নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

দোলন দাস মণ্ডল






লজ্জাব্রত
*********




ঠাকুমার ঝুলি হাঁটকালে এখন রূপকথা না,
বেরিয়ে আসে ভোর রাতের ধর্ষণের গল্প। 
   নাতনিদের চোখে অসহায়তা,
            কিছু নাতিদের চোখে লজ্জা 
                          কিছুর চোখে উল্লাস। 

              এ শহরকে আমি চিনি না। 
         জন্মাবধি যাকে আমি চিনে আসছি। 
পিছন ফিরে আমার শৈশবকে অলীক বলে মনে হয়। আঙুল ধরে বড়ো করে তোলা জল-হাওয়া-পথ- মাঠ-ঘাস-
         সবাইকে আজ ধর্ষকের মতো লাগে। 
         
       ... ওরা রাজপথ দিয়ে উলঙ্গ হাঁটে, 
আমরা শালীন পোশাকি রক্ষাকবচ বানানোর মিথ্যে চেষ্টায়.....!
তারপরও শ্বেতশুভ্র শাড়িতে ভয়ঙ্করতার  লাল! 
          দেখি,  চমকে উঠি...
আর বাড়ি ফিরে শিবরাত্রির ব্রত রেখে
   লিঙ্গের মাথায় ঢালি কামনার জল....। 
           

প্রনবেশ চক্রবর্তী




কাপুরুষ নাকি পুরুষ!! 
********************





 ও মেয়ে এক্কেবারেই নারী তো নোস তো তুই বড্ড ছোট্ট শিশু,
তোর আবার কি নারী দিবস, চকলেট দে রে দাশু।
তোর সঙ্গে করলে মজা তাতেও হবে ইস্যু?
চুপ কর তো মজা নিতে দে দেখাস নে তোর আঁশু!

ও মেয়ে তুই বেশ তো ছুঁড়ি, বেশ তো রাইকিশোরী,
তোরও আবার নারী দিবস মানতে যে না পারি! 
আয় না কাছে ঝোপের নীচে একটু আদর করি,
এই তো বয়েস কর না আয়েশ কান্না কি দরকারী?

ও মেয়ে তুই ভরযুবতী ঠিক আছে তুই নারী,
তা হলে তো নারী দিবস তোর জন্যেই ভারী!
নে মেনে নে শান্তমনে করিস না দরাদরি,
নাহলে কিন্তু ভালো হবে না করবো গা জোয়ারি!

ও মেয়ে তুই মাঝবয়েসী সুন্দরী, সংসারী?
নারী দিবস তোরও নাকি? যাঃ কি যে করি!
ছেলে মেয়ে আছে আবার থাক না, তোকেই ধরি,
আমরা পুরুষ অত্যাচারী চাই শুধু একটা নারী! 

ও মা, এটা কে, ঠাকুমা? সত্তর, আশির বুড়ী,
এরও আবার নারী দিবস কি দিন এলো মাইরি!
চল বুড়ীকে সবাই মিলে ধরে মজা করি,
সগ্গে যাবার আগে নাহয় হোক সে আবার নারী!

এই তো হলো নারী দিবস কারো কারো চোখে নারী,
সারা বছরে একটা দিন তো নাহয় একটু হারি! 
হারবো কেন? হোক না তা সে রোজ দিবসই নারী,
ভোগ করতে এসেছি যখন ত্যাগটা কি জরুরী?

আমরা তো আর চাইনি কোন সত্যি পুরুষ দিবস,
তাহলে সত্যি পুরুষই হতাম দিতাম প্রেমের পরশ,
আমরা হলাম কাপুরুষ বুঝলি? এক্কেরে কাপুরুষ!  
নারীতে বাঁধা নাড়ী মোদের মানবো না কোন বয়স!

একদিন হোক নারী দিবস নেই কোন আপত্তি,
বাকি সব দিন পুরুষ দিবস বুঝলি তো এই সত্যি?
না বুঝলেও কি করবি বল? করবি কিছু বিপত্তি? 
যত পারিস বল কাপুরুষ! তবু নারী মোদের সম্পত্তি! 


পারমিতা সাধুখাঁ







বিচিত্রতা
**********




জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে
জি.এস. টির দৌলতে l
চলছে জীবন সস্তাচালে
রেশন দোকান আছে ll

শ্রমের মূল্য ঘামের কাছে
টাকায় কিনে বেচে l
দিনমজুরের আবেগ মরে
খড়ের গাদায় গুঁজে ll

ভোটের নেশায় সমাজ ছোটে
নতুন সরকার গড়ে l
পুরানো চাল ভাতে বাড়ে
মুখ মুখোশের ঢালে ll

নতুন আলো আলেয়াতে
উলঙ্গ রাজার দেশ l
তবেদারি তোষামোদে
কাটছে জীবন বেশ ll

রবি মল্লিক





সৈনিক
*******



ইতিহাসের পাতা রক্তে রাঙ্গা
বিবিধ যুদ্ধে ভরা,
যাঁদের নাম লেখা রয়েছে
শুধুই কি ছিল তাঁরা?
শক, হুন, মুঘল, পাঠান
এলো আর কতো গেলো,
তাঁদের ধ্বজা তুলতে গিয়ে
নিভল সহস্র আলো৷
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সবই
সৈন্যের লাশের স্তূপ,
রক্তপিপাসু যুদ্ধক্ষেত্র
করবে যে কবে চুপ?
পাতা উল্টে শুধু যুদ্ধের
নায়কদের কথাই পাই,
রাজতন্ত্রের মূল কান্ডারি
সৈন্যরা কোথাও নাই!
সৈন্যরা সব রক্ত দিয়ে
রক্ষা করে সীমানা,
তাঁদের দুঃখ তাঁদের কষ্ট
আছে কী কারো জানা?
দেশের কাছে দশের কাছে
এটাই বলে যাই,
সন্মানের সাথে সৈন্যরা যেন
হৃদয়ে পায় ঠাঁই৷

রাণা চ্যাটার্জী




পর্দা ফাঁস
*********





বাড়ির অমতেই হোক আর অবশেষে ছেলের ভালোবাসায় সিলমোহর দিয়ে পাত্রী নির্বাচনে বিবাহের প্রস্তুতি শুরু করার পরই হবু শশুর মশাই ঢাক পেটাতে শুরু করলেন, "বৌমা দারুন বুদ্ধিমতী,কোনো এক কোচিং সেন্টারে রিসিপশনিস্ট পদে জব করেই নাকি আঠারো হাজার টাকা বেতন পান! " কথাটা  এখনকার  হলেও না হয়  বটে কিন্তু দশ বছর আগে কোন মফস্বল শহরের কোচিং সেন্টারের বেতন এত ! শুনে হেঁচকি উঠলেও বাড়িয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলাটা দারুন টেকনিক ,সবাই পারে না!
যেখানে সেই সময়ে সরকারি স্কুল টিচার এর মাইনে শুরু হতো আঠারো হাজারের  কিছু বেশি দিয়ে! কিন্তু তাতে কি?  উনার ঢাক পেটানোকে গ্রামের অনভিজ্ঞ মহল আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশি বিস্ময় চোখে "তাই নাকি ,আরে বাহ" বলেই খুশি  সেখানে নীরব না থাকলে বদনাম জুটবে,হিংসা করছে বলে!

কিছু কিছু মানুষ এমন টা করে মানে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে বেশ মজা পান ।ভাবখানা এমন,"কেমন চমকে দিলাম ,বোকা হাঁদার দল কিচ্ছু টেরও পেলো না! কিন্তু সে বা তিনি এটা বোঝেন না ,যে তার সাধের ফোলানো বেলুন, ফুটো হলেই চুপসে যাবে । যে টুকু হৃৎগৌরব এসেছে, সেটাও লোক হাসি  হয়ে গিয়ে পড়ে থাকবে রসকষহীন এড়িয়ে যাওয়া,বা গুরুজনদের বলা যায়না ,সামনে বলা উচিতও নয়, সেই অন্তঃসারশূন্য সমীহ টুকু।

বিয়ের পরে পরেই কোন এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের বিয়ে বাড়ি গিয়েছিলাম। নতুন জামাই পেয়ে বাড়ির কর্তা, সারাদিন যে কতবার, ফিরিস্তি দিলেন,রাজকীয় খাওয়া-দাওয়ার  আয়োজন করেছেন বলে। খাওয়া-দাওয়া ,মাংস নাকি প্রচুর পরিমানে,এলাহী ব্যাপার ! রাজকীয় বিয়ে বাড়ির পরিবেশে এসে পড়েছি ভেবে বেশ গর্বিত হচ্ছিলাম  কিন্তু ভুল ভাঙলো বাস্তবের ছবি কড়া নাড়াতে! · হলোটা কি তিন নম্বর ব্যাচ থেকে মাংসের টান!  চার নম্বর ব্যাচ থেকে মিষ্টির কমতি শুরু হলো! আমরা যখন ছয় নম্বর ব্যাচে খেতে বসলাম, গোটা কয়েক শুকনো কচুরি  ছাড়া কিছুই নেই !

এখানে আমি দোষের কথা বলছি না ,বিয়ে বাড়ির মত পবিত্র অনুষ্ঠানে এত লোককে খাইয়ে ভবিষ্যতের ভাঁড়ারে টান পড়ানোর কোনো মানেই হয় না ,কিন্তু তবু এই যে বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা, বাস্তবের সঙ্গে এমন অসামঞ্জস্য এটা বোধহয় ঠিক নয়। 

কোন কোন বাবা-মাকে দেখি, বাইরের লোকের সামনে ছেলে-মেয়ের দারুণ প্রশংসা করেন। সাবাস ,বলে পিঠ চাপড়ে দেন আবার এটাও দেখি যত ভালোই পড়াশোনা করুক না কেন,অনেক বাবা মা বেশিরভাগই নিন্দা করে ,বকা ঝকাও। ওনাদের উদ্দেশ্য একটাই যে,সন্তান যেন শেখে ,আরো ভালো করে পড়াশোনা করে ,মানুষের মতো মানুষ হয়।

কোন এক কাক,ভাইপোর ওকালতি পড়তে যাবার খবর, যেভাবে গ্রামের লোকের সামনে দিয়েছিলেন , বেশ মজাই লাগছিল শুনে ,"বাপরে বাপ, পাঠ্যক্রমে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিনা ভাগ্না হাইকোর্টের উকিল হয়ে গেছে !এমন বাড়িয়ে প্রচার  সিনেমার গতিকেও হার মানায়!

ছোটবেলা থেকে বাড়িতে অনেক পত্রপত্রিকা, সৌজন্য সংখ্যা আসার সুবাদে অনেক গল্প পড়তাম সে সব স্মৃতির অতলে তলিয়ে গেলেও একটা অবাক করা মজার গল্প পড়েছিলাম ।লেখকের নামটা ঠিক মনে নেই তবে গল্পের নাম ছিল," রুপার বর মাস্টার"। সংক্ষেপে বিষয়টা ছিল," গ্রামের এক সাধারণ মেয়ের হঠাৎ বিয়ের সম্বন্ধ আসে মাস্টার পাত্রের সাথে ! চাকরির এমন আকালে,ভালো পাত্র হাত ছাড়া কি করা যায় ! তাই মহা ধুমধামে বিয়ে হয়ে গেল রুপার।

অষ্টমঙ্গলায় বেড়াতে আসা জামাই কে ফুরসৎ পেয়ে,কেউ ইস্কুল টা কোথায় জানতে চাইতেই বিপত্তি। ঝোলা থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ার উপক্রম। জামাই ও অবাক,সে জানালো ,"স্কুল মানে?আমি তো ব্যান্ড পার্টির ব্যান্ড মাস্টার!!" এক্ষেত্রে অবশ্য বড় মিসান্ডারস্টান্ডিং ই দায়ী।ভালো পাত্র হাতের নাগালে চলে  যায় পাছে, নানা প্রশ্নে! আবার পাত্রপক্ষ জানিয়েছেও ভাসা, ভাসা যে পাত্র মাস্টার! তবু তথ্যের অভাবে এত বড় অঘটন ! 

কখনো দেখি পাড়ার কোন বাড়ির গার্জেন, পাড়ার অন্যান্যদের প্রতি  দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কথা ছোড়েন ! ভাবখানা এমন যেন,আমার ছেলে বা মেয়ে সোনার টুকরো আর বাকিরা দোষে ভরা!কিন্তু চোখ ,কান মাথা খেয়ে ,অধিক প্রশ্রয়ে সেই বাড়ির ছেলে বা মেয়ে, প্রেম-ভালোবাসা,প্রণয়ে জড়িয়ে অঘটন ঘটায় যখন ,মুখে কুলুপ এঁটে,খিল দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে দেন সেই বাড়ির অভিভাবক গণ। কোন সমালোচনা করে বলছি না,রোমিও দাপটে ধোঁকা খাওয়া সত্যি খারাপ কিন্তু তা বলে বাকিরা সব খারাপ, আমি ভালো আর আমার দুধে ভাতে থাকা সন্তানরা সেরা,কেবল, এটা ঠিক  নয়।

একবার  বন্ধুর পিসির বাড়ির ছোটখাটো  বারোয়ারি পুজোতে গিয়ে বেশ অভিজ্ঞতা হয়েছিল।সামান্য আয়োজনের দু চারটে দোকান আসা মেলায় কোনো এক মধ্য বয়সী আধিকারিক জামাই ঘুরে ফিরে দেখছিলেন। কেউ কুশল কামনা করলেই ,তাদের ঘুরে ফিরে উত্তর দিচ্ছিলেন যে,ওনার ছেলে এবার,মাধ্যমিকের রেসাল্ট বেরুলে মেধা তালিকায় প্রথম না হলেও পাঁচের মধ্যে থাকবেন।

এতবার করে উনি ফাটা  ক্যাসেট বাজাচ্ছিলেন ছেলের কি বলবো!গ্রামের সাদা সিধে সরল মুখের মানুষ গুলো চমকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন ওনাকে।এরই মাঝে ওনার ছেলেটি ,সমবয়সীদের সঙ্গে খেলতে খেলতে বাবার কাছ থেকে কুড়ি টাকা নিয়ে জিলাবি কিনে,  পিছন দিক দিয়ে একাই খেতে খেতে চলে গেল ! একা যে খেতে নেই ,ভাগ করে খেতে হয় কে শেখাবে ওকে? এটা ওকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। একা খেয়ে খেয়ে আর  পিঠ চাপড়ানো প্রশংসা দেখেই বড় হয়ে ওঠা তার।

এই বিষয়ের উপর যত আলোকপাত করব,তার শেষ নেই।মানুষের চরিত্রের নানা দিক নগ্ন ভাবে ফুটে উঠতেই থাকবে । ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ জমানায় নিত্যনতুন অ্যাপের দৌলতে , সবাই এমন ঝাঁ-চকচকে নিজেদের ছবি আপলোড করে,বেশ দারুন লাগে। কিন্তু সে বা তিনির সঙ্গে বাস্তবের ছবির  মিল থাকাটাও জরুরি।তবেই না আমার আমিতে আমার বাস! জানিনা বাপু এতে, মনের কনফিডেন্স ঠিক কতটা বাড়ে বরং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষনে  এটা এক প্রকার হতাশা, ফুরিয়ে যাবার বহিঃপ্রকাশকেই ইঙ্গিত করে।

এইভাবে কখনো কেমন পর্দাফাঁসের বিষয় প্রকাশ্যে,গোপনে,মনের গহনে বেআব্রু হয়ে যায়।আজ  মানুষের কিছু চেনা প্রকৃতির,এক ঝলক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলাম ।এখানেই শেষ নয় আসলে এই আলোচনার সত্যিই কোন শেষ নেই।

কার্তিক ঢক্






মালিনী 
******

  

কে তুমি বাজাও শাঁখ
সন্ধ্যারতি শেষে। 
সুগন্ধি জ্বেলে দাও
উন্মুক্ত দ্বারে --

এতোটা নমনীয়তা 
কি করে রেখেছো ধরে
বুকের ভিতর ! 

ইঁট-কাঠ পাথরের স্তুপ --
পায়ের যন্ত্রণা ভুলে
কি ভাবে রেখেছো তুলে দুই হাতে
সবুজ ঘাসের ঘর --
অপরূপ সৌন্দর্য্য তার...