নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

স্তব্ধতা:মিতা বিশ্বাস বসু



দিনের আলোতে
যে কথা স্তব্ধ
আঁধারে সে কথা
সাবলীল তত,
মনের বার্তা মনেতে চলেছে-
কালোতে মাখিয়ে
ভাবনা জুড়ছে।

নামুক আঁধার বন্ধ চোখেতে
ভালোবাসা শুধু আছে অনুভবে,
পারাপার তার
নাই কোনখানে-
'স্তব্ধতা'-সে তো
জীবনের মানে।


ভাবনার আঁচলে তোমার রং : প্রণব রায়




এক আঁচল বাতাস যখন
    ছড়িয়ে পড়ে শরীর জুড়ে
     কল্পনাকে সুড়সুড়ি দেয়..
আমি তখন অন্ধ বাউল
    একতারাতে হারিয়ে গিয়ে
   তোমার রঙে একলা রাঙি;
এক আকাশ ভাবনা যখন
  আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে
    নতুন দিনের গল্প বলে...
আমি তখন আকুল পাগল
            দিগন্তেতে ছুটে গিয়ে
    তোমায় ডাকি দুহাত তুলে;
একটি দুটি স্বপ্ন যখন
      বোতাম খুলে উঁকি মেরে
    ঘুলঘুলিতে লুকিয়ে পড়ে..
আমি তখন ফেরিওয়ালা  স্বপ্ন নিয়ে একলা হাঁটি
পড়ে থাকে বঞ্চিত সব পথের মাঝে ;
দুচার ফোঁটা বৃষ্টি যখন
      আমার কাছে ছুটে এসে  সরস করার উপায় খোঁজে...
আমি তখন ঝর্ণা হয়ে
 তোমার বুকে হারিয়ে গিয়ে  উড়াই নিশান ঠোঁটের ভাঁজে।

বালিজুড়ি :তাপসী লাহা





প্রত্যাবর্তন
মানে ফিরে এলে,

দু পায়ের সমগ্রে থিতিয়ে জমে যাওয়া ভেজা বালির ভার।

শুধু  কি  এ ভার  নিয়েছি!

সাথে মিশে আছে মনের নিঝুম ঘর উপচে পড়া কালিঝুলি।

রোজ দেখি ঝাড়বো বলেও  হাত লাগাই না।

মলিনতার সাথে ধূসর বিষাদের অনুষঙ্গ।


মুক্তির কথা ভাবিনা।


শুধু এসব অন্যমনস্ক আবহের প্ররোচনায় টের পাই না ঘাতক শেকড়ের বিস্তার পায়ের তল ভেদ করে জাপটে ধরেছে অবদমনের মাটি আর আমার ঘরে ফেরা বাতিল হয়ে যায়।

পোড়া : শ্যামল কুমার রায়



                         

               আগুনে সব পোড়ে
               সোনা গলে,পুড়ে খাঁটি হয়।
               মনও পোড়ে। তবে-
               মন কষাকষিতে, বিরহে, বিচ্ছেদে-
                        এমন কি প্রেমের আগুনেও।
               সব পোড়াতেই -
               শেষে পুড়তে হয় নিজেকেই।
               কখনো চিতার আগুনে-
               আবার কখনো বা জীবনে।
               একটা খাঁটি সোনা-
               চির ভাস্বর,
               জীবনে, মননে।
                

স্ট্রাজেডি বিকেলে স্টপ: বিকাশ দাস (বিল্টু )





একটি তরতাজা বিকেলে পেন্ডুলাম ঘড়ি টিক টিক আওয়াজে মনের স্রোতের লাভাকে আগ্নেয়গিরির লাভা করে বুনো মহিষের মতো চঞ্চল করে তোলে....

কভার পেজে তোমার ছবি, "ব্ল্যাক ডে "হয়ত আমারই, পুরানো মলাটটা বেঘোরে মারলো...

জামার পকেটে শিরশির হাওয়াতে উত্তপ্ত ধমনী ;
হার্ট বিট মেপে দেখি ডানহাত বামহাতের উপরে রেখে :72 প্লাস

বুক পকেটে রাখা তোমার দেওয়া শেষ বাটা পান আজ ঝিমিয়ে আছে;রস নেই।ঠিক আমার কিডনীর মতো, সেটাও তো নিকোটিনে ভরা ...

তবুও বাটাপান মুখে দিয়ে: হারিয়ে যাওয়া রোমন্থনকে ডেকে তুলি

সদ্য কেটে নেওয়া  বোরো ধান ক্ষেতের উপর তোমার নগ্ন পায়ের জলচাপ খুঁজি

কুড়িয়ে নেওয়া ধানের খোঁসা ছাড়িয়ে, মুখে নিয়ে দানা একাই হেঁটে চলি দিগন্তের পথে, কিছুটা অভ্যাসগত....

যেখানে মাছরাঙা ঠোঁটে মাছ নিয়ে আমার অপেক্ষায়..... তবুও কল্পনা হয়ত !

শেষ বিকেলের শেষ চিঠি তবুও ডাকে গেলোনা, চিঠি তো গাঁজার কলকেই হলো.... বা !!বা'রে !!

আজকাল বিকেল গুলো খুবই ভাবুক করে তোলে, বকবক করে ফেলি অনেকটা বেশিই মেকি হয়ে -

তবে মেকির আড়ালে বুক পকেটের ব্যথা জমাই থাক পেন্ডুলামের ঘড়ির কাছে

টিক টিক টিক... স্টপ.... ব্যাটারী নেই, অভিশপ্ত বিকেল তবুও রেহাই দিলো না......

এই বুঝি স্ট্রাজেডি... হা হা হা... !!!

              

দিবস গুলি পালিত হয়:শুভঙ্কর রাহা




২৭ শে জুন ।
গত কয়েক বছরের মতো এইবছরেও দেবু দা সকাল সকাল পৌঁছে গেছেন Lilabati Orphanage এ। সাথে নতুন জামাকাপড়ের কয়েকটি সেট, হরেকরকম মিষ্টি ভরা কিছু প্যাকেট এবং একটা কেক।
পৌনে আটটায় প্রার্থনা সেরে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলো অদ্ভুত এক আনন্দ এবং নতুন কিছু চমকের আশায় দেবু দার কাছে এসে হাজির হলো। দেবু দা কেক কেটে সেই কেক , উপহার এবং মিষ্টি গুলো ছোট্ট ছেলেমেয়ে গুলোর মধ্যে ভাগ করে দিলেন।

ওখান থেকে বেরিয়ে অফিসরুমে এসে এক টুকরো কেক orphanage এর কর্তা সৌমিত্র বাবুকে দিয়ে দেবু দা বললেন, " সৌমিত্র বাবু এটা আপনার জন্য।"

সৌমিত্র বাবু কেকের টুকরো টা খাওয়া শেষ করে দেবু দা কে জিজ্ঞেস করলেন, " দেবব্রত বাবু, গত ৭ বছর ধরে আপনাকে দেখছি প্রতি ২৭ শে জুন আপনি এই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু গুলোর সাথে দিনটি উদযাপন করেন। কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা জিজ্ঞেস করি? "
-" আরে না না কিছু মনে কেন করব? অবশ্যই জিজ্ঞেস করুন। ", দেবু দা বললেন।
- " এই ২৭ শে জুনেই কেন? আজকের দিনটিতে কী হয়েছিল দেবব্রত বাবু? "

দেবু দা একটু থমকে গেলেন। চুপ করে নরম হয়ে যাওয়া চোখের কোনা দুটো মুছে দেবু দা বললেন," সৌমিত্র বাবু, তখন আমি কলেজের লাষ্ট ইয়ারের ছাত্র । আমার বাড়ির থেকে ২ টো গলি পাশেই সোহিনী থাকত। আমি বই-খাতা গুছিয়ে টিউশন যাই, সে দাঁড়িয়ে থাকে গলির মাথায়। উৎসুক চোখ, হেয়ার ব্যান্ডে ঢাকা ছোট চুল। ফ্রকের লেস আঙুলের মাঝে জড়াতে জড়াতে লক্ষ্য করে আমার চাপ দাড়ি বেয়ে নেমে আসা জল, লক্ষ্য করে কপাল থেকে গড়িয়ে আসা ঘামে ঘোলাটে হয়ে যাওয়া চশমার কাঁচ, অদক্ষ সাইকেল চালকের মতো কাঁপতে থাকা হাত, এককথায় সর্বাঙ্গ।

এভাবে একদিন আলাপ হলো। কথা হলো।
তারপর একদিন বিকেলে বাড়ি ফিরছি ওদের গলির সামনে দিয়ে। পথ আটকে বলে উঠলো, 'দেবু দা জানো আজ আমার জন্মদিন।'
আমি বললাম কি রে তুই? আগে জানাস নি কেন? আজ তো তোর দিন রে পাগলি। কী নিবি তুই বল?
ও বললো, ' দেবে যা চাইবো?'
আমি বললাম, আমার সাধ্যের মধ্যে হলে নিশ্চয়ই।
ও বললো, ' দেবু দা আমাকে ওই অনাথ আশ্রম টায় নিয়ে যাবে? ওই নিষ্পাপ ছেলেমেয়ে গুলোর সাথে আজ দিনটা কাটাব।'

আমি ওর এই মিষ্টি বায়না রেখে ওর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছিলাম সেই প্রথম। শেষবারও বটে।
কারন তারপর তার না বলা বায়না টা আমি বুঝতে পারা সত্ত্বেও আমি মুখ ফুটে তাকে বলতে পারি নি।

শেষে আমাকে বলেছিল, "ভিতু তুমি একটা"।
তারপরেই দৌড়ে তার শেষ চলে যাওয়া।

সৌমিত্র বাবু আজই সেই ২৭ শে জুন। সোহিনীর জন্মদিন। ও তো একমাত্র মুখফুটে এটাই চাইতে পেরেছিল আমার থেকে। "

সৌমিত্র বাবু তখন হতভম্ব। মনে মনে ভাবছেন- এইভাবেও দিবস পালন করা যায়?
হ্যাঁ। আমাদের চেনা অচেনা পরিবেশের মধ্যেই এমন কতশত দিবস পালিত হয়। হ্যাঁ এইভাবেই দিবস গুলি পালিত হয়।