নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

রাজীব লোচন বালা





 "এ মৃত্যু আমার বিবেকের"
   *********************
                       

এ পৃথিবী - এ মানুষ সবই রয়ে যাবে, আসবেনা শুধু__
  সে আমার বিবেক , আমার চৈতন্য আর আমার  মনন।
মুক্তির রঙ্ - মুক্তির যুদ্ধ আর মুক্তির ত্যাগ- তিতিক্ষা_
রয়ে যাবে সে বয়ে যাবে নদী রক্তস্রোতে মিশে বারুদের ফুঁটো দিয়ে।

মানুষ রইবে মানুষ হারিয়ে, জীবন শান্ত হবে মনটা কাঁদবে,
অশ্রু জমাট হবে একদিন হৃদয়ে খিল গাঁথবে।
কবিতার ভাষা , ছন্দ- তান সবই নীথর মলিন হবে 
চারপাশ হতে বিধ্বংসী নরহত্যা লীলায় মায়ের রোদন বুক থাপরে থাপরে পরবে।

এ নদী - এ বায়ু - এ মাটি শব শুঁকোবো, মানুষ অন্য গ্রহের পিশাচ_
মুক্তি এদের সয় না , আগুন এদের নেভে না.. আছরে পরে আমার বিবেক, আমার হাত শুধুই মুখের পড়ে।
কত বেদনা সইবে আবার জাগতে হবে , জানি না কিভাবে? কোন খানে ? কার দ্বারা  নিশ্চল হব আমি।

বুদ্ধিজীবিদেরও কী বলবে ওরা কি হ্যাঁ বা না করবে ?
বলি সদা সর্বদা হয়ে আসছে প্রান্তিকের , কেননা তার দায় পড়েছে!
বিস্ময়ের কিছু নেই ইহাই সত্য, এ যে উন্নতির মহাযজ্ঞ, দান দিবে না !!!
বিদীর্ণ কন্ঠ, ভাষাহীন কথা আর শব্দহীন মৌনতা আমাদের বেশ সাজে
কিন্তু কী জানেন তো এ বুলেট ! এ রক্তের ছিদ্রতা আমার বুকে হয়তো পড়েনি, নয়তো বুকের ভিতরের হৃদয় আবছা দেখতো , না হয় অন্ধ হতো।

ভাবছি হৃদয় আবার অন্ধ হয় নাকি, এ কী কল্পনা তোমার_
আবার ভাবি, মাটিতে পা রাখি এ যুদ্ধ বিবেকের আর বিবেক শূন্যের।
এ লড়াই বুকের - এ লড়াই সত্যের, হায় এ হৃদয় অন্ধে , অন্ধকারে ভরা
আলোর পাখিদের বুকে গুলি 'তোমরা' কোরো না।

"মা" যে বড়ই দীনদুঃখীনি, "ওরে কোথায় গেলিরে তুই" ?  এ প্রশ্নের প্রতুত্ত্যরে কী হবে এ হৃদয়ে মোর জানা নেই।
কতশত বোন,হাহাকার ধ্বনি, শকুনের মতো ঝাপিয়ে পড়া শয়তানি বুদ্ধি,
দূর হতে দাঁড়ায়ে , ভাবি আছি শান্তিতে,, 
নিজের গোলায় আগুন না ধরলে হাত কি থাবরায় বুকেরে।

কত স্বপ্ন- কত আশা কতই ভালোবাসা আর ইচ্ছা_
 আজ এখানে আমার প্রাণের আশার সমাধি লিখন  হয়ে যাবে।
না না না আর গুলি কোরো না  সেই পাখির বুকে
এ কন্ঠ যে তার গাইবে সত্যের  জয়গান।
সেই তার প্রেরণা, আশা মোর রক্তে বয়ে যায়-
এ মানুষ তাঁকায় ।
এ বিবেক - এ মৃত্যু  আমার বুকে কি ঢেউ তুলে যায় ?

শুক্লা মালাকার




ফেরার পথে



কোনদিন মৃত্যুও তোমাকে পাবে ভেবে
অসহায় আমি পুড়েছি ইর্ষায়

খলখল টলমল ভালো থাকা
সিঁড়ি চড়ার নেশায় চোবানো জীবন
কবে থেকে যে ফোঁটা ফোঁটা অর্থহীন হয়ে গেলে!
আজ দুই যুগেরও পরে এই শ্মশানে
চামড়ায় আঁকিবুঁকি নিয়ে তোমার বিভঙ্গিমা
দেখি কুচো ভুল খেয়েছে সময়
স্মৃতিরাও পাতাহীন
পাশে শুয়ে থাকা আমি ফুলসাজে
রাস্তা চিনে ফিরছি
বলতোতোমার জন্য পথ বানাতে পারি

                          

জয়দীপ রায়



শেষের কামরা
**************



স্পটলাইট বুকে হেঁটে চলা
বিকেলের সস্তার পাবলিসিটি
ছেড়া কামিজে শরীরে দেখিয়ে
পয়সা গোনে নোয়াটা
কালশিটে দাগ সযত্নে লুকিয়ে
আবারো সাজতে হবে
হাপিয়ে ওঠা বুকের মাঝের
নির্লিপ্ত ঘাম গুলো
আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সন্ধ্যের পর
শর্ট রেডি ম্যাডাম
জানি আবারো আবারো গিয়ে দাড়াতে হবে
কুঝিক ঝিক বলে যাওয়া
চলে যাওয়া ট্রেনের শেষের কামরায়
                       

শ্যামল কুমার রায়




শরৎ
*******


  
শরৎ , তুমি বড্ড কৃপণ, 
জগৎ জুড়ে আসো না, 
বাংলা মায়ের কোলটি ছেড়ে, 
ভুবন জুড়ে থাকো না ।
পৃথিবীটা যে বড্ড ছোট, 
ওয়েব জালে বন্দি ।
মানিকতলা আর ম্যানহ্টান করেছে যে সন্ধি ।
বর্ষার ঐ ভরা যৌবনে নদী ও কুমারী, 
শরতের ঐ হিমেল পরশে প্রকৃতি ও সুন্দরী।
খোঁপায় গুজে কাশফুল তুমি রূপবতী, 
কৈলাসের ঐ শ্রীময়ী আসে তব ঋতুতে, 
আপামর বঙ্গবাসী মাতে উৎসবে।
নিউজার্সির ঐ বাঙালি পাড়ায় শ্রীময়ী পূজিত, 
ঘরকুনো সেই বাঙালি আজ বিশ্ব ব্যাপিত ।
বাংলায় তুমি খুশির হাওয়া, বৃষ্টি থেকে মুক্তি, 
ভাদ্র আশ্বিন এই দুই মাসেতেই উৎসবেরই ব্যপ্তি ।
সম্প্রীতির এই বাংলাতে পরব - পার্বণ একসাথেতেই ঘটে,
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে উৎসবেতে মাতে।
জগতেরই ঐশ্বর্য যত তোমাতেই মুখরিত, 
সোনালী ঐ ধানের শিষে প্রান্তর প্লাবিত ।
গরীবের ও ঠোঁটে ফোটে এই সময়েতে, 
অন্ন বস্ত্র বিতরণ হয় পরব - পার্বণেতে ।
শরৎ তুমি গ্লোবাল হচ্ছ না কেন? 
ম্যানহ্টানে এই সময় শীত আসে জান?
" রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করনি" - 
কথাটা সত্যি নয়কো আজ, 
ঘরকুনো বাঙালি আজ কর্পোরেট - গ্লোবাল ।
মহাষ্টমীর সন্ধ্যা আরতি হয় সর্বত্র, 
শরতের আমেজ থেকে বঞ্চিত কেন থাকে পাশ্চাত্য? 
কনকনে ঐ ঠান্ডাতে কাঁপছে ওরা, 
উৎসবের আমোদে তবু মাতছে ওরা ।
শরৎ তুমি ছড়িয়ে পড়ো বিশ্ব জুড়ে, 
মধুমাখা তব হিমেল পরশ ছড়াক সাগর পাড়ে ।

প্রবীর রায়




নতুন বেহুলা
***********



ঘাটেঘাটে বেহুলার দেখা- দিকদিগন্তে
সমস্ত নদী নালাই যেন সেই পুরাতন-
গাঙুর নদী,আর তার বুকে ভাসানো ভেলা !
তবে ! আজ আর তাতে লক্ষ্মীন্দর নেই
লক্ষ্মীন্দরেরা আজ অসুর,তাই বেহুলাই-
সারথি,
নিজেই মরদেহ-নিজেই তার রক্ষক
মনসা সন্তান পাপীদের দংশিতে ভয় পাই
কারণ ! আজ বৈজ্ঞানিক যুগ-নিমেষেই বিষ উধাও
তবে তা পুরুষের ক্ষেত্রে ! নারীরা তার শিকার
তাই আজ আর একটি বেহুলা নয় !
কোটিকোটি বেহুলা যত্রতত্র-অবহেলিত মৃতপ্রায়,
এখন স্বর্গদ্বারও নেই ! তবে সতীত্ব পরীক্ষা অবিচল
ফেরেনা হারানো সন্তান-কঙ্কালে জাগেনা প্রাণ।।

শ্রীময়ী(দ্বিতীয় পর্ব)

         







শ্যামল কুমার রায়, সহ শিক্ষক,
নবগ্রাম ময়না পুলিন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়।




               দ্বিতীয় পর্ব 
               -----------------



     মাখন ফিরে এসে তিতলি কে প্রপোজ্ করল । অধ্যাপিকা তিতলি সলজ্জ হেসে বলল, " জানি না যাও ।" কিন্তু অবাঙালী তাও আবার মারোয়াড়ি পরিবারে মাছ ভাত খাওয়া বাঙালি মেয়ে? ছি!ছি!ছি!বেটা , মাখন, ইয়ে গলত হ্যায়।

আবার মেয়ে প্রফেসর তো কি হয়েছে? বংশ বলেও তো একটা ব্যাপার আছে? একদিকে, এত বছরের জমানো কৃতজ্ঞতা, রক্ত ঋণ শোধ করার সময়ে মা বাবা কেউ বুঝল না । আর মাখন কে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা যায়, শরীর দেওয়া যায়, তার ঔরসজাত সন্তানের মা হওয়া যায়, কিন্তু মনের জমির দখলীসত্ব কি করে দেবে , তিতলি? ওর মনের জমির মালিক যে একমাত্র, একমাত্র মাখন । সুতরাং আর কি? এক কাপড়ে তিতলি বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা মাখনের কর্পোরেট অফিসে। জ্যোতিষী শ্রী ঋষিকেশ শাস্ত্রী বলেছিলেন, " মাখনের বৃহস্পতি তুঙ্গী । " আর মাখনের ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ হবে। আমেরিকা যাওয়ার আগে মাখন তিতলি কে নিয়ে শাস্ত্রী আঙ্কেলের কাছে  গিয়েছিল । যোটক নিঃসন্দেহে রাজযোটক। কিন্তু রান অ্যাওয়ে ম্যারেজ। পরিনতি যখন জানাই ছিল, তখন তো আর সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই । তিতলি কে নিয়ে মাখন নিজের পাওয়া অফিসের ফ্ল্যাটে। প্রেমিক আর স্বামী কখনো এক হয় না , বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে। তিতলি তাই অধ্যাপনা  সামলে স্ত্রী ধর্ম পালন করত। প্রকৃতির নিয়মে মাখন আর তিতলির কোল আলো করে এল সৌমদর্শন মুকেশ । সব অভিমান , জমানো ক্ষোভ, ব্যাথা নিমেষ উধাও হয়ে গেল নাতি হওয়ার আনন্দে। সম্পর্কটা শুধু আর তিতলি আর মাখনের মধ্যে রইল না, জোড়া লাগল দুটো পরিবারের মধ্যেও ।


(চলবে...)