নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

দীপান্বিতা সরকার এর গুচ্ছ কবিতা









বারাঙ্গনার ভাতৃসম কৃষ্ণ




আমি রোদ ছেটাতে চাই,
সমাজবিমুখ নিষিদ্ধপল্লির ওই ঘৃণ্য কালো ঝুপড়িতে,
তাজা ভ্রুণ রোপিতে চাই,
হাজারো রক্ত,অশ্রু ঝরা মাটিতে।
চিবুকে,ওষ্ঠে লালচে স্নেহ চাই,
হাসি চাই,গান চাই,শিল্প চাই,
মাথা নত করে চুলের খাঁজে,
যেন পরম আদরের ছোঁয়া পাই।
একঘর আলো চাই,
মেঘভাঙা উল্লাসের বৃষ্টি চাই,
সতেজ সমীরণে যেন বিঘ্ন নয়,
এক টুকরো হিমেল বিকেল চাই,
চায় দিতে সমাজকোষে কলঙ্কহীন ঠাঁই।
আমি মুঠোবন্দি জীবৎশক্তির দাপট আনতে চাই,
বারাঙ্গনার অন্তর্বাস হতে নোলকে,
বুকবন্দি নৃশংস আর্তনাদ শিরে স্থাপন করতে চাই,
দেবদূত রূপে শ্রীকৃষ্ণের ওই পালকে...






"স্নান"



স্নান পদ্মাসন, স্নান মাঙ্গলিক,
সারা'গায় লেগে তাজা চঞ্চল বুদবুদ 
হয়ে ওঠা লজ্জাবস্ত্রের বাঘছাল সঠিক।
ঘাড়ের তেলচিটে ময়লাতে-
থাবা বসায় পুরানো সিন্থল সাবান ভোররাতে,
কাঁধজোড়া মেরুদণ্ডের আল বেয়ে
ধুয়ে যায় কাম, ক্রোম, চিৎকার শ্লেষ,
শ্যাম্পুচুল জটা শুকিয়ে নেয় রোদ কমণ্ডলু দ্বেষ।
মাধবীলতার সুবাস ঢাকনায় শরীর ঝলমলিয়ে ওঠে ঝড়ে,
হাওয়া কেন জানি না গায়েব হয়ে যায়
ময়ূরকণ্ঠী রাষ্ট্রের থরে।
প্রস্তুতি তারপর ময়লা মাখার নোনাপদ্ম তটে,
হাঁটু, তলপেট, মস্তিষ্ক, ফুসফুসে তমসা-তামাসা বাজিয়ে ওঠে।
দেউলিয়া এ'জাতি স্নান করে কি রোজ!
স্নান পদ্মাসন, স্নান মাঙ্গলিক
বজ্জাতি ধোওয়া অতই সহজ!






"দায়"




এমন আজ বৈশাখের কনফারেন্সে, 
থান উড়ে যায় মৃতদেহ থেকে,
মেঘ বিরহ, প্রেম, সংকট, ব্যাথার শঙ্খচিল।
মানুষের কাঁচা বাড়িতে আজ ঢুঁ মারে অশ্রু মেরি-গো-রাউণ্ড ছলের অবিচারে,
এই শোঁ শোঁ শব্দের ঝড় বধির হয়ে যায়,
প্রতিটা আঘাত তোমরা ফিরে পাচ্ছো নেই সংশয়।
বাজ দেখেও সেদিন লেপটে ছিল যেহেতু নিষ্ঠুরতা,
একে একে সব অক্সিজেন ভাণ্ডারে ভেঙে গ্যাছে সৃষ্টির নিয়মানুবর্তিতা।
তাইতো শিশির আসছে ধেয়ে আশঙ্কার,
প্রস্তুত হয়ে নাও আকণ্ঠ ডুবে যাবে এ ভূ-সংসার।।





"শিমুল-বুনোগাঁদা"




পলাশ ঝরা বিকেল, কুসুম রঙা শাড়ি,
খোঁপায় সাজানো জুঁই, ধীর পায়ের চলনে ধ্বসে পড়া মনবাড়ি।
গেরুয়া দিন, বাউলের তান,
উড়ন্ত সমবেত খুশি আর বসন্ত স্লোগান;
ধুলো মাখা বাদামী অভিমুখ,মাড়ে বোঝাই কবিতার শাল,
শাবক কোকিল,নতুন প্রকাশ,
প্রেমিকের দিবসে দখিনা দোলার পাল...
অদূরের একবুক লাল-সবুজের অকৃত্রিম হাসি,
মহুয়ার ডালে ডালে,শিমুল-বুনোগাঁদা তোমায় ভালোবাসি...

আতপ-প্রেম :দেবাশ্রিতা চৌধুরী







থার্মোমিটারের ফারেনহাইটের মাত্রা
 সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে প্রেম।
উত্তর মেরুপ্রান্তে হাতে হাত রেখে
উষ্ণ চুম্বনেও শীতলতার হিম চাদর।

মরুপ্রান্তরে তীব্র উষ্ণতায় মরুদ্যানের
খোঁজে অসীম হাহাকার, জলীয়
ফলের আকুল আহ্বান খরখরে
জিহ্বাগ্ৰে কাতর পিপাসা 
আমাদের কর্কটক্রান্তি রেখার এপারে
শরীরে শরীরে উষ্ণতা অন্বেষণ।

একটুকরো উষ্ণতার জন্য উন্মুখ
তুমি আমি আর আমাদের মতো 
লিভিং অর্গানিজম।হে শীতলতা
তুমি থাকো ডাল লেকের বরফপিন্ডে,
উষ্ণতা আমাদের শরীরে মননে উজাড়
করে ঢেলে যায় ভালোবাসা আর ভালো লাগা...


।। অসহনীয় ।।রিঙ্কু মণ্ডল





ধরার সর্ব বেদনা সহিবারে পারি
অম্বর সম কুলিশ পরিলে পরুক।
তীব্র ঝড়ের তান্ডবে ভাঙে যদি বাড়ি
বৃষ্টির প্লাবন তবে মস্তকে ধরুক।
সুনামি আসিলে পাশে চিন্তা নাই তবু
চঞ্চল চিত্ত সেথায় রহিবে নিশ্চল।
মরুভূমির উত্তাপ আসিলেও কভু
চিন্তা ছাড়া স্বীয় প্রাণে রহিব সবল।

রহিয়াছে কিছু কিছু যন্ত্রণার দল
যেগুলো করিয়া থাকে মর্মাহত মোরে।
নিশিকালে অশ্রুধারা, তুল্য বহে নল
মূর্ছা হেতু বন্ধ চক্ষে নিদ্রা আসে জ্বরে।
গার্হস্থ্যের অভিপ্রায় যেই হেতু রহে
সেই হতে দুঃখ পেলে প্রাণে নাহি সহে।



আঘাত এবং মনুষ্যত্ব : সজীব বড়ুয়া বাপ্পী






আকাশের কালো মেঘ —
দূর থেকে দেখা হয় , 
কিন্তু কেন তাহা !
কেহই বুঝার চেস্টা করি না ।


ঠিক মন ভেঙ্গে পড়ে —
যখন কেউ আঘাত করে যায় । 
মানসিক চাপ প্রখর , 
রৌদ্রের চেয়ে প্রখর । 


এই বুঝি উঠে দাঁড়াবো , 
পারা হয় না । 
হেরে যায় বারে বারে , 
তবু এগিয়ে যাওয়ার জয়গান গায় । 


আমিত্ব নই —
জাগ্রত হউক মনুষ্যত্ব ।

ধর্ম : সন্দীপ দাস





কবরের নীচে ঘুমিয়ে আছে যারা , তারাও কি জানতো কোনদিন --- কবর তাদের পরিচয় লিখে দেবে একদিন ।
আগুনে শুয়ে পুড়েছিল যারা তারাও কি জানতো কোনদিন --- এই চিতা তাদের পরিচয় চিনিয়ে দেবে একদিন । অপারেশন টেবিলে যে কান্না ভাসিয়ে দিয়েছিল হাসপাতাল এর ফোর্থ ফ্লোর , সে টেবিল কি জানতো সেদিন , এ শিশুটি কার -----

ভগবান না আল্লাহর ?

তারপর আজানের শব্দ মিশে ভেসে এসেছিল রামায়ণের পাঠ তারই নতুন কানে । শিশুটি কেঁদে উঠেছিল না বুঝেই ---
শুধু পৃথিবী বুঝেছিল সেদিন , শৈশব তার কেঁদে ওঠে বারবার

ভগবান না আল্লাহর নামে ।

শিশুটি বড় হল । পদবি জুড়ে দিল পরিবার তার ওই ছোট্ট পিঠে । পরিচয় পেল সে ধর্মের খাতায় প্রথম বার ।

পৃথিবী চিনলো তাকে জীবনের এ দীর্ঘ পথ জুড়ে
মানুষ জানলো পরিচয় মানুষের

হিন্দু না মুসলমান ।

সেও রক্ত দিয়েছিল । সেও বহুবার মানুষকে ভালোবেসে
দাঁড়িয়েছিল এসে মানুষের পাশে .....
রক্তের ফোঁটায় সেদিন ধর্ম ছিলনা লেখা
সেবকের কর্মে সেদিন ধর্ম দেয়নি দেখা
তবু হিংসা , তবু নিষ্ঠুর রক্তপাত দেশজুড়ে রোজ আসে
মানুষের হাতে লেখা হয় ইতি
একটা জীবনের কথা ।

আর দূরে রাজনীতি হাসে বসে বরফের ডেরায়
মদিরা হাতে ওরা মজা নেয় আমাদের
আর আমরা ধর্মহীন লাশ হয়ে পড়ে থাকি কবরে
অথবা জ্বলন্ত চিতায় ।

ছাঁচের আদলে : ভগীরথ সর্দার








চারিদিকে স্তাবকতা জড়ানো ভোর
শিশিরের অজুহাতে মাখছি জল
কি গভীর তোমার শঠতা ।   বাড়ছে
আমি সমর্পনের গা-ঘেঁষে এসে
                                       দাঁড়ালাম।

কুমারী স্নানে রোদ পড়ে
জড়তা ভাঙছি ছাঁচের আদলে

তুমি মুখোশ পরে এসে স্বপ্ন দেখালে