নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সুপ্রভাত দত্ত




দেওয়াল
 *******

              
 
দীর্ঘশ্বাসের  স্পর্শ- 
কেমন সুদূর  বিষন্নতা!
শব্দটি আজ উদ্যোগ, 
ফিকে হওয়া গানের খাতা ।

দেওয়াল যে কী চাই? 
মনখারাপের  আড়াল থেকে-
ঘাসগুলি জন্মায়, 
শিশির চমক সূর্যালোকে ।

মাটির উপর ধুলো- 
কেমন যেন অর্থবিহীন! 
শরীরটা চমকানো, 
ছায়ায়  ছায়ায়  উদাস দিন!

আমিই অন্ধকার- 
তোমার দেওয়াল ধরা স্বভাব ।
তুমি তো চিৎকার-
তোমার কীসের আবার অভাব!

রুদ্র সাহাদাৎ





যাযাবর
*******



হাঁটছি হতাশার বালুচরে উত্তর দক্ষিণ
হাঁটছি গন্তব্যহীন কোনো ঠিকানা জানা নেই
আমি আমার মতো চলছি ফিরছি
তুমি হয়তো তোমার মতো কাটাছো রাত্রিদিন
কিচ্ছু বলার নেই আজ একাকি যায় দিন
সহস্র সহস্র মানুষ অথচ কথা বলার মানুষ নেই
স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে শঙ্কচুর তাই স্বপ্নরাও স্বপ্নহীন
স্বপ্ন দেখা ভুলে গেছিদু'চোখে ঘুম আসেনা আর
আমি এখন অনেকটা যাযাবর

পিয়ালী সাহা





নিষিদ্ধ রঙ
*********




একটু আড়াল আর চারপাশের অন্ধকার না থাকলে আমি কাঁদতে পারি না

উঠোন জুড়ে জ্যোৎস্না এলে সময়মতো ঠিক গা ভিজিয়ে  নি

আবার এক থেকে পক্ষ গুণে তুলে রাখি ভিজে শরীর

পরের একুশে  
জানলায় জোনাকি এলে সিঁড়ি ছুঁয়েছিল কনেদেখা হলুদ

চৌকাঠ পেরোয়নি সেসব রঙ

আলো আলো রঙে হাঁপিয়ে ওঠে আমার ভিজে উঠোন


চৈত্রী ঘোষ হাজরা






ভগবান
*******


ছোট থেকেই প্রশ্ন ছিল ভগবান কোথায় থাকে? 
এই প্রশ্ন করে করেই জ্বালিয়ে খেতাম মাকে। 
মা বলতেন, ভগবান? তাঁর তো হিমালয়ে বাসা।
নেমে আসেন ধরাধামে, পূরণ করতে আশা।। 
সত্যি করে, ভক্তিভরে, ডাকিস যদি, তবে।
দেখবি ঠিক তোর জন্যও নেমে আসবেন ভবে।।

সেই থেকে যখনই বিপদে কাঁপত আমার মন।
দুরুদুরু বক্ষে করতাম ঈস্বর স্মরণ। 
কিন্তু আমায় অবাক করে উনি আসতেন না।
সব বিপদে, সবসময়ে, পাশে থাকতেন - মা।।

পেনের ঢাকনা হারিয়ে গেছে? জামাকাপড় পাচ্ছিনা? 
মন ভেঙেছে? আরকি আমি আঘাত পেতে চাচ্ছিনা? 
সব বিপদে মুখ লোকাতাম গিয়ে মায়ের কোলে। 
আমার বিপদ হারিয়ে যেত কোন এক মন্ত্রবলে।।

কিন্তু আমার মা তো মানুষ, ভগবান তো নন।
কেমন করে বল উনি অজেয়, অমর হন!!? 
ওনারও তো ভাঙছে শরীর, চোখের কোলে ভাঁজ।
এখন আর আগের মত পারেননা তো কাজ।।

বয়স বেড়ে আমার মাকে ধরল জরা যেই।
দেখি হঠাৎ চক্ষু মেলে, মা যে আমার নেই।।
কাঁদছি দেখে সবাই এসে দেয় যে স্বান্তনা।
মা তো তোমার নশ্বর জীব, ভগবান তো না।।

পাশ কাটিয়ে যাই যে চলে পূজার উপাচার। 
মা তো নেই, এসবের আর কিই বা দরকার!!
এই যে শরীর, এই যে জীবন সবই তোমার দান। 
যে যাই বলুক মাগো, তুমিই আমার ভগবান।। 

শিল্পী গঙ্গোপাধ্যায়





আগমনী 
********


কাশফুলে ভরে গেছে মাঠ, নৈঋত হাওয়া ছুঁয়ে দিলেই রেনু ছড়িয়ে পড়েছে আহ্লাদী  কিশোরীর হাসির মত।

ছুঁয়ে দেখিনি আজও, শহরে ফোটে না কেন কাশ? বন্ধু বলেছিল কোন এক শারদপ্রাতে উপহার দেবে, প্রিয় কাশফুল। সে এখন গ্রাম ছাড়িয়ে, জন্মভূমি ছাড়িয়ে, মাতৃভূমি ছাড়িয়ে অনেক অনেক দূর -- বন্ধু , তোর ওখানে কাশফুল ফোটে? কাশফুল তোর এন আর আই বুকে আগমনী বার্তা পাঠায়? আমার প্রতিটি শরৎ-সকাল  কল্পনার কাশফুল ছুঁয়ে, স্পর্শসুখে ভেসে যায়...
নীলাকাশ ক্যানভাস জুড়ে জমাটবদ্ধ মেঘ কখনও বিশাল পুরুষের অবয়বে ঘনীভূত, কখনও কুচি-কুচি শুভ্র মেঘ দুরন্ত বালিকার চঞ্চল রূপে নৃত্যরত, কখনও বা বিষাদ ঘনিয়ে আসে কালো মেঘের ছায়ায়... যেন দক্ষ কোন শিল্পীর আশ্চর্য ব্রাশিং এ  চিত্রিত মোহময় শারদ আকাশ ।
দ্যাখো দ্যাখো! কি উজ্জ্বল রঙে পাপড়ি মেলছে  পদ্মকুঁড়ি ...প্রতিটি পাপড়িতে দৃঢ় প্রত্যয়, তুমি আসছো হে সারদ লক্ষ্মী! কৃষ্ণের মোহন বাঁশির সুর মন্দ্রিত 
আকাশে-বাতাসে।

নবীন শিশির ছুঁয়ে ফুটে ওঠা শিউলির সুগন্ধে বিহ্বল চরাচর , সোনারোদ গায় মেখে ঝরে পড়ে, শিউলি কুড়োনো আঁচল হাওয়ায় ছড়িয়ে দেয় আগমনীসুর। সেই মিহি সুরের মূর্ছনায় ভেসে যেতে যেতে উমা, ভেসে ওঠে তোর প্রিয় মুখ -- অধীর ব্যাকুল  জননী হৃদয় মিনতি জানায় গিরিরাজে--
"যাও যাও গিরি আনিতে গৌরী উমা নাকি বড় কেঁদেছে/  দেখেছি স্বপন নারদ বচন
উমা মা মা বলে কেঁদেছে ।" 

ব্রহ্মা, বিষ্ণু,মহেশ্বর, ইন্দ্র আরো বহু দেবতার তেজরশ্মি হিমালয় এর সুউচ্চ শিখরে অবস্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সম্মিলিত হয়ে মহিষাসুর বধের জন্য যে দশপ্রহরনধারিনী দেবী দুর্গার সৃষ্টি সে হয়ে উঠল পৃথ্বীকন্যা।

তাই তো উমা আসবে বলে মাঠে ঘাটে কাশের আয়োজন, আকাশ সেজে ওঠে উজ্জ্বল নীল রঙে, দীঘি ভরে ওঠে পদ্মফুলে। বকুল কুড়োনো হাত শিউলি কুড়িয়ে মালা গাঁথে। সে আসবে বলে নবীন ধানের মঞ্জুরী আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। নতুন পোশাকে, দেওয়ালে নতুন রঙে, পর্দায় ছড়িয়ে পড়ে আগমনী সুর -- মায়ের অবুঝ মন, নিজেকে প্রবোধ দেয়--

"এবার আমার উমা এলে আর উমা পাঠাব না/ লোকে বলে বলুক মন্দ, কারো কথা শুনবো না ।"

উমা আসবে বলে আমার মায়ের হাতদুটি কেমন সেজে ওঠে একজোড়া নতুন শাখা-পলায়, সেখানেও  আগমনী সুরে সুরে উমা আসবার আনন্দ বার্তা ছড়ায়।।

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়




গর্ত
-----




কাছে এলে দেখতে পেতে
কপালের নিচে দুটো গর্ত আসলে
দুজন সৈনিক
যুদ্ধ থেকে ফিরে
তারা এখন ঘুমিয়ে

এখনও তারা দেখতে চায়
জল আর কতদূর গড়াবে
কিন্তু তারা তাকাতে পারছে না

তারা কথা দিয়েছে
সন্ধ্যে নামার আগেই জেগে উঠবে

তবে তাদের আশা না করাই ভালো।