মাস ।  প্রকৃতির প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। চারিদিকে নির্জীবতার ছায়া । মাঠ -ঘাট চৌচির আর শুনশান । বিবর্ণ প্রকৃতিরানী। দুপুরের ঝলসানো প্রখর রোদ্রে , তুহিনের হাজার স্বপ্ন ও বিবর্ণতার রূপ পায়। নীলকণ্ঠপুরের তীব্র গরম ও বুঝতে পারছিল , সে খুবই কষ্টদায়ক ও একঘেয়েমি । কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না।  সময় হলেই একটা সবুজ পাতাতেও তার চিহ্ন থাকবে না। এখন তার সাম্রাজ্য,  তার রাজত্ব  । দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে জমিয়ে যখন একটা নীরব ঘুম দিতে যাচ্ছিল, হঠাৎ তুহিনের বাড়ি থেকে চিৎকার শুনতে পেয়ে দেখল , তুহিনের বাবা  দরদরে ঘাম গায়ে রাগান্বিত অবস্হায় চোখ বড়ো বড়ো করে জুতো দিয়ে পিটছে ক্লাস ইলেভেনে পড়া ছেলেটিকে।                                আর পুরো নীলকণ্ঠপুর গ্রাম কাঁপিয়ে তুহিনকে গালিগালাজ  করছে - "এতো রোদ্রে তো পরিশ্রম করতে হয়নি।  মাথা ফাটাতে হয়নি। ভালোবেসে বাড়িতে থাকতে বলেছি। মাঠে ধান কাটতে নিয়ে যায়নি এক গ্লাস জল চেয়েছি এই যাচ্ছি বলে ,এক ঘন্টা কাটিয়ে দিল !  এদিকে বাবা- মা রোদে জ্বলে -পুড়ে মরছে দুটো ভাত জোগাড়ের তাগিদে,  আর সে জানোয়ার সিনেমা দেখায় মগ্ন। সিনেমার সুপারস্টার হবে !  ছাই আর কচু হবে ।    আরে ! সুপারস্টার তো তাদেরই বলে : বাস্তবে যারা বাবা -মাকে সাহায্য, সহানুভূতি  আর স্নেহ করে । পড়াশোনা তো গাছে উঠে গেছে কবেই। বাপের হোটেলে গোগ্রাসে দুটি গিলছে আর খালি টিভি আর টিভি।  এরকম ছেলে ঘরে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো, দূর হয়ে যায় না কেন "

  অন্যদিকে প্রতিপক্ষ তুহিন ও মারতে যাচ্ছিল বাবাকে ।  কোনোরকম তুহিনের মা দুজনকে সামলে নিয়েছিল। তুহিনের মেজাজি গলা তুহিনের বাবার মেজাজি গলার থেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিল  , 'কি ভেবোছো টা কি ? তোমার টাকায় খাচ্ছি বলে দোষারোপ  করছো !'


(চলবে...)

দশচক্র (তিন) : সিদ্ধার্থ সিংহ








ফোন বাজলেই সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে রিসিভার তোলে ঋজু। ওর ছেলে বাবি ক্লাস ফোরে পড়ে। ক’দিন হল ছেলেকে নিয়ে ও আর স্কুলে যাচ্ছে না। বউকে পাঠাচ্ছে। 
সপ্তাহখানেকও হয়নি ওর অফিসে একটা ফোন এসেছিল। ও-ই ধরেছিল। ফোনটা একটি মেয়ের। সে লেখালিখি করতে চায়। তাদের কাগজে লেখা দিতে হলে কী ভাবে পাঠাতে হবে, কাকে পাঠাতে হবে, মনোনীত হল কি না, ক’দিনের মধ্যে জানা যাবে, এই সব টুকিটাকি কথা সে জানতে চাইছিল। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ঋজুই দিচ্ছিল। হঠাত্‌ মেয়েটি ওর ফোন নম্বর চায়। ও বলে, এই নম্বরেই করবেন। সন্ধের দিকে করলে আমাকে পেয়ে যাবেন। কিন্তু মেয়েটি নাছোড়বান্দা। সে ওর অফিসের নয়, বাড়ির নম্বর চায়। ঋজু দেখেছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা দূরে ও যখন কোথাও যায়, কবি নয়, খবরের কাগজে কাজ করে শোনার পরেই অনেকে ওর কাছ থেকে টেলিফোন নম্বর নেয়। কিন্তু কস্মিনকালেও কেউ ফোন করে না। এই মেয়েটিও সে রকমই একজন ভেবে, ও ওর বাড়ির টেলিফোন নম্বরটা দিয়ে দিয়েছিল। আর তখনই ও জেনেছিল, মেয়েটির নাম শালিনী। তার পর থেকে দু’-একদিন ছাড়া ছাড়াই মেয়েটা ফোন করে। 
গলার স্বর খুব নরম। বাচ্চা বাচ্চা। মনে হয় ইলেভেন-টুয়েলভে পড়ে। গত পরশু যখন ফোন করেছিল, ঋজু ঘুমোচ্ছিল। ধড়মড় করে উঠে ফোন ধরতেই ও প্রান্ত থেকে শালিনী বলেছিল, কী মশাই ঘুমোচ্ছেন নাকি? 
— এই উঠলাম। হ্যাঁ, বলো। এত সকালে? 
— না, এমনিই করলাম। কোনও দরকার নেই। আসলে ভাইয়ের সঙ্গে দুধ আনতে বেরিয়েছি তো, দুধের ডিপোর পাশে নতুন একটা এসটিডি বুথ হয়েছে। দেখেই মনে হল আপনাকে একটা ফোন করি। তাই করলাম। কিছু মনে করলেন না তো? 
কেউ যে তাকে এমনি এমনি ফোন করতে পারে, এই ফোনটা না এলে সে জানতেই পারত না। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে খুব খুশি হয়েছিল সে। আর সেই খুশিতেই সারাটা দিন তার খুব ভাল কেটেছিল। 
লোকে বলে, কারও কারও মুখ দেখলে নাকি দিন খারাপ যায়। আবার কারও কারও মুখ দেখলে দিন ভাল যায়। কারও মুখ নয়, তার দিন ভাল করে দিয়েছিল শালিনীর ফোন। তাই তার পর দিন, মানে গত কাল একটু সকাল সকাল উঠে সে তার ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিল। যদি আজও করে! কিন্তু না। সাড়ে সাতটা-আটটা-সাড়ে আটটা বেজে গেল। সে ফোন করল না। এমনকী সারা দিনে অফিসেও একটা না। রাতে শোবার সময় ভেবেছিল, কাল সকালে নিশ্চয়ই ও ফোন করবে। তাই সকাল থেকে যত বার ফোন বেজে উঠেছে, ও প্রায় লাফিয়ে গিয়ে ফোন ধরেছে। এবং দেখেছে, সবই এর ওর তার ফোন। কিন্তু যার ফোনের জন্য ও অপেক্ষা করে আছে, তার কোনও পাত্তা নেই। ঘড়িতে তখন ন’টা বেজে গেছে। নাঃ, ও আজ আর ফোন করবে না! ঋজু স্নানে ঢুকে পড়ল। 
বেরিয়ে শোনে, একটা ফোন এসেছিল। 
— কার? 
ওর মা বললেন, রিনা গিরি বলে একটা মেয়ে ফোন করেছিল। 
— ও, রিনা গিরি! মানে আশিসের বউ। কী বলল? 
— কিছু বলেনি। শুধু বলল, কখন পাওয়া যাবে? তা আমি বললাম, আধ ঘণ্টা পরে করুন। ও স্নানে গেছে। 
ঋজু একটু বেলা করেই ব্রেক ফাস্ট করে। দুধ-মুড়ি খেতে খেতে ও শুনল, ফোন বাজছে। ফোনের কাছে মা। তাই ও আর উঠল না। এটা নিশ্চয়ই শালিনীর ফোন না! 
ফোন ধরেই মা বললেন, ঋজু, তোর ফোন। 
— আমার! এত দেরিতে ফোন করল! পড়ি কি মড়ি করে ছুটে গেল ও— হ্যাঁ, ঋজু বলছি। 
ও প্রান্ত থেকে একটা কোকিল কণ্ঠি ভেসে এল— আমি কণিকা রায় বলছি। চিনতে পারছেন? কাল আমরা একসঙ্গে দাঁতনে গিয়েছিলাম... 
— আরে, হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন। কাল ফিরতে কোনও অসুবিধে হয়নি তো? কেমন আছেন? এখন কোথায়? 
— আমি তো অফিসে। 
— এত সকালে? 
— সকাল কোথায়? পৌনে দশটা বাজতে চলল... 
— আপনাদের ক’টা থেকে? 
— আমাদের তো সাড়ে ন’টার মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়। আমরা ডাইরেক্ট সিজিএমের সঙ্গে কাজ করি তো... 
— তাই নাকি? 
— আমরা তো আর আপনাদের মতো সাংবাদিক নই যে, বিকেল বেলায় অফিস। 
— বিকেলে শুরু হয় ঠিকই, কিন্তু থাকতে হয় ক’টা পর্যন্ত, সেটা দেখুন। আপনারা তখন ঘুমোন। 
— অনেকে হয়তো ঘুমোয়, কিন্তু সবাই ঘুমোয় না। খুব ধীরে ধীরে কেটে কেটে কথা ক’টা বলল কণিকা। 
— কেন? আপনি কি জেগে থাকেন? 
— একদিন বেশি রাতে ফোন করে দেখবেন। 
— হ্যাঁ, আপনাকে বেশি রাতে ফোন করি, আর আপনার কর্তা সন্দেহ করা শুরু করুক, এত রাতে আমার বউকে ফোন করছে কে! 
— সন্দেহ করবে না। 
— কনফার্ম? 
— জানলে তো করবে। 
— মানে? 
— উনি অন্য ঘরে শোন। 
— ও। বলেই, একটু থেমে, অন্য প্রসঙ্গে যাবার জন্যই ঋজু বলল, একটু আগেই রিনা ফোন করেছিল। 
— কখন? 
— এই তো, মিনিট দশ-বারো আগে। 
— রিনা নয়, আমিই করেছিলাম। 
— আপনি? মা যে বললেন, রিনা গিরি... 
— হ্যাঁ, আমি রিনার নামই বলেছিলাম। আসলে আপনার বাড়ির কে কী রকম, আমি জানি না তো। কে আবার কী ভাববে, তাই রিনার নাম বলেছিলাম। এক দিন চলে আসুন না আমাদের বাড়িতে। 
— ওরেব্বাবা, আপনাদের বাড়ি তো সেই তেপান্তরের মাঠে। যেতে আসতেই সারা দিন লেগে যাবে। 
— মোটেও তা নয়। 
— আমি তো দু’-এক বার এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে গেছি, জানি। 
— লাস্ট কবে এসেছেন? 
— বছর পনেরো আগে। 
— প... নে... রো...  ব... ছ... র... আগে! এখন এক বার এসে দেখুন... 
— আসলে সল্টলেক শুনলেই না গায়ে জ্বর আসে। লোকে যে কী ভাবে ওখান থেকে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে, কে জানে! 
— ঠিক আছে, আপনাকে আমাদের বাড়িতে আসতে হবে না। আপনি একদিন আপনার সময় সুযোগ মতো আমাদের অফিসে আসুন। 
— আপনার অফিসে যাবার জন্য আমার কোনও সময় সুযোগ লাগবে না। রোজই যেতে পারি। আমাদের অফিস থেকে টেলিফোন ভবন তো একটুখানি। 
— তা হলে আজকেই চলে আসুন। 
— আজকে! 
— হ্যাঁ, আজকে। 
— ঠিক আছে, দেখছি। 
— দেখছি না। চলে আসুন। নীচে এসে আমাকে একটা ফোন করে নেবেন। 
— আপনার নম্বরটা যেন কত? 
কণিকা শুধু অফিসের নম্বরই নয়, তার মোবাইল নম্বর, এমনকী বাড়ির ফোন নম্বরটাও দিয়ে দিল। ঝটঝট করে লিখে নিতে নিতে ঋজু বলল, বাড়ির নম্বরটা পেয়ে ভালই হল। রাতের দিকে অনেক সময় কাজের চাপ কম থাকে। তখন কথা বলা যাবে। আপনি ক’টা অবধি জেগে থাকেন? 
— করুন না। যখন খুশি করতে পারেন। 
— রাত বারোটায়? 
— বারোটা কেন? একটা, দুটো, তিনটে... যখন খুশি। 
— ফোন ধরবেন তো? 
— করেই দেখুন না... 
সে দিন সকালে শালিনী ফোন করার পর সারাটা দিন অদ্ভুত এক আনন্দে সারা শরীর যেমন চনমন করে উঠেছিল, আজও তেমনই এক আনন্দে ঋজুর মনপ্রাণ খুশিতে ভরে উঠল। 

তিন 

কয়েক সপ্তাহ আগে বিধান দত্তের সঙ্গে সুন্দরবন গিয়েছিল ঋজু। বিধানদা কবিতা লেখেন। গল্প লেখেন। ফিচার লেখেন। বিখ্যাত লেখকের উত্তরসূরি.....


(চলবে )

রুহীর পুতুল : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

    







                             ।। ৩ ।।   





            রুহী চোখ মেলে সিটে উঠে বসে মা কে সামনে না দেখতে পেয়ে চমকে উঠে আসে পাশে চাইল । তারপর দেখল মা তো ট্রেনের দরজার দিকে যাচ্ছে । সে তাড়াতাড়ি করে নেমে সেই দিকে চলতে গিয়ে হঠাৎ চমকে উঠল । বা পাশের একটা খালি সীটে সেই বড় বারবি ডল পুতুল টা শুয়ে ! তবে মাথাটা এখন আবার ন্যাড়া । বোধ হয় চুল ছিল এককালে , আজ আর নেই । তা হোক , এটা কে ফেলে গেল দেখতে হবে । সে এগিয়ে গিয়ে দু হাতে পরম যত্নে তুলে নিল পুতুলটাকে । রুহী কে অবাক করে দিয়ে জীবন্ত মানুষের মত পুতুল টা চোখ মিটমিটাল মনে হল তার ! মুখ টা হাসি হাসি । অঃ - অঃ - অঃ করে একটা খুব নীচু স্বরের আওয়াজও বুঝি শুনতে পেল সে । আশ্চর্য ! এ সত্যি জাদুর পুতুল !!  
-- রুহী ?   
মায়ের কড়া গলার ডাকে সে তড়বড় করে ট্রেনের দরজার দিকে এগিয়ে গেল পুতুলটাকে কোলে নিয়ে । তার স্কুলের ব্যাগ মার হাতে । ওর হাতের পুতুল টা দেখে মায়ের সে কী রাগ ! কার না কার ! এখন যখন তখন সন্ত্রাসবাদীরা বাচ্চাদের খেলনাতেও বোমা ফিট করে দিচ্ছে , তখন কেন সে ওটা নিল ? মার প্রশ্নে কান্না এল রুহীর । সামনে দাঁড়ানো পুলিশ কাকু তার দিকে চেয়ে মিষ্টি কোরে হেসে বললে ,   
-- দেখি দেখি তোমার পুতুল টা । বাঃ বেশ তো ! পুলিশ কাকু পুতুল টা হাতে নিয়েই প্রথমে ভাল কোরে দেখে নিল সেটায় কোন বোমা টোমা আছে কিনা । তারপর জনে জনে জিজ্ঞাসা করে পুতুলের মালিক না পেয়ে রুহীর হাতেই ফিরিয়ে দিল । মা করুণ চোখে পুলিশ কাকুর দিকে চেয়ে বললে ,   
-- দেখুন দাদা ...     
তাকে শেষ করতে না দিয়ে পুলিশ কাকু বললে ,    
-- আরে না না দিদিমণি , ও আপনার মেয়েই নিয়ে যাক । কেউ যখন পাওয়া গেলনা । এতটুকু মেয়ে আপনার , দেখছেন না কত খুশী দেখাচ্ছে ওকে ।   
মা বললে ,   
-- পুলিশ কাকুকে ধন্যবাদ বল রুহী ।   
-- ধন্যবাদ কাকু ।    
পুলিশ কাকু তাকে আদর করেচলে যেতেই মা কড়া চোখে চেয়ে তাকে বললে ,   
-- বাড়ি চলো ।    
তারা দুজনে বাইরে বেরোবার গেটের দিকে রওনা হয়ে পড়ল ।   
                                                                            [ চলবে ]