নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

লাল অক্টোপাস :অনিন্দ্য পাল


একটা লাল অক্টোপাস
হিমাঙ্কের নিচে থাকা একতাল হতাশা
আর চালচিত্রে ভণিতা সার্কাস
এসব আমাকে আর ঘুমাতে দেয় না
এসব নষ্টনাটক ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে
আমার ধৈর্য্য
এমনকি আমার পৌরুষযাপন ও যেন
চাল ধোওয়া জল
সমস্ত ইহলোক ডুবে যাচ্ছে আমার পায়ের তলায়
এক সর্বংসহা যোনি সেখানে শুয়ে আছে
নির্বিকল্প মা হয়ে।

একের পর এক চামড়ার মুখোশ খুলে পড়ছে
এমনকি লাল থেকে বিবর্ণ অক্টোপাসের দেহ
ছিঁড়ে ফেলছে ভাবলেশহীন, ফ্যাকাসে পাঁজর
আশ্চর্য একফোঁটা রক্ত পড়েনি আজও !
অথচ এইতো সেদিন চুক্তিবদ্ধ হল সমস্ত শুষে
নেবার পরও অন্তত পৃথিবীকে ভেজাবে একবার
প্রথম বাসর সঙ্গমের মত।

চুক্তিবদ্ধ সব লাল নীল সবুজ গেরুয়া অক্টোপাসের দল একে একে চলেছে ,আমার বিছানার পাশদিয়ে
খুলে রাখা অন্তর-বাসের দিকে ...

টিপ পড়া বৃহন্নলা : পায়েল মিত্র


রিষড়া মিলনমেলা প্রাঙ্গনে প্রতিবার খুব বড় করে দূর্গা পুজো হয়।চার বছরের ছোট্ট মিমানি সকাল থেকে বায়না ধরেছে আজ সে বাপির সাথে রিষড়া পুজো দেখতে যাবে।মা হারা মিমানির অদম্য জেদের উপর না করতে পারলেন না রাহুল বাবু।

একটু বিকেল থাকতেই রিষড়ার উদ্দেশ্য রওনা হলো ছোট্ট মিমানি আর রাহুল বাবু।পুজো মণ্ডপে পৌঁছে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা নেমে এলো।পুজো উপলক্ষ্যে চারিদিকে আলোর ঝলক বাড়ছে,বিভিন্ন ধরনের জিনিস,ভিন্ন ভিন্ন লোকজন মন্ডপের মাঠজুড়ে।চোখজোড়া পুজো অনুষ্ঠান রেখে মিমানির চোখ দুটো দেখছে মায়ের আদর।যেখানে যেখানে মায়েরা তার সন্তানকে আগলে ধরছে ভিড়ের ভয়ে।ছোট্ট  মিমানির চোখ দুটো আটকে যাচ্ছে অলৌকিকভাবে।
কী বোঝে চার বছরের ওই মেয়ে?কিছুই বোঝে না,তবে ও জানে ওর মা তারার দেশে চলে গেছে।যেখান থেকে কেউ আর ফিরতে পারে না।
সারাবিকেল বাবার হাত ধরে অনেক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে মিমানি।
অবুঝ চোখে জল নেই আছে একরাশ না জানি কেমন হতাশা।
উত্তরের ঠান্ডা হাওয়া জানান দিচ্ছে রাত্রি হয়ে এলো। মন্ডপে ভিড় বাড়ছে,এমন সময় ছোট্ট মিমানি দেখলো মা দূর্গার মূর্তির আড়ালে দাঁড়িয়ে কে যেন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রতিমার দিকে।মিমানি কোনমতে ওর বাবার হাতটা ছাড়িয়ে ছুটলো মণ্ডপের ওদিকে।শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরতেই ঘুরে তাকালো সে।মিমানিকে কোলে তুলে নিয়ে কর্কশ গলায় বললেন,-"কেরে তুই?"এত ভিড়ে একা কেন ঘুরছিস বাছা?"মা,বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিস নাকি?
একটা মোটা গলার স্বর কেমন যেন অদ্ভুত।মিনিট দশেক পর তার ভাবভঙ্গি দেখে একটু ঘাবড়ে গেলো মিমানি।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ছোট্ট মিমানি বললো,-"মা"
আরে আমাকে মা বলছে পাগলি মেয়ে,ততক্ষনে হিজড়া হিজড়া বলে কিছু লোকজন ছুটে এলো মণ্ডপের কাছে।
এত সুন্দর নাক মুখের নকশা,বোঝার উপায় নেই যে সে একজন বৃহন্নলা।মিমানি কোল থেকে নেমে মা দূর্গার পাশে রাখা থালা থেকে একটা লাল টিপ এনে পড়িয়ে দিয়ে বললো,-"একোন তোমায় পুলো মা লাগছে।"
বৃহন্নলা ছলছলে চোখে ছোট্ট মিমানিকে আশির্বাদে ভরিয়ে দিয়ে বললো,-"তোর মতো অবুঝ নিষ্পাপ একটা মন যদি সবার থাকতো তাহলে হয়তো আমাদের স্থান নির্দিষ্ট হিজড়া গোষ্ঠীতে নয় এই সমাজে হতো রে মা।কিন্তু আফসোস আমাদের কোনদিন মায়ের মতো লাগতেই পারে না,প্রতিপলে এটাই আমরা শিখি।খুব বড় হ্।মানুষের মতো মানুষ তৈরি হ্।

মিমানির বাবা রাহুল বাবু মিমানিকে খুঁজে পেয়ে ওকে কোলে তুলে,ওর দুগালে স্নেহ চুম্বন এঁকে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন।
চার বছরের অবুঝ মিমানি হাসতে হাসতে বললো,-"বাপি,বাপি আমিও টিপ পোব্বো।তাওলে আম্মিও মা হয়ে যাবো।
চাঁদের আলো মেখে হাসছে এক তারা।শিশুরা তো এমনই হয়।

মন খারাপ : পলি ঘোষ


আজ আকাশে চাঁদ উঠবে তোমার অপেক্ষায়।
আমি অবাক নয়নে নয়ন জুরে শুধু চেয়েছি তুমি প্রিয় আসবে বলেই।
আজ আমার মনের দুয়ারে এসো প্রিয় সকল প্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
আমার মন খারাপের রাতে  তোমার মার অপেক্ষায় এখানে আমি একলা আকাশ দেখি।
জানো প্রিয় তুমি আসবে বলেই আকাশ মেঘলা বৃষ্টি এখনও হয়নি ।
এখনো পর্যন্ত কোনো কিছু বলতে গিয়েও তুমি প্রিয় ভাবছো শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
একি তোমার আজকের সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত প্রশান্ত সপ্ন গুলো।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি শুধু চেয়েছি তোমায় জানতে।
আমি আছি তোমার অপেক্ষায় থাকবো দেখার সুযোগ পেলেই দেখবো তোমায় হাজার হাজার তারার মাঝে এক শুকতারা রূপে শতবার।
আমি এখন মন খারাপের রাতে সুরে সুর মিলিয়ে গাইছি এক দুঃখের গীত।
আমার স্মৃতি গুলো আমায় উপহার দিতে এগিয়ে আসে আঁধার রাতে ঘুম আসে না মন খারাপের গভীর ঘুমে। 

নারী, তুমি মা হলে... : রমা



এভাবে এভাবেই বলে বুঝি কেউ !
চোখের জলের দাগ
এভাবেই পাথরের কারুকৃতি
জন্মদাগ পার করে
শিকড়ে রাখে নোনতা বিন্যাস,
যাবতীয় যাপনের ঊরুভাঙা 'দ'
এভাবেই পবিত্র যোনিপথে সুরাপাত্রে সুরক্ষিত রাখে বাৎসল্য !
এভাবেই পল্লবিত অক্ষরেরা দীর্ঘশ্বাস বয়ে নিয়ে হৃদ-কুলুঙ্গীতে
মুগ্ধ মুদ্রা রাখে কাম কাম অন্তহীন রিপু !!
পাপ নয়, স্খলনের স্নিগ্ধ উচ্চারণে
পান্ডুলিপি জুড়ে পুড়ে যাই, মরে যাই, আমি এক নিঃস্ব প্রজাপতি!

ভ্রূণ মুখে রোদ  মেখে নেমে এসো নারী !
        একবার মা ডাকি দৃঢ় সন্ততি !!!

স্তব্ধতা :মিতা বিশ্বাস বসু



দিনের আলোতে
যে কথা স্তব্ধ
আঁধারে সে কথা
সাবলীল তত,
মনের বার্তা মনেতে চলেছে-
কালোতে মাখিয়ে
ভাবনা জুড়ছে।

নামুক আঁধার বন্ধ চোখেতে
ভালোবাসা শুধু আছে অনুভবে,
পারাপার তার
নাই কোনখানে-
'স্তব্ধতা'-সে তো
জীবনের মানে।


তখন রাত্রি নেমেছিল: মনোজ কুমার ঠাকুর

তখন রাত্রি নেমেছিল
আকাশের তারারাও চেয়েছিলো
আশাহত হয়ে,
আমি কোনো প্রতিশ্রুতি দিইনি ফিরে আসার,
 সব শক্তি লোপ পেয়ে গিয়েছিলো তখন ।
মনে একরাশ দ্বিধা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম
কোনো এক অজানা গন্তব্যে,
খুব ইচ্ছে করছিলো তখন
কাউকে পাশে বসিয়ে
নিজের ব্যর্থতার গল্প শোনাই,
কিন্তু সেই নিকষ অন্ধকারে 
নিজের প্রতিচ্ছবিও তখন অবর্তমান ।
ভেবে নিয়েছিলাম শেষ সব,
এখানেই শেষ হয় জীবনের অধ্যায় ।
আর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করিনি
একটুখানি আলোর রেখার সন্ধান করার,
হ্যাঁ ঠিক তখনই রাত্রি নেমেছিলো ।