নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সন্দীপ ভট্টাচার্য








প্রিতমা
      


     

এখন যে কথাটা বলতে চাইছি, তা হলো
আমি ভালো নেই।ছত্তিসগড়ের আদিবাসীদের মতো, সিমলিপালের ধনেশ পাখিদের মতো, শুক্লাদ্বাদশীর রাতে যমুনার  জলে তাজের প্রতিবিম্বের মতো আমিও ভালো নেই। তবুও তুমি চাইলে অথবা না চাইলেও আমার পাশে এসে বসো একবার। আর তাকাও আমার চোখের দিকে, একবার না ,লক্ষবার। ইচ্ছে না করলেও নাকে যেতে দাও তাড়া খাওয়া খরগোশের ঘামে ভেজা আঁশটে গন্ধ। এবার হাত রাখো আমার হাতে ,অদৃশ্য হয়ে যাক না হয় আজ আমার আমি। ওই আমি, আমাকে ক্লান্তি ছাড়া আর কিছুই দেয়না। তারপর মাঝের দূরত্ব টুকু শেষ হবার পরও যদি চাঁদ ঢেলে দেয় শুধুই উদাসীনতা, তবে সে নিষ্ঠুরতার দায়ভার আমাকে দিওনা প্রিতমা, মিছে হবে সে অভিমান এই কংক্রিট  দেওয়ালে। তাই লেবুপাতার সে গন্ধ জমিয়ে রেখো তোমার চিকন বুকে, আঁধার পেরোলেই আমি ঝাঁপ দেবো জ্যাকুজি উষ্ণতায়।

রাণা চ্যাটার্জী





পদস্খলন
                           




এ এক আশ্চর্য ডামাডোলের সন্ধিক্ষণে আমরা। পত্র-পত্রিকা, খবরে পড়ছি, দেখছি আর বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটছে না! ছোট থেকে দেখে অভ্যস্ত চোখ,শুনে আসা যে,উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তিগণ, নিজেদের গুণাবলী ও দক্ষতার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হবার সাথে সাথে,গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্করণে সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখেন। না জানি কেন এক গ্রহের ফেরে,তাঁদের পদক্ষলন ঘটছে, এর বেশ কিছু জ্বলন্ত উদাহরণ সম্প্রতি দেখছি আমরা।

কোনো সম্মানীয় পদ থেকে সংশ্লিষ্ট শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির  আকস্মিক সরে যাওয়া বেশ মানহানিকর ও  অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব আমরা এড়াতেও পারি না। আপন ভাস্বরে উজ্জ্বল থেকেও  উচ্চপদে আসীন বেশ কিছু ব্যক্তিবর্গ ,কেমন  না জানি এক  ঝড়ের পূর্বাভাসে টলোমলো আজ। পদ্ম পাতায় জল যেমন ,তেমনি সত্য,মিথ্যার দোলাচলে আমাদের,আপামর ভারতবাসীর অপেক্ষা ওনাদের দিকে তাকিয়ে আসল ঘটনা যাচাইয়ে।

সম্প্রতি ' মিটু ' আন্দোলনের সুনামি ঝড় আছড়ে পড়েছে আমাদের ভারত বর্ষেও । কোনো না কোনো ভাবে যে সকল মহিলারা যৌন অত্যাচারের শিকার হয়েও লোক লজ্জা,নিরাপত্তা,ভয়ের জন্য সে সব ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে বার বার পিছুপা হয়েছেন,সহ্য করেছেন মুখ বুজে। আজ অন্তত তারা একটা প্রতিবাদ করার সুবিধা জনক জায়গায় একত্রিত হতে পেরেছেন। এই আন্দোলনের জোয়ারে যে অনেক, গৌরবান্বিত পদ টলোমলো হয়েছে ও হবেও, পুর্বাভাস পাচ্ছি তা ,এই আন্দোলনের লেজের ঝাপটায় । সাধারণ জনমানসে ওনাদের প্রতি যে সম্মান বর্ষিত হয় তাতে যেন একটা চিড় ফাট দেখা যাচ্ছে যা বড়ো ফাটল তৈরির রসদ জোগাছে জনমানসে।এ এক সত্যিই অবিশ্বাসযোগ্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি।

দেখতে পাচ্ছি নামকরা স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যক্তিরাও কিভাবে ধরাশায়ী হচ্ছেন, সত্য তর্কে যাচ্ছি না তা প্রমাণিত হবে পরে কিন্তু এই যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সিনেমা দুনিয়ার তাবৎ রাজা-উজির এমন কি নিজের বাবা ও বাদ যাচ্ছেনা এই অভিযুক্তের তালিকা থেকে । কোনো এক সময় হয়তো গর্হিত কাজের মাসুল হিসাবে,ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই উচ্চ পদে আসীন ব্যক্তি আজ দেরিতে হলেও তার কৃত কর্মের জন্য শাস্তি পাবেন তার সম্মান ও পদস্খলনে।

অপর আর এক  চাঞ্চল্যকর  ঘটনা, ভীষণ ভাবে জনমানসে রেখা পাত করেই চলেছে প্রত্যহ হেড লাইন নিউজে এই কদিন ধরে ।দেশের শীর্ষ কেন্দ্রীয় তদন্ত কারী সংস্থা সি.বি.আই এর অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া গোলমাল ।একদম প্রকাশ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে পর্যবসিত হয়ে গেছে দুই প্রথম সারির সিবিআই অফিসারের ঝগড়া,কোন্দল।কিন্তু এতে কি হলো এটা কি ভেবে দেখেছেন ওনারা! যে ভরসা,বিশ্বাস ,সমীহ এই সংস্থা এত দিন ধরে জনগণের কাছ থেকে অজান্তেই তিল তিল করে আদায় করে এক মহিরুহতে পর্যবসিত হয়েছে,তার কি হলো! ঘুষ খাবার চক্করে ও উভয়ের প্রতি প্রকাশ্যে তিক্ততা বর্ষণে এই শীর্ষ শব্দের প্রতি,এই উচ্চ পদের প্রতি জনগণের ঘোর বিস্ময়ের জন্ম নিলো।এক লহমায় ঘটে গেল পদস্খলনের মতো ঘটনা আমাদের চোখে। কেন্দ্র সরকার অবশ্য লোকলজ্জার খাতিরে  এই মহান তদন্তকারী সংস্থার হৃৎ গৌরব ফেরাতে ওনাদের জলদি সরিয়ে সংকট দূরীভূত করার চেষ্টা করলেন কিন্তু  খুব সুবিধা জনক বাহবা কুড়াতে পারলো কই! বরং কেন্দ্রের তড়িঘড়ি সঠিক নিয়ম কানুন না মেনে সিদ্ধান্ত অতি সহজে  বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নামক সেরা পদটিরও পদস্খলন  ঘটালো।

সোমিনা ইয়াসমিন




জীবন্ত লাশ
              



জীবন্ত লাশের গল্প
জীবিত এখনো, তবে নিষ্প্রাণ- অবসন্ন,
অগনিত সূঁচবিদ্ধ দেহ।
ক্ষতবিক্ষত প্রতিটি শিরা- উপশিরা
পিনপতন নিস্তব্ধতায় শোনা যায় আর্ত-চিৎকার
সারিবদ্ধ  বেডে শোয়ানো জীবন্ত লাশ।
তারা কেউ -কেউ অর্ধমৃত, কেউ বা পাড়ি দিয়েছে পরপারে মাত্র কয়েক সেকেন্ড ব্যবধানে।
আবার কারো বা চলে ধুক-ধুক  হৃদস্পন্দন।
প্রতিনিয়ত চলেছে জীবন -মরণ লড়াই,
প্রতিটি প্রশ্বাস যেন শ্রেষ্ঠসুখ,প্রতিটি নিঃশ্বাস যেনো ভীতির সঞ্চালন।
সময়ের বিড়ম্বনায় কেউ কারো নয়,লোভনীয় ভালো থাকার তাগিদে মরে মরে বেঁচে ওঠার   আকুল আহ্বান।

শুভম চক্রবর্তী





অপেক্ষা




চায়ের বাসন টা উলটাতেই দেখি শয়ে শয়ে হাজার হাজার পিপড়ে,
আমাকে ওদের মারতেই হবে,অপেক্ষার কৌতুহল আমার নেই।ভাবছি জলে ডুবিয়ে মারবো না আগুনে পুড়িয়ে,যন্ত্রনার তুল‍্য মূল্য হিসেব করছি,
ওমনি একটা বিড়াল আধময়লা বেসিন থেকে আমার দৃষ্টি টেনে নিয়ে গেলো ব‍্যালকনি তে,ব‍্যালকনি থেকে এক ঝাপ(নিসঙ্গ দুপুরে দু বার কাকের ডাক) -বিপরীত দোতালায় প্রেমিকা সুলভ কোনো লক্ষণ না দেখিয়ে রীনা বারান্দায় পায়চারি করছে,কানে মোবাইল ফোন(এই বাড়িটাই আমার বাড়ি,এই বাড়িটাই আমার মামাবাড়ি,এই পাড়া,এই পঞ্চাশ একর আকাশ আমার পূর্বপুরুষের,তোকে গিলে খাবো ধরণের প্রবৃত্তি সূচক মনস্তত্ত্বের ব‍্যাকগ্ৰাউন্ড)কোনোদিন কোনো অপেক্ষা ছিল না টাইপ মুখভঙ্গি,
আমি চোখ উচিয়ে ওর মাথার উপর দিয়ে আকাশ টা দেখে নি,
ও দেখে নেয় আড়চোখে আমাকে,
না নিশ্চিতভাবে এখনো নীল ওর চোখদুটো আর আকাশ।
আসতে করে নামিয়ে রাখি চায়ের বাটি,তখনো গিজগিজ করছে পিপড়ে,(কোনো জীবন তুচ্ছ নয়-কোনো জীবন তুচ্ছ নয়-কোনো জীবন তুচ্ছ নয়! ধরণের বিদ্রুপ মূলক নেকা মনস্তত্ত্বের ব‍্যাকগ্ৰাউন্ড)
না আমার কোনো তাড়া নেই,
বাইরে তাকাই,রীনা তখনো দাড়িয়ে।
আমি 'রীনা ও আকাশের' মাঝে কোথাও একটা তাকিয়ে,
সবটাই কি আশ্চর্যরকম নীল-
দুপুর, দুপুর থেকে রীনার চোখ,চোখ থেকে আকাশ,আকাশ থেকে এক ঝাপ-বিড়াল টা আবার ফিরে এসেছে,(আমি বিড়ালের মতো ঝাপ দিতে পারিনা কেনো?)
রীনা তখনো দাড়িয়ে,পিপড়ে গুলো তখনো গিজগিজ করছে(আমরা বেচে আছি-আমরা বেচে আছি-আমরা বেচে আছি-আমরা বেচে আছি! ধরণের জটিল মনস্তত্ত্বের কমপ্লেক্স ব‍্যাকগ্ৰাউন্ড)।



কাজী জুবেরী মোস্তাক






চলছে সব রুটিন মাফিক 

 

এ শহরে রোজই রুটিন মাফিকই সূর্য ওঠে
ভগবানের খোঁজে সবাই মন্দির কিম্বা মঠে
রুটিন মাফিক ব্যাস্ত সবাই খোদার খোঁজে 
গীর্জাতেও জমেছে মানুষ ঈশ্বরের খোঁজে ৷

এ শহরে রোজই রুটিন মাফিক সকাল হয়
পোড়া কপাল বেকার ঘুরে অফিস পাড়ায় 
ক্ষুধার্ত তবুও খায়না মানিব্যাগ ফাঁকা বলে 
কর্পোরেট লোকগুলো ব্যাস্ত নিজ কর্মস্থলে ৷

এ শহরে রোজ রুটিন করে স্কুলবাস আসে 
বখাটে ছেলেগুলো রোজই স্বপ্ন দেখে বাঁচে
সময়ের মতোই আজকে চলে যাচ্ছে সময়
তবু বুকে আছে ঘুরে দাড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় ৷

এ শহরে রোজ রুটিন মাফিক মৃত্যু আসে
আমার দরজায় যমদূত কখন যেন আসে
চিতা জ্বলে,গোড় খুড়ে কফিন প্রস্তুত সদা
আমার মৃত্যুতে চাইনা কারোই শোকগাথা ৷

এ শহরে রোজ রুটিন মাফিক ট্রেন আসে
চেনা অচেনা কতো মুখ স্বপ্ন দেখতে আসে
কোনঠাসা হয়েও পড়ে থাকে কতশত স্বপ্ন
তবুও সে লড়াই চলছে জীবন করে বিপন্ন ৷

মৌমিতা মিত্র







ছড়ানো আলোর কথকথা
---------------------------




মাথার অনেকটা ওপরে আলো ছড়িয়ে।
আল ধরে ধরে কাছে যেতেই, আলো
টুকরো টুকরো হয়ে ভাঙতে থাকে।

টুকরোগুলো আগলে ধরে এক একটা মানুষ

আমিও হাত বাড়াই
একটা লোক --- তার হাত পা পাতার মত ছড়িয়ে---
ছায়া হয়ে উঠে আসে শুধু।
লোকটার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে সময়ের দাগ।
কথা জমে জমে আজ ওর জিভ নড়ে না আর।
লোকটার দুটো চোখ আবছা।
ও স্মৃতি হারাতে চেয়েছে রোজ
একটু একটু করে।