নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

মানুষ তুমি মানুষ হও : কাজী জুবেরী মুস্তাক



সারা পৃথিবী আজ বাঁচার জন্য লড়ছে
ঈশ্বরের সামনে নতজানুই বসে থাকছে ;
সকলে থাকতে চায় মহাবিশ্বের উপরে
মুখোশের উপরে আরেক মুখোশ পড়ে ।

ক্ষমতার দম্ভ নেই আজ পৃথিবীর বুকে
অহিংসা পরম ধর্ম বাণী সকলের বুকে ;
কাঁধে কাঁধ রেখে বাঁচার স্বপ্নটা দেখছে
ব্রহ্মাণ্ডের এমন দৃশ্য কে কবে দেখেছে ?

পৃথিবী জুড়ে আজ শুধুই মানুষ মরছে
হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ভেদাভেদ ভুলেছে  ;
আলোর অপেক্ষায় পৃথিবীটাও বহমান
জ্বালো আলো ঈশ্বর ;আল্লাহ ;ভগবান ।

যুদ্ধ দাঙ্গা ভুলে মানবতা এক কাতারে
মহানুভবতা থমকে যায়নি কাঁটাতারে ;
মানুষ আজকে মানবতা ফেরি করছে
সব ভুলে ভালোবাসাটাও বিলি করছে ।

ভেঙে চুরে গেছে আজ সব অহংকার
ভাগাভাগি করে করছে সবাই আহার ;
কিসের এতো দম্ভ জীবনটাইতো ছোট
মানুষ তুমি আবারও মানুষ হয়ে ওঠো।

স্নেহ : শুভঙ্কর রাহা



পাঁচ বছর হলো সে বাড়ি আসেনি। এই পাঁচ বছরে না এসেছে একটা ফোন, না এসেছে কোনো চিঠি, না কোনো খবর। প্রথম দিকে বেশ কয়েক মাস ফোনে চেষ্টা করা হতো, এখন সেই চেষ্টা প্রায় নেই বললেই চলে। এখন তো দেখছি বৌদি ঠিকঠাক সিঁদুর টুকুও মাথায় দেয় না।
জ্যাঠা আগে একাই চাষ করতো। একই জমির একদিকে লাগাত মুশুরি, একদিকে আলু আর পিঁয়াজ। আলু উঠলে পাট হতো। অন্য জমি গুলোতে ধান চাষ করতো। এখন আর পারে না। ছেলের চিন্তায় কিছুটা অকাল বার্ধক্য এসেছে। এখন বেশিরভাগ টা ভাগচাষী রাই চাষ করে, ফসল উঠলে ফসলের ভাগ আর টাকা মিলিয়ে যা হাতে আসে তাতে ওদের তিনজনের সংসারে বিলাসিতা না থাকলেও ভাতের অভাব নেই। জেঠি বরাবর ঘর-গৃহস্থালি, গরুর গোয়াল নিয়েই ব্যস্ত ছিল, আজও তাই। তবে গরু টা আর নেই তাকে বিক্রি করে একটা ছোটো ছাগল নিয়েছে, আর বাকি টাকা টা ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাখা আছে। ছাগল টাকে জেঠি আর বৌদি মিলে দেখা শোনা করে। বৌদি রোজ নিয়ম করে কাঁঠাল পাতা খাওয়ায় ছাগল টাকে।

বিকাল হলে বৌদি ছাদে ওঠে। আমাদের ছাদ আর বৌদি দের ছাদের মাঝে একমানুষ দূরত্ব। প্রথম প্রথম বৌদির ছাদে ওঠা টা আমাকে উৎসাহ দিত একরকম adrenaline rush বলা চলে। বৌদিকে দেখিয়ে দেখিয়ে ১০-২০ টা স্কিপ বেশি করতাম, পুশ আপের সংখ্যাও বেড়ে যেত। বৌদি সেটাকে কেমন ভাবে নিত তা আমার জানা নেই। কিছুদিন পর থেকে আর এমনটা করতাম না, আড়চোখে তাকিয়ে দেখতাম বৌদি কিছু বলতে চেয়েও ইতস্তত বোধ করে। তাই আমিই একদিন বৌদির কাছে জ্যেঠির শরীর স্বাস্থ্য কেমন আছে জানতে চেয়ে কথা শুরু করার চেষ্টা করলাম। পাশের বাড়ির জেঠিমার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়ার মতো বোকা বোকা প্রশ্ন দিয়ে কথা বলার অজুহাত দেখে বৌদি তো আমাকে নিয়ে বেশ ঠাট্টা করলো। আমিও ব্যাপারটা উপভোগ করলাম।
তারপর থেকে রোজ বিকালেই বৌদির সাথে কথা হতো, নানান রকম কথা। সে কথা কত ডালপালা বিস্তৃত করে, আমি নিজেকে সামলে নিই। পাড়ার বয়জেষ্ঠ্য রা বাঁশ পেকে ট্যাস ট্যাস করার আগে তাকে কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়ে যায় জ্যাঠা কে। বন্ধুরা আমাকে ভ্রু তুলে,  মাথাটা হালকা বাঁ দিকে বেঁকিয়ে ইশারা করে। পাড়ার টাইম কলে জল আনতে গিয়ে শুনলাম ' ছেলেটার কি দোষ? ওই মেয়েছেলে টাই ফুসলেছে। আসল ব্যাপার হলো অভাবে স্বভাব নষ্ট। বাড়ির রোজগেরে পুরুষ যদি বাড়িতে না থাকে তাহলে যা হবার তাই হচ্ছে।'
আমি জলের জায়গাটা ভরে একবার থুতনি টা তুলে আবার সেটাকে নামিয়ে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।

শহরের ইতিকথা : নন্দিনী পাল


আকাশটা আজ নেমে এসেছে চৌকাঠে
ছুঁয়ে আছে মিনারের মাথা
বহুতলের ছাদের উপর ধূসর দিগ্বলয় 
সাঁতরে যাচ্ছে সময়,
জলের উপর তরঙ্গ ফেলে।
দূরে ওই ব্রীজের পাঁজরে
বর্ষার রুগ্ন জোলো হাওয়া 
নদীর বুকে লঞ্চটা ভোঁ আওয়াজ দিয়ে
ডাকেনি অনেকদিন
কারখানার মৃত চিমনিগুলো
আকাশের দিকে নির্নিমেষে তাকিয়ে
কপাটের তালায় পড়েছে জং
অনেকদিন কোন কোলাহল নেই
নেই ব্যস্ততা
অন্ধকার শীতল এখানে
যান্ত্রিক নিস্তব্ধতা শুধু পায়রার ডানায় ভেঙে খানখান
সাড়া দেবার কেউ নেই
দমবন্ধ কিছু কান্নারা ফিরে গেছে কড়া নেড়ে,
উৎসবের জ্যোৎস্নার আদরমাখা সন্ধ্যায় আজানের সুরে
 চাঁদের চর্যাপদ
ওদের একফালি রুটির আশ্বাস দিও।

হৃদয় থাকলে : সুমিত মোদক




কোনো কথার ভিতর দিয়ে হাঁটা শুরু করলে সকল কথা কে ঠিক ভাবে চেনা যায় । সূর্যের দিকে মুখ করে আছে ভালবাসা । ষোড়শী । হৃদয় তা-ধিন-তা-ধিন করে নেচে ওঠে । আর যাযাবর পাখি উড়তে থাকে । অনেকে সমাধির ভিতর ঢুকে পড়েছে । অনেকে আবার সমসাধী ভিজিয়ে দিচ্ছে চোখের জলে । কথার ভিতর দিয়ে হাঁটা যায় হৃদয় থাকলে  ।।

গোলাপি বিকেল : শিবানী বাগচি


তুমি আবহমান শব্দে
বুরবুরি ওঠা ঝরে পড়া প্রেম;
চাঁদের জোছনা মেখে
ফাগুনে রোদ্দুরে হও ছাড়খার

গোলাপী বিকেলে গোপন কথার
ঢেউয়ে আবেগে দোল খাও -
অসময়ের আদুরে উচ্ছলতায়!

নীল কামনা মেখে নেমে আসো
হিমবাহ থেকে থরের উষ্ণতায়!

করোনা : শ্যামল কুমার রায়



করোনা এবার দিচ্ছে ডাক
মানব সভ্যতা নিপাত যাক।
সচেতনতা ভাই উঠছে গড়ে
করোনা তাই যাচ্ছে সড়ে।
সভ্যতার আজ চরম সংকট
স্বার্থপরতা হচ্ছে প্রকট।
ছুটছি সবাই নিজের তরে
রসদ মজুত নিজের ঘরে।
আতঙ্ক আজ বড়ো পুঁজি
কালো বাজারির সুযোগ খুঁজি।
আর্ত অসহায় রইলো পরে
দিন মজুরিতে পেটটা ভরে
মৃত্যু মিছিল খবর করি
আরোগ্য সব আড়াল করি।
প্রভু তুমি দাওগো মেরে
মনুষ্যত্বহীনতা চিরতরে।
----------------------------