নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

ধীমান ব্রহ্মচারী






বারুদ
---------



শুধু স্থবির হয়ে মানছি হট্টগোল
রক্ত লাশ দেখছি প্রতি ভোরে রোডের ধারে,
রক্তের হোলি পালন হচ্ছে সেয়ানে সেয়ানে
স্তাবক সাবধান।

মাফিয়ারাজ মাফিয়ারাজ 
এখনো লড়াই আমার,তোমার আর আমাদের মধ্যে,লাল চোখ লুটছে মানুষ ভোট...

আমরাও পারি মার খেতে
আমরাও পারি পাল্টা মার,আর কত চলবে
মাফিয়ারাজ মাফিয়ারাজ

রাতের অন্ধকারে আমরাও দেব হানা
আমরাও মুখোমুখি দাঁড়াবো শাসকের স্তিমিত আলোর রোশনায় মহলে

মাফিয়ারাজ মাফিয়ারাজ
আমাদেরও দুহাতে থাকবে এই মৃত্যু দেশের ঝান্ডা আর লোডেড পিস্তল।

রাজিত বন্দোপাধ্যায়






সেদিনের বিসর্জন    
****************




              অনেক দিন পরে নদীর পাড়ে এল দীপ্ত । তার চুলে আচমকাই ঐ কাশ ফুলের রঙ লাগতে শুরু করেছে । আজ দশমী । একটু দূরে ঘাটে একের পর এক প্রতিমা এসে জড়ো হচ্ছে । সেই দিকে চাইতে ইচ্ছে করছে না । এখানে এই দিনটাতে না এলেই বোধকরি ভাল হত । নদীর সামান্য জল স্রোতের দিকে চেয়ে তার মনে হল । আরো দূরে রেল লাইনের অপর পারে নদী ঘেসে পার্বতী ঘাট । সেখানে মাথার উপর ফিকে নীল ধোঁয়ার দাগ । চিতা জ্বলছে ! হঠাৎ আবার সেই দিনটা তার মস্তিষ্কের ভিতর ছাইতে শুরু করল । ডাক্তার এটাকে প্রশ্রয় দিতে বারবার মানা করেছে তাকে । কিন্তু দীপ্ত বহু চেষ্টা করেও বিসর্জনের ঢাকের আওয়জটা কিছুতেই বন্ধ করতে পারল না । আস্তে আস্তে সিনেমার রূপালী পর্দায় ফুটে ওঠার মত স্পষ্ট হতে লাগল তা দীপ্তের ধূসর মগজে !  
-- শালা ! হারামখোর , রাজনীতি করছিস । বলেছিলাম ঐ পার্টিতে তোকে না থাকতে , শুনলি ? এই রামদেও কুত্তা কো ঘসিট কে লা তো ।  
রামদেও গেট খুলে কম্পাউন্ডের ভিতরে চলে এল । সবে মাত্র কোলকাতা থেকে আসা শারদ সংখ্যা খানা খুলেছে দীপ্ত ভট্টাচার্য । এতে তার একটা বড় গল্প ছেপেছেন পত্রিকাটির সম্পাদক মন্ডলী । একটা বেসরকারী কলেজে ইংরেজী পড়ায় সে । রাজনীতিতে খুবই ইনভলবড্ । কিন্তু পাড়াটার জন্য , এলাকার জন্য এত দিনের এত সেবা কাজে এল না এই দূর্গা পূজোর দশমীর সকালে । সবাই ব্যস্ত , কেউ এগিয়ে এলো না । হঠাৎ ঘরের ভিতর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এসেছিল উমাবতী । তার বৌ । তাকে রামদেও টেনে হিচড়ে গেটের দিকে নিয়ে যাবার ফাঁকে বারবার পায়ে পড়তে লাগল । কিন্তু গেটের ওপারে দাঁড়িয়ে সরযূ লালা নির্বিকার ! রামদেও দীপ্তর কলার ধরা অবস্থায় হঠাৎ বলে উঠলে ,   
-- অরে বস ইসসে তো আচ্ছা হোগা ইসে না মার কর ইসকা বিবি কো হী লুট লেনা । একদম ঝকাস হ্যায় শালী । হ্যাঃ - হ্যাঃ - হ্যাঃ !!
-- তেরা দিমাগ ভী তো ঝকাস হ্যায় রামদেও । লা , তব উসে হী লা ।  
দীপ্ত কে ছেড়ে উমাবতী কে ধরতেই দীপ্ত ঝাপিয়ে পড়েছিল । রামদেও তাকে একটা নীট লাথি ঝাড়তেই তার মাথাটা ভয়ঙ্কর ভাবে লোহার গেটে লাগল । দীপ্ত জ্ঞান হারাতেই রামদেও ঝটপট উমাবতী কে উঠিয়ে নিল কাঁধে ।   
সমস্ত পাড়া কে স্বাক্ষী রেখে সেদিন প্রকাশ্যে যে বীভৎস ধর্ষণ কান্ডটি হয়েছিল , তা পরের দিন খবর কাগজের প্রথম পাতা দখল করেছিল । বিস্তারিত ভাবে ছেপেছিল দৈনিক গুলো । লোকেরা আড়ালে বলেছিল , একটি বিশিষ্ট রাজনৈতিক পার্টির টাকাই নাকি ছিল এই বিস্তারিত ভাবে খবর টি ছাপার পিছনে ! আসল কথা হল একটা প্যানিক ছড়ানো ।
               জ্ঞান ফিরতে সুমসান রাস্তার উপর উমাবতীর রক্তাক্ত নিষ্প্রাণ দেহটা দেখতে পেল দীপ্ত । তার দু চোখ শুকনো । লাল চোখে সে অতি কষ্টে উঠে গিয়েছিল সেখানে । সকালের আমেজ কেটে তখন সূর্য দীপ্তমান দেখাচ্ছিল । থানা পুলিশ করে যখন দেহটা বেরুল , তখন নিজের দলের গুটিকতক ছেলে ছাড়া আর কাউকে পেলনা সে । তার অনুরোধে কোন মিছিল বা শশ্মানে ভিড় জমালো না তার দল । বড় নেতারা কেবল অত্যন্ত লজ্জাকর ও বেদনার বলেই বিদায় করেছিল সংবাদ কর্মীদের সেদিন ।  
পড়ন্ত বেলায় পার্বতী ঘাটে অস্তি বিসর্জনের সময় অপর পারে আচমকাই বেজে উঠেছিল বিসর্জনের বাজনা ! অত ঢাকের প্রবল আওয়াজে হঠাৎ যেন কী হয়ে গেল দীপ্তর । অস্তির সরা সমেত সে পড়ে গেল খরকাইয়ের জলে । ওপারে আদিত্যপুরের ঘাটে তখন বেজে চলেছে ঢাক মহোৎসবে ।   
দীপ্তর জ্ঞান ফিরেছিল হাসপাতালের বেডে । এর মধ্যে এক সপ্তাহ যে কেটে গেছে সে জানে না । আর তারপরই তার মনরোগটা চাগিয়ে উঠেছিল কানে ঢাকের আওয়াজ শুরু হতেই সেদিনের ছবিটা ক্রমে ক্রমে সিনেমার পর্দার মত ফুটে উঠতে শুরু করত ! রাঁচীতে প্রায় বছর দেরেক চিকিৎসা করানোর পর ক্রমে সুস্থ হল ।  
হঠাৎ একটা পটকার বিকট আওয়াজে গড়ে উঠতে থাকা ছবিটা হারিয়ে যেতেই সচেতন হল দীপ্ত । ওদিকে তখন ঘাটে ঘাটে বিসর্জন শুরু হয়ে গিয়েছে । মা যাত্রা শুরু করে দিয়েছেন কৈলাসের দিকে । দীপ্ত হঠাৎই দু হাত জড়ো সেই চলে যেতে থাকা মা দূর্গার উদ্দেশ্যে মনে মনে বলতে লাগল , হে মা দূর্গা , এই জঘন্য রাজনীতি , রাজনৈতিক ইস্যু , ঐ মোমবাতির মিছিল , অভিমান , হিংসে , ধর্ষণ সব ,  সব কিছুরই বিসর্জন হয়ে যাক তোর প্রতিমার সাথে । শান্তি , সৌহার্দ , প্রেম আর অহিংসা দে মা , দিয়ে যা এই পতিতালয়ে !   

পায়েল মিত্র







শুধু মনে রেখো
************



এই যে ম্যাডাম শুনছেন, হ্যাঁ আপনাকে বলছি।পিছন ঘুরে তাকাল মীরা। চকচকে ডার্ক ব্লু শার্ট আর হোয়াইট জিনসের কম্বিনেশনে ফুটে উঠেছে সাহেবের মত মুখ,বা হাতের ব্লাক ওয়াচটা দেখে মনে হচ্ছে ওই হাতের জন্যই সোনাটার সরম থেকে সদ্য আগত।পুরুষ্টু শরীরের বছর ছাব্বিশের ওই সু পুরুষকে এক কথায় হ্যান্ডসাম বলা যায়। পোশাক পরিচ্ছেদ বেশ সৌখিন,পায়ের জুতো থেকে মাথার চুল পর্যন্ত টিপটাপ ফুলবাবু।

 মীরা থমকে দাঁড়িয়ে গেছে। এই তো দুদিন হল ও এই নতুন টপ ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে তেমন পরিচিত হয়ে ওঠার তো কথা নয়। একমাত্র রাইমার ফেমিলি ছাড়া আর কারোর সাথেই তেমন পরিচয় হয়নি। এই ছেলেটি হঠাৎ কি উদ্দেশ্য নিয়ে যেচে পরিচয়ে আগ্রহী সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিল ও। ভাবনার কোনো অবকাশ না দিয়েই ছেলেটি বলল, ম্যাডাম আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে।কোথায় যে দেখেছি কিছুতেই মনে করতে পারছি না। তবে শুনলাম আপনি এই ইয়ারে আমাদের ইউনিভার্সিটিতে ফিজিক্সের বিভাগে প্রথম নির্বাচিত হয়েছেন। তাই দেখার ইচ্ছেটা যে প্রবল ছিল না একথা বলা ভুল হবে। এতদিন পুরো ইউনিভার্সিটির অ্যাডমিশন একচেটিয়া আমাদের দখলেই ছিল।কত ছেলেমেয়েরা কম নাম্বার পেয়ে চান্স পেয়েছে, আবার কতজন নাম্বার থাকা সত্ত্বেও চান্স পায়নি শুধুমাত্র আমাদের সোর্সে।
হঠাৎ আপনার মধ্যে কী এমন দেখল আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার?
যে প্রথম সিটটা আমাদের না জানিয়ে আপনাকে দিয়ে দিল।যতটা শুনেছি আর্থিক দিক থেকেও আপনি তেমন সাবলম্বি নন।
এখানে কোন লোভোনীয়তা কাজ করছে নাকি?
 ছেলেটার কথা বলার ব্যাক্তিত্য মীরার আত্মসম্মানে আঘাত করছিল বারবার। ও একটু গম্ভীর স্বরে বলল,এই কয়দিনের মধ্যে আমার ব্যাপারে বেশ ভালই ইনফরমেশন জোগাড় করেছেন দেখছি।তা এই ইউনিভার্সিটিতে এটাই আপনার কাজ?নাকি মেয়েদের প্রতি একটু বেশি ইনট্রেসটেড আপনি?
অপমানটা ভালোই বুঝল ছেলেটা তবুও হাসতে হাসতে বলল,তা একটু আধটু আছে বইকি।
 আমি নেহাত চার বছরের ফেইলার স্টুডেন্ট।আপনার মত ভাল স্টুডেন্ট নই।
 তবে লোকে এই অধমকে এমেলে ধীমান চৌধুরীর ছেলে রুদ্র চৌধুরি বলেই চেনে। নিজের প্রশংসা করছি ভাববেন না, তবে আমার সম্পর্কে একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন,ইউনিভার্সিটির সকলেই আমাকে চেনে।
তবে আপনার যা বিবরণ পেয়েছি তাতে বুঝতেই পারছি এবারে অ্যাডমিশনে প্রিন্সিপাল স্যারও আমাদের সাথে পলিটিক্স করেছেন।আপনি প্রিন্সিপাল স্যারের কাছের ফিমেল স্টুডেন্ট....
রুদ্রর চোখে মুখে অসৎ ইঙ্গিতের ছোঁয়া দেখেই মীরা বলল, মিস্টার রুদ্র চৌধুরি আপনি বরং আমার রেজাল্টগুলোর ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর নেবেন। আমি মেমারী ড্রিস্টিকে সবকটি কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে গোল্ড মেডেল নিয়ে পাশ করেছি। তারপর আমার স্কলারশিপের টাকায় প্রতিভা ইনস্টিটিউট থেকে এক্সট্রা কোর্স করেছি। তাই প্রিন্সিপালের চেনা বা ঘনিষ্ট কেউ হিসেবে ইউনিভার্সিটি প্রথম সিটটা পাইনি।পেয়েছি সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায় রেসাল্টের জোরে। রুদ্র হাসতে হাসতে বলল, ম্যাডাম আমি তো মশকরা করছিলাম।আসলে আপনার চোখ দুটো আমি কোথায় যেন দেখেছি, ভীষন চেনা লাগছে।সাধারনত এই কথাটা বলেই মেয়েদের সাথে পরিচিতি বারায় রুদ্র।
মীরা বিরক্তির  ভঙ্গীতে বলল, বেশি পরিচিত হবার চেষ্টা করবেন না মিস্টার রুদ্র চৌধুরি। আমি আবার বড়লোক বাবার বেপরোয়া ছেলেদের পক্ষপাতী নই।
মীরার কম দামী সস্তার ফ্লাট জুতোর আওয়াজটা চলে যেতে যেতে রুদ্রকে একটু উপহাস করল যেন।
 ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশন নেওয়া নতুন থেকে পুরোনো সব মেয়েই রুদ্রর আকষর্ণীয় চেহারা ও পার্সোনালিটির জন্য পাগল হয়ে যায়।তাই মেয়েদের ব্যাপারে কনফিডেন্স লেভেলটা ওর বরাবরই বেশি।
 সেখানে মীরা নামক মেয়েটার বাহ্যিক দিক বড্ড সাদামাটা। সত্যি বলতে ওদের ইউনিভার্সিটির হট মোনালিসার ধারে কাছেও টিকবে না ওই মীরা। সেই মোনালিসা সবাইকে বলে, রুদ্রর মত ডেসিং,হ্যান্ডসাম ছেলে একটা নেই ওদের ইউনিভার্সিটিতে। ইউনিভার্সিটি ছেলেমেয়েরা আড্ডায় প্রায় বলে ভগবান রূপ ,টাকা দুটোই খুব কম মানুষকেই দেয়। ফুল মুডে বানিয়েছিল রুদ্র দাকে।
রুদ্র জানে ও কথা বললে ফিদা হবে না এমন মেয়ে খুব কমই আছে।
সেখানে ওই মেয়ের অত রোয়াব দেখে প্রথমে একটু অবাক হয়েছিল রুদ্র। তবে আর যাইহোক মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর। তা বলে মেয়ের ওত ঝাঁজ, দেখে মনে মনে একটু রসিকতার সুরে হাসলো ও।সেম ইউনিভার্সিটিতে তো আছে দেখা যাক কদিন থাকে এই ঝাঁজ। রুদ্র এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবেই নিল। 
একটু তেজি মেয়েদের বাগে আনতে দেরী হয় ঠিকই কিন্তু এই প্রচেষ্টা ওর মন্দ লাগে না।
 এত মেয়েদের সাথে মেশার পরেও প্রত্যেকটা মেয়ে যখন রুদ্রর ছলনার স্বীকার হয়ে বলে রুদ্র আমি তোমাকে বড্ড ভালোবাসি, তখন নিজের পিঠে সাবাশি দেয় ও।
ভাবে সুপুরুষ হওয়ার সাথে সাথে, অভিনয়টাও মন্দ করে না। কেন যে আরো পাঁচ বছর আগে জন্ম হল না ওর, তাহলে ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রির রীতেশের জায়গাটা ওকেই দেওয়া হত।

মীরা ইউনিভার্সিটিতে ঢুকতেই রাইমা পিছন থেকে এসে চোখ দুটো চেপে ধরল।চমকে উঠল মীরা, পরক্ষনেই বুঝল এটা রাইয়ের কাজ। রাইমা মীরার বেস্ট ফ্রেন্ড।খুব বড়লোকের মেয়ে রাই। তবে বড়লোকের মত কোন উচ্চ আকাঙ্খিয় মেয়ে রাই নয়।রাইয়ের মন কাচের মত পরিষ্কার ,জলের মত স্বচ্ছ।কলকাতার টপ বিজনেস ম্যান অনিকেত মুখার্জীর মেয়ে রাইকে দেখে কেউ বলবে না,মা সারদা দেবী বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা। বেশ মিষ্টি সরলসোজা একটা মেয়ে।
১১ টায় KC এর ক্লাসে ঢুকল দুজন।
উফ আজকে রাই বড্ড খেঁপেছে বড়লোকের আদুরে মেয়ে হলে যা হয়।ঠিক,ভুল দেখার দরকার নেই যা ভাল লাগবে সেটাই চাই।আজ আবার ওর কোন ছেলেকে ভাল লেগেছে সে নাকি ওর প্রপোজ অ্যাক্সেপ্ট করেনি। তখন থেকে সমানে কেঁদেই চলেছে।মীরাকে ফ্রিজিক্স এর ক্লাসটা করতেই দিল না, অবশেষে K C বিরক্ত হয়ে বাইরে বার করে দিলেন দুজনকে।
বাইরে বট গাছের নীচে ঠাই দাড়িয়ে থাকল দুজন।মীরার বড্ড রাগ হচ্ছিল,ফিজিক্সের কোন টিচার রাখতে পারেনি ,তাই ইউনিভার্সিটি ফিজিক্স ম্যামের ক্লাস একদিনও অফ করে না ও।আর আজকে রাইয়ের বোকামীর জন্য ক্লাসটা করতে পারল না।রেগে গিয়ে একটু তীব্র কন্ঠে ও বলল,বল এবার কি প্রবলেম তোর?আবার কী হয়েছে?
রাই হেচকি তুলতে তুলতে বলল,আমাকে ওই ছেলেটা না বলেছে।
মীরা নিজের বইগুলো ঠিক করতে করতে বলল,ধূর পাগলী ওসবের জন্য কেউ কান্না করে।কী সুন্দর সেজেগুজে এসছিলিস সব তো লেপটে গেল।কাকুর কত পয়সা,নাম ডাক দেখবি তোর জন্য ওরা রাজপুত্র খুঁজে আনবে।
কিন্তু রাই কোনোকিছুতেই শুনলো না। অনেক কষ্টে ওকে থামিয়ে ক্যান্টিয়ে নিয়ে গেল মীরা।সেখানে মীরা একটাই কথা ভাবছিল কত সস্তা বড়লোকেদের চোখের জল,কদিন আগে রাই সায়নের জন্যও এমন করেই কেঁদেছে। আজ আবার কার পাল্লায় পড়ল কে জানে।
মীরা কখনই নিজের জীবনে সবকিছু এত সহজে পাইনি। গরীব বলে ওর মুখে ভালবাসার কথা শুনলেও সবাই যেন কেমন কটাক্ষ নিয়ে তাকায় ওর দিকে। এসব ভেবে সময় নস্ট করতে চায় না ও,সামনে অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে ওকে।আপ্রাণ চেষ্টা করবে ও নিজের চুড়ান্তে পৌঁছুবার।তবুও প্রিয় বান্ধবীর মুখের দিকে তাকিয়ে মীরা বলল,আচ্ছা আমি কথা বলব ছেলেটার সাথে।

বিকেলে কফিশপে রাইয়ের পাশে ছেলেটিকে বসে থাকতে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়ল মীরা।
এই তো সেই বাউন্ডুলে এমেলের ছেলে,রুদ্র চৌধুরী সেদিন রাস্তায় ডেকেছিল ওকে।ক্লাসেও অনেকের মুখে শুনেছে,পোশাকের মত মেয়ে বদলায়, এই ছেলেটার ক্যারেকটার নাকি একদম ভাল না।রাইয়ের সাথে কি করছে এই ছেলেটা?
মীরা চোখে মুখে গভীর ঘৃনা নিয়ে বলল,রাই চল তাড়াতাড়ি আমার ক্লাস আছে।
রাই কফিশপের টেবিলটা ধরে চেয়ার থেকে উঠে বলল,আরে শোন তো এর কথাই........
কথাটা শেষ হতে দেবার আগেই রাইকে টেনে নিয়ে চলে যায় মীরা।যেতে যেতে মীরা বলল,তুই যে বললি ছেলেটাকে বোঝাতে... সেই ছেলেটা কোথায়?
রাই একটু চড়া সুরেই বলল,সেই কথাটা বলার আগেই তো তুই আমাকে টেনে নিয়ে আসলি।ওই তো রুদ্র।
মীরা বড় বড় চোখ করে বলল, এই এমেলের ছেলে রুদ্রকে তুই ভালবাসিস!
রাই মীরার রিয়াকশনে অত ভ্রুক্ষেপ না করে বলল,হ্যাঁ...তুই রুদ্রকে চিনিস নাকি?
মীরা বাঁধো বাধো সরে বলল,হ্যাঁ,না...মানে...না চিনি না!
মীরা নিজেকে সামলে নিয়ে রাইকে বোঝানোর চেস্টা করল বেশ কয়েক বার, 
কোন কথাতেই রাইয়ের কোন হেলদোল নেই।ও রুদ্রকে না পেলে মরে যাবে এইসব বলতেই মীরা চুপ করে থাকল বেশ কিছুক্ষণ।
এদিকে রুদ্র বারবার কল করছে রাইকে,লাস্ট বারে কল রিসিভ করতেই রুদ্র বলল,"হ্যালো রাই। ওই মেয়েটি তোমার কে হয়?"
"আমার বেস্ট ফ্রেন্ড"বলেই ফোন কেটে দিল রাইমা।

রুদ্র মনস্থির করে নিল মোনালিসাকে কয়দিনের জন্য রেস্ট দেবে।পারোমিতার সঙ্গে ব্রেকআপ করবে। রিয়ার সাথে ডেট ক্যান্সেল।এই উইক থেকে রাই হবে ওর গার্লফ্রেন্ড।
এখনও বুকের মধ্যে হালকা অপমানটা ক্ষত তৈরি করছে ওর।
মীরাকে বোঝাবে, রুদ্র কী জিনিস।
শেষে যেন কি বলেছিল, এমেলের ছেলে হয়ে মেয়েদের চামচেগিড়ি না করে পড়াশোনায় মন দেও। ভাল স্টুডেন্ট বলেই হয়ত এত ইর্ষান্বিত হয়ে শ্লেষ মিশিয়ে দিল কথাটার মধ্যে। 
জাস্ট ফিউ ডেস,তারপর ইউনিভার্সিটি সোস্যাল প্রোগ্রামে সেদিন দেখব মীরা নামক পাখি কি করে খাঁচায় না ঢুকে থাকে। আলতো হেসে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল রুদ্র।

পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে এসে শ্যামা দিকে ডেকে বলল,একটা লিকার দেও তো।
চা টা খেতে, খেতে দেখল পাশের গলিতেই ঢুকছে মীরা।
চায়ের গ্লাসটা নীচে রেখে রুদ্র বলল,
আর কতদিন ছেঁড়া শাড়ি পড়ে কাটাবে?
শ্যামাদি হেসে বলল,বলো দাদা কী করতে হবে।
রুদ্র নিজের পকেটে হাত রেখে বলল, ওই দিদিমনির সম্পর্কে একটু টাটকা খবর দাও দেখি।
 শ্যামা ঠোঁটের উপর একটা কামর দিয়ে বলল,আরে দাদা ওই দিদিমনি তো পরাশোনার জন্য কলকাতায় এসেছে। এখন ওর মাকে নিয়ে ওই গলির মাস্টার শুভঙ্কর কাকুর বাড়ি ভাড়া থাকে।
রুদ্র ভ্রুটা কুচকে বলল,কেন মেয়েটার বাপ?
শ্যামাদি একটু এগিয়ে এসে বলল,বেঁচে নেই বোধহয়।
 এসব মেয়েকে খেলাতে গেলে পলিটিক্স না করলে কাজ হবে না, সেটা ভাল করেই বুঝেছিল রুদ্র। ভাবতে ভাবতে পশ্চিমের রাস্তার দিকে চলে গেল।

ইউনিভার্সিটি ক্লাসের বাইরে অপেক্ষারত রাই।আজ মীরার আগে ক্লাস শেষ হয়েছে ওর।মীরা  ক্লাস থেকে বেরোতেই রাই জড়িয়ে ধরল ওকে।
মীরা হাসি মুখে বলল,কী ব্যাপার রাই আজ এত খুশি?
রাই মীরাকে জড়িয়ে ধরেই বলল,জানিস আজকে রুদ্র আমাকে লাভ ইউ বলেছে।আর হাগ ও করেছে।আজ আমি খুব হ্যাপি।
কথাটা শোনা মাত্রই কেমন যেন হচ্ছে মীরার,
হঠাৎ রাই বলল রুদ্রকে তোর কেমন লাগে?
মীরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সামনে বট গাছের দিকে। নায়কের মত দেখতে,ওমন  সুপুরুষকে দেখে কার না ভাল লাগবে।
প্রথম যেদিন ওকে ডেকেছিল রুদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ও।যেন রুদ্রর করা অপমানের ভঙ্গিতেও কোথায় লুকিয়ে ছিল মীরার ভালোলাগা।সেইদিন মীরা বলেই পেরেছিল নিজেকে সংযত রাখতে।
 তবে এই ভালোলাগাকে বেশি প্রাধান্য দেয় না মীরা।একেই গরীবের মুখে ভালোলাগা শব্দটা বেমানান তারউপর এমেলের বখাটে ছেলে।
রুদ্র অফিস রুম থেকে বেরিয়ে এসে দাড়াল মীরার সামনে।মীরা কটাক্ষ নিয়ে তাকাল ওর দিকে।দুজনের চোখের ইশারায় কথা আদানপ্রদান করার পর্ব শেষ হতে না হতেই রাই চলে গেল রুদ্রকে নিয়ে।
কেমন যেন অদৃশ্য জ্বালা হচ্ছে মীরার বুকের ভেতর। এটাকেই কী বলে ভালোবাসার হিংসে।
আবার নিজেকে সামলে নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল মীরা।

১২ই জুন রবিবার, সোস্যাল প্রোগামের দিন সকালে ইউনিভার্সিটি বেশ জমজমাট। বেশিরভাগ স্টুডেন্টই ফ্যামেলি নিয়ে ঢুকেছে, কয়েকজন ছাড়া।রুদ্র  চারিদিকে তাকিয়ে দেখল, মীরা আর রাই কেউ এখনও আসেনি। তাহলে কি আসবেই না?
তিন চারটে ছেলে নিয়ে ইউনিভার্সিটি গেটের সামনে যাওয়ার আগেই দেখতে পেল ওরা দুজন আসছে।
 মীরাকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছে না রুদ্র।আজ বেশ অন্যরকম লাগছে ওকে। আজ রাই ওকে নিজের হাতে সাজিয়ে দিয়েছে।
রাই নিজেও সেজেছে খুব মিস্টি করে।
১১টার মধ্যে সবাই ইউনিভার্সিটি এসে উপস্থিত। সারাদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর সবার শেষে নৃত্য পরিবেশন করতে উঠবে রাই।
স্টেজের পাশে দাড়িয়ে আছে মীরাও।রুদ্র স্টেজের সামনের বেঞ্চে আড্ডা দিতে দিতে লক্ষ্য করছে মীরাকে।আবেগী রাই ভাবছে রুদ্র ওকে দেখছে ওমন দুষ্টু, মিস্টি দৃষ্টিতে। অতঃপর রাই উঠল স্টেজে।
সময়ের সুযোগ নিয়ে মীরাকে টেনে সাইডে নিয়ে গেল রুদ্র।ওর হাত দুটো মীরার কাঁধ চেপে ধরেতেই মীরার শরীরের কঠিনতা সব হ্রাস পেল, প্রত্যকটা অঙ্গ যেন বলল,ভালোবাসি, ভালোবাসি...ভালোবাসি। কিন্তু মীরাও কম নয়,নিজের অস্তিত্বকে এরকম বখাটে ছেলের স্পর্শে অনুভব করার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়,আর রাই কত ভালবাসে রুদ্রকে। এসব অন্যায়.., এই ভাবনার খেয়াল থেকে বেরোনোর আগেই নিজেকে রুদ্রর থেকে দূরে সরিয়ে নিল।
তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই বলেই হাঁটতে শুরু করল মীরা, রাইয়ের পাগলামির জন্য ততদিনে রুদ্রর সঙ্গে ভালই আলাপ হয়েছিল ওর।তাই তুমি বলতে তেমন একটা বাঁধেনি।
রুদ্র দৌড়ে গিয়ে হাতটা টেনে ধরে বলল,আমি তোমাকে ভালোবাসি মীরা,আর আগের সবকিছুর জন্য সরি।
মীরা রাগে ঘেন্নায় রুদ্রকে চড় মেরে বলল,তুমি না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাইয়ের সাথে সম্পর্কে আছো। কিছুদিন আগে প্রপোজ করেছ। লজ্জা করছে না এসব বলতে?
আমাকে দেখে কী খুব সস্তার মেয়ে মনে হয়? বখাটে ছেলে একটা....আর কোনোদিন আসবে না এভাবে আমার সামনে।
রুদ্র সেইদিন আর কিছু বলেনি, রুদ্রর মাথার একটা চুল বাঁকা করতে গেলে মানুষ হাজার বার ভাবে।ভয়ভীত হয়।কিন্তু এই মেয়েটার মধ্যে এমন কি আছে যে ও আমাকে একটুও ভয় পায় না।এমনকি চড় মেরে চলে গেল তাও আমি রাগান্বিত হলাম না।অন্য মেয়েদের বেলায় আমি সবরকম ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দুবার ভাবি না,কিন্তু মীরার উপর কেন দুর্বলতা কাজ করছে।তবে কি এটাই সত্যি ভালোবাসা?
আমিও কি সত্যি প্রেমে পড়ে গেছি?
ওর কথা কেন এত ভাবছি আমি?
ভাবতে ভাবতে সামনের কল থেকে চোখে মুখে জল দিল রুদ্র।তারপর নীরবে বলল,ওকে আমি বোঝাতে চাই,এমেলের ছেলে রুদ্রর পিছনে লাগলে কি হয়।তাই এত ভাবি ওই সো কল মীরার কথা।

  বিকেলে রাইকে কান্না করতে দেখে,মীরা থতমত খেয়ে গেল।ভাবল রুদ্র রাইকে কিছু বলেনি তো?
এত বছরের বন্ধুত্বে কোন দাগ লাগবে না তো?
মীরা একটু সংকোচ নিয়েই রাইকে বলল,আবার কিহল রাই,তুই কান্না কেন করছিস?
রাই মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,রুদ্র আমাকে আর ভালোবাসে নারে।আমার সাথে ব্রেকআপ করে দিয়েছে।ও নাকি এখন অন্য কাউকে ভালোবাসে।
মীরা নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকে, কী করে বলবে রাইকে যে অন্য কেউ নয় রুদ্রর মোহ এখন ওর উপর গিয়ে আটকেছে। আর যাইহোক রাইয়ের ইমোশন নিয়ে খেলতে দেবে না মীরা।
কিন্তু সমস্যা হল এমন টাইপের বখাটে ছেলে তারউপর ওর বাবা এমেলের পদে বসে আছেন, টুকটাক হিসেবে গন্ডগোল করাও চাপের হবে।
মীরা ভেবেছিল রাইকে সব খুলে বলবে কিন্তু না, রাইয়ের সরলতা কিছু তো বুঝবে না বরং সব প্ল্যান বানচাল করে দেবে।
রাই তো কিছুতেই ঠান্ডা হচ্ছে না।সমানে বকে চলেছে.... আমি দেখে নেব রুদ্রকে।আমি ওকে ছাড়ব না।পাপাকে বলে ওর ব্যাবস্থা করব।আমার লাইফটা শেষ করে দিল,কত ভালোবেসেছিলাম আমি ওকে।তুই ঠিক বলেছিলি মীরা ওই ছেলে পোশাকের মতো মেয়ে বদলায়।তিনমাস টাইম পাস করেছে আমার সাথে।
মীরা রাইয়ের চোখের জল মুছিয়ে বলল,ধুস পাগলী কাঁদে না।আমাদের আদরের দুলারি তুই,ওসব ছেলের জন্য তুই কেন কাদবি ওরা কাদবে তোর জন্য।তাও চুপ হচ্ছে না রাই সমানে হেচকি তুলে যাচ্ছে।রাইয়ের মা,বাবা সব শুনে পাগল হওয়ার উপক্রম।একমাত্র আদরের মেয়ের চোখের জল দেখবে না তাই মেয়ের চাওয়ার আগে সব এনে দিয়েছে এতদিন, কিন্তু এখন বাবা মা হয়েও মেয়ের আবদার রাখতে অক্ষম। 
ভাবতে ভাবতে অঝোরে কান্না করতে থাকে রাইয়ের বাবা মা।
অবশেষে মীরার কথায় বাবা,মায়ের মুখ চেয়ে রাই শান্ত হয়ে গেল। হয়ত এই ধাক্কাটা রাইকে বাস্তবে বাঁচতে অনেক সাহায্য করবে এটা ভেবে মীরাও নিজেকে স্থির করল।
তবে বহু মেয়ের নোনতা জল ঝরিয়েছিল রুদ্র,তাই আজ আর মীরা ময়দানে না নেমে পাড়ল না। 

রুদ্র এতদিনে মীরাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে। রাই আর মীরা টিউশনে যাওয়ার পথে রুদ্র ওদের সামনে এসে দাড়ায়, রুদ্রকে দেখে রাইয়ের ভিতর টা ডানা কাটা পাখির মত ছটফট করতে থাকে।মীরা রাইয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে কানের কাছে এসে বলে,রুদ্র ওর উচিৎ শিক্ষা পাবেই।কথা দিলাম আমি তোকে।
রাই মীরার ভরসায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল সামনের দিকে,
ওই সুযোগে রুদ্র মীরার হাতটা ধরে বলল,মীরা আমি অনেক খারাপ জানি।কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোমাকে কখন যে এতটা ভালোবেসে ফেলেছি বুঝিনি।
মীরা পূর্ন চোখে তাকিয়ে বলল,আমিও তোমাকে ভালোবাসি রুদ্র।কাল ৫নম্বর মোড়, বলেই দৌড়ে চলে গেল রাইয়ের কাছে।
বদলে যাওয়া রুদ্র নিজের শ্রবণশক্তিকে বিশ্বাস করতে পারছিল না,মীরা কী সত্যি বলে গেল।পরিবর্তনের একটা ছাপ ফুটে উঠল ওর মুখে।

সন্ধ্যের আগে ৫নম্বরে মোড়ে পার্কের সামনে দাড়িয়ে, গভীর ভাসা দুটো চোখ। লিপস্টিকের রং যেন ফুটে উঠেছে রক্তিম গোলাপের পাপড়ির মতো,
পরনে লাল,নীল কম্বিনেশনের সিল্কের শাড়ি,খোলা চুলে সে এক মুক্ত লতা। মার্জিত হাসির আড়ালে যেন ছুটে আসছে তীক্ষ্ন জ্যোতির আভা।
রুদ্র কাছে যেতেই মীরা ঘুরে তাকাল ওর দিকে।
রুদ্র ওর হাতের আঙুলের ভিতর মীরার আঙুল নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করে হাঁটতে লাগল পার্কের মধ্যে সাজানো ঘাসের রাস্তা দিয়ে।অনিচ্ছা সত্ত্বেও হার মানলে চলবে না ভেবে এগিয়ে চলল মীরাও।
মীরার চোখের মায়াবী চাহনিতে বাঁধা পড়ে গেছে রুদ্রর সব তেজশক্তি। পাশাপাশি হাঁটছে দুজন।রুদ্রর শরীরে একটা কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে, মীরার শরীরের গন্ধ থেকে।  

রাই রুদ্রর সম্পর্কটা বেশ ভালই এগোচ্ছে। অফ টাইমেও কথা হয় ওদের
রুদ্র বদলে গেছে,মীরার ভালোবাসার ছোঁয়ায়।দেহের ভিতরেও একটা দেহ থাকে,রুদ্রর জীবনে সেই সুপ্ত দেহের জাগরণ ঘটেছে মীরার স্পর্শে।
এ এক নতুন রুদ্র মানুষকে শ্রদ্ধা করে,লড়াই, ঝগড়ার পথ ছেড়ে অনুসরণ করেছে সততার পথ। শুধুমাত্র মীরাকে পাওয়ার জন্য।

 ছুটতে,ছুটতে এল শ্যামাদি,রুদ্র দাদা মীরা দিদিমনি কলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছে তার দেশের বাড়ি।
রুদ্র গালের খাবারটা ফেলে বাইক নিয়ে ছুটে গেল শুভঙ্কর মাস্টারের বাড়ি।
রুদ্র যখন পৌঁছেছে মীরা সব প্যাকিং নিয়ে সবে বাইরে পা রেখেছে , সাথে আছে রাইমা,রাইমার বাবা,মা,কিছু ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস,ম্যাম,প্রিন্সিপাল।রুদ্র সকলকে দেখে একটুও অবাক হয়নি কারন ও জানতো মীরার মতন স্টুডেন্টকে কোন ইউনিভার্সিটি হারাতে চাইবে না।আর মেয়ে হিসেবেও খুব ভাল তাই এত ভীড় ওর চারপাশে।
কিন্তু মীরা রুদ্রকে না জানিয়ে হুট করে সারা জীবনের মত চলে যাচ্ছে দেখে খুব আশ্চর্য্য হয়েছিল।
সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল রুদ্রর।তবুও মাথা ঠান্ডা করে জানতে চেয়েছিল,এসবের মানে কী মীরা?
মীরা না চেনার মত ভান করে বলল,কে আপনি, আপনার সাথে কোন কথা বলতে চাই না আমি।
হতবাক হয়ে রুদ্র বলল,তুমি এরকম বিহ্যাবিয়ার কেন করছো ? আমার সাথে সব সম্পর্ক অস্বীকার করো তুমি?
একটু এগিয়ে এসে মীরা বলল,না অস্বীকার করি না মানবতার সম্পর্ককে।
রুদ্র কপালে হাত দিয়ে বলল,আর ভালবাসা?
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বেশ জোর গলায় মীরা বলল,ভালবাসার মানে বোঝার মত কোন মানসিকতা তোমার ভিতরে নেই।
রুদ্র নিজের চোখের জল মুছে বলল,কিন্তু এখন তো আমি বদলে গেছি মীরা আমি সত্যি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
মীরা নিজের হাতে লাগেজ দুটো নিয়ে বলল,রুদ্র তুমি তোমার সত্যি মিথ্যা ভালোবাসার খেলায় নিজেকে এমনভাবে আটকে ফেলেছো সেখানে বিশ্বাস শব্দটা অস্তিত্বহীন।তাই আজ আর তোমাকে কেউ বিশ্বাস করবে না।
সবাইকে ঠকাতে ঠকাতে নিজের অজান্তে তুমি সব থেকে বেশি ঠকে গেছো। 
রুদ্র মীরার হাতটা টেনে ধরে করজোড়ে বলল,যেয়ো না মীরা।বলো কি চাও তুমি?আমি সব করবো।
মীরা রুদ্রর হাত দুটো ধরে বলল,এই হাতটা ভাল কাজে লাগাও সব ভাল হবে।
প্রিন্সিপাল এগিয়ে এসে রুদ্রর পিঠে হাত দিয়ে বলল,রুদ্র ওকে মীরা নয়, মীরা ম্যাম বলো।বর্ধমান মেমারী থেকে কলকাতা ইউনিভার্সিটি এসছিল টিচিং ট্রেনিংয়ের জন্য কিন্তু মীরা তোমাদের সবার সাথে বন্ধুর মত মিশতে চেয়েছিল, তোমাদের মত করে বুঝতে চেয়েছিল তোমাদের চিন্তা ভাবনাকে। তাই কারো কাছে সঠিক পরিচয় দেয়নি।ও শহর নয় গ্রামকে বেছে নিয়েছে ওর শিক্ষাকতার জায়গা হিসেবে।
 একটা সঙ্কীর্ণ গ্রাম  হৃদয়পুরে সারদা ইউনিভার্সিটির ফিজিক্সের প্রফেসর হিসাবে জয়েন করবে কাল থেকে।আজ আর ওকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না।ওকে শুধু মনে রেখো।
উপস্থিত সবার চোখে জল!
মীরা প্রিন্সিপাল স্যারকে একটা নমস্কার করে হাঁটতে শুরু করল।
দু'হাত বাড়িয়ে ডাকছে আকাশ,বাতাস,সবুজ প্রকৃতি। 
 বাঁধন ছাড়া মুক্ত বিহঙ্গের মত ও ছুটে চলেছে ওর গন্তব্যে।

এক,এক করে উপস্থিত সবাই বিদায় নিয়েছে যে যার মত।মাটিতে বসে আছে রুদ্র,সম্পূর্ণ একা,নিঃস্ব পাগলের মত........









ধর্ষিতা নারী: দিশা
****************




সকালে, সূর্য মামার উঁকি দেওয়ার আগেই দিশা ঘুম চোখে চলে যায় ছাদে। আধো ,আধো সকালে ঘুম, ঘুম চোখে সূর্য মামার সাথে লুকোচুরি খেলা যেন তার প্রথম কাজ। আবার একদিন সূর্য মামা না উঠলে কেমন পাগল, পাগল লাগে দিশার। "যেন দিশেহারা প্রজাপতি"। তারপর শুরু হয় হইচই, পুরো বাড়িতে দিশাকে খোঁজার পালা। কেউ দিশাকে খুঁজে না পেলেও, দিশার ঠাম্মি ঠিক জানে দিশা কোথায় আছে ।ভারি মজার ব্যাপার। আস্তে, আস্তে তার ঠাম্মি চলে যায় ছাদের উপর ।তারপর, দুজন মিলে জুড়ে দেয় গল্প ।সে যে কতরকম গল্প -পুরনো দিনের গল্প, রসিক গল্প, ভুতুড়ে গল্প,আর ঠাম্মি নাতনির খুঁনসুটি তো আছেই।তা চলত প্রায় একঘন্টা ধরে। তারপর, দিশা ঠাম্মিকে নিয়ে নীচে আসত।
সকাল আট টায় সাজান হত খাবার টেবিল ।সেখানে আড্ডা চলত আরও আধঘণ্টা ।
 দিশা থাকত যৌথ পরিবারে।দিশার বাড়িতে ছিল মোট আটজন সদস্য।দিশার ঠাম্মি, মা,বাবা,দাদা,কাকা,কাকি আর তাদের একটা মেয়ে। দিশার কাকা পাশেই একটা মুদিদোকানে কাজ করে ।আর দিশার বাবা ছিলেন একজন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। দিশার দাদা সোমেন সে সবেমাত্র পড়া শেষ করে কলকাতার একটা কম্পানিতে কাজে ঢুকেছে। দিশার মা ও কাকা মা দুজনই সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বাড়িতে সবার খেয়াল রেখে ও রান্নাঘরের হেঁসেল সামলাতে গিয়ে তাদের আর বাইরে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। বাড়িতে সব থেকে ছোটো বলতে দিশার কাকার মেয়ে তৃধা। ছোটো বলতে একেবারে ও ছোটো নয়। তৃধা এইবার আঠারো তে পরেছে ।দৃশা মাত্র চার মাসের বড়ো তৃধার থেকে। সোজা ভাবে বললে দিশারা ছিলো মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবার ।

     কিছুদিন আগেই দু-বোন ভর্তি হয়েছে কলেজে। বাড়ি থেকে ক্ষানিকটা দূর তিনটে স্টেশন পার হয়ে যেতে হয় কলেজ।
দিশার বাবার স্বপ্ন ছিলো তিনি যা পারেননি তা করে দেখাবে দিশা। হাই স্কুলের শিক্ষিকা রূপে দেখবে নিজের মেয়েকে। সেই স্বপ্ন পূরণের আসা নিয়ে এগিয়ে চলছে দিশা ।কলেজ থেকে এসে দিশার প্রধান কাজ মায়ের কোলে মাথা রেখে আদরের সমুদ্রমন্থনে ডুবে গিয়ে একরাশ স্বপ্নের জাল বোনা। তারপর, বসার ঘরে সন্ধ্যের টিফিন খেতে ,খেতে পুরো দিন কলেজে কী হল তা নিয়ে  সবার সঙ্গে জমিয়ে গল্প আর দাদার সাথে দুষ্টুমিষ্টি ঝগড়া।অবশেষে, বাবার বকুনি খেয়ে ঘরে গিয়ে পড়তে বসা। এই ছিল দিশার জীবনের রোজকার  ঘটনা। 
নতুন কলেজ , নতুন সবকিছু সব মিলিয়ে দিনগুলো বেশ ভালই যাচ্ছিল দিশার। কিছুদিন পরেই কলেজে পরীক্ষার তারিখ দিয়ে দিল দিশার। প্রথম পরীক্ষা কোন দিন পরেছে দেখতে গিয়ে দিশা লক্ষ‍্য করল ওইদিন তার বাবার জন্মদিন। মনটা খারাপ হয়ে গেল দিশার। দিশা প্রতিবার তার বাবাকে জন্মদিনে উপহারে কিছু না কিছু দেয়। আর সকাল থেকে সন্ধ্যা পুরো দিন ধরে বাড়ি টা সাজায়। কিন্তু ওইদিন আর তার কোনটাই হবে না।এটা ভেবেই খুব কষ্ট হল দিশার। 
চোখের নিমেষে চলে এল সেই দিন ।সকালে কোনোমতে নাকে,মুখে খেয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো দু-বোন৷ কলেজের পরীক্ষা শেষ হতে, হতেই বিকেল হয়ে গেল। পরীক্ষা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে দিশা, তৃধাকে বলল
-"তুই বাড়ি চলে যা। আর গিয়ে সবকিছু তৈরি হয়েছে কিনা আমাকে ফোন করে জানাস"।
-"কেনো তুই যাবি না"..?
-"আমি পরের ট্রেনে যাব । তুই চলে যা তৃধা"।
-"কিন্তু কেনো দিশা দি"..?
-"আমি বাবার জন্য একটা ঘড়ি নেবো। কলেজের বিপরীতে রাস্তার ওপাশে একটা ঘড়ির দোকান আছে ওখান থেকে। তাই একটু দেরি হয়ে যাবে"।
-"আচ্ছা দিশা দি। সাবধানে আসিস।
 -"হুমম"।
 তৃধা কোনদিন একা আসে না কলেজ থেকে কিন্তু ওইদিন দিদির কথায় সে একাই বাড়ি চলে আসল। 
তৃধার বাড়ি আসতে ,আসতে সন্ধ্যে হয়ে গেল।বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই তৃধাকে একা দেখে,তৃধার জেম্মা আর ঠাম্মি একসাথে জিঞ্জেস করল 
-"তোমার দিশা দি কোথায়"...?
-দিশা দি, কিছু কিনবে তাই আমাকে বলল চলে আসতে।এখোনি চলে আসবে"।
মায়ের মন কেমন যেন কু ডাকতে শুরু করল।
তৃধা দৌড়ে গেল উপরে তার থাকার ঘরে। কাঁধের থেকে ব্যাগ টা রেখেই ফোন করল দিশাকে.....
-"কিরে,কোথায় তুই"..?
-"এই তো একটু পর_ই ট্রেনে উঠব। বাড়িতে সবাইকে চিন্তা করতে বারন করিস।
-"তাড়াতাড়ি আয়।সাবধানে, বাড়িতে সবাই আমাকে বকছে আর খুব চিন্তা করছে..."!
-"আচ্ছা, তুই ফোন টা রাখ। আমি আসছি..।

          ঘড়ির দোকান থেকে ঘড়ি নিয়ে আসতে দিশার অনেক টা দেরি হয়ে গেলো। যখন সে স্টেশনের দিকে এগোচ্ছে রাত আট টা বেজে সাত মিনিট।ওখান থেকে স্টেশন হাঁটা পথ মিনিট কুড়ি লাগে।
দূরভাগ্যবশত,দিশার ফোনে চার্জটা ও শেষ হয়ে গেল। বাড়িতে সবাই চিন্তা করবে একথা ভেবে দিশার মনটা ও কেমন যেন হাস ফাঁস করতে লাগল । চারিদিকে আজ যেন একটু বেশি-ই নিস্তব্ধতা। এইদিকে ফোনটা ও বন্ধ হয়ে গেলো।
বোধহয়, ধ্বংস পর্বের আগে এমনটাই হয় । ভাগ্যের কি পরিহাস যেন আকাশ,বাতাস,মাঠ, গাছ, রাতের স্নিগ্ধতা দিশাকে চিৎকার করে কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু দিশা কিছুই বুঝতে পারছে না।
          এমন সময় দুজন পাশ্যবিকভাবে ঝাপিয়ে পড়ে দিশার উপর। তীরের বেগে দিশার পায়ের তলার মাটি সরে যায়। অন্ধকারের সৌন্দর্যতা যেন ঢেকে গেল কালো ঘনঘাটায়। সব যেন বদলে গেল কিছু মুহূর্তে। মৃত্যুর থেকে বেশি মর্মান্তিক, যন্ত্রণার থেকে বেশি কষ্টের ছিল সেই মুহুর্ত। দিশার শিরা,উপশিরা ছিন্ন,বিন্ন হয়ে যাচ্ছে যখন দিশার কান্না আর ধর্ষকের হাসি মিলে,মিশে হয়ে যাচ্ছে এক।শরীরের বিন্দু, বিন্দু থেকে আসছে গভীর আর্তনাদ ।কিন্তু,কে বাঁচাবে ..!কে শুনবে আর্তনাদ..! একেই নির্জন জায়গা, তারউপর কান্না ,হাসির যেন পাল্লা চলছে। নিস্তেজ শরীর থেকে যেন ভেসে আসছে ইশ্বরের কাছে করা কিছু প্রশ্ন...!
-"হে ভগবান, সত্যের কান্নার কাছে মিথ্যে হাসির পরাজয় কেনো হল না"..।
-"হে মা দুর্গা, তুমি এমন পাশ‍্যবিক অত‍্যাচার দেখে,ত্রিশূলহাতে ধরাধামে কেনো এলে না"।
-"হে ত্রিলোকনাথ, তোমার ত্রিনেত্র খুলে তুমি সেই ধর্ষকে সর্ব শক্তহারা কেনো করে দিলে না"।

ততক্ষনে দিশার বাড়িতে সবার প্রান কন্ঠাগত।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন এল।দিশা কলকাতার একটা নার্সিংহোমে ভর্তি।
সাথে সাথে সবাই চলে গেল না‌র্সিংহোমে। সেখানে গিয়ে যখন দিশাকে দেখলো।ছিন্ন,ভিন্ন বস্র, এলোমেলো চুলের ভাঁজ, শুকনো দাগবিদ্ধ মুখ নার্সিংহোমের বেডে শুয়ে আছে দিশা। 
দিশার চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পড়ছে শিশিরের ন‍্যায় একবিন্দু জল। দিশার এরকম অবস্থা দেখে দিশার শিক্ষক বাবা একহাতে নিজের বুক টা চেপে ধরলো।যেন এখোনি হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার। দিশা পাশ থেকে কলেজের ধুলোবালি মাখা ব‍্যাগের থেকে বাবার জন্মদিনের উপহার হাত ঘড়ি টি বের করল। আর বাবার হাতে হাত ঘড়ি টি পড়িয়ে দিয়ে বললো ..-"শুভ জন্মদিন বাবাঃ"।
তখন, সময় রাত এগারোটা বেজে একুশ মিনিট।
মেয়ের মুখের শেষ কথাটির অপেক্ষায় যেন ছিলেন তিনি। নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না। মাটিতে পড়ে গেলেন।
নার্স ডাক্তার কে ডাকল। ডাক্তার দেখার পর বললেন,...-"সরি,হি ইজ নো মোর"।
ওই দিন দিশা বাবা হারা হল।

কিছুদিন পর বাড়িতে নিয়ে আসল দিশাকে। চঞ্চল, প্রাণোচ্ছল সেই মেয়েটি আজ যেন নীরবতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন এক জড়ো সমষ্টি। বাড়িতে পূজার জন্য কেউ লড়তে চাইনি। মধ‍্যবিত্ত পরিবারে ঝামেলা কী তারা তা জানেই না। আর জানতে ও চায় না। সব কিছুর জন্য সবাই দায়ী করল দিশাকে, এমনকি নিজের মা ও।
কিন্তু, দিশার মৃতপ্রায় ঠাম্মি, দিশাকে বলল তোমার থেমে থাকলে চলবে না। তোমার বাবার জন্য তোমাকে লড়তেই হবে। অন্তত লড়াইয়ের সূচনা করতেই হবে।
ভেঙে পড়া দিশা আবার উঠে দাঁড়াল।
পরেরদিন সকালে সে সবার প্রথম ছুটে গেল পুলিশ স্টেশনে। দিশা সেখানে থানার একজন অফিসারকে তার সাথে হওয়া পুরো ঘটনাটি জানাল। পুলিশ অফিসার তেমন কোন রেসপন্স না দিলে, উত্তেজিত হয়ে পরে দিশা।
তখন পুলিশ অফিসার জানায়..
-"পুরো দিন, ধর্ষনের অহরহ কেস আসে আমাদের হাতে।সব ধর্ষিতাদের কথা মতো ধর্ষণের কেস নিয়ে মাতামাতি করলে দুবেলা খাওয়ার টাইম পাব না।আপনি তো মধ‍্যবিত্ত ঘরের মেয়ে আগুন নিয়ে খেলবেন না, হাত পুড়ে যাবে।যান যা হয়েছে ভুলে যান"।
    দিশা ওই দিন ওই পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেছিল..
-"আগুন নিয়ে খেলার জন্য ধনী, গরীব বা মধ্যবিত্ত কোনো বিভেদের দরকার নেই। আগুন নিয়ে যেই খেলবে হাতটা তার-ই পুড়বে।ধনী বলে আগুন টা জল হয়ে যাবে না। কিন্তু আপনাদের মত পুলিশরা ততদিন ভালো করে দুবেলা খেয়ে নিন, যতদিন না কোনো ধর্ষক আপনাদের ঘরের দিকে হাত বাড়ায়। 
      পরেরদিন দিশা ছুটে যায় এক বড়ো নেতার কাছে। সেখানে ন‍্যায় বিচারের আশা দেওয়া হয়।বেশ কিছুদিন, দিশা ওখানে ছুটতে থাকে পাগলের মত। তার কিছুদিন পর, দিশা জানতে পারে মিথ্যে আশা দিয়ে তাকে দিনের পরদিন ঘোরানো হচ্ছে। সেইদিন সব নেতামন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে দিশা একটাই কথা বলেছিল..
-"আপনাদের কোনো দোষ নেই, দোষ আমার আমি ভুলে গেছিলাম যারা একটা গদির জন্য নিম্নের চরম সীমায় পৌঁছতে পারে ।সে আমায় কী নীচের থেকে টেনে তুলবে"।
    সমাজে মিডিয়াতে বেশকিছু দিন হরতাল হলেও,তা ছিলো ক্ষণস্থায়ী। কাছে গিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বললে। মাথায় লেগেছে কুলটা নারীর তকমা।

    কেটে গেছে তিনটে মাস।ছেলের মৃত্যু শোক, আর প্রিয় নাতনির যন্ত্রণা গ্রাস করে নিলো দিশার ঠাম্মির প্রান। মারা গেলেন দিশার ঠাম্মি। বেঁচে থাকার শেষ সম্বল টুকু ও হারিয়ে ফেলল দিশা।
সর্বশান্ত হয়ে, কিছু কথা পৃষ্ঠা বন্দি করল দিশা
         *****তোদের কোনো দোষ নেই,তোরা একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছিস।
"দোষ সেই মায়েদের যারা দশ মাস দশ দিন নিজ গহ্বরে রেখে,প্রসব বেদনা সহ‍্য করে তোদের জন্ম দিয়েছে"।
       *****তোদের কোনো দোষ নেই, তোরা কোনো মায়ের কোল খালি করেছিস।
"দোষ সেইসব মায়েদের যারা অতুর ঘরে তোদের নিষ্পাপ মুখ দেখে নিজ কোল খালি করতে পারেনি"।
        *****তোদের কোনো দোষ নেই তোরা একটা মেয়ের আর্তনাদ দেখে হেসেছিস।
"দোষ সেইসব মায়েদের যারা 'শৈশবে তোদের আর্তনাদ দেখে কেঁদেছিল"।
        *****তোদের কোনো দোষ নেই, তোরা কোনো ভাইয়ের থেকে তার বোনকে ছিনিয়ে নিয়েছিস।
"দোষ সেইসব বোনেদের যারা তোদের ভাই বলে পরিচয় দেয়"।
        *****তোদের কোনো দোষ নেই, তোরা কোনো শিশুর শৈশবকাল নষ্ট করেছিস।
"দোষ সেইসব মায়েদের যারা তোদের শৈশবকাল সাজিয়েছে"।
       *****তোদের কোনো দোষ নেই, তোরা সমাজের বুকে পশ‍্যের তুলনাধীক হিংস্রতার প্রমাণ দিয়েছিস।
"দোষ সেই সমাজের যারা হিংস্র পশ‍্যের ন‍্যায় তোদের বন্দি করে রাখতে পারেনি"।
        *****তোদের কোনো দোষ নয়, তোরা বন্ধু সেজে ভিড়ের মাঝে বিলীন করে দিয়েছিস কোনো নারী দেহ।
"দোষ সেইসব নারীদের যারা বন্ধুত্বের যথাপযুক্ত মর্যাদা দিতে গিয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে নিজের অজান্তেই"।
       *****তোদের কোনো দোষ নেই, তোরা পুরুষ রূপে অসূর।
"দোষ আমাদের, আমরা নারী রূপে ত্রিশূলময়ী দূর্গা হতে পারিনি"।
কিন্তু আমরা নারী রা যে প্রানের সৃষ্টিকর্তী। আমরা যে তোদের মত অত সহজে প্রান নিতে পারি না। এমন না হয় তোদের পাপের ঘরা পূরন হলে প্রান সৃষ্টির পিছনে যে সামান্য তোদের ভূমিকা রয়েছে।তা নিষ্কাম হয়ে থেকে যায়।
           'কেমন মরন খেলায় মেতেছো তা যদি                                                          বুঝতে'। 
তা হলে,    
         'এমন কার্য করবারকালে সকল নারী মাঝে মাতৃদর্শন করতে'।

দিশা  ছিলো রংবাহারী এক প্রজাতির মতো। তার সব রং কেরে নেওয়া হলেও। শান্তির প্রতীক সাদা রং তা কেউ কেরে নিতে পারেনি। সর্বশান্ত দিশা নিজের প্রাণ ত‍্যাগ করবার আগে চার বছরের একটি অসুস্থ শিশুকে তার দুটো চোখ। আঠারো বছরের একজন অসুস্থ যুবতীকে দুটো কিডনি দান করে দিয়ে যায়।
আর পৃথিবীতে সবাইকে এটাই বুঝিয়ে দিয়ে যায় জীবনে বেঁচে থাকার জন্য বিবেক ও মনুষ্যত্ব শ্রেষ্ঠ সম্পদ। দিশা পুরো জীবনে মানুষের জন্য যা ভালো করতে চেয়েছিল তা কিছু সময়ে করে চলে গেলো।
দিশা মৃত্যুর মুখে ঢুলে পড়বার আগেও। পুরো পৃথিবীকে, পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠা সমাজকে আর সেই সমাজে বসবাসকারী প্রত‍্যেকটা মানুষকে যা শিখিয়ে গেলো তা, জীবনগত শিক্ষা। অন্তত কোনো পুঁথিগত শিক্ষা থেকে পাওয়া সম্ভব নয়।
               সবশেষে তাই একটাই কথা বলতে চাই একজন ধর্ষিতা নারী ও পারে নতুন জীবন দিতে।যা প্রমাণ করে দিয়েছে দিশা।তাই আপনারা ধর্ষকদের বদলাতে না পারলেও। সমাজকে বদলাতে পারবেন। আপনারা নিজেদের ভাবনা বদলাতে সক্ষম। একজন ধর্ষিতা নারী কিন্তু ধর্ষনের পর, ধর্ষকের ভয়ে মৃত্যু বরণ করে না। করে সমাজের ভয়ে। তাই সমাজ যদি একটু ও বদলায় তাহলে অন্তত কিছু ধর্ষিতা নারী সমাজের থেকে পাওয়া অপমান, গ্লানির, অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মৃত্যু পথযাত্রী হবে না।
                       'সৃষ্টি নাই করিতে পারো'..!
                       'ধ্বংস করিয়ো না'...!

রবি মল্লিক




শেষ যাত্রা 
********




আমি সৌরভ; সৌরভ বিশ্বাস৷ বাবার নাম গোপাল কৃষ্ণ বিশ্বাস৷
স্থানীয় দেবীনগর এলাকায় বসত বাড়ি৷ বাড়িতে মা, দাদা , বৌদি, আর দেড় বছর এর এক ভাস্তি আছে৷ গত ফেব্রুয়ারিতে চব্বিশ বছর পূরণ হয়েছিল আমার৷ কম্পিউটার ডিপ্লোমা এবং বি.সি.এ শেষ করার পর গোয়ালপোখর ব্লক অফিসে টেক্নিক্যাল অপারেটর পদে কাজ করছিলাম গত সাত মাস থেকে৷ চাকরি পাওয়ার খবরটি যখন পেয়েছিলাম তখন সর্বপ্রথম বহু প্রতীক্ষিত স্পোর্টিং বাইকটি কিনেছিলাম৷ পূজো দিয়ে প্রথম বাইকটি দেখাতে নিয়ে যাই আমার মাস্তুতো দাদা ছোটকা'র কাছে৷ সেদিন আমার মা শাঁখ বাজিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে বাইকটিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন৷
    
                       আরও একজন ছিলো আমার জীবনে যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম৷ পারমিতা, আমার স্কুল জীবনের সাথী৷ দীর্ঘ বারো বছরের সম্পর্ক ছিল আমাদের৷ ওর বাবা কোনোদিনই মেনে নেয়নি আমাদের সম্পর্ককে; কিন্তু আমরা কোনমতেই আলাদা হতে রাজি ছিলাম না৷ তাই চাকরি পাওয়ার পর বাবাকে পাঠিয়েছিলাম ওদের বাড়ি পাকা কথা সেরে আসতে;এবার আর না করতে পারেনি পারমিতার বাবা৷ খুব ভালোভাবে চলছিল জীবনপ্রবাহ৷

                          এই সাত মাসের কর্মজীবনে একটিও সি.এলনেই নি, কেননা আমার অফিস কামাই দেওয়া একেবারেই পছন্দ ছিল না৷ প্রায় প্রতিদিনই ট্রেনে চেপে যেতাম অফিসে, কারন রাস্তাও তো কম ছিল না৷ কোন কোন দিন খুব দেরি হয়ে গেলে বাইক নিয়েই বেড়িয়ে পরতাম৷ যদিও মায়ের সবচেয়ে বেশী আপত্তি ছিল তাতে; কারন, ওই রাস্তায় প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যেত৷
                         আজ সকালে মায়ের হাত থেকে ঘি ভাত খেয়ে সেই বাইক নিয়েই বেড়িয়েছিলাম,কেননা দেরি হয়েছিল সকালে ঘুম থেকে উঠতে৷ মা অনেক বারণ করেছিল আজও, তবু অন্যান্য দিনগুলির মতো বলেছিলাম কিচ্ছু হবে না মা তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো৷ পিঠে ব্যাগ, চোখে সানগ্লাস, কানে হেডফোন গুঁজে দিব্যি বেড়িয়েছিলাম৷ ও হ্যাঁ হেলমেটও ছিল সাথে, কিন্ত মাথায় নয় রেখেছিলাম বামহাতে৷ শিলিগুড়ি মোড় পেরিয়েই উঠেছিলাম ৩৪ নং জাতীয় সড়কে৷ বাস, ট্রাকের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম৷ তখনও ভাবতে পারিনি যে আর কিছু এগিয়ে কি আপেক্ষা করে ছিল আমার জন্যে৷ গতি না কমিয়েই এগোচ্ছিলাম,দেরি হয়ে গিয়েছিল যে৷ পানিশালার কাছে যে হিমঘরটি আছে সেখানে পৌঁছাতেই সামনের চলতে থাকা ষোনচাকা মালবাহী ট্রাকটিকে অতিক্রম করতেই বাইকের সামনের চাকাটি গিয়ে পড়ল রাস্তার মাঝবরাবর একটি গর্তে৷ আমি আর সামলাতে পারিনি৷ পড়ে গিয়েছিলাম রাস্তায়, এরপর আর কিছু মনে নেই৷
                              যখন  চোখ খুললাম তখন আমি রায়গঞ্জ হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি৷ আমার চতুর্দিকে বহু মানুষের ভীড়৷ সবাই ভীড় কাটিয়ে আমাকে একবার দেখে নিতে চাইছে৷ আর কিছু মানুষ আমার পাশে বসে অনবরত কেঁদেই চলেছে৷ বুঝতে আর বাকি থাকল না যে আমার সাধের পার্থিব শরীরে আর প্রান নেই৷ হয়তো আর কিছু সময় পরে আমার এই শরীর চিতায় শায়িত থাকবে অগ্নিসংযোগের অপেক্ষায়, অর্থাৎ পুরে ছাই হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়৷  মনে পরতে লাগল মায়ের কথা৷ মাকে সকালে বলে এসেছিলাম আজ বিকালে কাঁঠাল চিংড়ি ভাত খাব; মা কী রান্না বসাতে পেরেছিল? মা যখন জানতে পারবে যে আমি আর নেই, তখন মা কী তা সহ্য করতে পারবে? বাবার সাথে গত পরশুই কথা হল আমার নতুন বাড়ির প্ল্যান নিয়ে; বাবা কী ইঞ্জিনিয়ার কাকুর সাথে কথা বলেছিল? পারমিতা কী খবর পেয়েছে? খবর পাওয়ার পর ও কী তা মেনে নিতে পারবে? মাঠে আজ বিকালে ক্রিকেট ম্যাচ খেলার কথা ছিল, তাও আর সম্ভব হল না, অফিসে কত কাজ পরে আছে আমার অপেক্ষায়৷ এসকল কথা ভাবতে ভাবতেই ওরা মাচায় করে আমার  নিষ্প্রাণ দেহটিকে নিয়ে শ্মশানে এসে পৌঁছেছে৷  আত্মীয় স্বজন, বন্ধুরা সবাই এসেছে দেখছি৷ যাদের নিয়ে বরযাত্রী যাব ভেবেছিলাম তাঁরাই আজ আমার শ্মশানযাত্রী৷ ওই ভীড়ে একজন মানুষ ছিলেন যাঁকে এই রূপে আমি কোনদিন দেখিনি৷ যাঁর দাপটে আমাদের পাতিমিলের কেউ কখনও উচ্চ স্বরে কথা বলার সাহস পর্যন্ত পেত না, তিনি আজ অসহায়ের মতো পড়ে রয়েছেন শ্মশানের বটগাছটির তলায়৷ হ্যাঁ উনি আমার বাবা৷ সকলের মুখগুলি ফ্যাকাসে ধরনের বিবর্ণ হয়ে ছিল৷ না, তবে মা এবং পারমিতার সামনে যাওয়ার সাহস পাইনি; হয়তো ওদের যে অবস্থায় রেখে এই অকালে চলে যেতে হচ্ছে তা আমি দেখতে পারব না৷
                          এসবের মাঝে এক ঐশ্বরিক আলো চোখে এসে পড়ল কুলিক নদীর কিনারা থেকে৷ সেই আলোয় চোখ পরতেই দেখলাম একটি সোনালী আভাযুক্ত রথ দাঁড়িয়ে আছে৷ সেই রথ থেকে দু জন ডানাওলা দেবদূত আমার দিকেই এগিয়ে আসলেন৷ আমাকেও নাকি যেতে হবে উনাদের সাথে৷ গিয়ে উঠলাম সেই ঐশ্বরিক রথে৷ ততক্ষণে আমার পার্থিব শরীরকেও তুলে দেওয়া হয়েছে চিতায়; আমার দাদা হাতে আগুন নিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ অজস্র অসম্পূর্ণ কাজ ফেলে চোখে জল নিয়েই চললাম মরণোত্তর শেষ যাত্রার উদ্দেশ্যে আরও ফেলে রেখে গেলাম পিছনে কিছু সম্পর্ক , একরাশ মায়া আর কিছু আফসোস৷

আফরোজা সুলতানা






অবক্ষয়ের মানচিত্র
*****************



আমার শহর জুড়ে মোমবাতি মিছিল 
তবু ভরা গ্যালো  না মা এর শূন্য কোল 
বন্ধের ডাক ডেকে প্রতিবাদী চিৎকার, 
তবু দুর্নীতির রেশ চলে অকুণ্ঠোচিত্তে 
কড়া আইন অনুমোদনে অনীহা 
তাই তো খূকী থেকে বৃদ্ধা সকলেই ধর্ষিতা ।
সমকামীরা পেয়ে গ্যালো ছাড়পত্র 
দেখিয়ে বাকি ভিন্ন প্রেমিকদের বৃদ্ধাঙুল 
তাই আজও কোনো জুটি গলায় ফাঁস দেয় 
আজও কোনো রিজওয়ানুর 
রেলে কাটা পড়ে থাকে ।



রণধীর রায়






একটি ঘুড়ির গল্প
****************



(...যদিও এ বাংলায় শখ করে কেউ শোভাবাজারের শোভা বাড়াতে আসে না। দূর্গা প্রতিমাই পূজ্য।)


লাল ঘুড়িটা টলতে টলতে চৌমাথার মোড়ে
 আছড়ে পড়ল দারূণ অনিহায়,
লাটাই বিচ্ছিন্ন বহুদিন, তবুও-
 আকাশ ছাড়েনি এতকাল
নিজের অজান্তেই ভেসে বেড়িয়েছে বহুরূপী ঘুড়ি
কখনও  নৌকা কখনও মুখপোড়া।

আকাশের বুকে ঘুড়ি না কী
 ঘুড়ির বুকে অসীম আকাশ?
বড় রাস্তার দু'চোখ দেখেছে ঘুড়ির আস্ফলন
দেখেছে হাওয়া বদলে ঘুড়ির নোনাজল
বুড়ো তাল গাছটা দেখেছে ওর প্রণয়
কী ভিষণ জেদ!

তবুও আজ আছড়ে পড়ল ঘুড়িটা।
শিশুর নরম পায়ের মত টলমল করছে ওর শরীর
ভেজাপাতা অমসৃণ ত্বক এখনও লাল
কপালের লাল দাগ যদিও অস্পষ্ট
কিছুটা অভিমানী স্কুল পড়ুয়ার মত অসংযমি চাউনি
অবাধ্য নদীর মতন কুল ভাঙা গতি আজ ক্লান্ত
শুধুই হাতেহাতে হাত বদল যে!

লাল ঘুড়িটা আজ ভো-কাট্টা।