নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

রবি মল্লিক




শেষ যাত্রা 
********




আমি সৌরভ; সৌরভ বিশ্বাস৷ বাবার নাম গোপাল কৃষ্ণ বিশ্বাস৷
স্থানীয় দেবীনগর এলাকায় বসত বাড়ি৷ বাড়িতে মা, দাদা , বৌদি, আর দেড় বছর এর এক ভাস্তি আছে৷ গত ফেব্রুয়ারিতে চব্বিশ বছর পূরণ হয়েছিল আমার৷ কম্পিউটার ডিপ্লোমা এবং বি.সি.এ শেষ করার পর গোয়ালপোখর ব্লক অফিসে টেক্নিক্যাল অপারেটর পদে কাজ করছিলাম গত সাত মাস থেকে৷ চাকরি পাওয়ার খবরটি যখন পেয়েছিলাম তখন সর্বপ্রথম বহু প্রতীক্ষিত স্পোর্টিং বাইকটি কিনেছিলাম৷ পূজো দিয়ে প্রথম বাইকটি দেখাতে নিয়ে যাই আমার মাস্তুতো দাদা ছোটকা'র কাছে৷ সেদিন আমার মা শাঁখ বাজিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে বাইকটিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন৷
    
                       আরও একজন ছিলো আমার জীবনে যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম৷ পারমিতা, আমার স্কুল জীবনের সাথী৷ দীর্ঘ বারো বছরের সম্পর্ক ছিল আমাদের৷ ওর বাবা কোনোদিনই মেনে নেয়নি আমাদের সম্পর্ককে; কিন্তু আমরা কোনমতেই আলাদা হতে রাজি ছিলাম না৷ তাই চাকরি পাওয়ার পর বাবাকে পাঠিয়েছিলাম ওদের বাড়ি পাকা কথা সেরে আসতে;এবার আর না করতে পারেনি পারমিতার বাবা৷ খুব ভালোভাবে চলছিল জীবনপ্রবাহ৷

                          এই সাত মাসের কর্মজীবনে একটিও সি.এলনেই নি, কেননা আমার অফিস কামাই দেওয়া একেবারেই পছন্দ ছিল না৷ প্রায় প্রতিদিনই ট্রেনে চেপে যেতাম অফিসে, কারন রাস্তাও তো কম ছিল না৷ কোন কোন দিন খুব দেরি হয়ে গেলে বাইক নিয়েই বেড়িয়ে পরতাম৷ যদিও মায়ের সবচেয়ে বেশী আপত্তি ছিল তাতে; কারন, ওই রাস্তায় প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যেত৷
                         আজ সকালে মায়ের হাত থেকে ঘি ভাত খেয়ে সেই বাইক নিয়েই বেড়িয়েছিলাম,কেননা দেরি হয়েছিল সকালে ঘুম থেকে উঠতে৷ মা অনেক বারণ করেছিল আজও, তবু অন্যান্য দিনগুলির মতো বলেছিলাম কিচ্ছু হবে না মা তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো৷ পিঠে ব্যাগ, চোখে সানগ্লাস, কানে হেডফোন গুঁজে দিব্যি বেড়িয়েছিলাম৷ ও হ্যাঁ হেলমেটও ছিল সাথে, কিন্ত মাথায় নয় রেখেছিলাম বামহাতে৷ শিলিগুড়ি মোড় পেরিয়েই উঠেছিলাম ৩৪ নং জাতীয় সড়কে৷ বাস, ট্রাকের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম৷ তখনও ভাবতে পারিনি যে আর কিছু এগিয়ে কি আপেক্ষা করে ছিল আমার জন্যে৷ গতি না কমিয়েই এগোচ্ছিলাম,দেরি হয়ে গিয়েছিল যে৷ পানিশালার কাছে যে হিমঘরটি আছে সেখানে পৌঁছাতেই সামনের চলতে থাকা ষোনচাকা মালবাহী ট্রাকটিকে অতিক্রম করতেই বাইকের সামনের চাকাটি গিয়ে পড়ল রাস্তার মাঝবরাবর একটি গর্তে৷ আমি আর সামলাতে পারিনি৷ পড়ে গিয়েছিলাম রাস্তায়, এরপর আর কিছু মনে নেই৷
                              যখন  চোখ খুললাম তখন আমি রায়গঞ্জ হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি৷ আমার চতুর্দিকে বহু মানুষের ভীড়৷ সবাই ভীড় কাটিয়ে আমাকে একবার দেখে নিতে চাইছে৷ আর কিছু মানুষ আমার পাশে বসে অনবরত কেঁদেই চলেছে৷ বুঝতে আর বাকি থাকল না যে আমার সাধের পার্থিব শরীরে আর প্রান নেই৷ হয়তো আর কিছু সময় পরে আমার এই শরীর চিতায় শায়িত থাকবে অগ্নিসংযোগের অপেক্ষায়, অর্থাৎ পুরে ছাই হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়৷  মনে পরতে লাগল মায়ের কথা৷ মাকে সকালে বলে এসেছিলাম আজ বিকালে কাঁঠাল চিংড়ি ভাত খাব; মা কী রান্না বসাতে পেরেছিল? মা যখন জানতে পারবে যে আমি আর নেই, তখন মা কী তা সহ্য করতে পারবে? বাবার সাথে গত পরশুই কথা হল আমার নতুন বাড়ির প্ল্যান নিয়ে; বাবা কী ইঞ্জিনিয়ার কাকুর সাথে কথা বলেছিল? পারমিতা কী খবর পেয়েছে? খবর পাওয়ার পর ও কী তা মেনে নিতে পারবে? মাঠে আজ বিকালে ক্রিকেট ম্যাচ খেলার কথা ছিল, তাও আর সম্ভব হল না, অফিসে কত কাজ পরে আছে আমার অপেক্ষায়৷ এসকল কথা ভাবতে ভাবতেই ওরা মাচায় করে আমার  নিষ্প্রাণ দেহটিকে নিয়ে শ্মশানে এসে পৌঁছেছে৷  আত্মীয় স্বজন, বন্ধুরা সবাই এসেছে দেখছি৷ যাদের নিয়ে বরযাত্রী যাব ভেবেছিলাম তাঁরাই আজ আমার শ্মশানযাত্রী৷ ওই ভীড়ে একজন মানুষ ছিলেন যাঁকে এই রূপে আমি কোনদিন দেখিনি৷ যাঁর দাপটে আমাদের পাতিমিলের কেউ কখনও উচ্চ স্বরে কথা বলার সাহস পর্যন্ত পেত না, তিনি আজ অসহায়ের মতো পড়ে রয়েছেন শ্মশানের বটগাছটির তলায়৷ হ্যাঁ উনি আমার বাবা৷ সকলের মুখগুলি ফ্যাকাসে ধরনের বিবর্ণ হয়ে ছিল৷ না, তবে মা এবং পারমিতার সামনে যাওয়ার সাহস পাইনি; হয়তো ওদের যে অবস্থায় রেখে এই অকালে চলে যেতে হচ্ছে তা আমি দেখতে পারব না৷
                          এসবের মাঝে এক ঐশ্বরিক আলো চোখে এসে পড়ল কুলিক নদীর কিনারা থেকে৷ সেই আলোয় চোখ পরতেই দেখলাম একটি সোনালী আভাযুক্ত রথ দাঁড়িয়ে আছে৷ সেই রথ থেকে দু জন ডানাওলা দেবদূত আমার দিকেই এগিয়ে আসলেন৷ আমাকেও নাকি যেতে হবে উনাদের সাথে৷ গিয়ে উঠলাম সেই ঐশ্বরিক রথে৷ ততক্ষণে আমার পার্থিব শরীরকেও তুলে দেওয়া হয়েছে চিতায়; আমার দাদা হাতে আগুন নিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ অজস্র অসম্পূর্ণ কাজ ফেলে চোখে জল নিয়েই চললাম মরণোত্তর শেষ যাত্রার উদ্দেশ্যে আরও ফেলে রেখে গেলাম পিছনে কিছু সম্পর্ক , একরাশ মায়া আর কিছু আফসোস৷

আফরোজা সুলতানা






অবক্ষয়ের মানচিত্র
*****************



আমার শহর জুড়ে মোমবাতি মিছিল 
তবু ভরা গ্যালো  না মা এর শূন্য কোল 
বন্ধের ডাক ডেকে প্রতিবাদী চিৎকার, 
তবু দুর্নীতির রেশ চলে অকুণ্ঠোচিত্তে 
কড়া আইন অনুমোদনে অনীহা 
তাই তো খূকী থেকে বৃদ্ধা সকলেই ধর্ষিতা ।
সমকামীরা পেয়ে গ্যালো ছাড়পত্র 
দেখিয়ে বাকি ভিন্ন প্রেমিকদের বৃদ্ধাঙুল 
তাই আজও কোনো জুটি গলায় ফাঁস দেয় 
আজও কোনো রিজওয়ানুর 
রেলে কাটা পড়ে থাকে ।



রণধীর রায়






একটি ঘুড়ির গল্প
****************



(...যদিও এ বাংলায় শখ করে কেউ শোভাবাজারের শোভা বাড়াতে আসে না। দূর্গা প্রতিমাই পূজ্য।)


লাল ঘুড়িটা টলতে টলতে চৌমাথার মোড়ে
 আছড়ে পড়ল দারূণ অনিহায়,
লাটাই বিচ্ছিন্ন বহুদিন, তবুও-
 আকাশ ছাড়েনি এতকাল
নিজের অজান্তেই ভেসে বেড়িয়েছে বহুরূপী ঘুড়ি
কখনও  নৌকা কখনও মুখপোড়া।

আকাশের বুকে ঘুড়ি না কী
 ঘুড়ির বুকে অসীম আকাশ?
বড় রাস্তার দু'চোখ দেখেছে ঘুড়ির আস্ফলন
দেখেছে হাওয়া বদলে ঘুড়ির নোনাজল
বুড়ো তাল গাছটা দেখেছে ওর প্রণয়
কী ভিষণ জেদ!

তবুও আজ আছড়ে পড়ল ঘুড়িটা।
শিশুর নরম পায়ের মত টলমল করছে ওর শরীর
ভেজাপাতা অমসৃণ ত্বক এখনও লাল
কপালের লাল দাগ যদিও অস্পষ্ট
কিছুটা অভিমানী স্কুল পড়ুয়ার মত অসংযমি চাউনি
অবাধ্য নদীর মতন কুল ভাঙা গতি আজ ক্লান্ত
শুধুই হাতেহাতে হাত বদল যে!

লাল ঘুড়িটা আজ ভো-কাট্টা।

জারা সোমা






(১)



মৃত্যুর ঠোঁটে চুম্বন আঁকতেই
জ্বলে উঠল স্ফুলিঙ্গ
ছাঁইচাপা ইতিহাসে বস্তাপচা সেন্টিমেন্ট
বস্তুবাদের কাছে জমা রাখি বোধ
অনুভূতিহীন স্পর্শ কেবল 
বাড়িয়ে তোলে যৌনচাহিদা

আধখাওয়া চাঁদের মতো অভুক্ত
সম্পর্কের দূরত্ব, বহমান সময়ে
তবুও সাবলীল হয়না লগ্নজিতা
প্রেমজ সংলাপ......



(২)


তোমাকে ধুমকেতু বলেই জানি
কতবছরের ব্যবধান যেন
নীলআকাশে পেঁজামেঘ দেখলে
বুঝি শরৎ এসেছে
আসলে তুমি এলেই
আনমনে বাজতে থাকে ঢাক
আমার শারদীয়া ঘটে
  মহাপঞ্চমী থেকে মহাদশমী 

আমি কেবল সময় চেয়েছিলাম
তুমি মাত্র ভরিয়েছ গন্ডূষ।।।

সুষ্মিতা কর

   


ব্যর্থ প্রেমিকা
**************



নজর রাখি রোজই যখনই আসো তুমি
জানালার সামনে বসানো গ্যালিলিওর দূরবীনে,
চাইতাম তোমার জগৎকে প্রদক্ষিণ করতে
কোপারনিকাসের সূত্রে চাঁদ রূপে।
অনভিজ্ঞ হাতে সাদা কাগজের উপর
মন্থর গতিতে চলত ফাউনটেইন কলমের আঁচড়-
অসমাপ্তই থেকে যেত প্রতিটি চিঠি
আর, মনে চলত অবিরাম ঘূর্ণিঝড়।
সময়ের সমুদ্রে জাহাজ ফেললাম কম্পাস হাতে
যোগ্যতার দেশ আবিষ্কারের তাড়নায়;
সামাজিক দুর্যোগ, পরনিন্দার বৃষ্টি,
চর্চার স্রোতে ভেসে জাহাজ এগোয়।
সাফল্যের স্পর্শ পেয়েছি জানাতে
ছুটে যাই প্রাপ্তির থলি নিয়ে;
বসে আছো, পাশে সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী
নতুন আবিষ্কার তুমি ছাদনাতলায়!
নই শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস'; ব্যর্থ প্রেমিকা আমি-
নই কোনো উপন্যাসের নায়িকা,
সহ্য করতেই হল কষ্টটা
হতে পারিনি যে রবীঠাকুরের 'বলাকা'!
ফেলে দিলাম ডাস্টবিনে অবাঞ্ছিত চিঠিগুলি
অনুভব করলাম অন্য বাতাস জানালা খুলতেই
মুছে যাচ্ছে সব গুমোট গন্ধ, বদ্ধতা,
পাচ্ছি এক স্নিগ্ধতা নিঃশ্বাস নিতেই।

প্রশান্ত সেন






জতুগৃহে

*******



ঝলসে গেছে কলজেটা তোর
রাজনীতি-বোম বিস্ফোরণে
খবর তো নয়, খাবার তো সব
মশলা একটু দিস্ ফোড়নে।

আমরা-ওরা দামড়া বুড়ো,
চাল চেলে  যায় দাবার ঘুঁটি
আকাশপানে নিথর চেয়ে
বছর সাতের ও-চোখ দুটি...


ছুঁড়ছি কাদা এর মুখে ও
মাতছি সবাই তরজা গানেই
ঘুম ভাঙলে দেখব যেদিন
সাবধানতার দরজাটা নেই


সেদিনও কি খুলবে রে চোখ?
বিবেক সেদিন জাগবে কি হে?
আমরা কিন্তু করছি যাপন
জীবনটা এই জতুগৃহে।