নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

কৌশিক চক্রবর্ত্তী






ধার্মিক 
*******




বুকে আঁক কেটে রাখো
কখনো সাগরের নোনা জল এলে ভিজিয়ে নাও দাগ

সেপিয়া টোন থেকে তুমিও হিঁচড়ে আনতে পারো প্রবহমানতা-
যারা বয়ে যাচ্ছে 
তাদের আটকাতে যেও না...
যারা জ্বলে উটছে
বরং তাদের পাশে পুঁতে রাখো সৌধ...

হয়ত বুকে মাটি পড়লেই
নিজেকে বিক্রি করতে ইচ্ছে হবে,
আর তখন তুমি হয়ে উঠবে প্রকৃত ধার্মিক...

সোমিনা ইয়াসমিন








মুক্তি
****




                      
নীলপাহাড়  একটি ছোট্ট, সুন্দর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার। সেখানেই জন্ম মুক্তির,নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র কন্যাসন্তান। বাবা ক্ষেতমজুর, হতদরিদ্র না হলেও দারিদ্রতা বর্তমান। মুক্তি নীলপাহাড় গ্রামের উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী এবং অত্যান্ত মেধাবী। গায়ের রং শ্যামলা,নয়ন তার মায়াবী, মুখাকৃতি লক্ষ্মীমন্ত। অনেকেই তাকে কখনো শ্যামা অথবা দস্যিকন্যে বলে ডাকে। ধানক্ষেত, আমবাগান,পুকুরপাড়, নদীর ধারে দাপিয়ে বেড়ানো তার নিত্যনৈমিত্তিক কাজের মধ্যে পড়ে। শিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকে বাচ্চাদের সঙ্গে মাছ ধরে,কালবৈশাখীর রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে আম কুড়ানোর উদ্দেশ্যে, আবার বিচ্ছুদের সঙ্গে
লুকোচুরিও খেলে, গ্রামের বাচ্চা ছেলে মেয়ে গুলোও মুক্তিদিদি বলতে অজ্ঞান। মুক্তিদিদি ছাড়া তারাও যেন অসম্পূর্ণ, মুক্তিও ভীষণ ভালোবাসে ওদের।
গ্রামের মানুষের কাছে মুক্তি দস্যিকন্যা নামে পরিচিত। বাবামায়ের একমাত্র আদরের দুলালী সেইহেতু খুবই স্নেহের, নয়নের পুত্তলী।
তবে তার প্রকৃতি হলো জেদি, ন্যায়পরায়না,সাহসিনী,প্রতিবাদিনী, মুখরা। রুপে লক্ষ্মী নয়,কিন্তু গুনে সরস্বতী। কয়েকদিন হলো উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষা শেষ হয়েছে, আর কিছুদিনের মধ্যেই তার ফলাফল প্রকাশিত হবে।
ইতিমধ্যেই পাড়া প্রতিবেশীরা বলতে থাকে মুক্তির বিবাহের কথা। কিন্তু মুক্তি চায় পড়াশোনা করে স্বনির্ভর হতে। তার স্বপ্ন, জীবনে নিজের পরিচয়ে বাঁচবে, প্রতিষ্ঠিত হবে, পরিবারে পুত্রসন্তানের অভাব দূর করবে, দারিদ্রতার অবসান ঘটাবে। শেষ পর্যন্ত তার স্বপ্নের জালে এক বালতি জল ঢেলে বিবাহের আয়োজন শুরু হলো। বাবা-মার মুখ রাখতে অগত্যা রাজি হতে হলো, কিন্তু বাধ সাধলো যৌতুক। পাত্রপক্ষের দাবী পূরণ করার সামর্থ্য নেই মুক্তির বাবার। অন্যদিকে শ্যামলা মেয়ে হওয়ায় দুঃশ্চিন্তারও অবকাশ নেই। নিরুপায় হয়ে দাবী পূরণের অঙ্গীকার  করেন, শেষ সম্বল ভিটেমাটি বন্ধক রাখেন। মুক্তিও বাধ্য হয়েই মেনে নেয় অদৃষ্টকে।
       বিবাহের লগ্ন উপস্থিত,পাত্রপক্ষের দাবী অনুযায়ী নগদ দুইলক্ষ টাকা,তিনভরি গহনা ও মোটরবাইক যৌতুক দেওয়ার কথা। কিন্তু সময়ের স্বল্পতায় শেষ পর্যন্ত পঞ্চাশহাজার টাকা জোগাড় করে উঠতে পারেননি কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা।
     নির্ধারিত সময়ে মুক্তিকে আনা হলো ছাদনা তলায়, হঠাৎই বরপক্ষ বলে ওঠে, আগে যৌতুক কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নেবে,তারপর বিবাহের যাবতীয় কার্য্যাদি সম্পন্ন হবে। ফলস্বরুপ, পঞ্চাশ হাজার টাকা কম পড়ল। মুক্তির হবুশ্বশুরমশাইয়ের দাবী পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যতীত এ বিবাহ দেবেন না। মেয়েকে লগ্নভ্রষ্টা হতে হবে এ কথা ভেবেই শিউরে ওঠেন মুক্তির বাবা মা প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন। এতক্ষন মুক্তি নিরবে অবাকদৃষ্টিতে মুখে পান পাতা ঢেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসে দেখছিলো মানুষরুপী অর্থলোলুপ পিশাচের বহিঃপ্রকাশ। চারিদিকে তাকিয়ে অনেক খুঁজলো মানবতাকে। কোথায় সে ?  সে কি বিসর্জিত! না, সভ্যতার নুড়িপাথরে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে?
   পাত্রের পিতা যখন বললেন, এ বিয়ে হবে না ঠিক সেই মুহুর্তেই লাজ-লজ্জার তোয়াক্কা না করেই মুখের পানপাতা সরিয়ে গলার রক্ত গোলাপের মালা ছিন্নভিন্ন করে ছুঁড়ে মারলো পাত্রপক্ষের মুখে। মুক্তির এ হেন আচরণে বিবাহমন্ডপে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কোনো কথা না বলেই বিয়ের মন্ডপ ত্যাগ করল মুক্তি। পাত্রপক্ষ লজ্জায়, ক্ষোভে ফিরে গেল। নাহ, এরপর মুক্তির আর সংসারটা করা হয়নি,উচ্চমাধ্যমিকে ফলাফল ঘোষনা হয়েছে,সে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে, স্কলারশিপের টাকায় নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছে, পাড়ি দিয়েছে শহরে, প্রবেশ করেছে বৃহত্তর জগতে।
    হ্যাঁ, দীর্ঘ  সাধনার পর আজ আবার সে ফিরছে তার প্রিয় জন্মভূমি নীলপাহাড়ে। আজ সে শুধুই নীলপাহাড়ের দস্যিকন্যে নয়, নীলপাহাড়ের অহংকার,ঐতিহ্য,গর্ব। সে তারই বাল্যকালের বিদ্যালয়ের হেডমিস্ট্রেস পদে আসীন, এক মুখ সাফল্যের হাসি আর আনন্দাশ্রু নয়নে। সামনে দাঁড়িয়ে গোলাপের মালা নিয়ে গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান ,লগ্নভ্রষ্টা মুক্তির হবুশ্বশুরমশাই,বরণ করে নিতে। আজ সে পেরেছে,নৃশংস পিশাচগুলোর যোগ্য জবাব দিতে।
  মুক্তি বোধ হয় সত্যিই মুক্তি পেলো সংসারের সংকীর্ণ কূটনৈতিক বেড়াজাল থেকে। দেবী পক্ষের পদধ্বনি টের পাচ্ছে, সূচিত হচ্ছে নারীশক্তির। তার লক্ষ্য,নীলপাহাড়ের প্রত্যেক মেয়েই যেন মুক্তি পায়, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স ও পনপ্রথার  নির্মম অত্যাচার থেকে। সে তিলে তিলে গড়ে তুলছে তার প্রতিটি ছাত্রীকে এক একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র। একটু একটু করে তার স্বপ্ন স্বার্থক হচ্ছে, গড়ে তুলছে ভবিষ্যত প্রজন্মের ভাগ্য। শিক্ষকতার পাশাপাশি একটি নারী সংগঠনও গড়ে তুলেছে, যার নাম "মুক্তি"।
    জয় হোক মুক্তির, বাঙালীর প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্ম হোক মুক্তির,গড়ে উঠুক নিষ্কলুষ নারীসমাজ। মাথা তুলে দাঁড়াক প্রতিটি মা, স্ত্রী, বোন, কন্যা। বন্ধ হোক কন্যাভ্রূণ হত্যা, চীরতরে বিদায় নারী নেবে নারী নির্যাতন। সভ্যতার নুড়িপাথরের তলায় ঘুমিয়ে পড়া মানবতা অন্তত এবার জেগে উঠুক, শতহস্তে ধারণ করুক শান দেওয়া মানবিক অস্ত্র। 

এস. কবীর






অশ্রাব্য কান্না 
************

                              

চকিত চোখে ত্রস্ত প্রশ্ন করে
আবর্জনার স্তুপ ছেঁড়া বস্তি শিশু
পৃথিবী, খাবারের খোঁজে কেন
আগুন এত উদরে...?
নোংরা ঘেঁটে খুদ খুটে খায় যখন -
রুটির খোঁজে দুঃস্বপ্নের রাণী এলিজাবেথ
কেকের সুগন্ধে মাতোয়ারা ;
যুদ্ধের মানুষগুলি উপেক্ষা করে ক্ষয়ক্ষতি -
আগুন জ্বালিয়ে খাদ্যের স্ক্র্যাপে উল্লাসে হাসে!
দৈত্যের দৈর্ঘ্যগুলি খনন করে
অভুক্ত শিশু প্রতিনিয়ত ভয়ে
কাঁপছে এবং কাঁদছে....!
তুরস্কের উপকূলে ভাসমান, সিরীয় আরলান-
বিশ্বমানবের কাছে নিয়ে এল প্রশ্নবাণ -
সভ্যতার ছুঁড়ে ফেলা অবহেলিত নির্যাসেও
তারা বসিয়েছে ভাগ...?
পসরার বাটখারার ওজনদাঁড়িতে
একপাল্লা ভারি আর এক পাল্লা
কান্নার অশ্রুজলে অসমান....!
আমার বেঁচে থাকার কেড়ে নিয়ে অধিকার
বানিয়েছো কোন মানবতার বিশ্ব কারাগার?

সোমা দাস






আদিম
*****



তাল তমালের বন, মাঠ ঘাট -
পিছনে ফেলে উদভ্রান্ত আমি 
ছুটে চলেছি আদিমতার পথে. . 

তোমরা আধুনিকতার নামে -
ছুঁয়ে থাকো শিশুর যোনি ! 
রাজনীতি নিয়ে খেলো পাশা! 

আমি আদিমতাকে ছুঁতে চাই. . . . 

তোমরা আধুনিকতার নামে -
ভাঙো লেনিনের মূর্তি , 
খেলো রক্তের হোলি ! 

আমি আদিমতাকে ছুঁতে চাই. . . 

উদভ্রান্ত আমি ছুটে চলি
সব পথ পিছনে ফেলে 
গুহা পথের মশাল জ্বেলে ! 

স্বরূপা রায়






বিসর্জনের সুর
*************




"কি রে, আজ তোকে খুব খুশি খুশি লাগছে।" ত্রিদীব বললো অংশুমানকে।
"ছুটি মঞ্জুর হয়ে গেছে, বাড়ি যাচ্ছি ভাই।" খুশি হয়ে বললো অংশুমান।
"তাই নাকি? আমার পরশুদিন থেকে।"
"তোদের তো নবরাত্রী আর দশেরা। আমাদের তো মহালয়া থেকে পূজো পূজো রব শুরু। প্রতি বছর মহালয়া থেকেই কত ব্যস্ত থাকতাম পাড়ার প্যান্ডেলে। এবার তো তাও সপ্তমীতে যাচ্ছি।"
"আমাদের নববাত্রী নয়দিন ধরে বাড়িতে পালন হয়। বাড়িতে এই সময় পরিবেশই আলাদা থাকে। এইবার প্রথম শেষদিন গিয়ে উপস্থিত হবো বাড়িতে।"
"আমাদের দায়িত্ব যে আজ দেশ ভাই!"
"সেটাই! একদিকে ভালো হয়েছে। নাহলে এই নয়দিন মাম্মি কত যে কাজ করায়!" বলে হেসে দিল ত্রীদিব। অংশুমানও হেসে ফেললো।
"তা ঠিক বলেছিস। আমার তো বাবা নেই। আর কোনো দিদি বা বোনও নেই। তাই মা বাজারে যেত দুর্গাপূজার আগে আমাকে নিয়েই। নিজের জামা কেনার সময় ঠিক আছে। বাকি সময় খুব বিরক্ত লাগতো!"
"সত্যি রে!"
"কিন্তু কষ্টও লাগে ভাবলে, এবার মাকে একা একাই সব করতে হয়েছে। আমার কথা তো সারাক্ষন ভাবেই।"
"আমাদের পরিবারের কষ্ট আমাদের থেকেই দ্বিগুন।"
"সেটাই!"
"আমার সেই গম্ভীর পাপা তো ফোন করলেই শুধু কাঁদে ফোনে।"
"আমার মাও তাই। তখন আরোও খারাপ লাগে।"
"আসলে আমাদের এক বছর মাত্র হয়েছে তো তাই অভ্যেস হয়নি বাবা-মায়ের। আসতে আসতে সব ঠিক হয়ে যাবে। তোর জিনিসপত্র গোছানো শেষ?"
"হ্যাঁ ভাই।"
"কখন বেরুবি?"
"এই আধ ঘন্টার মধ্যেই।"
"থোরা সা ভি হিলনা মাত।" একজন বন্দুকধারী মুখে কালো কাপড় বাঁধা জঙ্গী ত্রীদিব আর অংশুমানের পেছন থেকে মাথায় বন্ধুক ঠেকিয়ে বললো।
সাথে সাথে অংশুমান আর ত্রীদিব হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে পড়লো। ওদের বুঝতে অসুবিধে হলো না যে, ওদের সেনা ক্যাম্পে জঙ্গীহানা পড়েছে।
অংশুমান চালাকি করে হাত বাড়িয়ে পাশে রাখা বন্দুকটা নিতে গেলে জঙ্গী টের পেয়ে যায়, আর সাথে সাথে এক সেকেন্ডেরও দেরী হলো না। জঙ্গীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল অংশুমানের তাজা প্রাণ।
তেরো ঘন্টার জঙ্গী আর সেনার লড়াইয়ে পাঁচজন সেনার মৃত্যু ঘটলো। অংশুমানের মতো ত্রীদিবের তাজা প্রাণটাও অকালে চলে গেল।
দেবীর বিসর্জনের দিন অংশুমান আর ত্রীদিবের সাথে আরোও তিন জন শহীদ যুবকের মৃতদেহ এসে পৌঁছালো ওদের বাড়িতে। যেখানে মানুষ ব্যস্ত দুর্গামা চারদিন বাপের বাড়ি থাকার পরে ফিরে যাওয়ার দুঃখ নিয়ে। সেখানে পাঁচ মায়ের কোল খালি করে চলে গেল ছেলেগুলো।
আমাদের দেশে যেখানে একজন সেনার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, সেখানে উৎসব না মানানোটাই ভালো। আমরা যখন নতুন জামা কার কয়টা হলো, কার এখনো জুতো কেনা হলো না, কার অফিস এখনো বোনাস দিল না, কার সেল্ফিটা ভালো উঠলো না, পূজোর চারদিন বৃষ্টি হবে কিনা, দুর্গাপূজায় ঘোরার জন্য বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড পাবো কিনা বা কোন দুর্গা প্যান্ডেলের থিমটা ভালো, এই নিয়ে ব্যস্ত। তখন আমাদের দেশের সেনা পরিবার থেকে দূরে সীমান্তে দেশকে পাহাড়া দিচ্ছে। যাদের জন্য আমাদের বাড়িতে উৎসবের আলো ফুটছে৷ তাদের বাড়িতেই ছেলে বা মেয়ের শহীদ সংবাদে বাজে বিসর্জনের সুর।


কামরুল বসির





বাইফোকালে রাত্রিবিভ্রম
**********************



তিনটি নি:সঙ্গ পাতা আর একটি নিকশ কালো আকাশ, ছায়া হয়ে- বয়ে যাওয়া নিরব হ্রদের চৌহদ্দিতে ব্যথার মতো নিরবতা ঢালছিল- মাঝরাতে। আমার পরনে আদ্দিকালের প্লাস্টিক, মাথায় জুবোথুবো শুষ্ক চুলের ঢেউ; চোখে নির্ঘুম বাতাসী পরাগ। বাইফোকালের অস্পষ্ট তারায় নি:প্রভ নক্ষত্রের মৃত্যাদেশ-

তিনটি পাতার একটি বোধের লহমায় সৌম কুন্তলীর আত্মিয়স্হানীয়, অন্যটি ইকুয়েডরের প্রান্তিক গিরির দলিত লতা; অবশিষ্টে হাইডপার্ক উল্টে আছে বিচিত্র শৈলশিরায়- আমি হ্রদের নিরাবতায় আমার মাথার শুষ্কতা ভিজিয়ে দু’টো এ্যাসপিরিন গুলিয়ে দিলাম। যেমন কেউ কেউ পকেটে হাত রেখে স্রাগ করে বলে: জীবন বইছে এখন সেন্ট্রাল লাইনের সপ্তম কামরায়! অথবা ক্যাপাচিনোর ফেনা ততটা ফেনিল নয় আজকাল! আমি যেন তার বাহুতে হাত রেখে সমার্থনের সবকটা শব্দ নি:শেষ করে বললাম- তুমি প্রাগে যেতে পারো, সেখানেও তিনটি পাতার হ্রদে মাঝরাত এখন।

হঠাৎ দমকায় বাইফোকালটি উডে গেল।
শুনশান হেমন্তে হলুদ ট্রাকটি ছডিয়ে দিল অপেক্ষার গুঙানি- মনান্তরে শেষ হয়ে এলো আশ্চর্য্য একপেশি মাঝরাত। 

নক্ষত্রের মৃত্যাদেশ নিয়ে আমি লোহার চেয়ারে নি:শ্চল- কোন মানুষ এখানে আসেনি আজও, শুধু কিছু কিছু দ্বিপদ কখনও আলিঙ্গন করেছে বহুতল লালসার জনপদে- এ জনশ্রুতিতে বিভেদের শরীরে না হয় একটু জমুক স্বেদ, যেখানে আমি নিয়তির  
টিস্যুতে নিয়ত মুছছি বাইফোকালের লেন্স।