নোটিশ বোর্ড
অপরাজিতা(প্রথম পর্ব) : দেবব্রত সেন
কতই বা বয়স বাপ মরা মেয়েটার, সবে স্কুল ছেড়ে কলেজে পা দিয়েছে। এরই মধ্যে আবার গোলাপের হাবুডুবু, রঙ্গিলা বাতাসের গুন গুন সূর। ভালোবাসার পরশপাথর ছুঁয়েছে, হৃদয়পূর্ণ কোকিল কোকিলা মন। মধু চন্দ্রিমার রাতে শশীবাবু যেমন একলা বসে থাকা রুপসীর ঘরে জানলা দিয়ে উকি মারে কিংবা কোনো এক দুপুরে ছায়া ঘেঁষা শ্রাবণী মেঘের বৃষ্টিভেজা মাটির গন্ধে শালিক জোড়াযুগলের অপরুপ রোমান্টিক দৃশ্যের মতো। তার পর আর কি! বিয়ে -সংসার জীবন। মেয়ে মানুষের নাকি স্বামী ব্রত প্রধান ধর্ম।
১//সকালবেলা একনাগাড়ে মোবাইলটা বেজেই চলছে
সকালবেলা একনাগাড়ে মোবাইলটা বেজেই চলছে, ঘরটা শূন্য মানবহীন! শোনার কেউ নেই একলা বসে শুনছে ঘরটা। থাকলেও থাকতে পারে, তবে হয়তো যে যার কাজে ব্যাস্ত আছে ক্ষন, তাই বোধ হয় এরকম হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর, দশ সাড়ে দশটা নাগাদ হবে, একজন যুবকের বাইক এসে দাঁড়াল পূজাদের বাড়ির সামনে। এসেই দেখল কলিংবেল আছে! সে কলিংবেল টিপল। সঙ্গে সঙ্গে পূজার মা পূজাকে বলল, এই পূজা, পূজা কই গেলি মা! দ্যাখ না কে এল। পুজা তখন স্নান করছে, সে কলেজে যাবে! পূজা স্নান ঘর থেকে বলল, মা আমি স্নানে। তুমি যাও। আমি পারব না মা।
ঠিক এই সময়ে আবার কে এল বাবা আর পারছি না, ঠাকুর ঘর ফেলে আসতে হচ্ছে এই বলতে বলতে পূজার মা বাড়ির উঠান পেরিয়ে সদর দরজার কাছে এল এবং দরজা খুলে দেখল বছর পচিঁশ ছাব্বিশের একজন যুবক, কাধে একটা ব্যাগ ঝোলানো, চোখে চশমা, গায়ের রং ফরসা আর লম্বা। সে দাড়িয়ে আছে কখন দরজা খুলবে তার অপেক্ষায়।
দরজা খোলার সাথে পুজার মা একটু হতভম্ব হল কারন এই ছেলেটা হঠাৎ করে, তাছাড়া ওনার ছেলের বন্ধু বান্ধব হলে না হয় হত কিন্তু ছেলের বয়স চৌদ্দ পনের হবে, আর এই ছেলেটা এসে দাড়িয়ে আছে সে তো বয়সে অনেক বড়! পূজার মা গড় হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারল না, সে শুধু অবাক দৃষ্টিতে ভাবতেই লাগল। আত্মীয় স্বজন হলেও হতো কিন্তু সেই ছেলেটা অচেনা, কি আর বলবে?
এরম করতে করতে পূজার মা আমতো আমতো করে ছেলেটাকে বলল, আপনি কে বাপু? আপনাকে তো এর আগে দেখিনি?
------আপনি পুজার মা তো?
---- আজ্ঞে হুম, বলুন।
-----নমস্কার নেবেন মাসিমা, আমি শচীন বর্মন, বাড়ি শিলিগুড়ি শিব মন্দির এলাকায়।
-----সে কি মাসিমা পুজা আপনাকে আমার ব্যাপারে কিছু বলেনি?
পুজার মা একটু ঘাবরে গেলেন আর ভাবলেন বাইরের একটা অচেনা ছেলে আমাকে কিসব বলছে, বিষয়টা ভালো ঠেকছে না।
হুম মনে পড়েছে, কলেজে প্রথম প্রথম যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুজা একটি ছেলের কথা বলেছিল কিন্তু সে তো সাংবাদিকতার চাকরি করত! আলাপ হয়েছে পূজার কলেজে, কিন্তু সে আবার প্রেম করছে না তো? আমাদের মতো গরিবের কপালে প্রেমট্রেম হজম হয় না বাবা, সে না হলেই ভালো হয়। এই ভাবে ভাবতে বলল, ও হ্যাঁ মনে পরেছে। আপনিই তাহলে সেই শচীন? আমি ভাবছি কোন, কোন শচীন! এসো বাড়ির ভেতর এসো।
শচীন পূজাদের বাড়ির ভেতর প্রবেশ করেই দাড়িয়ে পড়ল, কারনটা কি! পুজা তাকে বলেছিল ওদের বাড়ির উঠানের উত্তর দিকে একটা নারকেল গাছ আর সেখানে বৈশাখ - জ্যৈষ্ঠে বাবুই পাখির দল বাসা বানিয়েছে, দেখতে লাগছে খুবই সুন্দর যেন সবুজ সবুজ কলসী ঝুলছে। অন্য দিকে উঠানে প্রবেশ করার মুহূর্তে একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছ, গাছে লালে লাল ফুলে ছেয়ে গেছে দেখলে চোখ জুড়োয়। আর পায়রা গুলো বাকুম বাকুম করে ডাকছে, এ টিনের চাল থেকে ও চাল উড়ে যাচ্ছে। চোখ জুড়ানো দৃশ্য। পুজার মা বলল, কি দেখছো বাবা? বারান্দায় চেয়ার টেনে বসো যাও।
হয়তো টিনের চালের বাড়ি,দোচালা চৌয়ারি ঘর দুটো ইংরেজি এল এর মতো গঠন। যদিও ঘর গুলো অনেক পুরোনো, তবুও মোটামুটি ভালোই আছে। আর ডিতটা সিমেন্টে পাকা করা, বাড়িটা শতকরা অঙ্কের হিসেব করলে পাঁচ পৌনেপাঁচ কাঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে। শহর লাগোয়া তিস্তা পাড়ের গ্রাম। বর্তমান বাড়িটার চেহারা গরীব গরীব বোঝালেও গাছগুলো আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যটা এরকম যে যেকোনো লোক বাড়িটার প্রেমে পড়ে যাবে। আর গ্রামের বাড়ি গুলো একটু ফাঁকা ফাঁকাই সাধারণত হয়ে থাকে।
পূজার মা শচীনকে বারান্দায় একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল, বসো বাবা, বসো। যা গরম পরেছে সহ্য করা যায় না বাবা। একটা টেবিল ফ্যান বের করে শচীনের কাছাকাছি রেখে ফ্যানের সুইচটা অন করে দিয়ে বলল, তুমি বাবা এখানে বিশ্রাম নাও আমি বরং ঠাকুর ঘরে ফুলজল দে আসি কেমন!
-----ঠিক আছে মাসিমা। যাই বলুন মাসিমা প্রচন্ড রোদ্দুর পড়েছে, এই সময়টা বাইরে বেরোনোটা একপ্রকার সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
পুজার মা ঠাকুর ঘরে গেল, আকাশটা তখন চুপচাপ, শুধু গরম আর গরম! এই সময় একটা হালকা বাতাস এল, মে জুন মাসে যেরকম লু নামের গরম বাতাস বয় ঠিক সেরকম ভাবে শীতল বাতাস এল, আকাশটা যে দীর্ঘ নিশ্বাস নিল আর কৃষ্ণচূড়া ফুল গুলি হাওয়ায় বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ল, দুচারটে পায়রা ডানা ঝাপটে আঙিনা থেকে টিনের চালে গিয়ে বসল, দুজোড়া পাশাপাশি!চোখ বিনিময় করছে এরকমটা বোঝাচ্ছে, মনে হয় যেন তারাও যুগল প্রেম করছে। আর শচীন একা একা সেটা ভোগ করল, সে ভাবছে ইস যদি আমার জীবনে কখনও এমন সময় আসে খুব রোমান্স হবে।শচীনের ইচ্ছে হল কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে চেয়ারটা নিয়ে বসি কিন্তু হল না, ততক্ষণে পূজার মা ঠাকুর ঘর থেকে বারান্দায় এল, শচীন একা বসে আছে।
বলল, তো এখানে কোথায় এসছো ? আমি মাসিমা
----হুম।
......জানতেই পাচ্ছেন আমি সাংবাদিকতার মানুষ, খবর সংগ্রহে এখানে ওখানে যেতে হয়। জানো মাসিমা, আপনাদের পাশে জমিদারপাড়ায় একটা নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তারই কিছু তথ্য সংগ্রহে এসেছি। তাড়াতাড়ি হয়েগেল তাই ভাবলাম একটু পূজার সঙ্গে দেখা করেই যাই।
-----না না বাবা বেশ ভালো করেছো। পুজার মুখে তোমার সাংবাদিকতার কথা শুনেছি বাবা, তবে ......
এই বলে চুপ করল।
-----তবে কি মাসিমা? বলেন সংকোচন করবেন না।
আসলে কি, পূজা আর শচীনের মধ্যে যে প্রেম ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল সেটা পূজার মা ভালো করেই আন্দাজ করেছিল, তাই বোধহয় তবে করেই থেমে গেল। আর মনে মনে যাচাই করার চেষ্টা করছে। একটা মেয়ের ভবিষ্যতের বিষয়, এটা ছেলেখেলা নয়। আর যদি ভালোভাবে তাদের সম্পর্কটা মেনে না নেয়, তাহলে হয়তো কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে,পূজার বাপটা বেচে থাকলে হয়তো তাকে এসব বিষয়ে মাথা ঘামতে হত না। সত্যিই তো প্রেম ভালোবাসা এরকম জিনিস সেটা উপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না অন্তরের ভিতর প্রবেশ করে বুজে নিতে হয়। এটাই ভাবছে সে।আর এটাও ঠিক মেয়ে ও ওই ছেলেদের তো মন বলে কিছু আছে, সব থেকে বড় কথা কারও মন ভাঙা হচ্ছে মন্দির ও মসজিদ ভাঙার সমান সমান।
(চলবে ...)
শেষ বৃষ্টি হয়ে : তোহাদ্দেশ সেখ
ভাল থেকো তুমি।
কোন অল্পে নয় কোন কল্পে নয় কোন গল্পে নয়
তোমার শহরে তুমি ভাল থেকো।
রুপোলী স্মৃতি মুছে যাক, মুছে যাক সব স্বপ্ন
তবুও তুমি ভালো থেকো।
তোমার অবাধ্য চুল অবুঝ হয়ে চোখে আলতো ছুঁলে নিজেই সরিয়ে নিও,
ক্লান্ত দুপুরে দখিনা বাতাস এলে
নিজেকে নিজেই জড়িয়ে নিও,
মন খারাপের বৃষ্টি হলে একলা হাতেই রোদ বিলিও
রুদ্ধদ্বারে বন্দি আমি পারবো নাকো যেতে।
তাই তোমার শহরে তুমি ভালো থেকো।
স্মৃতির ক্যানভাসে ব্যস্ততারই ধুলো
পড়বে আমি না থাকায়
অসহায় ছবিগুলি দুলবে গোপন ভয়ে সব হারাবার।
ভালোবাসি কথাটা শুধু আছে বুকের ক্ষতে
খুনসুটি দুষ্টুমি ডুবে গেছে মাঝপথে,
ভাগ্যের করিডরে দুজনেই অচেনা পথিক
শুধু বাইরে পথের ধুলো দ্যাখে দুঃখ নিশান।
আমার ভালো থাকার মিথ্যা শুনেও তুমি ভালো থেকো।
তুমি ভালো থেকো।
আর কোনদিন বলব না_'তোমার ওই দু'চোখে চোখ রেখে আমার তাকানো তুমি কখনো ভুলতে পারবে না'।
আর কোনদিন বলবো না 'এভাবেই দুজন দুজনকে ভালবেসে যাবো'।
বেখেয়ালে আঘাত পেলেও আর বলবো না 'একটি চুমু এঁকে দাও'।
মিথ্যা ভাল থাকায় থাকবো বেঁচে তাই তুমি শুধু ভাল থেকো। তোমার মতো করে তুমি ভালো থেকো।
কোন সাদামাটা বিষন্ন বিকেলে যদি মন কেমনের আকাশ সাজে, তুমি অনুভবে হাসতে শিখো,
স্মৃতির এক চিলতি দুঃখ যদি বৃষ্টি হয়ে ঝরে তুমি গালের নিচে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নিও।
তার পরেও যদি তোমার পাশে হটাৎ কেউ হাতটি চেপে ধরে তুমি স্বপ্ন ভেবে একলা থেকো।
আমি না হয় স্বপ্নগুলি বুকে রেখে দুঃখগুলি আপন করে
বর্ষে যাব শেষ বৃষ্টি হয়ে না ফেরা নদীপথে।
তবুও তুমি ভালো থেকো_ ভালো থাকো তুমি।
আলো ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
।। সাতাশ ।।
ছোটবেলায় মাটি দিয়ে মূর্তি বানাতাম। তখন বোধহয় ক্লাস ফাইভে পড়ি। এঁটেল মাটি হবে সম্ভবত। একটা কাঠের ছোট্ট পাটার ওপর মূর্তিটা তৈরি করতাম। স্নান করে খেয়ে উঠে বসতাম। সেরকম বলার মতো কিছুই নয়। কাদাটাকে নিয়ে হাতের কায়দায় মোটামুটি একটা আকার দেওয়া। ঘন্টা খানেকের পরিশ্রমে কিছু একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা। কি হয়ে উঠত জানি না তবে কাজ শেষ হলে রান্নাঘরের চালে শুকোতে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। মূর্তি তৈরির দিনগুলোতে ঘুম থেকে উঠতে কি ভালো লাগতো। মনে হতো ঘুম থেকে উঠে যেন চোখের সামনে অন্য কিছু দেখব। রোদের ছোঁয়ায় মূর্তিটা যেন অন্য রূপ পেয়ে গেছে। কিন্তু দেখতাম অন্য ছবি। রোদ এসে মূর্তির মাটিটাকে পুরোপুরি ফাটিয়ে দিয়েছে ! মনটা খুব খারাপ হয়ে যেত। সঙ্গে সঙ্গে ওই ফাটা জায়গাগুলোতে মাটি লাগিয়ে দিতাম। তারপর ঘরে তুলে রাখতাম। পরের দিন দুপুরে আবার রোদে দিতাম। ঘুম থেকে উঠে আবার ফেটে যেতে দেখতাম। আবার ফেটে যাওয়া অংশটায় মাটি ধরাতাম। এত মাটি যে কোথায় যেত ! অথচ মূর্তিটা একটুও মোটা হতো না !
।। আঠাশ ।।
আমাদের ঘরেই ছিল পথের পাঁচালীর হরিহর। আমার বাবা। বাবার সঙ্গে অনেক জায়গাতেই যেতাম। রাতের অনুষ্টানগুলো একটাও বাদ যেত না। বিয়ে বাড়ির অনুষ্টান থাকলে রাত দুটো আড়াইটে বেজে যেত। গ্রামের ধুলো ওঠা রাস্তা। বাবা আর আমি রাতের অন্ধকারে বাড়ি ফিরছি। বাবার হাতে হ্যারিকেন। বাবা এমনিতেই বেশি কথা বলত না। রাতের রাস্তায় তো কথাই নেই। আমি আধো আলো আধো অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে রাতকে পড়বার চেষ্টা করতাম। কোনো কোনো জায়গায় এসে বাবা দাঁড়াত। চারপাশ এতো চুপচাপ যে আমরা আমাদের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দও শুনতে পাচ্ছিলাম। মুখে না বললেও বাবার আচরণেই স্পষ্ট হয়ে যায় ------ সেও রাতের সময়টুকু তার নিজের মতো করে রাতকে পড়ছে।
(চলবে...)
বৃষ্টিধারা: সত্তাপ্রিয় বর্মন
তারপর একদিন আকাশে মেঘ করল
বৃষ্টি এলো
বৈশাখী ঝড়ে ভেঙে গেল কুটির
উপড়ে পড়ল বৃক্ষ
কত পাখি নীড় হারা হল,
ফুটপাথে শুয়ে থাকতো যে পরিত্যক্ত মানুষটি
তার স্থান সংকট দেখা দিল:
বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি -
কত জয় পরাজয়, ভাঙন গরন সব মিশে গেল,
জোয়ার ভাটা এলো
জোয়ার ভাটা...
আমার রিক্ত বিষন্ন হৃদয়ে বৃষ্টি এসেছে
ধুয়ে মুছে গেছে রাতের আকাশে নক্ষত্রের আলো।
শূন্যতা
শূন্যতার পর ভোর
শিশিরের মধ্যে সূর্য
তারপর সূর্যের মত একটা ভালবাসা,
সেদিন রাতে ভালোবাসাবাসি হয়েছিল।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)