নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

অনিন্দ্য পালের এক গুচ্ছ কবিতা

      




    পরিবর্তন যদি ...




সব আলোই নিভে যায় কোন দিন কোন সময় 
নক্ষত্রও কেঁদে ওঠে মৃত্যু যন্ত্রনায় 
দেবতারাও বদলে ফেলে চামড়ার রঙ 
রামধনু হারিয়ে যায়, কানাগলির ঠিকানায় 

বদলে যায় পাতার সবুজ 
পলির গন্ধে মিশে যায় আদিম মৃত্যুর গন্ধ 
বদলে যেতে গিয়েও কি ফিরে আসে আবার 
নিরুত্তাপ বেঁচে থাকা, পাথর ভাঙার ছন্দ ?

পর্বতের শিখর ছুঁয়ে ভেবে নেওয়া সহজ 
উচ্চতা তোমাকে দিয়েছি সভ্যতার পদধূলি 
সমুদ্র পার হয়ে মনে হতে পারে 
পৃথিবী মাত্র এইটুকু, ক্যানভাস রঙ তুলি!

তবু মনে হয়, সব মহত্ত্ব ভালোবাসা যদি 
মূর্তি হয়ে দাঁড়াত, সভ্যতার মোড়ে মোড়ে 
সমস্ত রঙ যদি মিশে যেত এক হয়ে 
পোড়ামাটির থালায় 
হয়ত আবার তবে চৌচির আকাশ জুড়ে 
ফুটে উঠতো একটাই নীল 
 সব দেবতার পূজা হত একটাই সাদা মালায় ।









                 সম্মানার্থে    




এক পশলা আগুন অথবা তীক্ষ্ণ আকাশ 
নেমে এলো মেঘনাদের শরের মত 
কেঁদে উঠলো পৃথিবী
মাটি আর মা 
জঠরে আঘাত করে হত্যা করলো 
ভ্রূণ-সন্তান, 
সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে দিলো বিষ 
হত্যা নয়, মুক্তি দিল
সঙ্গে দিল অবশিষ্ট আদর, আশীষ ।

এই দৃশ্যপট জ্যোতিষের কুষ্ঠিবিচার নয় 
অথবা নয় কোনো সময়ঢাকা ধূসর ইতিহাস 

কালক্রমে এ সব এখন ছাপার খবর 
পড়া হয়ে গেলে ফেলে দিতে হয় স্তূপের উপর 

তারপর শুরু হয় আবার তপ্ত লোকাচার 
এবং সময়ের উর্বর কোটরে বেড়ে ওঠে 
                             অবাধ্য ভ্রূণ আবার ...






                  দহন   




জলের কবরে আঁকুপাঁকু করে সূর্য 
আমাদের ও তো পাঁকাল মাছের জীবন 
মাথার উপরে আকাশ যেন ছেঁদা কৌটো 
আগুন ঝরে আগুন বয়ে আনে বাতাস বাহন,

আগুন রঙের ওড়নায় ঢাকা নিদমহল 
এত ক্ষোভ কেন, কেন রাগ এত বিশ্বপিতা?
না হয় করেছি লোভ, করতলে পিষেছি শিষ্ট-সবুজ 
তবু ভালোবাসা দেবে না এতটুকু, শুধুই উষ্ণতা! 

এভাবেই তো সয়ে আছি অভিশাপ-দহন 
তোমার তূণীরে দিবানিদ্রা যায় অলস শীতলতা...

যদিও রোজ ডুবে মরে, আত্মকেন্দ্রিক 
আগুনে দেবতা 
প্রশ্নহীন মাথা নেড়েও এঁকে রাখি জিজ্ঞাসা 
নতুন সকাল কি পাবো না কখনও ?
বেঁচে আছি , বেঁচে থাকি ...
বাকিটুকু হয়তো বা দুঃখ বিলাসিতা। 

গরম গরম :কিশলয় গুপ্ত





বাধ্য হয়ে শ্রাদ্ধ করি নিজের!
অমৃতফল লুকিয়ে আছে বীজে,
প্রমান ছাড়া আপ্তবাক্য মেনে-
বুকের ভিতর চালিয়েছিলাম ডি‌.জে.
সেই সুবাদে শব্দ আমায় খেলো,
সুর নেই-হারমোনিয়ামের বেলো;
হাজার বছর ফাটা থাকার হেতু
আমার ঘরে অসুর ধেয়ে এলো
বুকের উপর হাতটা রাখি ভিজে,
দাগ পড়েছে সাধের মনসিজে-
ভুল আমার,ভুল তোমার,সবার
বাধ্য হয়ে শ্রাদ্ধ করি নিজের
                       

নিখোঁজ: মধুমিতা মুখোপাধ্যায়






ভাবছি একবার নিখোঁজের সন্ধানে' পাতায়
ফেলে আসা স্মৃতির বিজ্ঞপ্তি দেব
লাল কালিতে লেখা বেরোবে 'ঠিক বুকের বাঁদিক ঘেষে গাঢ় নীল জড়ুল'...জড়ুল তো ওটা ...?
নাকি যন্ত্রণার গাঢ় নীল ছোপ ?
নিরুদ্দেশ মনটার তখনো দুচোখ লাল
'দে ছুট' বলে লাগামহীন প্রতি রাতেই...
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো খুঁজে চলা।
ভোর হলেই ভিড় প্যাসেঞ্জার ট্রেন এসে দাঁড়ায় জংশনে
প্রতিটা কামরায় চেনা-অচেনা মুখের ভিড়
স্মৃতি খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত প্রহরগুলো হারিয়ে যায় কখন
অবহেলা,নাকি উদাসীন সম্পর্কে টানাপোড়েন
জীবন পিছোতে থাকে ধীর পায়ে
শুনেছি নতুন আসে পুরোনোকে ম্লান করে
তোমার উপেক্ষাগুলোও একদিন জমা হবে অবহেলার পুরোনো পাতায়
আমি শুধু নির্জন রাত অপেক্ষায়..
হাতরাবো অতীত...ছুঁয়ে নিতে আমাদের যাপনের মাত্র কটা প্রহর !

পিতা :উত্তম মণ্ডল





হুবহু তোমার মতোই খুঁজছি
কত স্বপ্নের সৌধ হয়েছে চূর্ণ,
কত বিশ্বাস চুরমার।

বিশ্বাস বুকে বেঁধে তবু মুহুর্ত গুনছি
সাতচল্লিশের পর অবিরত,
খুঁজছি তোমায় সমুদ্রে,খুঁজছি জেলে,চরকায়।

খুঁজে পেলেই তোমায় বলবো,
এই তোমার মাতৃভূমি, তোমার দেশ,
শিকড় ছিঁড়ে তুমি চলে যেতে পার না-
তোমাকে ফিরতেই হবে সত্যে,
ফিরতেই হবে অহিংসায়।


মরুভূমিতে,
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে-
মরিচিকা ও জাতির পিতা।


 

পথ হারিয়েছে যে নক্ষত্ররা :অতনু নন্দী






পড়ন্ত বিকালের রোদে ময়দানের পাশে 
ফুটপাথ ধরে একদিন হেঁটে ফিরছি , হটাৎ দেখা হয়ে যায় ক্লাস এইটের স্কুলছুট এক বান্ধবীর সঙ্গে । 
ব্যাগ থেকে একটা ডাইরি খুলে আমার দিকে এগিয়ে দেয় সে, 
লেখা দেখে আমি চমকে উঠি -

যেদিন  দূর থেকে দূরবর্তী হয়ে গেছে
সম্পর্ক এর জেটিঘাট , 
সেদিনই  আমি বরফ প্রতিমা হয়ে গেছি । 

এ যেনো অনন্তের অভিমান , পুড়ে মরে 
আমার স্বত্ত্বা ।  
প্রশ্ন করেছিলাম কোন পত্রিকায় লেখা দিস' না কেন  ? 
উত্তরে বলে গেল 
আঁধার আমার ভালো লাগে । 

সেদিন ভাঁটিখানায় গিয়েছিলাম সন্ধ্যা বেলায় 
এক ছিপছিপে তরুণ বাংলা খেয়ে 
বলে চলেছে- 

বুকে মৃত নদী রাখি ,
পুড়ে যায় ইহকাল 

ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরি তাকে , বলি আকাশে তাকিয়ে দেখো পূর্ণিমা মেলেছে ডানা , 
আর এক পেগ চুমুক দিয়ে সে বলে ওঠে - 

আমি দেখি ছায়াপথ 
মিশে যাই মৃত নক্ষত্র'র দেশে 

শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই । 
তার কবি জন্মের কাছে মাথানত 
করে ফিরে আসি । 

দিনের কোলাহল ফুরিয়ে আসে রাত গভীর হলে,  মুঠোফোনে আমি ফেসবুকে প্রিয় কবিদের টাইমলাইনে ঢুকে পড়ি কবিতা 
ঈশ্বরকে খুঁজবো বলে , 

হটাৎ কোন তরুণ অনামি কবির পেজে চোখ আটকে যায়,  
কি অনায়াসে সে লিখে রেখেছে -

বুনো আঁধারে ঢেকে গেছে আমার পুংজন্ম 
তাই আজ  আর রোদ্দুর খুঁজি না । 

তিন চার বার অনায়াসে পড়ে ফেলি 
মুগ্ধতা গ্রাস করে আমায় ।
জীবন পিতার মতো জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে তাকে । 

সুন্দরবনে পিকনিক করতে গেছি বন্ধুদের সাথে জানুয়ারির শেষে , 
স্টিমার থেকে জঙ্গলে নেমে এসে দেখি 
হোগলা পাতার উপড় পড়ে আছে অসমাপ্ত একটি কবিতার কএকটি লাইন, 
প্রেমিকার মতো আঁকড়ে ধরি ।

দেখি কবি লিখে গেছে -

এসো প্রিয় স্বদেশ 
সবুজে বোনা সোয়েটার হয়ে,
শিকারীর গল্পে হিম ঢেকে রাখি ..

আমি অরণ্যে পাগলের মতো খুঁজতে থাকি কবিকে , মৃত্যু ভয় উড়ে গেছে তখন  
একটি বার তার চরণ ছোঁব বলে ।

মন বনাম শরীর মান্নুজা খাতুন ( মালা)



তোমার আমার সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল
চলমান ব্যস্ত জীবনের অন্যতম অঙ্গিকার
ইন্টারনেটের দৌলতে সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে
এমনই এক ভরা গ্রীষ্মের দাবদাহে ভরা দুপুরে!
আমি তখন কতই বা!
এই উনিশ পেরিয়ে বিশে
দেহে আমার নতুন যৌবন,
মন পূর্ণ ছিল আবেগে
তাই তো তখনও  বুঝি নি
তোমার সাজানো কথা গুলোর চাতুরী
যখন তোমার কথা বলছিলে,
আমি শুনছিলাম আর বুঝতে পারছিলাম
আমার যোগ্যতার কাছে হেরে যাচ্ছ তুমি
তবুও  স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমায় নিয়ে,
 দেখিয়েছিলে তুমিও
একটা সংসার
একটু ভালোবাসা
   আর
সুখি জীবনের।
ভুল বুঝলাম সেইদিন
যেদিন দেখা হয়েছিল তোমার সাথে
সেইদিন বুঝতে পারলাম ভালোবাসার মনটা তোমার মৃত
বেচে আছে শুধু শরীরটা,  আর বিকৃত কামনার লালসা।