নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

সমীর সরকার





ছায়াপোড়া মন
************



গুল্ম ঘুমের কুশি
নরম হাওয়ার দোল ছোঁয়ায়

জলছবির আকর্ষ
চুঁইয়ে পড়ছে অর্বুদে

জড়া মুখ তুলে
বোঁটা খসা আলো
শিষ  কাটছে জলবাঁশি

ঠেস দুয়ার
কোদাল ছাটা অন্ধকার
আড়ষ্ট চোখ
এক দোয়াত হিমেল কুচো
উত্তুরে জানালা
ভাবডোবা খাগ সুদূর প্রান্তীয়

বাড়িয়ে হাত টানছে দাগ
 তোমার সেই অনুক্ষণ

কি করব বলো -

কথাঝরা গাছ আমার যে
 ছায়াপোড়া মন ...

ঝুমা চৌধুরী




চৌকাঠের ওপারে
***************


স্পর্শকাতর ইচ্ছা গুলোতে সাহসের প্রলেপ লাগিয়েছিলো

যে দলছুট মেঘ

তার কাছে হাত পেতে একদিন বৃষ্টি চেয়েছিলাম আমি

ঝড়ের বুকে হাত রেখে বলেছিলাম

"এলোচুল উড়িয়ে, বুকের আঁচল সরিয়ে

লজ্জাকে উড়িয়ে নিয়ে যা দেখি"

গুমোট বিকেল বললো, "তবে যে তুমি অশুচি হবে!"

অস্ত যাওয়া সূর্যের চোখে চোখ রেখে অহংকার দিয়েছিলাম ছুঁড়ে

বলেছিলাম,"বেশ, হোক আমার সর্বনাশ "

গভীর রাতের গল্প গুলো যদিও ছিলো বড়ো বেশী সংযত,

শরীরী গন্ধ উপেক্ষা করে,সোজা মনের গালে গাল ঘসলো!

আমি অস্থির হয়ে বলেছিলাম,"ওওও মেঘ,

তুমি অমন কেনো!!

মন ভিজলে ক্ষতি নেই,শরীর জবজবে হলেই দোষ!!"

মেঘের মুখে তখন জয়ের হাসি।

আজ আমার উঠান জুড়ে মেঘ ভেঙে ভীষন বৃষ্টি

আর আমি বারান্দার পাশ ঘেঁষে চুপটি করে দাঁড়িয়ে

"ও মেঘ, আজ যে আমার ভীষন জ্বর!!"


                  

সোমনাথ দাস চান্দল্য




" মাঘ স্নান "
**********





         বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে পৌষ সংক্রান্তি  গ্রাম বাংলার লোকসংস্কৃতিতে লোকাচারে পূর্ণ বিশেষ একটি পার্বণ । তাইত এই পার্বণের অনেক নাম -- মাঘস্নান ( মাঘবুর) , পৌষ সংক্রান্তি , হালন্তি , মকর সংক্রান্তি ।
পৌষ সংক্রান্তির প্রস্তুতি শুরু হত অনেক আগে থেকে।
পালাপার্বণ গুলো ছিল সে সময়ে সর্বস্তরের গ্রামীণ জীবনে বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ।   আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলের সক্রিয় অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে যা ছিল অনাবিল আনন্দ যাপন । সহজ সরল আয়োজনের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ জীবনে নিয়ে আসতো আনন্দ ধারা । কৃষিনির্ভর জীবনে সকল উৎসব অনুষ্ঠান তাকেই কেন্দ্র করে আবর্তিত হতো  তারই প্রাকৃতিক উপকরণ কে অঙ্গীভূত করে নিয়ে ।
      আজ থেকে বছর তিরিশ আগেও পূর্ব বঙ্গের ভাটি অঞ্চলের গ্রামগুলোতে চাষাবাদ হত চিরাচরিত প্রাচীন প্রথায় । লাঙ্গল জোয়াল আবাল চকম ( মই ) আচঁড়া কাঁচি কোদাল ইত্যাদি । ধান পাটের প্রজাতি দেশি , উচ্চ ফলনের লোভে সংকরায়ন  থাবা গাড়েনি তখনও ।
আমন ধানের গাছগুলো আষাঢ় শ্রাবণ জুড়ে বর্ষার জলভেঙে দৈর্ঘ্যে প্রায় দশ বারো ফুট । দানির সময় মোটে তিন ফুট কেটে নিয়ে বাকি নাড়া হয়ে মাঠেই পড়ে থাকে । জ্বালানির কাজে লাগে আবার মাঠেই জ্বালিয়ে দিয়ে জমির উর্বরতা বাড়ানো হয় ।
      পৌষ মাসের শুরু থেকেই আমাদের বাড়ির জোয়ান ছোকরারা প্রতি রাতে দল বেঁধে মাঠে যায় , নাড়া তুলে আনে । পূবের পুকুরের দক্ষিণ পাড়ের কলতলার কাছে বরি (কুল ) গাছের তলে জমা করে রাখে । সংগ্রহ দিনে দিনে বিশাল আকার ধারণ করে ।
পৌষের শেষের দিনগুলোতে শুরু হয় চালের গুঁড়ি কুটা, ঢেঁকি বা গাইল শেহাইড এ । খেজুরে গুড় , তিল্লাই (কদমা) বাতাসা কাঁঠালকুশি (গুড়ের মিষ্ট নিরেট চুঙের আকারে , ছোট ) ...কিনে আনা হয় বাজার থেকে।

      সংক্রান্তির দিন ভোর রাত্রে তিনটা থেকে বাড়ির সব ছেলে ছোকরা জড় হয় কল পাড়ে । পূব পুকুরের দক্ষিণা ঘাটের জলবিভাজিকায় নাড়া দিয়ে জ্বালানো হয় আগুন । উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠে সবাই , জানান দেয়  জ্বলেছে আগুন , এসো করে নাও মাঘস্নান ।
মা ঠাকুমারাও শুরু করে দেয় পিঠে পুলি বানানোর প্রস্তুতি । আজ কত কাজ , রকমারি পিঠে পুলি পায়েস , উঠোন নাটমন্দিরে আলপনা ,স্নান সেরে নিয়ে ভোর ভোর ,  করে দিতে হবে নগর কীর্ত্তনের আয়োজন । এ বাড়ি থেকেই যে বেরোবে নগর কীর্ত্তন । তারপর হালন্তির  রান্না লাউ  কুল দিয়ে টক , তাতেই না হয় লাঙলের পূজা । এদিকে পুকুর ঘাটে ক্ষণে ক্ষণে ছেলেদের হল্লা শুনা যায় । ছেলেরা আগুন পোহায় , আগুনে অরণি ইন্ধন যোগায়  , হলকে উঠে নাড়ার আগুন উৎসাহে হল্লা করে দ্বিগুন ।
বৌদি ঠাকুমা  ঠিসারার (রঙ তামাশা)  পাত্রীদের নিয়ে অশ্লীল ছড়া কাটে , উল্লাসে চেঁচায় --
  " লাউ পাতা ঢুলা ঢুলা বাণীর মার পেটটা ফুলা " ,
" পূবের পাত্রঅ  দেহিরে ভাই কাঁচির উপরে কাঁচি
গোপাল দাসে কাইজ্যা লাইগ্যা বেডি রে ডাহে চাচি " ,
পশ্চিমের পাতরঅ দেহি রে ভাই ঠ্যাডার ভিতরে ঠ্যাডা
কিরণবলার খেতার নিচে তিন চাইর বেডা " ।

  যখন যে স্নান করতে আসে তাকে নিয়ে ছড়া কাটে সম্পর্ক অনুযায়ী । এক সময় স্নান শেষ হয় , সবাই ঘরে চলে আসে । পিঠে পায়েস দই চিড়া খেয়ে সবাই এসে জড় হয় নাট মন্দিরে । ঠাকুর প্রণাম করে  খোল করতাল তাসা সহযোগে শুরু করে কীর্তন প্রভাতী সুরে --
" ভজ গৌরাঙ্গ কহ গৌরাঙ্গ লহ গৌরাঙ্গের নাম রে ,
যে জন আমার গৌরাঙ্গ ভজে সে জন আমার প্রাণ রে ..."

    বাড়ি ছেড়ে উত্তর মুখী হয় কীর্ত্তন । চারিপড়া থেকে পৌদ্দা হয়ে উত্তর পাড়ায় যায় । পৌদ্দা থেকে যুক্ত হয় দেবেন্দ্র দেব চিন্তা দেবেরা , যুক্ত হয় কিছু উৎসাহী মুসলিম ছেলে ছোকরাও । একে একে সাধুর বাড়ি সরকার ( নেহেরু) বাড়ি দাসদের বাড়ি করবাড়ি  প্রতি বাড়িতেই নেচে নেচে কীর্ত্তন আর তার মাঝেই গৃহী ফুল বাতাসা কদমা ... দেন হরির লুট । যার ভাগ্যে যা জোটে , সন্তুষ্ট তাতে , কেউ কেউ কমলা লেবুও দিতেন লুটে ।
প্রবোধ দাসের বাড়িতে একটু বিরতি । পিঠে পুলি চা পান তামাক । আবার বেরিয়ে পড়ে নগর কীর্ত্তন । গৌরাঙ্গ দাস মূল সুর ধরে ঘরে ঘরে হরিনাম সুধা নিয়ে যায় । ফিরে আসে আবার চারিপাড়ার , শ্মশানে কীর্ত্তন চলে কিছু ক্ষণ , সেখান থেকে চারিপাড়ার ষোল ঘর হিন্দুর ঘরে ঘরে  । সুর উঠে দাসেরা বাড়ির নাটমন্দিরে পরিশেষে ---
" নগর ভ্রমিয়া শেষে নিতাই এলেন ঘরে ...."
গান বুড়ি প্রমোদাসুন্দরী ধান্য দূর্বা দিয়ে বরণ করে নেন তাঁর প্রাণের গৌরাঙ্গ কে । পিঠে পুলি পায়েস পরিবেশন শেষে সাঙ্গ হয় নগর কীর্ত্তন ।

পকেট ভর্তি লুটের প্রসাদ আমিও চালান করি আমার গোপন সিন্ধুকে ।
তাই না আজ দিয়েছি খুলে
সকলের তরে !

      লাঙল জোয়াল সহ সকল চাষের উপকরণ পরিষ্কার করে ধুয়ে এনে রাখা হয় নিকানো নাট মন্দিরের এক কোণে । লাউ পাতায় দুধভাত,  লাউ বরির (কুল) টক দিয়ে পূজা হয় । রাধা কৃষ্ণের ভোগ লাগে , ভোগ যায় শ্মশানে পিঠে পুলি পায়েস নিরামিষ রন্ধনে ।
কাজের লোকেদের দেওয়া হয় পিঠে পায়েস ।
  অনাড়ম্বর সহজে সরলে গ্রাম বাংলা গ্রামীন বিনোদন ,
আজও চলে হয়ত একটু ভিন্নতর সময়ের সাথে তাল দিয়ে ।
তবে চারিপড়া থেকে আর নগর কীর্ত্তন বেরোয় না , বেরোবেও না আর কোন দিন আর --
কাল হরণ করেছে সব , গান বুড়ি ধরে না গান ভোর রাত থেকে --
" সূর্য বংশে ভগীরথ আগে দেখাইয়া পথ তোমারে অনিল মহিতলে ...
সগর রাজার বংশ ব্রহ্ম শাপে হইল ধ্বংস ...
তোমারে আনিল মহিতলে ...."

 তবে রাঢ়ের অজয় তীরে বসে মকর আসর , তীরবর্তী প্রতি গ্রামের  আখড়া থাকে , কীর্ত্তন বাউল ভাটিয়ালি লোকগীতি গানে গানে মন মাতে , স্থায়ী বাউলের আখড়া তো আছেই । সব মিলিয়ে পাঁচশত । থাকা খাওয়ার চিন্তা নাই , কন্ঠ একটু সুরেলা হলে ত কথাই নাই ,গানও গাওয়া যায় নেচে দোতারা খমকে ।

   বাঁশি বনে নয় মনেই বাজে ।
নিয়েছে যত দিয়েছেও কম নয় !!

অভিষেক ঘোষ




নাম দিয়েছি "অ ভি মা ন"....
**********************




প্রেম বড়ো বাজে জিনিস
প্রেমিকাকে ভালো লাগলে
সে মনে বসে যায়।
অার যদি সে কষ্ট দিয়ে বুকের বাঁদিক নষ্ট করে দেয়;
তাহলে  প্রেমহীন শরীরে এক টুকরো পুকুর জন্মায়...

   ^অামি সেই পুকুরের নাম দিয়েছি - - "অ ভি মা ন"।।

মৌসুমী রায়


মুখ ও মুখোশ 
**************



রাত নেমে আসে শহরের অলি গলি
চৌরাস্তায় বাড়ির ছাদে সবখানেই
অন্ধকার ঘেরে আরো অন্ধকারের জীবন,
প্রথম রাতে জীবনে উচ্ছ্বাস জাগে
যত ঘন হয় উত্তরের হাওয়ায় শূণ্যতা পায়।
কমে আসে বাড়ি ফেরার ব্যস্ততা
কমে আসে ভদ্রমুখোশের খেলা
খালি পেট রংচঙে মুখ বিকোয়
বিকোয় শহরে উষ্ণতা,শুধু পারদের ওঠা নামা,
রংচটা মুখ তখন ফেরার অপেক্ষায়।
পথের ধারে জটলা আগুন
কোথাও বেসুরো গান গুনগুন
কাঠের আঁচে শরীর সেঁকে প্লাস্টিক চাপা ঘুম
রাত নামে নিজের মত ধীর পায়ে
শহরের কোথাও এখনো বেঁচে থাকার ধুম।


তাপস খাঁন




প্রিয় রুদ্রকে 
************



প্রিয় রুদ্র ,
কতদিন পর দেখা হলোরে অাজ
মনে পড়ছে ; নাকি সব ভুলে বসে অাছিস ৷
সেই যে সোনামুইয়ের শিক্ষায়তন
ক্লাস টুয়েলভ ; রোল নং থার্টিন
তুই প্রথমের দিক থেকে দ্বিতীয় বেঞ্চ
অার অামি একটা ছেড়ে চতুর্থ ৷
তবুও সব কিছুই কেমন যেন 
অনায়াসে অাদান—প্রদান হয়ে যেত ৷
জানিস ;এ যাবৎ ততটাও ভালো নেইরে 
যতটা সেই দিনগুলোতে ছিলাম ৷
একটা বিশ্বাসী মানুষের কাছে 
প্রত্যেকটা দিন ,প্রত্যেকটা মুহূর্ত ধর্ষিত হয়েছি
না যৌনাঙ্গের অাঘাতে নয় ; 
প্রত্যাক্ষায়িত কথার অাঘাতে অার
অবিশ্বাসের লোলুপ দৃষ্টিতে ৷
এই দেখ কথায় কথায় জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেছি
এখন কি করছিস , বিয়েথা করেছিস
নাকি.........অাজও অপেক্ষায় ........ ৷
কিরে কিছু বলছিস না কেন ; কিছু বল ৷
সেদিনের সেই দিনটা অাজও ভুলতে পারিনারে 
একটা ভুল সিদ্ধান্ত ; অাজও অামাকে তাড়িয়ে বেড়ায় 
ভীষণ রকম ভাবে তাড়িয়ে বেড়ায়রে ৷
তোকে লুকিয়ে ;বন্ধুদের লুকিয়ে 
তলে তলে যে ফার্স্ট ইয়ারের রাজার সঙ্গে
প্রেম জমিয়েছিলাম ;তা সফল হয়েছিল ঠিকই
কিন্তু তার ফলটা ছিল খুব মারাত্মক ৷
সেদিন শ্রাবণ মাসের ঝোড়ো অাকাশ
তুমুল বৃষ্টি—বাদল মাথায় নিয়ে
তোদের না জানিয়ে বাড়িছেড়েছিলাম ৷
তার মাস চারেক পর একদিন রাতে 
রাজা মদ্যপ অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে বাড়ি ফিরেছিল
বলতে যেতেই সেকি মার মেরেছিলোরে অামায়
শরীর ফেঁটে রক্ত ঝরছে ; 
অামি গুগিয়ে গুগিয়ে কাঁদছি
লাথি মারতে মারতে দরজার বাইরে বের করেদিল সেদিন ৷
সেই রাতে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ৷
শরীর ছেঁড়ার যন্ত্রনায় অার জ্বরে গা পুঁড়ে যাচ্ছিল অামার ৷
পরের দিন সকালে অামায় পাশকাটিয়ে
দরজায় চাবি দিয়ে চলেগেল রাজা 
একটি বার ফিরেও তাকালনা ৷
সেই যে সেদিন ঘর ছাড়লাম 
স্বামী ছাড়লাম ; তার পর পাঁচ বছর হয়ে গেল
ফিরে যাওয়া হয়নি ৷
কিছু দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালাম
তখন বদ্দ উন্মাদ ; ঠিক মনে নেই 
কোথা থেকে অামার মেজো কাকা 
অামাকে ধরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছিলেন ৷
তারপর অারো দুবছর হয়ে গেল 
কতকিছু পালটেছে মানুষ পালটেছে সমাজ পালটেছে 
অার নিজেকেও অনেকটা পালটেনিয়েছিরে ৷
তুই কেমন অাছিসরে রুদ্র ;
এবিদানী শরীরটা খুব ভেঙেছেরে তোর
কি হলো তোর চোখে জল ; তুই কাঁদছিস রুদ্র
দেখ সেদিন তোকে তোদেরকে ঠকানোর 
শাস্তি ঠিক পেয়েগলাম রে রুদ্র 
ঠকানোর শাস্তি ঠিক পেয়েগেলাম ৷