নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সুদীপ ঘোষাল



শিশিরের শিকল
***************



যে ছেলেটি বাবা মা কে নিজের শ্রদ্ধা উজাড় করে দিয়েছিলো
সে  আলাদা করে ঈশ্বর চেনে না
আলোকিত পূর্ণিমার মত উজ্জ্বল দুটি চোখে
মা বাবাকে দেখতো
তারপর সেবাব্রত তার কাছে  আনন্দময়...

তারপর সে এক আলোর দূত হলো
ও দেবদূত হলো
অথচ দেবতা বলতে সে বোঝে মানুষ
জোছনার মত উৎসারিত আলো তার মুখমন্ডলে
মানুষ তাকে মানুষ বলছে না
দেবতার আসনে বসেও সে দেবদেবী বোঝে না
ও বোঝে মানুষ,প্রাণী,কীটপতঙ্গ আর নির্জন শিশিরের শিকল...

শুক্লা মালাকার






ভাসান
 ******




আজ সারাদিন বিসর্জন। সপসপে শরীরে সারাদিন গঙ্গার ঘাটে।  দুগগা মায়ের জলে ডোবা  উলঙ্গ শরীর টেনে টেনে আঙ্গুল ফুলে যাবে। শরীরের খাঁজে জমবে পাঁক।মা তার নিজের সংসারে ফিরেছে আগেই। পুরুতরা পাঠিয়ে দিয়েছে। থেকে যাওয়া কাঠামোটা জলে দিতে হয়। জলে গলে যাওয়া মায়ের বেঁকা, খিচ খাওয়া শরীর টেনে তোলে রবি,পটা,মণির মতো অনেকে।

কুড়ি থেকে পঞ্চাশ এই দর যাচ্ছে এবছর।হাজার হাজার মা জলে ভাসছে। তার থেকে গোটা পঞ্চাশটা টেনে তুলতে পারলেই কেল্লা ফতে। আজকাল পুলিশ থেকে মেশিন দিয়ে বড় বড় ঠাকুরগুলো তোলে। সেগুলোতে হাত দেয়া যায় না। ছোট আর মাঝারি মাপের গুলো নিয়ে কাড়াকাড়ি। খিস্তি খেউড়ও হয়।  

মণির মা বলে যারা চলে যায় তাদের ফেরানো যায় না। যেমন ওর বাবা এই ঘাটেই দুগগা মায়ের সঙ্গে ভাসান গেছে। তখন তো আর মেশিন ছিল না। দশ বারোজন মিলে মায়ের পেল্লায় শরীর জলে ফেলত, টেনে তুলতো খড়-কাঠের বাঁধন। সেবার মায়ের গলে যাওয়া শরীরের সঙ্গে মণির বাপের শরীরটাও তুলে এনেছিল। পরের বছর মা ফের বাপের বাড়ি এল। মণির বাপটা আর এল না। কিছু সময় আর দুঃখ ফেলে গেল। মা টাতো কত সহজেই দুঃখের মধ্যে মিশে গেল। মণি, বোন আর ঠাকমা, তিনটে পেট চালানো চাই। মণি সেই থেকে কাজের ধান্দায় ঘোরে। যখন যেমন পারে। চালিয়ে তো এল বারটা বছর। আলো সে কিনবেই এটাই পিতিজ্ঞে।
  
বোনের হাতে টাকা ধরিয়ে জলে নামতে নামতে ঘাটের সিঁদুরখেলা দেখছে। বেশ লাগে মণির। সব মেয়েরা কেমন মা মা হয়ে যায়। শুব বিজয়া বলে যখন জড়াজড়ি করে মনে হয় দুনিয়ায় ঝগড়া বিবাদ কোন কিচ্ছু নেই। পাঁকে বসে যাওয়া পা টেনে তুলতে জান বেরোচ্ছে যেন। বড্ড কাহিল হয়ে পড়েছে। একটা ধাক্কা, মেশিনে ঝুলে থাকা মায়ের পা লেগে পড়ে গেল। গাদা হয়ে থাকা মায়ের কাঠ-খড়ের তলায় কে যেন কাঁদছে মনে হল। শুয়ে পরেছে মণি। দেখতে পাচ্ছে মেশিনে চড়ে ঝুলতে ঝুলতে মায়ের হাড়গোড় নেমে আসছে গাদায়, তার বুকে। ঐ আবার গোঙানির শব্দ। মটমট করে ভাঙছে কাঠামো, মা কাঁদছে। ভাসানের পরও মা বোধহয় কিছুটা থেকে যায়! শুয়ে শুয়ে থেকে যাওয়া মায়ের কাছে পেন্নাম ঠুকে চেয়ে নিল ভালো থাকা। একটা মাত্তর বোন একটা মাত্তর মা। ওদের ফুলতে থাকা ঠোঁটে এক চিলতে হাসি। উফফ জমে ক্ষীর!

ধকলে যাওয়া শরীরে দুগগা মায়ের হাড়গোড়ের ওম। আরাম পেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরে মণি।
                                              

বিশ্বজিৎ ভৌমিক





আজকে আড়ি"
*************


তোমার সাথে আজকে আড়ি
মন খারাপের রাতে,
আমাদের ছেড়ে দিচ্ছে পাড়ি
কৈলাশের‌ই পথে।

নিভে যায় শুকতারা
তবুও তুমি দিশেহারা,
স্রোতের টানে ভেসে যাও
সবুজ পাল গুটিয়ে নাও।

ঝিমাও তুমি অর্থহীন
তাকিয়ে থাকি ক্লান্তিহীন,
ঘাটে বসে কাঁদি আমি
কভু ফিরে দেখ না তুমি।

নব প্রভাতের রাঙা আলোয়
ভানুর বেশে জ্বলো তুমি,
সারাদিন‌ই প্রখর তাপে
দ্বগ্ধ হয়ে কাঁদি আমি।

তোমার সাথে আজকে আড়ি
ভিনদেশে দিচ্ছো পাড়ি
থাকো তুমি তোমার মত‌ই
বাড়ুক মায়া বাড়ে যতোই,
আমি খুবই অভিমানী-
আগামীতে তোমার ডাকের প্রহর গুনি।

সম্পা পাল






অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট
*********************



সেটা পৃথিবীরই  রাস্তা ,অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট ।
ত্রিফলা বাতি যখন খুব একা,সে রাস্তা তখন সরব ।

রাস্তার ওপারে পদবীহীন কিছু কোয়ার্টার দাঁড়িয়ে ।
আর  অন্দরমহলে পদবীহীন কিছু নারী
কোথাও একা , কোথাও নিঃসঙ্গ ।

ওরা কারা ?
ওরা আম্রপালির অস্তিত্ব ।
ইতিহাস ভোলেনি সেদিনের সমাজ
আবারও কিছু বিবর্তন ,হয়তো অপেক্ষায় ।

ওদের কোনো বোধন নেই
তবু বিসর্জনের কান্নাটা ওঠে মাঝে মাঝে ।
তবে ওদের মাটিতেই আমাদের কাঠামো পূর্ণ।
ওরা কারা ?
ওরা অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিটের বাসিন্দা .........

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়




রঙ
-----





সদর দরজা পার হলো মেঘ
গভীর রাতে চোখ খুলে গাছ
চৌমাথায়
দুহাতে মেঘ সরিয়ে গাছ বলল,
এখনও রঙ নিয়ে গায়ে মাখো

আর রঙ হয় না ----- বলতে বলতে
মেঘ হারিয়ে গেল
আজ
গাছ নিজেও কোনো রঙ পেল না

দুপুরের রোদ্দুরে
আলো ছায়ায় গাছ
গাছের ছায়ায়
শিশু ধুলো খেলে

অনেক নিচু হয়ে
গাছ এখন
শিশুকে জড়িয়ে ।

রুদ্র সাহাদাৎ




নিঃশব্দে
*******


কাত হয়ে পড়ে আছি বালিয়াড়ির বুকে
নগ্ন পদে হাঁটছি উত্তর-দক্ষিন দিকহারিয়ে।
হিমছড়ির ঝর্ণা দেখি ঝর ঝর ঝরছে অবিরত
আমার ইচ্ছেগুলি দীর্ঘশ্বাস হয়ে
উড়ছে
হাওয়ায়
হাওয়ায়।
নিথর চোখ,বোবামুখ, নগ্নদেহ
কাত হয়ে পড়ে আছে
কতোদিন,কতোবছর
কেউ জানেনা, কেউ বুঝেনা।

তুমিও বুঝনি কোনোদিন কোনো কিচ্ছু, তবে
জানিনা এখন ফিরবে কবে
যাযাবর মন নগ্ন পদচিহ্ন আঁকছে
সমুদ্রতীরে অজান্তে নিঃশব্দে....।




মৃত্যুকূপ
*******


মৃত্যুকূপে হাঁটছি চল্লিশ বছর হয়ে গেলো
মাঝে মাঝে অজান্তে দৌঁড়াচ্ছি
কতো আর এভাবে পথচলা।

চোখের পাতা বন্ধ করলেই পাহাড় দেখি,
ঝর্ণা দেখি, সমুদ্র দেখি, বালুচর দেখি
রুদ্রোজ্জল দিন দেখি,জোসনাময় রাত্রি দেখি
ভালোবাসার মানুষ দেখি,
ভালো একটা বাসা দেখি,
চোখের পাতা খুললেই সামনে মৃত্যুকূপ।