নোটিশ বোর্ড

" নিকোটিন 2.0 এর নতুন প্রজেক্ট "ক থা হো ক" এর জন্য শীঘ্রই আপনার সেরা লেখাটি এক্ষুনি mail করুন nicotinemagz@gmail.com এ প্রতিদিন সকালবেলা প্রকাশিত হবে

আলো ছায়ার কথামালা :হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





।। সাতাশ ।।




          ছোটবেলায় মাটি দিয়ে মূর্তি বানাতাম। তখন বোধহয় ক্লাস ফাইভে পড়ি। এঁটেল মাটি হবে সম্ভবত। একটা কাঠের ছোট্ট পাটার ওপর মূর্তিটা তৈরি করতাম। স্নান করে খেয়ে উঠে বসতাম। সেরকম বলার মতো কিছুই নয়। কাদাটাকে নিয়ে হাতের কায়দায় মোটামুটি একটা আকার দেওয়া। ঘন্টা খানেকের পরিশ্রমে কিছু একটা রূপ দেওয়ার চেষ্টা। কি হয়ে উঠত জানি না তবে কাজ শেষ হলে রান্নাঘরের চালে শুকোতে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। মূর্তি তৈরির দিনগুলোতে ঘুম থেকে উঠতে কি ভালো লাগতো। মনে হতো ঘুম থেকে উঠে যেন চোখের সামনে অন্য কিছু দেখব। রোদের ছোঁয়ায় মূর্তিটা যেন অন্য রূপ পেয়ে গেছে। কিন্তু দেখতাম অন্য ছবি। রোদ এসে মূর্তির মাটিটাকে পুরোপুরি ফাটিয়ে দিয়েছে ! মনটা খুব খারাপ হয়ে যেত। সঙ্গে সঙ্গে ওই ফাটা জায়গাগুলোতে মাটি লাগিয়ে দিতাম। তারপর ঘরে তুলে রাখতাম। পরের দিন দুপুরে আবার রোদে দিতাম। ঘুম থেকে উঠে আবার ফেটে যেতে দেখতাম। আবার ফেটে যাওয়া অংশটায় মাটি ধরাতাম। এত মাটি যে কোথায় যেত ! অথচ মূর্তিটা একটুও মোটা হতো না !



।। আঠাশ ।।


          আমাদের ঘরেই ছিল পথের পাঁচালীর হরিহর। আমার বাবা। বাবার সঙ্গে অনেক জায়গাতেই যেতাম। রাতের অনুষ্টানগুলো একটাও বাদ যেত না। বিয়ে বাড়ির অনুষ্টান থাকলে রাত দুটো আড়াইটে বেজে যেত। গ্রামের ধুলো ওঠা রাস্তা। বাবা আর আমি রাতের অন্ধকারে বাড়ি ফিরছি। বাবার হাতে হ্যারিকেন। বাবা এমনিতেই বেশি কথা বলত না। রাতের রাস্তায় তো কথাই নেই। আমি আধো আলো আধো অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে রাতকে পড়বার চেষ্টা করতাম। কোনো কোনো জায়গায় এসে বাবা দাঁড়াত। চারপাশ এতো চুপচাপ যে আমরা আমাদের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দও শুনতে পাচ্ছিলাম। মুখে না বললেও বাবার আচরণেই স্পষ্ট হয়ে যায় ------ সেও রাতের সময়টুকু তার নিজের মতো করে রাতকে পড়ছে।


(চলবে...)

বৃষ্টিফোঁটায় শব্দশোক: মোনালিসা নায়েক





মেঘের কান্না বৃষ্টিফোঁটা
 বুক পেতে দেয় আমার শহর
জ্যোৎস্না তখন অভিমানী
 শব্দশোকের গভীর জ্বরে

পসরা সাজায় দুঃখ বাসর।

বৃষ্টিধারা: সত্তাপ্রিয় বর্মন



তারপর একদিন আকাশে মেঘ করল
বৃষ্টি এলো
বৈশাখী ঝড়ে ভেঙে গেল কুটির
উপড়ে পড়ল বৃক্ষ
কত পাখি নীড় হারা হল,
ফুটপাথে শুয়ে থাকতো যে পরিত্যক্ত মানুষটি
তার স্থান সংকট দেখা দিল:
বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি -
কত জয় পরাজয়, ভাঙন গরন সব মিশে গেল,
জোয়ার ভাটা এলো
জোয়ার ভাটা...
আমার রিক্ত বিষন্ন হৃদয়ে বৃষ্টি এসেছে
ধুয়ে মুছে গেছে রাতের আকাশে নক্ষত্রের আলো।
শূন্যতা
শূন্যতার পর ভোর
শিশিরের মধ্যে সূর্য
তারপর সূর্যের মত একটা ভালবাসা,
সেদিন রাতে ভালোবাসাবাসি হয়েছিল।



স্মৃতিফুল :সৌমেন দাস




তোর কথা খুব মনে পড়ছে আজ
মনে পড়ছে দুপুরের সেই নির্জনতা
যেদিন তোর বুকের খাঁজ ঠেলে
কামনা এসে ছুঁয়েছিল আমার পাতলা ঠোঁট
মনে পড়ছে তোর দুটি নেশাচোখ
আর রোদভেজা শরীরের শীৎকার
বড়ো মনে পড়ছে রে আজ ...

আচ্ছা, তোরও কি মনে পড়ে সেইসব?
আজকের চেনা ভূগোলে একবারও কি
উঁকি দেয় সেই চেনা ইতিহাস?



"বেলা শেষে সবাই একা" : অপেক্ষার প্রহর






#মাদার তেরেসা একবার বলেছিলেন
" সবচাইতে ভয়ঙ্কর দারিদ্রতা হচ্ছে একাকিত্বের দারিদ্রতা এবং এইটা অনুভব করা যে আমাকে কেউ ভালোবাসেনা। "
 
“The most terrible poverty is loneliness, and the feeling of being unloved.”

সারাজীবন দরিদ্র,অসহায়,দুস্থমানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া মাদার তেরেসা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন বস্তুবাদী জগত বা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ওয়ার্ল্ডের মৌলিক চাহিদাগুলোর অভাব কাকে বলে।
টানা একমাস খেতে না পারা হাড় জিরজিরে শরীরের মৃতপ্রায় সোমালিয়ান বালক কিংবা ঘুর্ণিঝড়ে স্বজন হারানো মানুষের হাহাকার ,মানব জীবনের যত রকমের দারিদ্রতা যত রকমের কষ্ট আছে সেইটা মাদার তেরেসার চাইতে বেশী কেউ কাছ থেকে দেখেছিলেন কিনা জানিনা।

 
সেই মাদার তেরেসাও দিনের শেষে এসে বলেছিলেন
" দা গ্রেটেস্ট পোভার্টি ইজ দা লোনলিনেস। "

সবচাইতে বড় অভাব হৃদয়ের সঙ্গীর অভাব। সবচাইতে বড় যন্ত্রনা একা থাকার যন্ত্রনা।
 
কিন্তু সবচাইতে স্যাড ফ্যাক্ট হলো,দিনের শেষে আমরা সবাই একা।
   
 
আমি প্রায় সময় আমার লেখায় রবিন উইলিয়ামস নামক এক ভদ্রলোকের কথা বলি। এই ভদ্রলোক কে আপনারা জুমানজি হিসেবেই চিনেন। আজীবন মানুষ কে হাসিয়ে গেছেন। বিভিন্ন রোল প্লে করে। গুড উইল হান্টিং এ ম্যাট ডেমনের থেরাপিস্ট হিসেবে ডেমন কে ডিপ্রেশন থেকে বেঁচে ফিরে আসার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। কিন্তু সেই রবিন উইলিয়ামস কে অনুপ্রেরণা দেয়ার কেউ ছিলনা।
একদিন তার লাশ পাওয়া গেলো বেল্টে ঝুলন্ত অবস্থায়।
আজীবন মানুষ কে হাসানো মানুষটা নিজের বলা সেই বিখ্যাত উক্তিটিকেই প্রমাণ করে গেলেন।

" এমন অনেক মানুষ থাকে যারা মানুষ কে হাসায়, সেসব মানুষ ভিতর থেকে অনেক একলা। তারা অন্যকে হাসায় কারণ একা থাকার যন্ত্রনা কি সেটা তারা জানে। "

রবিন উইলিয়ামসের টাকা পয়সার অভাব ছিলনা। লেজেন্ডারি এক্টর্। কিন্তু রবিন উইলিয়ামস একা ছিলেন। অনেক বড় একটা হোল ছিল তার বুকের ভেতর্। পৃথিবীর সব টাকা পয়সা দিয়ে এই হোলটা ভরাট করা যায়না।

এই পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ নিজস্ব অবস্থান সাপেক্ষে তিনটা প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে বাস করে।

রবিন উইলিয়ামসদের মত লেজেন্ডদের  আত্মহত্যা আসলে এইটা প্রমাণ করে ,টাকা পয়সা যশ খ্যাতি এইসব একটা পর্যায় পর্যন্ত কোন মানে রাখে।
   
 টাকা ,পয়সা ,নাম খ্যাতি এইসবের দৌড় বস্তুবাদী জগত বা ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ওয়ার্ল্ড পর্যন্ত।

আবার পরিবার ,আপনজন এরা থাকে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আসলেই কি শেষ পর্যন্ত। না। রবিন উইলিয়ামসেরও সন্তান ,স্ত্রী ছিল। তারা যথেষ্ট ভালোবাসত তাকে। সাপোর্ট দিত। কিন্তু পরিবার ,আপনজন , আত্মীয় স্বজন ,বন্ধু বান্ধব ,প্রিয়তম, প্রিয়তমা এরা একজিস্ট করে মানুষের সামাজিক জীবন বা সোশাল ওয়ার্ল্ডে। এটা মানুষের দ্বিতীয় জগত যেখানে সে প্যারালালি বাস করে।

আর একটা জগত থাকে। রাত বারোটা পেরোনার পর সেই জগতে মানুষ ঢুকে। রাতের খাবার খাওয়ার পর ছেলে মেয়ে দের কে গুডনাইট জানিয়ে ,বিছানায় স্ত্রী কে আদর করে শেষ একটা চুমু খেয়ে বা ফোনে প্রিয়তম কে ঘুমিয়ে যেও বলে প্রতিটা মানুষ পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করে সেই জগতে ঢুকে পড়ে।

আমাদের বাস করা সেই তৃতীয় জগতের নাম হলো স্পিরিচুয়াল ওয়ার্ল্ড। আধ্যাত্বিক জগত। সেই জগতে আমরা সবাই একা। এটা শুধু নিজের একান্তই নিজের জগত।
 
সেই জগতে আমরা প্রত্যেকেই মস্তিষ্কের নিওরনগুলোর সাথে হিসেব কষতে বসি।
অদ্ভুত সব প্রশ্ন রাখি নিজের সামনেই।
আমি কে?
কি আমার পরিচয়?
শুধু দুই বেলা ভাত খাওয়া আর দু তিন বার রিপ্রোডাকশন করাই কি আমার কাজ? প্রকৃতির সাইকেলে আমার ভূমিকা কি শুধু একটা রিপ্রোক্টাটিভ এলিমেন্ট হিসেবে? গাছকে কার্বন ডাই অক্সাইড দান করাই কি আমার কাজ?

আচ্ছা আমি কি সুখী? আচ্ছা সুখী হওয়ার ডেফিনেশন কি? আমার যদি কষ্ট পেতে ভালো লাগে তাহলে কি কষ্টই আমার সুখ নয়? জীবন এত আপেক্ষিক কেন?

আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই নিজের আত্মার কাছে নিজে এইসব প্রশ্ন রেখে উত্তরের অপেক্ষায় ঘুমাতে যাই। আমরা ভাল থাকি। কিন্তু  কেউ কেউ প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেয়ে খেপে যায়। নিজের মন কে প্রশ্ন যেতে থাকে। আমার অবস্থানের মানে টা কি? উত্তর না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়। হাল ছেড়ে দেয়। একদিন এই বোবা পৃথিবীর উপর প্রচন্ড অভিমান করে দুম করে মরে যায়। বুম ,দা শো ইজ ওভার্।

কিন্তু এই অশরিরী বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে লুকোন থাকে একমাত্র সত্যটি।

সারাদিন সন্তান ,বন্ধু ,ভাই বোন , এমপ্লয়ি ,স্বামী স্ত্রী ,বাবা মা হিসেবে রোল প্লে করে ক্লান্ত হয়ে দিনের শেষে রাত বারোটার পর আমরা সবাই একা। উই আর অল এলোন। দিস ইজ দা ওনলি ইউনিভার্সাল ট্রুথ!

আমার তো জানালা নেই :রোমা





আমার তো জানালা নেই
জানালা দিয়ে আমি
কাঁচকথাদের দেখিনি কতোদিন
আমার তো ছাদ নেই,
আকাশটাও দেখা হয়নি কতো কাল তাই,
এক টুকরো উঠোন! সেটাও কি ছিল কোনদিন?
তুলসী তলার সেঁজুতিটাও
তাই নিভে  গেছে সেই কবেই.....
 
কতোকাল দেখিনি
গাছ গাছালির অরন্য রোদন,
পূব আকাশটার অকাল বোধন,
পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া,,
দেখিনিতো জোনাক আলো,
জোনাক বাতি ছিল বুঝি কভু ,
সকল বাঁধন ছাড়া. ??

আজও কি রাতের আকাশ
আমার অপেক্ষায়?
আজও কি তারাগুলো
আগের মতোই হেসে লুটোপুটি খায়..?
আজও কি ঐ চাঁদটা অমনই সুন্দর দেখায়?
আজও কি আকাশের গায়ে
মেঘেরা সহবাসে যায়?

মেঘ ,বৃষ্টি, বারি
তারা আজও কি আছে সই?
আজও কি মেঘগুলো পরবাসী,
তবে বারির বাড়ি কই?
আর বৃষ্টি!
সেকি আজও উদাস মনে
আমার উঠোনেই ঝরে,
আমার তো জানালা নেই
তবে দেখব কেমন করে ??

আমার তো জানালা নেই,,,
তাই আকাশ,বাতাস,রোদ বৃষ্টি
দেখা হয়নি কতো কাল
দেখিনি রাতের আন্তরিকতা,,
মানবিকতার সকাল.....

আমার তো জানালা নেই,
 নিজেকেও দেখিনি কতো কাল....