নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

"কারার ঐ লৌহ কপাট" গানের বিকৃত :হোক প্রতিবাদ

 



গুণী সংগীত পরিচালক এ আর রেহমানের কোনো কাজের সমালোচনা করার মতো তেমন কোনো সুযোগ আসলে তিনি রাখতেন না। সবার থেকে একেবারেই আলাদা ছিল তার কাজের ধরন। ব্যক্তিগতভাবে আমি তার গানের একজন ভক্ত। কিন্তু সম্প্রতি রেহমান সাহেবের একটি কাজ খুবই নিম্নমানের ও অনৈতিক হয়েছে।

ওনাকে হয়তো কেউ বুঝিয়ে দেয়নি যে এটা কতবড় অপরাধ কারণ উনি নিজের বলয়ের ভেতর বসবাস করেন। অতবড় একজন সুরকার কী করে এমন স্পর্ধার কাজ করে যা কিনা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এটা আসলে কাজ নয় এটা দুষ্কর্ম! কারার ঐ লৌহ কপাট গানের মার্চ পাস্ট সুরে কী কমতি আছে! হাজার বছর পরেও এই গানের রক্ত গরম করে আবেদন এমনই থাকবে। আমি স্তম্ভিত! খুব অন্যায়! গানটি তিনি শুধু নতুন সংগীতায়োজন করতে পারতেন কিন্তু সুর? বিদ্রোহী কবি কি কাউকে এই অধিকার দিয়েছেন? নাকি কবি এই সুরটাও করেছিলেন যা অপ্রচলিত অথবা অজনপ্রিয় হওয়ায় উনি আবারও সুর করেছিলেন, এই প্রশ্নটাও উঁকি দিচ্ছে। কারণ এতো ভাবনাহীন কাজ আল্লা রাখা রেহমান সাহেবের সাথে যায় না একদমই। কাজী নজরুল ইসলামের কপিরাইট সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষ আজ কোথায়? তারা এ নিয়ে কথা বলবেন না? এ বড় অনাচার। আর যে বাঙালি শিল্পীরা এই গান গেয়েছে তারাই কী করে এমন সুরে গানটা গাইতে পারলো। রেহমান সাহেব হয়তবা এই গান আগে শোনেননি কিন্তু তারা তো নিশ্চয়ই শুনেছেন। আশা করি অচিরেই গানটি ছবি থেকে বাদ দেয়া হবে এবং রেহমান সাহেব তার কৃতকর্মের জন্য দুঃখপ্রকাশ করবেন।

গানের ইতিহাস:

১৯২১ সালে ডিসেম্বর মাস-কাজি নজরুল ইসলাম কুমিল্লা থেকে কলকাতায় ফেরার পর সৃষ্টি করেন 'কারার ওই লৌহ কপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপাট'। বাংলার ইতিহাস হাঁতড়ালে সবথেকে সেরা বিদ্রোহের গান প্রসঙ্গ এলে এই গান আসে। সেই সময় নজরুলের 'বিদ্রোহ' চিন্তায় ফেলেছিল রাজশক্তিকে। নজরুলের উপর নজরদারি শুরু হয়। তাঁর বহু কাব্যগ্রস্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ১৯২৪ সালের কাছাকাছি সময়-নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ভাঙার গান।

১৯৩০ সালের কাছাকাছি সময়, নিষিদ্ধ করা হয়েছিল নজরুল ইসলামের প্রলয় শিখা। তাঁর আগে সরকার বিরোধী প্রচারের জন্য তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এরপর তিনি নিজের সম্পাদিত ধূমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত একটি কবিতার জন্য এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পান। তাঁকে প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে গেলেও সেখান থেকে পাঠানো হয়েছিল আলিপুর জেলে। এরপর সেখান থেকে কবিকে পাঠানো হয়েছিল হুগলির জেলে। তাঁকে কাছে পেয়ে উজ্জীবিত হয়েছিলেন অন্যান্য বন্দিরাও। সেই সময় হুগলির জেলের সুপার আর্সটন সাহেবের অত্যাচারের কুখ্যাতি ছিল সর্বত্র। তাঁকে ব্যাঙ্গ করে রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গানের প্যারোডি করেছিলেন নজরুল। খোলা গলায় গেয়ে উঠেছিলেন, "তোমারি জেলে পালিছ ঠেলে তুমি ধন্য ধন্য হে"।

আর এই বিদ্রোহের ভাষা একেবারেই মেনে নিতে পারেনি রাজশক্তি। তাঁর উপর শুরু হল অমানবিক অত্যাচার। বন্ধ করা হয়েছিল ভাত। পরিবর্তে ফ্যান খেতে দেওয়া হত। কিন্তু, নজরুল ফুঁসে ওঠেন। এই অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি অনশন শুরু করেছিলেন।

তাঁর স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার খবর সামনে আসার পর সেন্ট্রাল জেলে অনশন ভাঙার অনুরোধ জানিয়ে বার্তা পাঠান স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি লিখেছেন, "গিভ আপ হাংগার স্ট্রাইক, আওয়ার লিটারেচার ক্লেইমস ইউ।' কিন্তু, নজরুলের কাছে সেই বার্তা পৌঁছতে দেননি সংশোধনাগারের কর্তারা।

এরপর মাতৃসমা বিরজাসুন্দরী দেবীর অনুরোধে ৩৯ দিনের মাথায় অনশন ভাঙেন তিনি। এরপর তাঁকে বহরমপুরের জেলে পাঠানো হয়। যেখানে তিনি পেয়েছিলেন শিবরাম চক্রবর্তীকে। নিজের গানের থেকে রবীন্দ্রসংগীত ভালো গাইতেন তিনি, লিখেছিলেন শিবরাম।




কোন মন্তব্য নেই: