নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

হাঁদা : মাধব মণ্ডল



একমুখে মধু আর অন্যমুখে আর্সেনিক
নির্দ্বিধায় দু'টোই চাটছি মায়া যাদু!

টলছি বেতাল টলা মাটি আর ঘাসে
ঘাস মরে যায়, মাটিও কঁকাচ্ছে!

হাতের তালুতে খনার আঁচড়
দেখি কিনা বোবা বিস্ময়ে!

একেকটা আর্সেনিক বিস্ফোরণ
ছিন্ন ভিন্ন কথা রাখি চুপড়িতে

কথাগুলো না মরে আবার ডাকে
বিস্মরণের তুমি আবার জাগো

মধু নদী সাঁই সাঁই ছোটে
পাড়ে আমি একা হাঁদা!

নেমকহারাম : উজান উপাধ্যায়



আমার প্রেমিকা কবিতা লিখতে বসলেই
আমি হাঁ করে সামনে বসে যাই।

ওর বুকের ভিতরে কারখানার চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরনোর মতো বেরিয়ে আসে দগ্ধ পাঁজরের গা থেকে পুড়ে যাওয়া রক্তদাগ।

আমি ওর মাথায় একবালতি দুধ ঢেলে দিই।

হঠাৎ রাখাল সেজে হাতে বাঁশি, মাথায় মুকুট।

আমি ওকে ধাক্কা দিতেই এবার খসখস করে বাবার গল্প লেখে।
এ সময়ে ও অহংকারী।

এবার উঠে গিয়ে দেওয়ালে ক্যালেন্ডার নাড়া দিতেই ওর চোখে ভয়ংকর একটা নেকড়ের ছবি।

আমি হেসে ফেলতেই ও রান্নাঘর থেকে সেদ্ধভাতের হাঁড়ি উপুড় করে গরম মাড় তুলে এনে ফ্যামিলি এলবামের ওপর ঢেলে দেয়।

করো কি কবি, বলতেই আমার প্রেমিকা দাঁত খিঁচিয়ে উঠে বসন্তসেনার মতো কোমর থেকে তরবারি বার করে।

গোটা দৃশ্যে চিতা, হাসপাতাল, এম্বুলেন্স, প্রমোটারের লোভী চোখ, সংবিধান ও নারী দিবসের চকচকে ডিজিটাল আলো-

এবার খুব গুছিয়ে চুম্বন দিতেই প্রিয়তমা অমাবস্যা, আর নেমকহারাম অন্ধকারকবিতার  পান্ডুলিপিরা পরস্পরের সমকামী হয়ে ওঠে।

চোখের সামনে এসব দেখছি, আর কফিকাপে জমিয়ে রাখছি গুপ্ত ঈর্ষা।

রাত পর্যন্ত অপেক্ষা, ঘুমিয়ে পড়লেই প্রেমিকার সব কবিতা আমার নামে ছেপে দেব।

না হলে তো ওর পুরুষালি বুকের ছাতি এ জীবনে দেখার সুযোগ মিলবে না।

কবিতা লেখা শেষ হতেই ও নীল আলো জ্বেলে একটার পর একটা আঙুল ঢুকিয়ে দিচ্ছে জ্বলন্ত হাঁপড়ে-

এইবার খেলা শুরু-নপুংসকের।

আলো-ছায়ার কথামালা : হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। পনের ।।

গরমকালের ভোরবেলা একটা ঠাণ্ডা হাওয়ার পরিবেশ। মা ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে থাকত। আমি আস্তে আস্তে উঠে বাইরে পালাতাম। তখন সবেমাত্র একটু একটু আলো ফুটছ। উদ্দেশ্য আম কুড়ানো। কিন্তু সেটাই একমাত্র নয়। আসলে ভোরের আকাশ, ঠাণ্ডা বাতাস আর চারপাশের নির্জনতা আমাকে ভীষণভাবে টানতো। তাই যখন আমবাগানে গিয়ে দেখতাম আমার অনেক আগেই অনেকে আমতলা খুঁজে ফেলেছে তখন এতটুকু মনখারাপ হতো না। ভোরবেলা বাইরে আসতে পেরেছি এটাই যেন অনেক আনন্দের। কোনো কোনো দিন আমবাগানের ভেতরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম। চারপাশের মানুষজনদের আস্তে আস্তে জেগে ওঠা, পাখির ডাক ----- এসব কিছুর মধ্যে ভাসতে ভাসতে কখন যেন আমের কথা ভুলে যেতাম।



।। ষোল ।।


সন্ধে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ আস্তে আস্তে নির্জনতায় ডুবে যাওয়া, বাসায় ফেরা পাখিদের চিৎকার চেঁচামেচি। ঠিক এর পরেই কানে আসত কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। আর কান পেতে শুনতাম সন্ধের আবহসঙ্গীত। একটু পরেই শুরু হতো সন্ধের আরতি। দেখতাম মা হাতজোড় করে ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কোনো দিন দেখতাম মা ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কাঁদছে। আজও যখনই কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ কানে আসে তখনই ভেতর থেকে আমাকে কে যেন টেনে ধরে। সন্ধের আবহসঙ্গীত আবিষ্ট হয়ে পড়ি। পার্থিব জগৎ থেকে আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই।


(ক্রমশ...)

রূপবান মৃত্যু : মাধব মণ্ডল


যাও পা পা করে, খোঁড়ামণি
দেখ মৃত্যু ছুঁড়ছে কারা

মৃত্যুকে একবেলা ভেজে চারবেলা খাই
কতো অপমান করতে হয়েছে গাদা

শ্যাওলাও মৃত্যুকে কাছে বসায়
আমি অভিন্ন মন হয়ে হাসি হি হি

কার কি ছোঁড়ার আছে আর
এই তো এখানে আমি আজও পড়াই

শিঙির কাঁটার যন্ত্রণা ঘিলুর ভাঁজে ভাঁজে
মৃত্যু রূপবান হয়ে নাচো নাচো আরও জোরে

বর্ণহীন প্রভাত : রাজিত বন্দোপাধ্যায়

 

জেগে উঠে দেখি --     
বসন্তের প্রভাত রঙে ঢাকি       
রেখে গেছে ভাল লাগা ভোর !     
আমার জীবন ব্যাপী --     
কেবলি অনিশ্চিতের কঠিন খোল ,       
জীবনেরে অশান্ত করে অর্থনীতি       
ঢেলে দেয় বাঁচার এক তিক্ত লড়াই ।   
নিরন্নের সারিতে বৃদ্ধি --     
চারিদিকে মেহনতের নেই কোন বোল !   
এমন দেশের চালক --   
জীবনেরে দেখায়ে ঝলক কেবলি বিজ্ঞাপনে     
বসন্তেরে করেছে মলিন হতবাক !   
তবু চায় তারা আরো সমর্থন --     
বুকের পাটার দেয় নির্লজ্জ মাপ   
অথচ কাজের বেলায় দেখি  ফাঁক !   
বসন্তে জেগে থাকি যদি --   
বর্ণহীন হোক তবে তাহাদের হাত ,     
মারছে , মারুক যদি ভাত ।   
বসন্তের অঙ্গীকারে হয় যদি হোক     
তাহাদের বর্ণহীন প্রভাত ।     



প্রিয় দুশমন :হেমন্ত সরখেল


যখনই এভাবে বলো
মনে হয়
আমায় হেরে যেতে বলছো।

উৎসাহ হত হলেই মৃত্যু, স্তব্ধতা, বর্তমানহীন
মাটি ঠেকা পিঠে।

এভাবেই অজান্তে দুশমন হয়ে ওঠো।
আরো বেশী ভালোবেসে ফেলি তোমাদের।

তুমিই এসো।
চরম সত্যে-
তোমার আগে তো ওকেও চাওয়া যায় নি!