।। চৌত্রিশ ।।
আজ আমার এক ছাত্রী আমার কাছে একরাশ প্রশ্ন নিয়ে হাজির। একটা প্রশ্নের ঘা সামলাতে না সামলাতে আরও একটা। প্রশ্ন শুনেই বোঝা যায়, এগুলো তার মনে অনেক দিন ধরে চেপে রাখা কথার পাহাড়। তার প্রশ্নগুলোকে পর পর সাজিয়ে দিলে ঠিক এরকম দাঁড়ায় --------- " আচ্ছা মানুষ সবসময় তার প্রিয় জিনিসটাকে নিজের আয়ত্তের মধ্যে পেতে উদ্যত হয় কেনো ? তার প্রিয় ফুলের গাছটিকে বাগানে এনে বসায়, প্রিয় রঙের জামা পড়তে পছন্দ করে, প্রিয় খাবার খেতে পছন্দ করে, প্রিয় রঙের জিনিসের প্রতি তার একটা আলাদা আকর্ষণ থাকে। এমন কি মানুষের ক্ষেত্রেও। সে তার প্রিয় মানুষটিকে জীবনে পেতে চায়। প্রিয় জিনিস বা বস্তু বা মানুষটিকে, নিজের সব প্রিয় বিষয়গুলোকে নিজের করে পাওয়াটা কী খুব জরুরী ? "
ভীষণ গরমের মধ্যে একটা মানুষ ঘরে ঢুকেই আগে সব জানলাগুলো খুলে দেয়। তারপর পাখাটা চালিয়ে দিয়ে মেঝেতে একটু বসে। ক্লান্তি বেশি থাকলে ঠাণ্ডা মেঝেতে সে শুয়েও পড়তে পারে। কিছুক্ষণ পরে স্নান করে সে বারান্দার ঠাণ্ডা হাওয়ায় এসে বসবে। এই যে মানুষটা বাড়ি ফিরে পর পর কাজগুলো করে গেল সবগুলোই তার ভালোলাগা। প্রিয় বলেই সবগুলোকে সে কাছে ডেকে নিল। শুধু তাই নয়, প্রিয় জিনিসগুলো তাকে ভালোও রাখলো।
এবার একটু অন্য দিকে তাকাই। প্রিয় ফুল, প্রিয় পোশাক, প্রিয় খাবার ------ এগুলো তো আসলে খণ্ড খণ্ড আমি। এসবের যোগফলই তো সম্পূর্ণ আমি। এগুলো কেন প্রিয় ? কারণ এগুলো আমাকে ভালো রাখে। এগুলোর সংস্পর্শে আমি ভালো থাকি। আমার মাথার ওপর যে পাখাটা ঘুরছে, আমি চাইবো না পুরো গরমটায় পাখাটা আমার মাথার ওপর যেন সবসময় ঘোরে ? যে যে খাবারগুলো আমি ভালোবাসি আমি চাইবো না সারা বছর যেন আমি ওই খাবারগুলো খেতে পাই ?
" নিজের সব প্রিয় বিষয়গুলোকে নিজের করে পাওয়াটা কী খুব জরুরী ? " ------- হ্যাঁ, অবশ্যই জরুরী। তা যদি না হয় তাহলে তো ওই প্রচন্ড গরমের মধ্যে ক্লান্ত মানুষটার মাথার ওপর পাখাটা বন্ধ করে দিতে হয়। রৌদ্রদগ্ধ পথিক গাছের নিচে না দাঁড়িয়ে প্রখর রোদে দাঁড়িয়েই বিশ্রাম নিতে পারত। কিন্তু তা তো হয় না। সে তখন শীতলতাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়।
প্রতিটা মানুষ চায়, তার চারপাশে যেন সবসময় ইতিবাচক আবহাওয়ার প্রাধান্য থাকে। যদিও তা মানুষ পায় না কিন্তু যাত্রাটা সেদিকেই থাকে।