নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

দশ চক্র ( দুই) : সিদ্ধার্থ সিংহ







হাওড়া স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সামনে ঋজু আর পরমার্থ অপেক্ষা করছিল। ওরা একটু আগেই এসেছে। গত কাল রাত সাড়ে বারোটায় অফিস থেকে বেরিয়ে নীচে যখন ড্রপ কারের জন্য অপেক্ষা করছে ঋজু, তখন হঠাত্‌ই পরমার্থ ওর কাছে এসে বলল, এই রে, আশিস তোমাকে বলতে বলেছিল। একদম ভুলে গেছি। কাল দাঁতনে একটা উত্‌সব আছে। সেখানে কবিতা পাঠেরও ব্যবস্থা আছে। ও তোমাকে বারবার করে যেতে বলেছে। তুমি যাবে?
ঋজু কী ভাবছিল। ও কিছু বলছে না দেখে পরমার্থ ফের বলল, কাল তো তোমার অফ ডে। চলো না।
— কখন?
— কাল সকালে। সাতটার সময়। হাওড়া থেকে।

হাওড়া থেকে ঋজুর বাড়ি খুব একটা দূরে নয়, চেতলায়। ওখান থেকে একটাই বাস। সতেরো নম্বর। কখন আসে কোনও ঠিক নেই। তাই হাতে একটু সময় নিয়েই ও বেরিয়েছিল। কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার আগেই দেখে বাস আসছে। ফলে সাতটা নয়, তার অনেক আগেই ও চলে এসেছে। এসে দেখে, অফিস থেকে অত রাতে বাড়ি গিয়েও এই সাতসকালেই সেই বিরাটি থেকে পরমার্থও এসে হাজির। ঘড়িতে তখনও সাতটা বাজতে মিনিট দশেক বাকি।
ও সামনে আসতেই পরমার্থ বলল, চা খাবে?
— ওরা আসুক না। একসঙ্গে খাব। ট্রেন ক’টায়?
— তা তো জানি না। আশিস তো বলল, সাতটার সময় এখানে দাঁড়াতে।
— এখানেই বলেছে তো?
— হ্যাঁ রে বাবা...
— সাতটা তো প্রায় বাজে।
— এখনও বাজেনি। আসবে তো সেই সল্টলেক থেকে। সবার বাড়ি তো আর তোমার মতো হাওড়া স্টেশনের পাশে নয়, যে বাসে উঠলাম আর হাওড়ায় পৌঁছে গেলাম। চা খাবে? ওই তো আশিস...
ঋজু দেখল, শুধু আশিস নয়, ট্যাক্সি থেকে একে একে নামছে আরও তিন জন। তার মধ্যে দু’জন মহিলা।
আশিস কাজ করে আকাশবাণীতে। পরের সপ্তাহে রেডিওতে কী কী অনুষ্ঠান হবে, সেই অনুষ্ঠান-সূচি আনতে প্রত্যেক সপ্তাহে পরমার্থকে যেতে হয় ওর কাছে। আনন্দবাজারের যে দফতরে ও কাজ করে, সেখানে প্রুফ দেখা ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে ওই অনুষ্ঠান-সূচি এনে কম্পোজ করে দেওয়া ওর কাজ।
এই কাজ করতে করতেই আশিসের সঙ্গে ওর বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। সেই সূত্রেই পরমার্থ যেমন জেনেছে, ও লোকসঙ্গীত গায়। কবিতা লেখে। দুটো কবিতার বইও বেরিয়েছে। শুধু ও একাই নয়, ওর বউ রিনাও কবিতা লেখে। তেমনি আশিসও জেনেছে, পরমার্থও ইদানিং কবিতা লিখতে শুরু করেছে। অনেক কবির সঙ্গেই ওর আলাপ আছে। ওর মুখেই ঋজুর নাম শুনে আশিস বলেছিল, উনি কি আপনাদের অফিসে কাজ করেন নাকি?
— কেন, আপনি চেনেন?
আশিস বলেছিল, না, আলাপ নেই। তবে ওর অনেক কবিতা পড়েছি। উনি তো প্রচুর লেখেন। এত লেখেন কী করে? আপনার সঙ্গে ওনার কী রকম সম্পর্ক?
পরমার্থ বলেছিল, ভালই। ও তো আমাদের ডিপার্টমেন্টেই আছে।
— তাই নাকি? পারলে এক দিন নিয়ে আসুন না, জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে।

ঋজুকে সে কথা বলতেই ঋজু বলেছিল, ঠিক আছে এক দিন যাবখ’ন। কিন্তু আজ নয়, কাল নয়, করে আর যাওয়া হচ্ছিল না। তাই পরমার্থ এক দিন ওকে বলল,


আরে বাবা চলো না, গেলে তোমার লাভই হবে। ও এখন অভিজ্ঞানটা দেখে। কবিতা পড়ার জন্য ওর পেছনে কত লোক ঘুরঘুর করে, জানো? আর ও নিজে থেকে তোমাকে ডাকছে, তুমি যাবে না? ওখানে কবিতা পড়লে পাঁচশো টাকা দেয়।
তাতেও খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছিল না দেখে ঋজুকে প্রায় জোর করেই ও একদিন নিয়ে গিয়েছিল আকাশবাণীতে। সেই আলাপ। তার পর এই।
ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে কাঁধের ব্যাগটা সামলাতে সামলাতে লম্বা লম্বা পা ফেলে ওদের সামনে দিয়ে যেতে যেতেই আশিস বলল, চলে আসুন, চলে আসুন। দেরি হয়ে গেছে।
ও আগে আগে। পেছনে ঋজুরা। তারও পেছনে ট্যাক্সি থেকে নামা বাকি তিন জন।
কাউন্টারে তেমন ভিড় ছিল না। টিকিট-ফিকিট কেটে ওরা ট্রেনে উঠে পড়ল। না। ট্রেনেও খুব একটা ভিড় নেই। ছুটির দিন। তাই ফাঁকা ফাঁকা। একটা খোপেই ওরা সবাই বসার জায়গা পেয়ে গেল। এ দিকের সিটে ঋজু, পরমার্থ আর ট্যাক্সি থেকে নামা কোর্ট-প্যান্ট পরা ওই ভদ্রলোক। বাকিরা উল্টো দিকের সিটে। ট্রেন ছাড়ার আগেই আশিস সবার সঙ্গে সবার আলাপ করিয়ে দিল। কোর্ট-প্যান্ট পরা ভদ্রলোকটাকে দেখিয়ে বলল, ইনি মহাদেব মোশেল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। বিবাহের ইতিহাস নিয়ে গবেষণামূলক একটা বই লিখেছেন। এ ছাড়া ছড়া-টাড়াও লেখেন। আর ইনি হচ্ছেন কণিকা রায়। কলকাতা টেলিফোন্‌সে কাজ করেন। এখন টেলিফোন ভবনে, না? কণিকার দিকে তাকিয়ে নিজেই যেন তার কাছে জানতে চাইল। তার পরে বলল, ক’দিন আগে ওর একটা সুন্দর কবিতার বই বেরিয়েছে। আর এর পরিচয় কী দেব, ইনি আমার গিন্নি, রিনা গিরি।
ঋজু মহাদেববাবুর দিকে তাকাল। মহাদেববাবু আর কণিকার কথাবার্তা দেখে হঠাৎ কেন জানি ঋজুর মনে হল, ওদের মধ্যে কোনও একটা সম্পর্ক আছে।


(চলবে )

রুহীর পুতুল : রাজিত বন্দোপাধ্যায়







।। ১ ।।




-- রুহী ? ... রুহী --- কোথায় গেল মেয়ে টা , একদন্ড যদি স্থির থাকে !    
মায়ের সহকর্মীদের সাথে কথা বলবার ফাঁকে রুহী মেন রোডের ফুটপাত সংলগ্ন বড় কাঁচ ঢাকা দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে । মার ডাক কানে এলেও নড়তে পারছে না । পুতুলটার চোখে চোখ পড়তেই তার মনে হল যেন জাদু আছে পুতুলটার চোখে । হঠাৎই ঐ চুল বিহীন ডল পুতুলটাকে ফুটপাতের পাশের বড় দোকানটার শোকেসে দেখে সে এগিয়ে এসেছিল । অনেদিন ধরে তার একটা বড় ডল পুতুলের শখ । অথচ মাথায় চুল নেই দেখে কিঞ্চিত অবাক হয়েই সে আকৃষ্ট হয়েছিল । মা ডাকছে , কিন্তু নড়তে পাড়ছে না সে । পুতুল টা তার মন নিশ্চই পড়তে পারছে , না হলে হঠাৎই তার মাথায় চুল গজাতে যাবে কেন ! নিজের বড় বড় পেলব দু চোখ মেলে সে শিহরিত হতে হতে দেখতে লাগল পুতুলটাকে । হঠাৎ মার ছায়া নিজের পাশে দেখে শোরুমের কাঁচে আঙ্গুল দিয়ে পুতুল টা দেখিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ স্বরে সে বললে ,  
-- মা , আমায় এই জাদু পুতুল টা কিনে দাওনা মা ।    
-- তোমার সব পুতুলই তো জাদু পুতুল লাগে । আমার কাছে অত পয়সা নেই বুঝেছো ? চল এখান থেকে ।   
মা তার হাত ধরে গজগজ করতে করতে হাঁটতে লাগল ।  
-- আমার হয়েছে যত জ্বালা । তিনি তো এই আদুরে মেয়ে আমার ঘাড়ে ফেলে কোথায় ডুব দিলেন । আর এবার ভুগে মর তুই ।   
রুহী কিন্তু তখনও মুগ্ধ দুই চোখে পিছু ফিরে দেখেই চলেছে ঐ দোকানটাকে ।     
                  
                                                                   [ চলবে ]

টাট্টুঘোড়া.. জ্যোতির্ময় রায়



জ্যোতিষীর চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেখলাম
পশ্চিমবঙ্গ একটা বিস্কুট।

মন্ত্রী আর বুদ্ধিজীবীরা গবেট।আর মুখ্যমন্ত্রী
 টাট্টু ঘোড়ার মত,টেমসের তীরে পিকনিকে ব্যস্ত।।

আমি ,তুমি আপনারা ,তখন ধর্ষক।

মিডিয়া তখন কপিরাইট বলে চালিয়ে দিয়েছে
ডাক্তার প্রবাসী।।

বাঃ ,আস্ত ঘোড়া তো!
বাঃ হিসু পেয়েছে বলে আপনি বই বিক্রি করেনি।

ম্যাগাজিন এ পদ্যে লিখে বলছেন
      জুয়ার আসর,মদ আর মাগী।


ব্যারিকেট ভাঙার দিন নেই।।


#এবং_ও_তারপর

বিকেলের আসা বাকি... অভিজিৎ দাসকর্মকার।



যতটা পূর্বনির্ধারিত দূরত্ব এগিয়ে গেলে
সুর্যের কক্ষে গোধূলির শব্দতরঙ্গ বিচ্ছুরিত হয়
সেই খানে ছেলেটি উলম্ব  দাঁড়িয়ে
               সূক্ষ্মকোণে জ্যা-মিতি করে
           
চাঁদ যেন আলতামিরা গুহার হলুদ জ্যোৎস্নায় ভাষাস্নান করে
স্তবক থেকে স্তবক
    পরস্পর কৃষ্ণচূড়া দেওয়া নেয়া করে---

সুপ্তি ম্যাডামের অনার্স উচ্চারণে প্রবীন বৃষরাশির অবায়বীয় হাসি মুখ-

নীল তন্তু নিজেকে ফাটিয়ে ছায়া বরাবর উড়ছে

নির্দেশনামায় দেখো,
শুখের অনিবার্য কার্নিশে
তখনও আবশ্যিক বিকেলের আসা বাকি।

উচ্চতা / জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়




পাহাড় উঠেছে খাড়া কোন পরিচয়ে
কালোসাদা দুধজল মাখামাখি।
প্রকল্প ছিল কি ? পরিকল্পনাময় প্রবীন প্রান্তর
পাথরের দ্বীপ তরলজমানো সুখ
বিক্ষোভবিভোর
জিনগত ব্যাপার ছিল না দ্বিপদের
মগজও ছিল না কূট তবে?
সঙ্ক্ষুব্ধ বাষ্পীয় উষ্ণতার বুড়োকাল
ত্রিভঙ্গমুরারি হয়ে আক্ষেপে ফোঁসে।

এই সবুজের ভিড়ে সোনালি ধানের শিষ নেই
আকাশমঞ্জরিরেণু পোড়াবাড়ির ছাই হয়ে ওড়ে
মরা ব্যাঙের মতো পড়ে আছে অন্ধকার
এ উচ্চতায় খুজে নাও
জোনাকির সিগন্যাল নীল ও হলুদ।

তীর্থ যাত্রার পূর্ব কল্প.. আমিনুল ইসলাম




পোয়াতি রাত প্রসব করে আলো
আলো ছায়ায় অন্তরালে প্রেমপর্ব
বটগাছ বিছিয়ে দেয় ছায়া, পাখিরা আশ্রয় খুঁজে নিলে
তুমিও মেখে নাও সবুজ শীতলতা।
মায়াজাল বুনে চলে প্রতিটি অন্ধকার গর্ভপাত,
কোথায় যাচ্ছ সরে সরে সুমেরু সাগর?
অগুণতি প্রেমিকের দল ছেঁকে নিতে দুধের ফেনা
ঠেলাঠেলি বিভেদের মৌতাত।
আমার মৌনতা জুড়ে শুয়ে থাকে
রেড এলার্ট কানা গলি, অলিগলি অন্ধগলি পাকস্থলী
জুড়ে গা বমি বমি। উলঙ্গ শয্যায় বসে থাকা রাত
পিতৃত্ব জাগায় । আমার কামের অ আ ক খ
থেকে ছিটিয়ে দিই মাতৃত্বের মৌলিকতা।
গৌণ বিষয়গূলিকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেকে ভাঙতে হয়
ভাঙতে ভাঙতে গড়তে ভাঙতে পৌঁছে যায় গন্তব্যের গহীন প্রেক্ষাপট। তুমি কুড়িয়ে রাখ খুনসুটি অভিমান।
আমি অভিযানে অভিযানে ভরিয়ে দিলাম
বোতাম খোলার অমনিবাস।