নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

তাপসী লাহা



তমসো মা
*********


ছন্নছাড়া  ঘরকন্যায়  বিন্যস্ত মানবজীবনে কাশফুল ফুটলে লোকে জানে এবার মা আসছেন।ধুলো ধুলো  দুঃখদের ঝাড়পোছ করে মনের ঘরে লাগাতে থাকি উদযাপনের খুশিরং।
বিস্তীর্ণ  সৃষ্টিরাজিতে প্রকৃতিও তুলে ধরে নিজের অপরুপ কলাকৃতি,পুকুরগুলো ভরে যায়  পদ্ম শালুক এ।প্রখর রোদের তেজ অমলিন  থাকলেও জলপাই রঙ গাঢ়তর  হয়,ঠিক পাওয়া উপহারের সোনালি  মোড়ক যেন। দীঘির গভীর জলে ঢেউএর আলোড়ন মানবমনের আকুল চঞ্চলতাকে ভাষা দেয় যা  মায়ের জন্য  সন্তান অনুভব করে।কবে আসবে তুমি,তাড়াতাড়ি এসো আর রাঙিয়ে  দিয়ে যাও  আনন্দে এ ভুবন। 
 ।      সময় বড় কম।মোটে একটা সপ্তাহ।জানি পাল্টাবে না দু ঃখের  সুবিশাল সিলেবাস।তবু প্রচেষ্টা  থাকুক,আশা থাকুক,আলো থাকুক  সব  প্রতিকুলতা,অসহায়তা, আধার থেকে উত্তরণের।একটা পথের  সন্ধান থাকুক,যার  রেখাসুত্র অনুসারে আমরা একটু ভালোর খোজ করে যাবো।শিশুদের পৃথিবীটা একটু নিরাপদ হোক।বয়স্কদের পৃথিবীতে পরিবারের সান্নিধ্যের ছোঁয়া লাগুক।নির্যাতিতরা বিচার পাক।
একটা সুন্দর সমাজের রুপায়ণে তোমার  শুভ কল্যাণী  সাহচর্য  ছাড়া আমরা তোমার সন্তানেরা কিভাবে এগোবো।
          দিকে দিকে বেজে উঠছে আলোর বেণু।আর আমরাও প্রস্তুত যাবতীয়  অনাড়ম্বতায় তোমায় গ্রহণ করে নিতে।আমাদের ঘরের মেয়ে, হে দেবী এসো এ আলোয় পথের দিশারি  হয়ে।
             

অসীম মালিক






একমুঠো আলোর অন্বেষণে 
*****************

                      

সব দেখাই পুজোর অর্ঘ্য হয়ে ওঠেনা । সব দেখাই জীবনের ফ্রেমে বাঁধানো যায় না । কিছু কিছু দেখা 
ফুলটুসী না হয়ে ,কুটুস হয়ে যায় । অনিবার্যকারণ
বশত ,কুটুসপাখি এখনও হামলায় । এভাবেই হয়ত 
সমাবর্তনের পসরা ছাপোষা করে যায় নবাগত 
উৎসবের রঙগুলিকে ।মহালয়ার ত্রিকালস্পর্শী সুর 
আজও বেজে ওঠেনা ফ্যানপিপাসু কুটুসপাখির 
হৃদয়ে । স্বভাবতই সে আগমনীর সুর স্বাভাবিক ভাবেই মাড়িয়ে যায় --একমুঠো আলোর অন্বেষণে । 
খোড়ো চালের ফাঁক দিয়ে হেসে ওঠে অষ্টমীর চাঁদ ।
যে চাঁদ বৈষম্যের তালুতে উৎফুল্লতার প্রেরণা এনে 
দিতে পারে না । উপেক্ষার প্যান্ডেল থেকে সে যোজন দূরে সরে যায় অবিরত । 

দীনতার খোলস ছাড়তে ছাড়তে সে প্রত্যক্ষ করে --সেরা প্রতিমা ,সেরা প্যান্ডেল ,সেরা আলোক সজ্জার নির্বাচনে কিভাবে মেতে ওঠে টিভি চ্যানেলগুলি ।  পুজো পরিক্রমায় ভেসে ওঠে বনেদিবাড়ির ঐতিহ্য 
কুমারী পুজো ,পাঁঠাবলি ,সিঁদুরখেলা ,ঢাকের বোল ।
তখন পুজোর কাউন্টডাউন থেকে দূরে সরে যায় 
কুটুসপাখি । পুজোর কেনাকাটা থেকে ব্রাত্য থেকে 
থেকে যায় অনালোকিত মুখগুলি । শপিংমলে জমে 
ওঠে ভিড় । আমি কুটুসপাখি হয়ে সাংবাদিকের 
ক্যামেরাবন্দী পঞ্চমী ,ষষ্ঠী ,সপ্তমী ,অষ্টমী ,নবমী ও 
বিজয়াদশমীর দর্শনার্থীর ঢল প্রত্যক্ষ করছি । আর 
উমার সংসারে খুঁজে চলেছি লক্ষ্মীর আল্পনা । আজ কার্তিক ও গণেশ খুশির তুবড়ি ফাটায় । ফি বছর 
চাঁদার অংকগুলিকে অনায়াসেই হেরফের করে 
দেয় l বিউটিপার্লারে লক্ষ্মী ও সরস্বতী ফেসওয়াশ 
ও ভ্রুপ্লাক করে ,ফ্যাশন শোয়ে যোগ দেয়। উৎসবের রং মেখে ওঠার ,যাদের সাধ থাকলেও সাধ্যি হয়ে 
ওঠেনা । তাদের জন্য ওঠে বিজয়া দশমীর চাঁদ । 

তবুও ঘাসের ডগায় শিশির ,হিমেল হাওয়া ,শিউলি 
সুবাস এবং শরতের আকাশ কুটুসপাখির মননে নিয়ে আসে আগমনী সুর । উমা আসছে । তবুও 
উমার সংসারে অপ্রত্যাশিত কাউন্টডাউন থেকে 
ব্রাত্য থেকে যায় ম্লান কিছু মুখ ...

বিশ্বজিৎ ভৌমিক



সখী ভাবনা কাহারে বলে 
**********************



সখী!  ভাবনা কাহারে বলে?

পূর্ব দিগন্তে যখন সূর্য্য ওঠে হেসে,
গাছে গাছে পাখিরা মাতে কূজনে,
প্রকৃতি সজ্জিত হয় অপূর্ব সাজে,
তখন তোমার কথাই যে মনে পড়ে!

হৃদয় যখন হয়ে ওঠে অশান্ত,
তোমার স্মৃতি মনকে করে শান্ত,
রাত্রি যখন আসে চুপিসারে,
তখন তোমার কথাই যে মনে পড়ে!

রঙের পসরা নিয়ে রংধনু ওঠে,
হৃদয় মাতে যখন আপন খেয়ালে,
ভরে যায় সব বর্ণিল ছবিতে,
তখন তোমার কথাই যে মনে পড়ে!

মন উদাস হয় বাঁশির করুণ সুরে,
বারবার মনে হয় নও তুমি দূরে,
যখন এলে তুমি এই মনের গভীরে,
তখন তোমার কথাই যে মনে পড়ে!

সখী! একেই কী ভাবনা বলে??

অনন্য বন্দ্যোপাধ্যায়

 


 
ভালো থাকতে শিখতে হয় 
  **********************



তোমাকে  আজও বলছি , গালে হাত দিয়ে এতো ভাবছো  কেন  ? 
এই এতো এতো ভাবনার চাপে মনটাই  যে মরে যাবে 
তুমি ভাবনার মালা পরে  একটা মড়া মনকে নিয়ে কি 
সারাজীবন কাটাতে পারবে ? 

তুমি কি জানো না , সমস্ত জীবন্ত সমস্যার ভিতর সাঁতার কেটে 
সৈকতে উঠতে হয়, ভালো থাকতে হয়, গোধূলি ফুলের মতো মৃদু  হাসতে হয়  ?  তুমি কি বোঝো না  এসব  ? 

তুমি চুপ করে নির্জনে বসে কথাগুলো শুনছো আর ভাবছো , 
তাপপর হাত মুঠো করে বললে আমি ভালো থাকতে শিখবো --
আমি ভালো থাকবো ফুলের মতো , আকাশের মতো , বাতাসের মতো , নদী , বৃক্ষলতা , জীবজন্তু ---আর সকলের মতো 

কিছুক্ষণ পরেই হয়তো শুনবে বোমার আওয়াজ, গুলির গর্জন, কারো কারো জ্বালাময়ী ফাঁপা ভাষণ, 
শুনবে শিশুর নিস্পাপ সরল হাসি , মনকেমন করা গান 
এইসব রোদ- বৃষ্টির গায়ে মেখে সকলেই ভালো থাকে, 
তুমিও  ঠিক একদিন ভালো থাকতে শিখে যাবে 

ভালো থাকাটা অঙ্কের জটিল সূত্র, চর্চা করতে হয়, 
মাজতে ঘষতে হয়, মুখস্থ করতে হয় 
না হলে কূলে এসে তোমার নৌকা ডুবে যাবে 
আসলে আর পাঁচটা বিষয়ের মতো ভালো থাকতে শিখতে হয় 
নাহলে তোমার বছরভোর উৎসব বলে থাকবে না কিছুই 
আনন্দ বলে থাকবে না কিছুই 
বিষাদ বলে থাকবে না কিছুই 
মন বলে থাকবে না কিছুই 
প্রাণ বলে থাকবে না কিছুই. . . . 



মতিউল ইসলাম



শেষ ট্রেন
********




রাতের শেষ ট্রেনটা ভীষণ একা হয়ে প্লাটফর্ম ছাড়তেই একরাশ বিষণ্নতা জমিয়ে ধরে কালো আঁধারের মতো। 
শূন্য কামরায় একাকী যাত্রী হতে ভীষণ হচ্ছে করে।  ইচ্ছে করে মাঠ ঘাট প্রান্তর পার হয়ে পৌঁছে যেতে সুদূর দিকশূন্যপুরে।  ছোট্ট বেলায় শোনা ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী হয়তো বসে থাকে নিরালা কোনো কামরায়। একাদশীর চাঁদ তার বুকের সমস্ত আলো ঢেলে দিচ্ছে নিজেকে উজাড় করে।  ঠিক তখনি রাতের লক্ষীপ্যাঁচা ডেকে উঠে প্রহর শেষের জানান দিয়ে।
ইচ্ছে থাকলেও ( সময় করে?)  উঠতে পারি নি কখনোই।  মায়া মমতা জড়িয়ে ধরেছে আষ্টেপৃষ্ঠে।  অধরাই রয়ে গেছে দিকশূন্যপুর,দিগন্ত যেখানে দূর্বাঘাসের বুকে মাথা রেখে ঘুমায়।  পৌঁছাতে পারি নি  কখনোই ( পদ্মবিলের পাড়ে? )  তাই দেখতেও পেলাম না পদ্মপাতায় সাপের নৃত্য।
গর্ভবতী পুকুরে সাঁতার কাটে সাদা রাজহংসী।  যেন জলই তার সম্রাজ্য, পেছনে অধীনতা মেনে নেওয়া পরাজিত রাজার মতো রাজহংস।  বঙ্কিমচন্দ্র সে জন্যই তো বলেছিলেন  সুন্দর মুখের জয় সর্বত্রই।
ফোঁকলা দাঁতে হাসে মাঠের সম্রাট।  মহাজনের গোলায় ভরে দিতে হবে গোটা বছরের তামাম পরিশ্রম।  হয়তো রাতের আঁধারে একান্ত আপন নারী - ইজ্জত - সম্ভ্রম। 
পাঠ্যবই থেকে আজো ডাক আসে দুনিয়ায় মজদুর এক হও।  এক হওয়া কি এতোই সহজ? এতোই সহজ রাতের শেষ ট্রেনে চেপে বসা?
নিজের মাংসে হরিণী নিজেই তার শত্রু।  আর কে না জানে তার চেয়ে অধিক সুস্বাদু নারীর শরীর! তাই পথে ঘাটে বাসে ট্রেনে ( আদিম নখর) খুবলে নেয় কাঁচা মাংস।  মিটিং হয়,  মিছিল হয় একটার পর পরবর্তী মিছিল।  সময় টা ভীষণ কম,প্রস্তুতি নিতে নিতেই প্লাটফর্ম ছাড়ে রাতের শেষ ট্রেন।

রাজকুমার বিশ্বাস




বেকার




একটা তীব্র যন্ত্রণা...
 রৌনক কে
শুঁয়োপোকার
 সজনে -পাতা ...
খাওয়ার মতো 
কুটে কুটে খাচ্ছে।

 
বছর বিয়াল্লিশের রৌনক
 বেকার। 
সে তো...
 বাজ পড়া
 মুখ থুবড়ে যাওয়া
 তাল গাছ। 

সে তো ---
বাবা-মায়ের ---
অল্পে অল্পে সঞ্চিত 
রেকারিং ডিপোজিটের
 লালবাতি জ্বলা ব্যাংক ।

বছর বিয়াল্লিশের রৌনক
আজ বেকার---
কাজ নেই ওর! 

তাইতো ,

ভাইপো টুবাইকে 
স্কুল পৌঁছে দিতে 
যেতে হয় ওকেই--
-সাত সকালে। 

সকাল সাতটা র মধ্যে -
বাজারটা সারতেই হয়
ওকে-----
বৌদি র কড়া হুকুম ।

তা না হলে 
দাদা ভাত পাবে না 
অফিসের। 

বাবার পেশারের
ঔষধ টা 
ওকেই
আনতে হয়। 

মায়ের--
বাতের ব্যথা 
ওর বুকে বাজে
তাইতো---
ওকেই ছুটতে হয়
ফার্মেসি তে ।

কাজ নেই ওর 

তাইতো
বোনের টিউশনির পথের
পাহারাদারি
ওকেই
করতে হয়। 

অপগন্ড রৌনক,
কমপিটিশন পরীক্ষা 
দিয়েছিল
অনেক কটা ।
নেহাত
মন্দ নয়;
কিন্তুু 
কোথায় যেন
সব গোলমেলে
হিসাব মেলে না। 

বছর বিয়াল্লিশ র রৌনক
আজ বেকার। 

মায়ের অভিমান মাখা বকুনি', 
বাবার ক্লান্তিকর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ;
বোনের রাগত উষ্মা,
দাদার তাচ্ছিল্য ,
আর বৌদির ঘৃনা,
ওকে 
পরিনত
করেছে
সাহারা মরুভূমিতে।

বছর বিয়াল্লিশের রৌনক
আজ বেকার।