নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

মরুস্থলে : বাবুল চন্দ্র শীল


নিশি অবসানে রবির তপ্ত কিরণে
ছড়ালে উষ্ণ প্রাণের ছটা।
যত বেলা বাড়ে নাভিশ্বাস ওঠে
সে এক ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা ;
অগনিত পশুপাখির দল
খোঁজে ছায়া সুনিবিড় আশ্রয়স্থল,
জল জল বলি তাদের গলা ফাটে,
শুধু উটেরা দেয় জীবন যুদ্ধে বাঁচার মন্ত্রণা।

গুল্মগুচ্ছের ছায়াহীন আবাস
দিনের তপ্তবালুকার শ্বাস,
দমকা এক শুষ্ক হাওয়ার টানে
দল ভাঙ্গে ডিউনের সারি,
চিন্তা নেই তাদের -
আজ এখানে তো কাল সেখানে জমাবে পাড়ি।
শুধু এরাই জীবন মৃত্যুর অটুট সত্যটা জানে।
দিনের শেষে শীতল বাতাস মৃদুমন্দ বহে
প্রাণে জাগে হিমের পরশ রাতের মরুস্থলে।

পুস্পিতা সমীপে : নির্ঝর চৌধুরী



পুষ্পিতা,
তোমার পত্র পেয়েছিলাম সেদিন নব বর্ষার নবঘন-সিক্ত প্রভাতে...
সেদিন আকাশে অশান্ত ধারায় বারি ঝরছিল।তেমনি এক বসন্তে বারি ধারায় প্লাবিত হয়েছিল আমার পৃথিবী।তোমার তা মনে থাকার কথা নয়।শুনেছি সুখ সাগরের পাড়ে নাকি তোমার বাস।সেখান থেকে স্মৃতিরোমন্থন করার প্রশ্নই আসেনা।অথচ আমি! আমি আজ অব্দি প্রতিনিয়ত কবিতায় তোমাকে সাজাই প্রতিটি শব্দে! কি অদ্ভুতভাবে এত কথা এতো আয়োজন তোমার অনুভূতির দোয়ারে কষাঘাত করেনি।তোমার কবিতায়, তোমার অনুভূতি থেকে আমার অবস্থান বহু বর্গমাইলের ব্যবধান!

বায়না ছিল এই বসন্তে বনলতা থেকে একটা কবিতা চাই! বসন্তের সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো! আজও কবিতা হয়ে উঠেনি আমার বায়না.... 'জোছনা'র গায়ে কবিতার জন্ম দিয়েছো কতো শত! অথচ প্রতিক্ষার কবিতা,বায়নার চিঠি,কিছুই হয়ে উঠলোনা....
ঠিক এই ওখানটাতেই হেরে যাই বারংবার, অবধি কেবল পালাই পালাই করছি আর ভাবছি আর কতটা প্রেম,কতটা ভালোবাসা নিয়ে যেতে তোমার অনুভূতির দোয়ারে!
এখন কেবল একটাই-
কিছু ইচ্ছেদের পাঠিয়ে দেবো নির্বাসনে,আর কিছু ইচ্ছে ভেসে যাক অবেলার বৃষ্টিতে.... কিছু ইচ্ছেদের খুন করবো দিবারাত্রিতে।


শরীর অভিমুখী মনন : রুনা দত্ত



আমার শরীরে চাঁদ খেলা করে
জোনাকির মতো,
ঠোঁটে জেগে থাকে
মায়াবী রাতের নির্যাস।

আমার খোলা চুলে
বন্য ফুলের সুবাস ,
চিবুকে নিবিড়
বনানীর স্নিগ্ধতা।

আমার বুকে আজও
চাঁপা ফুলের সৌরভ ,
মৃগনাভীতে জুঁই ফুল
আতর হয়ে জন্মায়।

নিটোল পায়ে নুপুরের ছন্দ
বন ময়ূরীর মতো চঞ্চল,
তন্বী কোমরে যেন
অরণ্যের মেদুর নির্জনতা ।

বুনো হরিণীর মতো শরীরে
জ্যোস্নার রহস্যময়তা দানা বাঁধে,
এক গভীর ভালোবাসা বোধে
আছন্ন হয় শরীর অভিমুখী মনন।


স্বাগত : পিনাকি কর্মকার




নিয়নের নীল আলোয় শোভে শহর,
মাঝে মাঝে কাঁপিয়ে দিয়ে যায় মোটরের শব্দ।
দিগন্তে তখনও কুমড়োর ফালির মত চাঁদ,
রুগ্ন,শীর্ণ হয়ে প্রহর গুনে চলে।
বিদ্যুতের তারে ভোরের প্রথম কাক,
থেমে থেমে তার ডাক ছাড়ে।
সারারাত জেগে থাকা খ্যাপাটে শহর,
আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে ধোঁয়া ওঠে।
দূর থেকে ভেসে আসে নামাজের রব,
শোনা যায় সাইকেলের ক্রিং ক্রিং।
ঘরে ঘরে পৌঁছায় নতুন দিনের খবর।
আলসেমি মাখা শরীর খুঁজে নেয় টুথব্রাশ।
কোথাও বেসিন, কোথাও রাস্তার ট্যাপকল,
ঘষামাজার কত না রকমফের।
ধোঁয়া ওঠা কাপে স্বাগত নতুন দিন।

পুনঃজন্ম : সুমিত মোদক


নেচে নেচে ওঠে নূপুর-পা ;
কালবেলার দিন ...
হারিয়ে যায় ফড়িং-প্রজাপতিরা ;
বাজে সাপুড়ে-বীন ....
#
একে একে গিলেখায় দাবানল ;
পড়ে থাকে চিতার ছাই ..
তবুও , কণ্ঠে মীরার ভজন ;
নিজেকেই খুঁজে পাই ...
#
নেমে পড়েছি মাটির গভীরে ;
শিকড়ের অভিমুখে এখন ...
ঘুমেও তোমার পদধ্বনি শুনি ;
সময়ের পুনঃজন্ম যখন ....

জীবনযাত্রার বৈপরীত্য : অমিত কুমার জানা




জীবনব্যাপী কেউ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে,
কারো বা আলস্যে সময় কাটে অবহেলে।

কারো খাবার প্রতুল,নিঃসংকোচে ছুঁড়ে ফেলে অতিরিক্ত,
কেউ খাদ্যহীনতায় শুষ্ক প্রাণ,উদর রিক্ত।

কেউ অতিভোজনের মেদ ঝরাতে জিমে যায় নিত্য,
কোন জীবনযোদ্ধা নিত্য পরিশ্রম করে অকথ্য।

কারো সারাক্ষণ গাড়িতে চড়ে সময় সানন্দে অতিবাহিত,
কারো জীবনপথের কাঠিন্যে পদযুগল ক্ষতবিক্ষত।

অর্থের বলে বলীয়ান কেউ করে বেহিসেবি অপচয়,
সামান্য অর্থ উপার্জনের তরে কারো সর্বদাই হয় জীবনের ক্ষয়।

লিফটে চড়ে কেউ আসে যায় ইমারতের বহুতলে,
কারো ছোট্ট স্বপ্ন ফুঁপিয়ে কাঁদে কোন্ সে অতলে।

আভিজাত্যে ভরা পোশাক পরিহিত বাবুরা হেঁটে যায় রাজপথে,
ক্ষুধার তাড়নায় অপেক্ষমাণ ভিখিরি ধূলো মাখে ফুটপাতে।

চাকরির খোঁজে উদভ্রান্ত উচ্চশিক্ষিত দরিদ্র বেকার,
অশিক্ষিত নেতার অবাধ শোষণ,সঙ্গে পদাধিকারের হুঙ্কার।

সত্যের পথযাত্রী কেউ আজীবন ধরে রাখে সততা,
সব পেয়েও কেউ বা প্রতিনিয়ত করে মানবতার হত্যা।