নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

।।ফাঁকা হাড়ীর ধর্ম ।।রবি মল্লিক





রাস্তা মেপে এগিয়ে যায় চেনা রোদ্দুর,
জগা অবাক চোখে প্রত্যক্ষ করে বর্তমান,
ইতিহাস মাথা চারা দেয় বারংবার ,
রাতারাতি  বদলে যায় পোষাকের রং,
শরীর আর চরিত্র সর্বদা ধ্রুবক ,
খাঁচায় বন্দী পাখিরা সুর বদলে গান ধরে ,
নতুনের আদেশে কেদারায় বসে নখহীন বাঘ,
চাওয়া পাওয়া উপেক্ষিত থেকে যায়,
পেট কেটে গড়ে ওঠে মূর্তি ও দেবালয়,
যোগ্যতা ঝলসায় গরম তেলের কড়াইয়ে,
খালি পেট বলে যায় ব্যর্থতার সংলাপ,
ধর্ম আজও শেখেনি ফাঁকা হাড়ী ভরতে৷ 

।।মুখোমুখি তুমি।। আমিনুল ইসলাম






বসে আছি মুখোমুখি, মানে মুখে মুখ রেখে চুমুর অন্তরঙ্গতা নয়
সামনাসামনি কিছু বোঝাপড়া বুঝে নিতে আয়নায়।
তুমি লেলীহান জ্বলছো সলতের সংস্পর্শে -
আলোহীন খাঁচার ভিতর পাখি সেজে কতোদিন একা থাকা যায়?
একা হতে হতে তলানিতে ঠেকে একাকিত্বে নিখোঁজ হওয়ার অমোঘ আকর্ষণে পর্দার হারিয়ে যাওয়া, শব্দগুলিকে ভেঙে বিকলাঙ্গ করে তোলার নিরবিচ্ছিন্ন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয় সত্য-মিথ্যা
সতী-সাবিত্রী কথায় বালিশ ভেজেনা কখনো, ভিজে যায় চোখের চালচিত্র
মেজেন্টা রং ক্ষয়ে যাবে বলে আদ্রতা ধরে রাখে উদ্ভিদ
চাঁদের চর্যাপদে চাষযোগ্য ভুমি না থাকায় কৃষি কাজ নিয়ে কোনো চাঁদের আলোর মাথা ব্যাথা নেই
সুতরাং একা হয়ে পড়ছো ক্রমশঃ বহুত্বের অন্ধকারে -
দলিত ফুটপাতে আঁকা থাকে রাতের প্রজাপতি।।

শাহীন রায়হানের গুচ্ছ কবিতা






মায়াবিনী


তোমার ভালোবাসার অগ্নি বারুদে কাঠ কয়লার মতো পুড়ে পুড়ে
জীবন ককপিটে জীবন্ত লাশ নৈঃশব্দ রাতে
নিমগ্নতায় ঘুরে বেড়াই বিধ্বস্ত গণকবরে।
.
এখন আমার জীবন পার্কে শুধু লাশের আনাগোনা
সামনে পেছনে ডানে বামে হোটেলে মোটেলে চেয়ারে বেঞ্চিতে
নাম না জানা বিচিত্র কতশত লাশ।
.
প্রতিটি স্নিগ্ধ সকাল ক্লান্ত দুপুর পড়ন্ত বিকেল ঝিঁঝিঁ ডাকা প্রতিটি ভয়ার্ত রাতে
ওদের সাথে পুরনো দিনের ধুলো ভরা মলিন মলাটের প্রেম বিরাগী বাউল জীবনের-
অদ্ভুত গল্প করে দিন কেটে যায়।
.
তোমার পড়িয়ে দেওয়া সাদা কাফনটা আজও খুব চকচকে
নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে সুবাসিত আতর গোলাপ
এখনও স্পন্দিত করে আমাকে।
.
আমি অবাক বিস্ময়ে শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলগুলো দেখে দেখে
নদীর মতো প্রবহমান তোমার পৃথিবীসম প্রাপ্তিকে ভাবি।
.
মায়াবিনী প্রিয়তম জীবন পুষ্পিতা কি দাওনি তুমি,
স্বার্থপর অবুঝ কুলাঙ্গার ভবঘুরে এ আমাকে
অবহেলা ঘৃণা নির্যাতন নিন্দা নিষ্ঠুরতা নিজ হাতে গ্লানিমাখা মৃত্যু সব, সবই তো দিয়েছো।
.
আমি তো কিছুই দেই নি তোমাকে-
শুধু দিয়েছি ভালোবাসাময় পিঁপড়া জীবনের-
যৎসামান্য মৃত্যু।




তৃষ্ণার্ত দুটি চোখ


তোমাকে দেখবে বলে আমার পরিশ্রান্ত ফোয়ারার মতো দুটি চোখ
নিঝুম রাতের নির্লিপ্ত অন্ধকার পেরিয়ে অস্ফুট কাব্য ব্যঞ্জনায়
সবুজ পাতার প্রাণ নিয়ে আহত চাঁদের মতো
একাকী জেগে উঠতো-
বিরহী ঘুঘু ডাকা ফাল্গুনী রূপালী সন্ধ্যায়-
.
বিজন দ্বীপের সবুজ গাঁয়ে হেঁটে যাওয়া প্রতিটি নিথর বিকেলে-
তুমিই ছিলে আমার শার্সী কাঁপানো খোলা জানালায় নীরব ইচ্ছে পাখির ডানা।
.
তখন অঝোর বর্ষায় জেগে ওঠা পরিপূর্ণ স্নিগ্ধ নদী
উতলানো সমুদ্রের মতো আছড়ে পড়তো 
তোমার ভেজানো সৈকতে।
..
হেয়ালি তুমি সময় চেয়ারে খুলে দিলে নীল সমুদ্র বাঁধন
আত্নমগ্ন নগ্ন মহাকাল পেরিয়ে তোমার অনন্ত যৌবন রেখায়
নিষিদ্ধ দিকভ্রান্ত পর্যটক হতো আমার তৃষ্ণার্ত মলিন দুটি চোখ-

অনিন্দ্য পাল এর গুচ্ছ কবিতা









"আমি " নৈশব্দের বন্ধু নই 


ইস্পাত পড়ে গেল তোমার হাত থেকে 
ঝনঝন শব্দ ছিঁড়ে দেয় নিদ্রাশিকড় 
পায়ের তলায় দৃষ্টি দিয়ে বুঝি 
আসলে ঘুম নয় 
তুমি ভেঙেছ মিথ্যা সত্যের ঘোর ...

বাসন ঝনঝন করতে করতে থেমে যায় 
একসময় 
কিছুই বদলায় না আগে আর পরে গৃহময় 
শুধু বেওয়ারিশ নৈশব্দ লুকিয়ে পড়ে 
আমায় ছেড়ে ...
হঠাৎ গতিময় হয়ে ওঠে চারধার, 

শুধুই চলে যায় মুখ লুকিয়ে, তেমন নয় 
অস্পষ্ট প্রাচীন কখনো এসে বসে পাশে 
কলঙ্কহীন ইস্পাতের আর্তনাদ থামে একসময় 
বোবা বাতাস আমার অসহায়তায় হাসে ...

শব্দ মিথ্যা নয় 
রোদ্দুর মিথ্যা নয় 
অন্ধকারকে শুধু বলেছি যেও না আওয়াজ হলে 
সবই সত্যি, সবাই রয়েছে প্রকৃতি জুড়ে 
তবু কোন সেতু ভেঙে যায় 
সুতো ছিঁড়ে যায় , নৈশব্দে "আমি" ডুবে গেলে ...





যদি

সেই দিন যদি ছুঁয়ে দিতাম ঠোঁট 
তবে লিখতাম এখন অন্য উপাখ্যান 
এত বড় রাত হয়ত হত এইটুকু মুষ্টিজোট 
হয়ত বৈপ্লবিক সুরে গাইতাম একই রাতের গান 

যদি সেই মাদুর আসনে বসে বিঘত দূরে 
ছুঁয়ে দিতাম তির তির কাঁপা ঠোঁট 
তুমি বুঝতে আমি ভিতু নই এতটুকু 
শুধু বুঝতে না কত ভারি, দারিদ্রের মোট 

যদি সেদিন ভুলে যেতাম আগে পিছে লুকোচুরি 
তোমার আদর ঠেলে পৌঁছতাম না করাতের বুকে 
দরজা খুলে আসন পেতে রেখেছিলে তোমার ঘরে 
রাতপাহারায় হেঁটে বেড়াই এখন আফসোস ঠুকেঠুকে 

যদি সাড়া দিতাম সেই কুঁড়ি ফুটে ওঠার ডাকে 
এখন তবে আমার বাগানে প্রজাপতি মাখা ফুল 
তবু তুমি এখন সুখি জীবনে জমকালো 
তুমি ভালো আছো, আমি ভালো আছি, 
কোথাও হয় নি  ভুল! 

।।কুমারীপুজো ।। সুজাতা মিশ্র(সুজান মিঠি)




পুজোর সময় আসন্ন। প্যান্ডেল বাঁধাও শেষ।
রাত পেরোলেই ষষ্ঠীর বোধন হবে শুরু।
ব্যস্ততা চরমে সকলেরই। পুরোহিত মশাই
পঞ্জিকায় সঠিক সময় দেখে নিচ্ছিলেন ভালো করে।
দুহাতে পাঁজাকোলা করে মেয়েকে নিয়ে
 ভিতরে ঢুকলো গোপাল।
তার সারা গায়ে রক্তের বন্যা যেন। যে পথ দিয়ে ঢুকল
তার সবটুকুও।
অবাক পুরোহিত ও অন্যান্যজন।
গোপাল চিৎকার করে উঠলো কিছু মুহূর্ত পরেই।
ঠাকুরমশাই, এই দেখুন আমার মেয়ে, আপনাদের মন্দিরের পিছনের ড্রেনে পরে ছিল।
প্রাণ চলছে এখনো। তবে থাকবে না,  এই দেখুন দেখুন না
আমার মেয়ের সব জায়গা দিয়ে কত রক্ত বেরোচ্ছে!
এই দেখুন পুরোহিতমশাই ক্ষতবিক্ষত যোনি।
ও নতুন প্যান্ডেল দেখতে এসেছিল জানেন তো।
ওর মাকে বলেছিল, আমি দেখে আসি আমি কোথায় বসে
মা দুর্গা হবো।
ওর কুমারিপুজো করবেন আর পুরোহিত মশাই?
খুবলে খুবলে যারা ওকে খেল তাদের সামনে ওর অক্ষত যোনি পুজো করবেন, পুরোহিত মশাই?

গোপালের অচৈতন্য হয়ে পড়ার আগে ধরাধরি করে
নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে।
মেয়েটা আর বাবা পাশাপাশি দুই বেডে।
অচৈতন্য।

অষ্টমীর পুজো শুরু হয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে।
পাড়ার মণ্ডপে পুজোর কোনো ঘাটতি নেই।
আয়োজন সম্পন্ন হলে পুরোহিত বললেন
এবার চলো আমার সঙ্গে।

হাসপাতালের বেড ঘিরে অতি সতর্কতায় সাবধানে
গোপালের সাতবছরের মেয়েকে সাজানো হলো।
শুরু হলো অষ্টমীর কুমারীর আরাধনা।
মৃন্ময়ীকে চিন্ময়ীরূপে আরাধনা।

মেয়েটা কিছু পরে ফিরে পেল জ্ঞান, কথা বললো,
'জল খাবো।' 
পুলিশ টানতে টানতে নিয়ে এলো দুটো লোককে।
পুরোহিত বললেন, অসুরবধ হবেই হবে, ভেবোনা গোপাল।
উঠে বসলো তার বাবাও, শোক সামলে।
বাচ্চা মেয়েটির পায়ে মাথা রাখলো পূজারী।

।।শরত অনুরাগে ।।সবুজ জানা






হেঁটে যায় আলো স্পষ্টহাসিতে চাঁদের কন্ঠ-নীল
নদীগর্ভে জলসজ্জায় তারা সারারাত নিয়ন ঝিলমিল।

জোনাকির ডানায় ঝরে পড়ে অমলিন রাতকণা
ঘাসের ডগায় জল থইথই নৈসর্গিক আনমনা।

তারের বাজনায় আমার শ্রী-কবিতারা নিয়েছে ছুটি
শিউলি তলায় একমুঠো ফুল আশৈশব লুটোপুটি।

ঢাকের বোলে উদাসী বাউল গীতিকবিতায় একতারা 
শারদে নারদে উদাস দুপুর কাশবনে সবহারা।

ধানের গর্ভে ফসল-কথা মাঠের কানে কানে 
একতারা হাতে পোয়াতি নদী বাউলা অভিমানে।

সাদামেঘের মাথায় গোলাপী পালক শরত গোধূলিতে 
চোখের অববাহিকায় স্বপ্ন অঙ্কুর নি:শব্দ সঙ্গীতে।

অ-বৃষ্টির রঙে অবুজে সবুজে আগামীকাব্য জাগে বেশ্যা-মাটিতে সাজে আমার দুর্গা বাংলার অনুরাগে।