নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

ঝড় :প্রীতি





ঝড় কি? সেই বেকার ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করো-
যার যোগ্যতা হেরে গেছে মোটা ঘুষের কাছে।
ঝড় কি? সেই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করো-
যে রাতের আঁধারে ছিন্নভিন্ন হয়েছে সমাজের পশুর নখে।
ঝড় কি? সেই মাকে জিজ্ঞেস করো-
যে পরের বাড়িতে বাসন মেজে ছেলেকে ডাক্তার করেছে, আর বিনিময়ে ঠাঁই পেয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে।
ঝড় কি? সেই মাঠে খাটা চাষিটাকে জিজ্ঞেস করো-
যে ফসলের দাম না পেয়ে প্রাণ দিয়েছে কীটনাশকে।
ঝড় কি? সেই পথশিশুকে জিজ্ঞেস করো-
যে দিনের পর দিন না খেয়ে মুখ ঢোকায় ডাস্টবিনে।
তাই এই জোড়াল বাতাসকে মিথ্যে 'ঝড়' নামকরন করোনা।

"উষ্ণতা" : ঈশিতা দেবনাথ




"গত সপ্তাহের টাকা টা বাকি আছে..., আজ আর বাকিতে দিতে পারবোনা.."
হারানবাবু কথাটা শুনে অনেক নিরাশ হলেন।
হারান বাবু, কেশবপুরের একজন বাসিন্দা, সেখানেই তার একটা ছোটো টিনের বাড়ি, বাড়িতে উনি আর তার স্ত্রী আলো রানী। অতীতে, বলতে গেলে দশ বছর আগেও তাদের অবস্থাটা এমন ছিলোনা। চাষের জায়গা ,জমি, আমের বাগান নিয়ে বেশ খানিকটা জমির ফসলে তাদের জীবনটা ভালোই কেটে যেত। তবে সেসব আর কত দিন...! ছেলে, রতন, বিদেশ যাওয়ার আগে জমি লুকিয়ে সব বেঁচে দিয়ে শুধু বাবার জন্য বাড়ির পিছনের আম গাছ সহ কিছুটা জমি রেখে দেয়।

পাকা পিচের রাস্তা, দুধারে যতদূর দেখা যায় চাষের ক্ষেত। তখন বাজে বেলা বারোটা , সূর্যের তাপটা যেন এখন জাঁকিয়ে বসেছে। চারদিকের বাতাসের গরম ছোয়া যেন শরীরের চামড়া শুদ্ধু জ্বালিয়ে দিচ্ছে,
নিঃশ্বাসের বায়ুর সাথে এক গোছা তপ্ত বাতাস যেন প্রবেশ করছে।
উঃ!...
হারানবাবু রাস্তার ধারে একটা মেহগিনী গাছের নিচে বসলেন। যত দূর দেখা যায় শুধু জমি আর জমি..
একসময় এমন চাষের জমিতে তার অধিকার ছিল, আজ সেসব অতীত...!
জলের পিপাসা মেটানো দায় হয়ে গেছে এমন পরিস্থিতি। হারানবাবু কিছুক্ষনের জন্য চোখ বন্ধ করলেন।

"কি গো মনিকার মা , আজ কি রান্না করলে..?"
মনিকা, হারান বাবুর একমাত্র মেয়ে..  একবার এমনি গরমের সময় ঝরে গাছ ভেঙে পরায় আজ সে এমন অসহ্যকর গরম থেকে মুক্তি নিয়ে হয়তো কোন অজানা গ্রামে , অথবা কোন মেঘের দেশে ভেসে গেছে..!
"শাক রেঁধেছি গো.."
উননের তাপ টা যেন আজ একটু বেশিই লাগছিলো।

সূর্য্য তখনও নিষ্ঠুর..
হারানবাবু হঠাৎ চোখ খুললেন। চারদিক তখনও যেন জ্বলছে...চোখ যেন এক জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড।
তিনি উঠে দাঁড়ালেন। বাড়ি ফিরবেন।


তখন বেলা সোয়া চারটে,
হারানবাবু ঘরের বাইরে বসে আছেন, ঘরে স্ত্রী অসুস্থ, জ্বর কখন আসছে আবার যাচ্চে।হারানবাবু অবস্থা বুঝতে না পেরে ডাক্তার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন ভাবলেন..কিন্ত্তু

আকাশটা হঠাৎ কালো হয়ে আসছে, মুহূর্তের মধ্যে চারদিকের আলো কমে আসলো। বাতাসে গরমের প্রকোপ তখন একটু কম...
হওয়া দিচ্ছে অল্প..
দেখতে দেখতে বাড়ির পিছনের আমগাছ টা যেন খুব বেশি দুলতে থাকে।
ঝড় আসে, একটা সময় যেন যুদ্ধের সৈনিকের মতো একদল হওয়া এসে সব যেন উথাল পাথাল করে দেয়, হওয়া যেন থামতেই চায়না , চলে যাবো করেও যায়না...
ঘরের প্রত্যেকটা অবলম্বনের ওপর যেন নির্মম অত্যাচার চলে। ঘরের টিনের দেওয়াল গুলো যেন এখনই ভেঙে যাবে। চারদিক তখনও কালমেঘে ঢাকা। বিকেলের আকাশ যেন রাতের অন্ধকার ডেকে আনছে।
হারানবাবু আম গাছটা দেখতে ঘরের পিছনে যেতেই ভীষণ শব্দে ঘরের চাল টা উড়িয়ে নিয়ে যায়...
তার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে।
ঘরে গিয়ে স্ত্রী র দিকে নজর দিতেই সব যেন নিমেষে শেষ হয়ে যায়...



অসহ্য গরম যেমন কষ্ট দায়ক তেমনি বিধ্বংসীও।
পরিবেশের সাথে আমার অভিযোজিত হতে পারলেও হারানবাবুর মতো অনেক মানুষ আজও অসহায়...
তাই পরিবেশ এর স্বার্থে মানুষের উপকার্থে গাছ বাঁচান। একটা গাছের জীবনদান না করতে পারলে একটা গাছের মৃত্যু ডেকে আনবেন না!

যে পথ আমার : কাজী জুবেরী মোস্তাক



যে পথে আমি যাইনি
যে পথ আমি আজও চিনিনি ;
অথচ সে পথের ওপারেই সফলতা ছিলো।

যে পথে আজ চলছি
সে পথেই পথ হারিয়ে ফেলেছি ;
কারন এই পথটা কখনোই আমার ছিলনা।

যে পথে যাবো ভেবেছি
কাঁটা দেখে ফিরে চলে এসেছি ;
অথচ সে কাটা আমার জন্য আশীর্বাদ ছিলো।

যে পথ আমার যোগ্য না
সে পথটাই আজ আমার চেনা ;
কিন্তু সেই চেনা পথই আমাকে দিকভ্রান্ত করছে।

হঠাৎ দেখা: বারেক উল্লাহ



ধরো হঠাৎ কোন এক রিমঝিম বৃষ্টিঝরা সন্ধ্যায়, তোমার দেখা আমার সঙ্গে।
তুমি কি অবেলার দুজনের হারিয়ে যাওয়া  কিছু স্মৃতির কথা বলবে?
নাকি মুখ ফিরিয়ে দুরে সরে যাবে?

ধরো চৈত্রমাসের প্রকট রোদে,
 আমি ঘামাক্ত শরীর নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছি।
অপ্রত্যাশিত ভাবে তোমার দেখা আমার সঙ্গে,
 তুমি কি তোমার আঁচলের ছায়ায় আমায় আগলে নিবে?
নাকি দেখে ও না দেখার মত করে পথ পাল্টাবে?

ধরো কোন একদিন তোমার দেওয়া নীল পাঞ্জাবি টা পড়ে,
বিষন্নতা চেহেরায় একাকী বসে আছি।
 হঠাৎ আড়ালে আমায় দেখতে পেলে,
 আস্তে আস্তে নুপুর পরা পায়ে আমার পিছনে এসে চমকে দিয়ে জড়িয়ে ধরবে?
নাকি মুখে হাত দিয়ে অচেনার মত বিপরীত পথ ধরে চলে যাবে?

মা :ঋভুব্রত পাল

 

মাথার ভিতর যন্ত্রণা।
আলপিন রোজদিন ফোটে মাঝরাতে,
বৈপরীত‍্য আমাদের ত্রুটি,
তবু ভ্রান্ত প্রেমের টানে তোমাকে টানি-
কিছু কিছু স্বপ্ন ঝরণার রূপ নিলে
মনে পড়ে - যা ভাবছি তা রাতের স্বপ্ন..
ভোরে বিচ্ছেদ ঘটে-
পাথর-ভাঙা শিকড় পাথরকে না ছাড়ে,
না ধরে,
কেবল ভেঙে 
               ভেঙে
তৈরি করে ভেঙে-যাওয়ার-গান..

মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে...
শান্ত কোলে মাথা রাখলেই ভুলে যাই
    ক্ষত ও তোমাকে..
দেখতে পাই, প্রেম এখনো মা হয়ে ওঠেনি...

উন্মত্ত :



               
আমি তোমাকে ধরে রাখতে চাই না,
এক মুস্টি চুরুটের ধোয়ায় উড়িয়ে দিতে চাই;

তোমাকে উধাও করে দিতে চাই,
       বোতলে ঢেলে;
ঢোকে ঢোকে গিলে ফেলে।

মাথা ঘোরা ঘুমের মাঝেই,
তোমাকে ভুলে যেতে চাই।

নিকোটিনের তিক্ত ধোয়ায়,
তোমার স্মৃতি কি হারায়?
না তো, হারায় না;
তুমি তো হারাও আঁজুমানে।

অলিতে - গলিতে পাগলের মতো পড়ে থাকবো,
তাহলে কি তোমায় ভুলতে পারবো?
পারিনি ভুলতে,
তবুও আমি তোমার শহরের গলিতেই।

দেখতে পাও না?
সম্ভবত না,
আমিতো থাকি ধোয়ার অন্তরালে।

আমাকে নতুন কারও পাশে দেখ?
না তো, দেখ না।
কি করে? সবাই এই আমাকে কবি বলে,
কবিকে তো সবাই পাগলই বলে।
সে পাগল, জায়গা বোঝে না;
যেখানে সেখানে দাড়িয়ে পড়ে,
তাকিয়ে থাকে,  ঠিক যেন নিষ্ককর্মার মতো।